বাঁধ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
৮ নং লাইন: | ৮ নং লাইন: | ||
পানির স্বচ্ছন্দ ও আনুভূমিক প্রবাহকে নিশ্চিত করতে বাঁধে নদীশাসন কার্যাবলীরও প্রয়োজন রয়েছে, যার মাধ্যমে নদীকে বাঁধের পার্শ্বভাগ অতিক্রম করে যাওয়া থেকে রক্ষা করা হয়। নদীশাসন কার্যাবলীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নদীতীর রক্ষা, প্রান্তিক বাঁধ, স্পার বা গ্রোয়েন (তীর রক্ষার জন্য কংক্রিট পাথরের বাঁধ) নদীতীর রক্ষা ব্যবস্থা নদী প্রবাহকে কাঙ্ক্ষিত গতিপথে পরিচালিত করতে সহায়তা করে। প্রান্তিক বাঁধগুলি মাটি নির্মিত ভেড়িবাঁধ। এগুলি বাঁধের সংলগ্ন এলাকাকে প্রবল বন্যায় নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। মূল বাঁধের উজানে এই ভেড়ি বাঁধসমূহ নির্মিত হয়। প্রান্তিক বাঁধের একটি অংশকে বন্যার পানি নিষ্কাশনের বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার করার নিমিত্তে তৈরি করা হয়। এগুলিকে অবশ্য অস্বাভাবিক প্রবল বন্যার সময় ভেঙ্গে ফেলা যেতে পারে যাতে প্রবল পানির চাপে মূল বাঁধটি বিপদগ্রস্ত না হয়। এভাবে বন্যার বিকল্প পথের ব্যবস্থা নিরাপত্তা কপাট হিসেবে কাজ করে। সাধারণভাবে গ্রোয়েন বা স্পার হলো মাটির তৈরি ভেড়িবাঁধের মতো নদী কপাটের উপর আড়াআড়িভাবে নির্মিত কাঠামো, যার মাধ্যমে নদীতীর থেকে জলস্রোতকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়। এভাবে নদীতীরকে অতিরিক্ত জলস্রোতের কারণে সৃষ্ট ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন বাঁধ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বাঁধের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে বর্ণিত হলো। | পানির স্বচ্ছন্দ ও আনুভূমিক প্রবাহকে নিশ্চিত করতে বাঁধে নদীশাসন কার্যাবলীরও প্রয়োজন রয়েছে, যার মাধ্যমে নদীকে বাঁধের পার্শ্বভাগ অতিক্রম করে যাওয়া থেকে রক্ষা করা হয়। নদীশাসন কার্যাবলীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নদীতীর রক্ষা, প্রান্তিক বাঁধ, স্পার বা গ্রোয়েন (তীর রক্ষার জন্য কংক্রিট পাথরের বাঁধ) নদীতীর রক্ষা ব্যবস্থা নদী প্রবাহকে কাঙ্ক্ষিত গতিপথে পরিচালিত করতে সহায়তা করে। প্রান্তিক বাঁধগুলি মাটি নির্মিত ভেড়িবাঁধ। এগুলি বাঁধের সংলগ্ন এলাকাকে প্রবল বন্যায় নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। মূল বাঁধের উজানে এই ভেড়ি বাঁধসমূহ নির্মিত হয়। প্রান্তিক বাঁধের একটি অংশকে বন্যার পানি নিষ্কাশনের বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার করার নিমিত্তে তৈরি করা হয়। এগুলিকে অবশ্য অস্বাভাবিক প্রবল বন্যার সময় ভেঙ্গে ফেলা যেতে পারে যাতে প্রবল পানির চাপে মূল বাঁধটি বিপদগ্রস্ত না হয়। এভাবে বন্যার বিকল্প পথের ব্যবস্থা নিরাপত্তা কপাট হিসেবে কাজ করে। সাধারণভাবে গ্রোয়েন বা স্পার হলো মাটির তৈরি ভেড়িবাঁধের মতো নদী কপাটের উপর আড়াআড়িভাবে নির্মিত কাঠামো, যার মাধ্যমে নদীতীর থেকে জলস্রোতকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়। এভাবে নদীতীরকে অতিরিক্ত জলস্রোতের কারণে সৃষ্ট ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন বাঁধ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বাঁধের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে বর্ণিত হলো। | ||
[[Image:BarrageTista.jpg|thumbnail|400px|right|তিস্তা বাঁধ]] | |||
