ফতেহ খানের সমাধি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''ফতেহ খানের সমাধি'''  গৌড় নগরদুর্গের অভ্যন্তরে পূর্ব অংশে [[কদম রসুল|কদম রসুল]] প্রাচীর বেষ্টনীর মধ্যে অবস্থিত। সমাধিসৌধটি বাংলার দোচালা কুঁড়েঘরের অনুকরণে নির্মিত এবং ফতেহ খানের সমাধি হিসেবে পরিগণিত। ফতেহ খান ছিলেন মুগল সম্রাট [[আওরঙ্গজেব|আওরঙ্গজেব]] এর জনৈক সেনাপতি দিলির খানের পুত্র। সমকালীন কোন ঐতিহাসিকের রচনায় ফতেহ খানের কোন উল্লেখ না থাকলেও জনশ্রুতি মতে এটি ফতেহ খানের সমাধি রূপে চিহ্নিত। ফতেহ খান পিতার সঙ্গে গৌড়ে এসে অসুস্থহ হয়ে পড়েন এবং সম্ভবত এখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
'''ফতেহ খানের সমাধি'''  গৌড় নগরদুর্গের অভ্যন্তরে পূর্ব অংশে [[কদম রসুল|কদম রসুল]] প্রাচীর বেষ্টনীর মধ্যে অবস্থিত। সমাধিসৌধটি বাংলার দোচালা কুঁড়েঘরের অনুকরণে নির্মিত এবং ফতেহ খানের সমাধি হিসেবে পরিগণিত। ফতেহ খান ছিলেন মুগল সম্রাট [[আওরঙ্গজেব|আওরঙ্গজেব]] এর জনৈক সেনাপতি দিলির খানের পুত্র। সমকালীন কোন ঐতিহাসিকের রচনায় ফতেহ খানের কোন উল্লেখ না থাকলেও জনশ্রুতি মতে এটি ফতেহ খানের সমাধি রূপে চিহ্নিত। ফতেহ খান পিতার সঙ্গে গৌড়ে এসে অসুস্থহ হয়ে পড়েন এবং সম্ভবত এখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।