''তিস্তা বাঁধ'' লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলাধীন দুয়ানি নামক স্থানে তিস্তা নদীর উপর নির্মিত। এই বাঁধে ৬১৫মি দীর্ঘ একটি কংক্রিটের কাঠামোর সঙ্গে ৪৪টি বেড়িয়েল দ্বার সংযুক্ত রয়েছে। বাঁধের পানি অপসারণ ক্ষমতা ১২.৭৫০ কিউমেক। বাঁধের উজানে সেচকার্যের জন্য নদীর ডানতীরে খালের মাধ্যমে পানি সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বাঁধটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৭৯ সালে, সেচকার্যের জন্য সেচখালসমূহ খনন শুরু হয় ১৯৮৪ সালে এবং বাঁধটির সামগ্রিক কাজ সমাপ্ত হয় ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বৎসরে। | |||
১৯৩৫ সালের কোনও এক সময়ে তিস্তা নদী থেকে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা সম্পর্কিত ধারণার সূত্রপাত ঘটে। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে হেই ঝিন এন্ড এসোসিয়েটস এবং এসোসিয়েটেড কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটির একটি প্রাথমিক বাস্তবায়নযোগ্য প্রতিবেদন প্রস্তত করা হয়। পরামর্শকদের প্রস্তাব ছিল গোদাবাড়িতে বাঁধ নির্মাণ করে সেচের জন্য নদীর পানিকে খালে প্রবাহিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অপর একটি প্রতিবেদন ১৯৬৮-৭০ সময়কালে বিনি এবং পর্টিনারস লিমিটেড কর্তৃক প্রণীত হয়। এ প্রতিবেদনে ডালিয়াকে বাঁধ নির্মাণ স্থল হিসেবে প্রস্তাব রাখা হয়। এরপর থেকে প্রায় দশ বৎসর যাবত প্রকল্পটি শুধুমাত্র অনুসন্ধান জরিপ বিশ্লেষণ কর্মকান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এর মধ্যে ভারত গাজল ডোবা নামক স্থানে তিস্তা নদীর উপরে বাঁধ নির্মাণ করে যা বাংলাদেশের প্রস্তাবিত বাঁধ নির্মাণ স্থল থেকে ১০০ কিমি উজানে অবস্থিত। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলিগণ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞগণ যৌথভাবে পূর্বের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সে আলোকে বিশদ প্রকৌশল পরিকল্পনা প্রস্ত্তত করেন। নতুন করে জরিপকার্য পরিচালিত হয়। শেষাবধি ১৯৭৯ সালে দুয়ানিতে বাঁধের মূল নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয়। তিস্তা নদীর বাম তীরে ডালিয়ার অপর অংশে বাঁধটি নির্মিত হয়। বাঁধের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয় ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে। বাঁধের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে ১১০ মিটার দীর্ঘ ক্যানেল হেডরেগুলেটর, যা সেচখালে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। খালের মধ্যে পলি সঞ্চয়ন নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধের মধ্যে পলি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও সংযুক্ত রয়েছে। বন্যাকালীন বাঁধের পানি অপসারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত পানি মুক্ত করার জন্য ৬১০মি দীর্ঘ বিকল্প পথ এবং বাঁধের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য ২৪৭০মি দীর্ঘ প্রতিবন্ধক বাঁধ (ক্লোজার ড্যাম) নির্মিত হয়েছে। বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় বন্যা প্রতিরোধে প্রায় ৮০ কিমি দীর্ঘ বন্যা ভেড়িবাঁধও নির্মিত হয়েছে। | ১৯৩৫ সালের কোনও এক সময়ে তিস্তা নদী থেকে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা সম্পর্কিত ধারণার সূত্রপাত ঘটে। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে হেই ঝিন এন্ড এসোসিয়েটস এবং এসোসিয়েটেড কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটির একটি প্রাথমিক বাস্তবায়নযোগ্য প্রতিবেদন প্রস্তত করা হয়। পরামর্শকদের প্রস্তাব ছিল গোদাবাড়িতে বাঁধ নির্মাণ করে সেচের জন্য নদীর পানিকে খালে প্রবাহিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অপর একটি প্রতিবেদন ১৯৬৮-৭০ সময়কালে বিনি এবং পর্টিনারস লিমিটেড কর্তৃক প্রণীত হয়। এ প্রতিবেদনে ডালিয়াকে বাঁধ নির্মাণ স্থল হিসেবে প্রস্তাব রাখা হয়। এরপর থেকে প্রায় দশ বৎসর যাবত প্রকল্পটি শুধুমাত্র অনুসন্ধান জরিপ বিশ্লেষণ কর্মকান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এর মধ্যে ভারত গাজল ডোবা নামক স্থানে তিস্তা নদীর উপরে বাঁধ নির্মাণ করে যা বাংলাদেশের প্রস্তাবিত বাঁধ নির্মাণ স্থল থেকে ১০০ কিমি উজানে অবস্থিত। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলিগণ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞগণ যৌথভাবে পূর্বের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সে আলোকে বিশদ প্রকৌশল পরিকল্পনা প্রস্ত্তত করেন। নতুন করে জরিপকার্য পরিচালিত হয়। শেষাবধি ১৯৭৯ সালে দুয়ানিতে বাঁধের মূল নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয়। তিস্তা নদীর বাম তীরে ডালিয়ার অপর অংশে বাঁধটি নির্মিত হয়। বাঁধের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয় ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে। বাঁধের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে ১১০ মিটার দীর্ঘ ক্যানেল হেডরেগুলেটর, যা সেচখালে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। খালের মধ্যে পলি সঞ্চয়ন নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধের মধ্যে পলি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও সংযুক্ত রয়েছে। বন্যাকালীন বাঁধের পানি অপসারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত পানি মুক্ত করার জন্য ৬১০মি দীর্ঘ বিকল্প পথ এবং বাঁধের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য ২৪৭০মি দীর্ঘ প্রতিবন্ধক বাঁধ (ক্লোজার ড্যাম) নির্মিত হয়েছে। বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় বন্যা প্রতিরোধে প্রায় ৮০ কিমি দীর্ঘ বন্যা ভেড়িবাঁধও নির্মিত হয়েছে। | ||
১৪ নং লাইন: | ১৫ নং লাইন: | ||
প্রকল্পটির মাধ্যমে উপকৃত এলাকার পরিমাণ ৭,৫০,০০০ হেক্টর, সেচযোগ্য ভূমির পরিমাণ ৫,৪০,০০০ হেক্টর। প্রকল্প এলাকাটি বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর এবং বগুড়ার ৭টি জেলা জুড়ে বিস্তৃত। সেচখাল এবং পানি বণ্টনের বিন্যস্ত কার্যক্রমটি দুটি পর্যায়ে উন্নত করে তোলা হয়েছিল। প্রথম ধাপে আওতাভুক্ত এলাকা ছিল ১,৮২,০০০ হেক্টর, সর্বসাকুল্যে ১,৩২,০০০ হেক্টর সেচযোগ্য ভূমিসহ। অবশিষ্ট এলাকাকে উন্নত সেচকার্যের আওতায় আনা হয় দ্বিতীয় ধাপে। এ অঞ্চলে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম সেচকার্যের সূত্রপাত হয় ১৯৯৩ সালে। ১৯৯০ সালের আর্থিক মূল্যানুসারে প্রকল্প ব্যয় ছিল ৮৫,৭৪০ লক্ষ টাকা, যা ঐ সময়ে দেশের অন্যান্য সেচ প্রকল্পে ব্যয়ের তুলনায় ছিল সর্বনিম্ন। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে প্রতি হেক্টরে ১,১১,০০০ টাকা ব্যয়ের স্থলে তিস্তা প্রকল্পে ব্যয় ছিল হেক্টর প্রতি ২৭,০০০ টাকা। তিস্তা বাঁধ প্রকল্প দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। এটি গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জি-কে প্রকল্প) প্রায় ৪ গুণ, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের ১২ গুণ এবং মেঘনা-ধনাগোদা প্রকল্পের চেয়ে ৪০ গুণ বড়। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ছাড়াও তিস্তা বাঁধ প্রকল্পটির সেচখালগুলি মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন, চিত্তবিনোদন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন ঘটিয়েছে। খালের পাশে নির্মিত ভেড়িবাঁধসমূহ গ্রামের সকল আবহাওয়ায় যোগাযোগের রাস্তা হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। | প্রকল্পটির মাধ্যমে উপকৃত এলাকার পরিমাণ ৭,৫০,০০০ হেক্টর, সেচযোগ্য ভূমির পরিমাণ ৫,৪০,০০০ হেক্টর। প্রকল্প এলাকাটি বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর এবং বগুড়ার ৭টি জেলা জুড়ে বিস্তৃত। সেচখাল এবং পানি বণ্টনের বিন্যস্ত কার্যক্রমটি দুটি পর্যায়ে উন্নত করে তোলা হয়েছিল। প্রথম ধাপে আওতাভুক্ত এলাকা ছিল ১,৮২,০০০ হেক্টর, সর্বসাকুল্যে ১,৩২,০০০ হেক্টর সেচযোগ্য ভূমিসহ। অবশিষ্ট এলাকাকে উন্নত সেচকার্যের আওতায় আনা হয় দ্বিতীয় ধাপে। এ অঞ্চলে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম সেচকার্যের সূত্রপাত হয় ১৯৯৩ সালে। ১৯৯০ সালের আর্থিক মূল্যানুসারে প্রকল্প ব্যয় ছিল ৮৫,৭৪০ লক্ষ টাকা, যা ঐ সময়ে দেশের অন্যান্য সেচ প্রকল্পে ব্যয়ের তুলনায় ছিল সর্বনিম্ন। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে প্রতি হেক্টরে ১,১১,০০০ টাকা ব্যয়ের স্থলে তিস্তা প্রকল্পে ব্যয় ছিল হেক্টর প্রতি ২৭,০০০ টাকা। তিস্তা বাঁধ প্রকল্প দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। এটি গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জি-কে প্রকল্প) প্রায় ৪ গুণ, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের ১২ গুণ এবং মেঘনা-ধনাগোদা প্রকল্পের চেয়ে ৪০ গুণ বড়। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ছাড়াও তিস্তা বাঁধ প্রকল্পটির সেচখালগুলি মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন, চিত্তবিনোদন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন ঘটিয়েছে। খালের পাশে নির্মিত ভেড়িবাঁধসমূহ গ্রামের সকল আবহাওয়ায় যোগাযোগের রাস্তা হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। | ||
''বুড়ি তিস্তা বাঁধ'' নীলফামারি জেলার ডিমলা এবং জলঢাকা উপজেলায় সেচকার্যের জন্য বুড়ি তিস্তা নদীর উপর নির্মিত বাঁধ। বাঁধটির দৈর্ঘ্য ৯১.৫মি এবং এটি ১৪টি বেড়িয়েল দ্বার বা কপাট দ্বারা সুবিন্যস্ত। এর পানি মুক্ত করার ক্ষমতা ১৯.৮২ কিউমেক। সর্বোচ্চ পানি সরবরাহের সময়ে জলাধার এলাকার বিস্তৃতি ৪৯২ হেক্টর। তিস্তা বাঁধের সেচ প্রকল্পের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্পের সূত্রপাত ঘটে। বুড়ি তিস্তা বাঁধের নির্মাণ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেচকার্যের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৬১-৬২ সালে। ৫৪১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৯৮২-৮৩ অর্থবৎসরে এর কাজ সমাপ্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯০ দশকের মধ্যভাগে অন্য একটি প্রকল্প পদ্ধতি পুনর্বাসন প্রকল্প-এর অধীনে আরও ৩১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয় প্রকল্পটির পুনর্বাসন কর্মকান্ডের জন্য। প্রকল্পের সর্বমোট আওতাভুক্ত নির্ধারিত এলাকার আয়তন ৩,১৫৮ হেক্টর। এর মধ্যে সেচযোগ্য ভূমির পরিমাণ ২,২৩২ হেক্টর। | |||
''টাঙ্গন বাঁধ'' টাঙ্গন নদীর উপর নির্মিত; দৈর্ঘ্য ৩৫.৩৬ মিটার। বাঁধের ৫টি বেড়িয়েল দ্বারের প্রতিটির মাপ ৬মি ৪.৫মি। বাঁধের সর্বমোট পানি মুক্ত করার ক্ষমতা ২৫.৭ কিউমেক। বাঁধের উজানে জলাধারের পানির উচ্চতা পি.ডব্লিউ.ডি-এর ডেটামের ৬৩.৯৯ মিটার উপরে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৪,৪৫০ হেক্টর জমিকে সেচ সুবিধার আওতায় আনা টাঙ্গন বাঁধ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। বাঁধ এবং সেচ খালের আনুষঙ্গিক কাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১৯৮৩ সালে এবং ১৯৯০ সালে নির্মাণ কাজের সমাপ্তি ঘটে। সর্বমোট ব্যয় হয় ১২৫০ লক্ষ টাকা, যার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার অংশ ছিল ৩৫.৭ লক্ষ টাকা। | |||