[[Image:FathKhanTomb.jpg|thumb|400px|right|ফতেহ খানের সমাধি]]
বাইরের দিকে সমাধিটির আয়তন ৯.৩৫ মি × ৮.৩৫ মি এবং এর পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সর্দলযুক্ত তিনটি প্রবেশপথ আছে। ইমারতের বাঁকা ছাদ প্রশস্ত দেয়ালের অলংকৃত ত্রিকোণ অংশ হতে গড়ে তোলা এবং পাঁচটি ছাদকাঠামোর উল্লম্ব ফলক দ্বারা চিহ্নিত বা বৃত্তাকার অলংকরণের মাধ্যমে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। ইমারতটি সম্পূর্ণভাবে আস্তর করা এবং এর দেওয়ালগুলি আয়তাকার সাদামাটা প্যানেলে অলংকৃত এবং প্রবেশপথের পার্শ্বদেশে রয়েছে খিলানযুক্ত কুলুঙ্গি। আবিদ আলী ইমারত সমাধি কিনা এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে একে একটি মন্দির বলে অনুমান করলেও কদম রসুলের নিকটে এবং এর চৌহদ্দি দেয়ালের অভ্যন্তরে এর অবস্থান থেকে সৌধটিকে একটি মুসলিম ইমারত তথা সমাধি বা দরবেশের হুজরা (বাসস্থান) রূপেই চিহ্নিত করতে হয়। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বিরলদহে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বিদ্যমান অনুরূপ একটি দোচালা ইমারত যা বর্তমানে নিকটবর্তী মসজিদের দেয়ালের মধ্যে প্রোথিত, সাধারণত নিকটস্থ সমাধিতে সমাহিত দরবেশের হুজরা বলে মনে করা হয়। এ দুটি ইমারতের মধ্যে পার্থক্য এই যে, পূর্ববর্তীটি সম্পূর্ণ আস্তর করা ও প্যানেল শোভিত একটি মুগল স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ইমারত এবং পরেরটি সম্পূর্ণ পোড়ামাটির অলংকরণ শোভিত ইমারত যা সুলতানি আমলের কোন সময়ে নির্মিত। বিরলদহ ইমারতটিকে একটি হিন্দু মন্দির হিসেবে চিহ্নিত করার মতটি একদিকে নিকটস্থ একজন মুসলিম দরবেশের সমাধির অবস্থান এবং অন্যদিকে টেরাকোটা অলংকরণে মূর্তির অনুপস্থিতির কারণেও নাকচ করা যায়।
বাইরের দিকে সমাধিটির আয়তন ৯.৩৫ মি × ৮.৩৫ মি এবং এর পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সর্দলযুক্ত তিনটি প্রবেশপথ আছে। ইমারতের বাঁকা ছাদ প্রশস্ত দেয়ালের অলংকৃত ত্রিকোণ অংশ হতে গড়ে তোলা এবং পাঁচটি ছাদকাঠামোর উল্লম্ব ফলক দ্বারা চিহ্নিত বা বৃত্তাকার অলংকরণের মাধ্যমে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। ইমারতটি সম্পূর্ণভাবে আস্তর করা এবং এর দেওয়ালগুলি আয়তাকার সাদামাটা প্যানেলে অলংকৃত এবং প্রবেশপথের পার্শ্বদেশে রয়েছে খিলানযুক্ত কুলুঙ্গি। আবিদ আলী ইমারত সমাধি কিনা এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে একে একটি মন্দির বলে অনুমান করলেও কদম রসুলের নিকটে এবং এর চৌহদ্দি দেয়ালের অভ্যন্তরে এর অবস্থান থেকে সৌধটিকে একটি মুসলিম ইমারত তথা সমাধি বা দরবেশের হুজরা (বাসস্থান) রূপেই চিহ্নিত করতে হয়। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বিরলদহে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বিদ্যমান অনুরূপ একটি দোচালা ইমারত যা বর্তমানে নিকটবর্তী মসজিদের দেয়ালের মধ্যে প্রোথিত, সাধারণত নিকটস্থ সমাধিতে সমাহিত দরবেশের হুজরা বলে মনে করা হয়। এ দুটি ইমারতের মধ্যে পার্থক্য এই যে, পূর্ববর্তীটি সম্পূর্ণ আস্তর করা ও প্যানেল শোভিত একটি মুগল স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ইমারত এবং পরেরটি সম্পূর্ণ পোড়ামাটির অলংকরণ শোভিত ইমারত যা সুলতানি আমলের কোন সময়ে নির্মিত। বিরলদহ ইমারতটিকে একটি হিন্দু মন্দির হিসেবে চিহ্নিত করার মতটি একদিকে নিকটস্থ একজন মুসলিম দরবেশের সমাধির অবস্থান এবং অন্যদিকে টেরাকোটা অলংকরণে মূর্তির অনুপস্থিতির কারণেও নাকচ করা যায়।
[[Image:FathKhanTomb.jpg|thumb|400px|right|
ফতেহ খানের সমাধি]]