''মনু বাঁধ'' মৌলভীবাজার জেলার মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার সেচকার্যের জন্য মনু নদীর পানিকে কৃষিজমিতে খালের মাধ্যমে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে এই বাঁধ নির্মিত হয়। এই বাঁধ ও সেচ খালের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয় ১৯৮৩ সালে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বাঁধের সাথে মাছ চলাচলের জন্য একটি পথ সংযুক্ত করা হয়। কুশিয়ারা নদী এবং কাউয়া দিঘি হাওর এলাকার মাছ চলাচলে সহায়তার জন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। | |||
[[হার্ডিঞ্জ সেতু|হার্ডিঞ্জ সেতু]] এলাকা থেকে নিম্নে গঙ্গা নদীর উপর অপর একটি কাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা বর্তমানে করা হচ্ছে, যা পদ্মা বাঁধ নামে পরিচিত। এটি এখন পরিকল্পনা পর্যায়ে এবং এর সম্ভাব্যতা যাচাই শীঘ্রই শুরু হবে। এ কাজ সম্পূর্ণ হলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহের বিস্তীর্ণ এলাকা, বিশেষত যেসব এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে তীব্র সেচ সংকট দেখা দেয় সেসব এলাকায় সেচ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। [মোঃ ফজলুল বারী] | [[হার্ডিঞ্জ সেতু|হার্ডিঞ্জ সেতু]] এলাকা থেকে নিম্নে গঙ্গা নদীর উপর অপর একটি কাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা বর্তমানে করা হচ্ছে, যা পদ্মা বাঁধ নামে পরিচিত। এটি এখন পরিকল্পনা পর্যায়ে এবং এর সম্ভাব্যতা যাচাই শীঘ্রই শুরু হবে। এ কাজ সম্পূর্ণ হলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহের বিস্তীর্ণ এলাকা, বিশেষত যেসব এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে তীব্র সেচ সংকট দেখা দেয় সেসব এলাকায় সেচ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। [মোঃ ফজলুল বারী] | ||
''আরও দেখুন'' | ''আরও দেখুন'' [[ভেড়িবাঁধ|ভেড়িবাঁধ]]। | ||
[[ | |||
[[en:Barrage]] | [[en:Barrage]] |
০৯:২৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
বাঁধ (Barrage) নদীর পানির স্তর উত্তোলন বা নৌচলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় নাব্য রক্ষার জন্য অথবা সেচ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য নদীর উপর নির্মিত প্রতিবন্ধক। প্রয়োজনে পানি ধরে রাখা এবং নির্গমনের জন্য বাঁধের সাথে দ্বার সংযুক্ত নির্গমন পথ থাকে। পানি প্রবাহকে খালের মাধ্যমে ভিন্ন পথে পরিচালনার জন্যও বাঁধ নির্মিত হয়ে থাকে। বাঁধ নদী পরাপারে সড়ক ব্যবস্থা হিসেবেও ব্যবহূত হতে পারে। সাধারণত কংক্রিট (চুন, বালি, সুরকির মিশ্রণ) দ্বারা বাঁধ নির্মিত হয়, এর নির্গমন পথের দ্বার বা কপাটগুলো ইস্পাত নির্মিত। বাঁধে বিভিন্ন ধরনের দ্বার বা কপাট ব্যবহূত হয়। সবচেয়ে সাধারণ ধরনের দ্বারগুলি হলো উল্লম্বভাবে একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামোর মধ্যে সহজে উঠানামা করানো যায়। বাঁধের তলদেশে পানিপ্রবাহ বাধাহীন রাখার জন্য যাতে সহজে দ্বারগুলিকে খাড়াভাবে উঠানো যায় এমনভাবে বাঁধগুলি নির্মাণ করা হয়ে থাকে। বেড়িয়াল বা টেইন্টার দ্বারগুলি কার্যক্ষমতার দিক থেকে একই রকমের কিন্তু উল্লম্ব অংশটি বাঁকানো থাকে যার ফলে এগুলি উজানের দিকের পানির চাপ প্রতিরোধে অপেক্ষাকৃত বেশি কার্যক্ষম। সুতরাং বাঁধ হলো একটি যান্ত্রিক কৌশল বা ব্যবস্থা, যার দ্বারগুলির যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে নদীর প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রবল বন্যার সময় অতিরিক্ত পানি নির্গমনের জন্য বাঁধের দ্বারগুলি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
পানি প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন করে খালের দিকে প্রবাহিত করার সুবিধার্থে বাঁধের উজানের দিকের এক অথবা উভয় প্রান্তে পানি সরিয়ে দেওয়ার জন্য খননকৃত খালের মুখে নিয়ন্ত্রণকারী দ্বার নির্মিত হয়, যাকে খালের মূল নিয়ন্ত্রক বা মূল রেগুলেটর বলা হয়। এছাড়াও খালের মধ্যে পানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য মূল নিয়ন্ত্রক পলি এবং বন্যার পানি খালে প্রবেশকেও নিয়ন্ত্রণ করে। বাঁধের কাজের মধ্যে আরও একটি কাজ অন্তর্ভুক্ত, তা হলো প্রবল বন্যার পানি বিকল্প পথের মাধ্যমে মুক্ত করা, পলি নিয়ন্ত্রণে যান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে জলাধার হতে পলির স্তর নিষ্কাশন এবং মাছ চলাচলের পথ বাধাহীন রাখা।
মৎস্য সোপান (Fish ladder) এবং মৎস্য বেষ্টনী ব্যবস্থার মাধ্যমে মাছ চলাচলের পথ বাধাহীন রাখা হয়। একটি মৎস্য সোপান একসারি স্তরভিত্তিক জলাশয় দ্বারা গঠিত হতে পারে, যার মধ্য দিয়ে মাছের স্থানান্তরের মৌসুমে পানি একটি থেকে অন্যটিতে অবিরাম অবমুক্ত হতে পারে। জলাশয়গুলি একসারি নিচুখুঁটি গেড়ে পৃথক করা যেতে পারে অথবা পানির নিচে খাটো বাঁকা পাইপ দিয়ে সংযুক্ত করে দেয়া যেতে পারে যাতে এক থেকে দুইফুট পানির স্তরে কার্যকর হয়। কখনও কখনও খুঁটির বেষ্টনী বা পাইপ উভয়ই ব্যবহূত হয়।
পানির স্বচ্ছন্দ ও আনুভূমিক প্রবাহকে নিশ্চিত করতে বাঁধে নদীশাসন কার্যাবলীরও প্রয়োজন রয়েছে, যার মাধ্যমে নদীকে বাঁধের পার্শ্বভাগ অতিক্রম করে যাওয়া থেকে রক্ষা করা হয়। নদীশাসন কার্যাবলীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নদীতীর রক্ষা, প্রান্তিক বাঁধ, স্পার বা গ্রোয়েন (তীর রক্ষার জন্য কংক্রিট পাথরের বাঁধ) নদীতীর রক্ষা ব্যবস্থা নদী প্রবাহকে কাঙ্ক্ষিত গতিপথে পরিচালিত করতে সহায়তা করে। প্রান্তিক বাঁধগুলি মাটি নির্মিত ভেড়িবাঁধ। এগুলি বাঁধের সংলগ্ন এলাকাকে প্রবল বন্যায় নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। মূল বাঁধের উজানে এই ভেড়ি বাঁধসমূহ নির্মিত হয়। প্রান্তিক বাঁধের একটি অংশকে বন্যার পানি নিষ্কাশনের বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার করার নিমিত্তে তৈরি করা হয়। এগুলিকে অবশ্য অস্বাভাবিক প্রবল বন্যার সময় ভেঙ্গে ফেলা যেতে পারে যাতে প্রবল পানির চাপে মূল বাঁধটি বিপদগ্রস্ত না হয়। এভাবে বন্যার বিকল্প পথের ব্যবস্থা নিরাপত্তা কপাট হিসেবে কাজ করে। সাধারণভাবে গ্রোয়েন বা স্পার হলো মাটির তৈরি ভেড়িবাঁধের মতো নদী কপাটের উপর আড়াআড়িভাবে নির্মিত কাঠামো, যার মাধ্যমে নদীতীর থেকে জলস্রোতকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়। এভাবে নদীতীরকে অতিরিক্ত জলস্রোতের কারণে সৃষ্ট ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন বাঁধ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বাঁধের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে বর্ণিত হলো।
তিস্তা বাঁধ লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলাধীন দুয়ানি নামক স্থানে তিস্তা নদীর উপর নির্মিত। এই বাঁধে ৬১৫মি দীর্ঘ একটি কংক্রিটের কাঠামোর সঙ্গে ৪৪টি বেড়িয়েল দ্বার সংযুক্ত রয়েছে। বাঁধের পানি অপসারণ ক্ষমতা ১২.৭৫০ কিউমেক। বাঁধের উজানে সেচকার্যের জন্য নদীর ডানতীরে খালের মাধ্যমে পানি সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বাঁধটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৭৯ সালে, সেচকার্যের জন্য সেচখালসমূহ খনন শুরু হয় ১৯৮৪ সালে এবং বাঁধটির সামগ্রিক কাজ সমাপ্ত হয় ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বৎসরে।