মুসলিম মসজিদ বা হিন্দু মন্দির যা-ই হোক না কেন, চৌচালার ন্যায় ([[ছোট সোনা মসজিদ|ছোট সোনা মসজিদ]] দ্রষ্টব্য) দোচালা রীতিও বাংলার পরবর্তী স্থাপত্যশিল্পের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদে এটি একটি পার্শ্ব-প্রকোষ্ঠ, প্রবেশপথ এবং জানালার উপর ছাদের প্রলম্বিত অংশের আকারে অলংকৃত নকশা এবং মন্দিরে একটি কাঠামোগত ধরন ও বাঁকা কার্নিস হিসেবে ব্যবহূত হতো। রাজকীয় মুগল স্থাপত্যশিল্পে এর প্রভাব আগেও ছিল। এরূপ দুটি ছোট সুন্দর কাঠামো আগ্রা দুর্গের মার্বেল সিংহাসনের চাঁদোয়ায় এবং লাহোর দুর্গের নওলাখায় দেখা যায়। দুটিই সম্রাট [[শাহজাহান|শাহজাহান]] এর রাজত্বকালে সতেরো শতকের মধ্যভাগে নির্মিত হয়। স্থপতি কনস্টানটাইন ডক্সিয়াডেস কর্তৃক ১৯৬৫ সালে ঢাকা কলেজের নিকটে একটি আধুনিক ইমারত ’নায়েম’ এর (NAEM: National Academy For Educational Management) মসজিদে এ রীতি চমৎকারভাবে প্রয়োগ করেছেন।  [এ.বি.এম হোসেন]
মুসলিম মসজিদ বা হিন্দু মন্দির যা-ই হোক না কেন, চৌচালার ন্যায় ([[ছোট সোনা মসজিদ|ছোট সোনা মসজিদ]] দ্রষ্টব্য) দোচালা রীতিও বাংলার পরবর্তী স্থাপত্যশিল্পের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদে এটি একটি পার্শ্ব-প্রকোষ্ঠ, প্রবেশপথ এবং জানালার উপর ছাদের প্রলম্বিত অংশের আকারে অলংকৃত নকশা এবং মন্দিরে একটি কাঠামোগত ধরন ও বাঁকা কার্নিস হিসেবে ব্যবহূত হতো। রাজকীয় মুগল স্থাপত্যশিল্পে এর প্রভাব আগেও ছিল। এরূপ দুটি ছোট সুন্দর কাঠামো আগ্রা দুর্গের মার্বেল সিংহাসনের চাঁদোয়ায় এবং লাহোর দুর্গের নওলাখায় দেখা যায়। দুটিই সম্রাট [[শাহজাহান|শাহজাহান]] এর রাজত্বকালে সতেরো শতকের মধ্যভাগে নির্মিত হয়। স্থপতি কনস্টানটাইন ডক্সিয়াডেস কর্তৃক ১৯৬৫ সালে ঢাকা কলেজের নিকটে একটি আধুনিক ইমারত ’নায়েম’ এর (NAEM: National Academy For Educational Management) মসজিদে এ রীতি চমৎকারভাবে প্রয়োগ করেছেন।  [এ.বি.এম হোসেন]
১৩ নং লাইন: ৯ নং লাইন:
'''গ্রন্থপঞ্জি'''  Abid Ali and HE Stapleton, Memoirs of Gaur and Pandua, Calcutta, 1931; AH Dani, Muslim Architecture in Bengal, Dhaka 1961; George Michell (ed), The Islamic Heritage of Bengal, Paris, 1984.
'''গ্রন্থপঞ্জি'''  Abid Ali and HE Stapleton, Memoirs of Gaur and Pandua, Calcutta, 1931; AH Dani, Muslim Architecture in Bengal, Dhaka 1961; George Michell (ed), The Islamic Heritage of Bengal, Paris, 1984.


[[en:Fath Khan’s Tomb]]
[[en:Fath Khan’s Tomb]]
[[en:Fath Khan’s Tomb]]


[[en:Fath Khan’s Tomb]]
[[en:Fath Khan’s Tomb]]

১০:৫০, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ফতেহ খানের সমাধি  গৌড় নগরদুর্গের অভ্যন্তরে পূর্ব অংশে কদম রসুল প্রাচীর বেষ্টনীর মধ্যে অবস্থিত। সমাধিসৌধটি বাংলার দোচালা কুঁড়েঘরের অনুকরণে নির্মিত এবং ফতেহ খানের সমাধি হিসেবে পরিগণিত। ফতেহ খান ছিলেন মুগল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর জনৈক সেনাপতি দিলির খানের পুত্র। সমকালীন কোন ঐতিহাসিকের রচনায় ফতেহ খানের কোন উল্লেখ না থাকলেও জনশ্রুতি মতে এটি ফতেহ খানের সমাধি রূপে চিহ্নিত। ফতেহ খান পিতার সঙ্গে গৌড়ে এসে অসুস্থহ হয়ে পড়েন এবং সম্ভবত এখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

ফতেহ খানের সমাধি

বাইরের দিকে সমাধিটির আয়তন ৯.৩৫ মি × ৮.৩৫ মি এবং এর পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সর্দলযুক্ত তিনটি প্রবেশপথ আছে। ইমারতের বাঁকা ছাদ প্রশস্ত দেয়ালের অলংকৃত ত্রিকোণ অংশ হতে গড়ে তোলা এবং পাঁচটি ছাদকাঠামোর উল্লম্ব ফলক দ্বারা চিহ্নিত বা বৃত্তাকার অলংকরণের মাধ্যমে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। ইমারতটি সম্পূর্ণভাবে আস্তর করা এবং এর দেওয়ালগুলি আয়তাকার সাদামাটা প্যানেলে অলংকৃত এবং প্রবেশপথের পার্শ্বদেশে রয়েছে খিলানযুক্ত কুলুঙ্গি। আবিদ আলী ইমারত সমাধি কিনা এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে একে একটি মন্দির বলে অনুমান করলেও কদম রসুলের নিকটে এবং এর চৌহদ্দি দেয়ালের অভ্যন্তরে এর অবস্থান থেকে সৌধটিকে একটি মুসলিম ইমারত তথা সমাধি বা দরবেশের হুজরা (বাসস্থান) রূপেই চিহ্নিত করতে হয়। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বিরলদহে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বিদ্যমান অনুরূপ একটি দোচালা ইমারত যা বর্তমানে নিকটবর্তী মসজিদের দেয়ালের মধ্যে প্রোথিত, সাধারণত নিকটস্থ সমাধিতে সমাহিত দরবেশের হুজরা বলে মনে করা হয়। এ দুটি ইমারতের মধ্যে পার্থক্য এই যে, পূর্ববর্তীটি সম্পূর্ণ আস্তর করা ও প্যানেল শোভিত একটি মুগল স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ইমারত এবং পরেরটি সম্পূর্ণ পোড়ামাটির অলংকরণ শোভিত ইমারত যা সুলতানি আমলের কোন সময়ে নির্মিত। বিরলদহ ইমারতটিকে একটি হিন্দু মন্দির হিসেবে চিহ্নিত করার মতটি একদিকে নিকটস্থ একজন মুসলিম দরবেশের সমাধির অবস্থান এবং অন্যদিকে টেরাকোটা অলংকরণে মূর্তির অনুপস্থিতির কারণেও নাকচ করা যায়।

মুসলিম মসজিদ বা হিন্দু মন্দির যা-ই হোক না কেন, চৌচালার ন্যায় (ছোট সোনা মসজিদ দ্রষ্টব্য) দোচালা রীতিও বাংলার পরবর্তী স্থাপত্যশিল্পের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদে এটি একটি পার্শ্ব-প্রকোষ্ঠ, প্রবেশপথ এবং জানালার উপর ছাদের প্রলম্বিত অংশের আকারে অলংকৃত নকশা এবং মন্দিরে একটি কাঠামোগত ধরন ও বাঁকা কার্নিস হিসেবে ব্যবহূত হতো। রাজকীয় মুগল স্থাপত্যশিল্পে এর প্রভাব আগেও ছিল। এরূপ দুটি ছোট সুন্দর কাঠামো আগ্রা দুর্গের মার্বেল সিংহাসনের চাঁদোয়ায় এবং লাহোর দুর্গের নওলাখায় দেখা যায়। দুটিই সম্রাট শাহজাহান এর রাজত্বকালে সতেরো শতকের মধ্যভাগে নির্মিত হয়। স্থপতি কনস্টানটাইন ডক্সিয়াডেস কর্তৃক ১৯৬৫ সালে ঢাকা কলেজের নিকটে একটি আধুনিক ইমারত ’নায়েম’ এর (NAEM: National Academy For Educational Management) মসজিদে এ রীতি চমৎকারভাবে প্রয়োগ করেছেন।  [এ.বি.এম হোসেন]

গ্রন্থপঞ্জি  Abid Ali and HE Stapleton, Memoirs of Gaur and Pandua, Calcutta, 1931; AH Dani, Muslim Architecture in Bengal, Dhaka 1961; George Michell (ed), The Islamic Heritage of Bengal, Paris, 1984.