১৯৩৫ সালের কোনও এক সময়ে তিস্তা নদী থেকে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা সম্পর্কিত ধারণার সূত্রপাত ঘটে। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে হেই ঝিন এন্ড এসোসিয়েটস এবং এসোসিয়েটেড কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটির একটি প্রাথমিক বাস্তবায়নযোগ্য প্রতিবেদন প্রস্তত করা হয়। পরামর্শকদের প্রস্তাব ছিল গোদাবাড়িতে বাঁধ নির্মাণ করে সেচের জন্য নদীর পানিকে খালে প্রবাহিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অপর একটি প্রতিবেদন ১৯৬৮-৭০ সময়কালে বিনি এবং পর্টিনারস লিমিটেড কর্তৃক প্রণীত হয়। এ প্রতিবেদনে ডালিয়াকে বাঁধ নির্মাণ স্থল হিসেবে প্রস্তাব রাখা হয়। এরপর থেকে প্রায় দশ বৎসর যাবত প্রকল্পটি শুধুমাত্র অনুসন্ধান জরিপ বিশ্লেষণ কর্মকান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এর মধ্যে ভারত গাজল ডোবা নামক স্থানে তিস্তা নদীর উপরে বাঁধ নির্মাণ করে যা বাংলাদেশের প্রস্তাবিত বাঁধ নির্মাণ স্থল থেকে ১০০ কিমি উজানে অবস্থিত। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলিগণ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞগণ যৌথভাবে পূর্বের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সে আলোকে বিশদ প্রকৌশল পরিকল্পনা প্রস্ত্তত করেন। নতুন করে জরিপকার্য পরিচালিত হয়। শেষাবধি ১৯৭৯ সালে দুয়ানিতে বাঁধের মূল নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয়। তিস্তা নদীর বাম তীরে ডালিয়ার অপর অংশে বাঁধটি নির্মিত হয়। বাঁধের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয় ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে। বাঁধের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে ১১০ মিটার দীর্ঘ ক্যানেল হেডরেগুলেটর, যা সেচখালে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। খালের মধ্যে পলি সঞ্চয়ন নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধের মধ্যে পলি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও সংযুক্ত রয়েছে। বন্যাকালীন বাঁধের পানি অপসারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত পানি মুক্ত করার জন্য ৬১০মি দীর্ঘ বিকল্প পথ এবং বাঁধের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য ২৪৭০মি দীর্ঘ প্রতিবন্ধক বাঁধ (ক্লোজার ড্যাম) নির্মিত হয়েছে। বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় বন্যা প্রতিরোধে প্রায় ৮০ কিমি দীর্ঘ বন্যা ভেড়িবাঁধও নির্মিত হয়েছে।
প্রকল্পটির মাধ্যমে উপকৃত এলাকার পরিমাণ ৭,৫০,০০০ হেক্টর, সেচযোগ্য ভূমির পরিমাণ ৫,৪০,০০০ হেক্টর। প্রকল্প এলাকাটি বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর এবং বগুড়ার ৭টি জেলা জুড়ে বিস্তৃত। সেচখাল এবং পানি বণ্টনের বিন্যস্ত কার্যক্রমটি দুটি পর্যায়ে উন্নত করে তোলা হয়েছিল। প্রথম ধাপে আওতাভুক্ত এলাকা ছিল ১,৮২,০০০ হেক্টর, সর্বসাকুল্যে ১,৩২,০০০ হেক্টর সেচযোগ্য ভূমিসহ। অবশিষ্ট এলাকাকে উন্নত সেচকার্যের আওতায় আনা হয় দ্বিতীয় ধাপে। এ অঞ্চলে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম সেচকার্যের সূত্রপাত হয় ১৯৯৩ সালে। ১৯৯০ সালের আর্থিক মূল্যানুসারে প্রকল্প ব্যয় ছিল ৮৫,৭৪০ লক্ষ টাকা, যা ঐ সময়ে দেশের অন্যান্য সেচ প্রকল্পে ব্যয়ের তুলনায় ছিল সর্বনিম্ন। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে প্রতি হেক্টরে ১,১১,০০০ টাকা ব্যয়ের স্থলে তিস্তা প্রকল্পে ব্যয় ছিল হেক্টর প্রতি ২৭,০০০ টাকা। তিস্তা বাঁধ প্রকল্প দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। এটি গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জি-কে প্রকল্প) প্রায় ৪ গুণ, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের ১২ গুণ এবং মেঘনা-ধনাগোদা প্রকল্পের চেয়ে ৪০ গুণ বড়। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ছাড়াও তিস্তা বাঁধ প্রকল্পটির সেচখালগুলি মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন, চিত্তবিনোদন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন ঘটিয়েছে। খালের পাশে নির্মিত ভেড়িবাঁধসমূহ গ্রামের সকল আবহাওয়ায় যোগাযোগের রাস্তা হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে।
বুড়ি তিস্তা বাঁধ নীলফামারি জেলার ডিমলা এবং জলঢাকা উপজেলায় সেচকার্যের জন্য বুড়ি তিস্তা নদীর উপর নির্মিত বাঁধ। বাঁধটির দৈর্ঘ্য ৯১.৫মি এবং এটি ১৪টি বেড়িয়েল দ্বার বা কপাট দ্বারা সুবিন্যস্ত। এর পানি মুক্ত করার ক্ষমতা ১৯.৮২ কিউমেক। সর্বোচ্চ পানি সরবরাহের সময়ে জলাধার এলাকার বিস্তৃতি ৪৯২ হেক্টর। তিস্তা বাঁধের সেচ প্রকল্পের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্পের সূত্রপাত ঘটে। বুড়ি তিস্তা বাঁধের নির্মাণ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেচকার্যের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৬১-৬২ সালে। ৫৪১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৯৮২-৮৩ অর্থবৎসরে এর কাজ সমাপ্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯০ দশকের মধ্যভাগে অন্য একটি প্রকল্প পদ্ধতি পুনর্বাসন প্রকল্প-এর অধীনে আরও ৩১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয় প্রকল্পটির পুনর্বাসন কর্মকান্ডের জন্য। প্রকল্পের সর্বমোট আওতাভুক্ত নির্ধারিত এলাকার আয়তন ৩,১৫৮ হেক্টর। এর মধ্যে সেচযোগ্য ভূমির পরিমাণ ২,২৩২ হেক্টর।
টাঙ্গন বাঁধ টাঙ্গন নদীর উপর নির্মিত; দৈর্ঘ্য ৩৫.৩৬ মিটার। বাঁধের ৫টি বেড়িয়েল দ্বারের প্রতিটির মাপ ৬মি ৪.৫মি। বাঁধের সর্বমোট পানি মুক্ত করার ক্ষমতা ২৫.৭ কিউমেক। বাঁধের উজানে জলাধারের পানির উচ্চতা পি.ডব্লিউ.ডি-এর ডেটামের ৬৩.৯৯ মিটার উপরে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৪,৪৫০ হেক্টর জমিকে সেচ সুবিধার আওতায় আনা টাঙ্গন বাঁধ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। বাঁধ এবং সেচ খালের আনুষঙ্গিক কাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১৯৮৩ সালে এবং ১৯৯০ সালে নির্মাণ কাজের সমাপ্তি ঘটে। সর্বমোট ব্যয় হয় ১২৫০ লক্ষ টাকা, যার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার অংশ ছিল ৩৫.৭ লক্ষ টাকা।
মনু বাঁধ মৌলভীবাজার জেলার মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার সেচকার্যের জন্য মনু নদীর পানিকে কৃষিজমিতে খালের মাধ্যমে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে এই বাঁধ নির্মিত হয়। এই বাঁধ ও সেচ খালের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয় ১৯৮৩ সালে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বাঁধের সাথে মাছ চলাচলের জন্য একটি পথ সংযুক্ত করা হয়। কুশিয়ারা নদী এবং কাউয়া দিঘি হাওর এলাকার মাছ চলাচলে সহায়তার জন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
হার্ডিঞ্জ সেতু এলাকা থেকে নিম্নে গঙ্গা নদীর উপর অপর একটি কাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা বর্তমানে করা হচ্ছে, যা পদ্মা বাঁধ নামে পরিচিত। এটি এখন পরিকল্পনা পর্যায়ে এবং এর সম্ভাব্যতা যাচাই শীঘ্রই শুরু হবে। এ কাজ সম্পূর্ণ হলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহের বিস্তীর্ণ এলাকা, বিশেষত যেসব এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে তীব্র সেচ সংকট দেখা দেয় সেসব এলাকায় সেচ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। [মোঃ ফজলুল বারী]
আরও দেখুন ভেড়িবাঁধ।