চিহিলগাজী মসজিদ-মাজার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''চিহিলগাজী মসজিদ-মাযার''' দিনাজপুর জেলার সদর থানার চিহিলগাজী গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিমি উত্তরে পাকা রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে মসজিদটির অবস্থান। চিহিলগাজী মাযারটি মসজিদ সংলগ্ন। | '''চিহিলগাজী মসজিদ-মাযার''' দিনাজপুর জেলার সদর থানার চিহিলগাজী গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিমি উত্তরে পাকা রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে মসজিদটির অবস্থান। চিহিলগাজী মাযারটি মসজিদ সংলগ্ন। | ||
[[Image:ChehelghaziMosque&Mazar.jpg|thumb|400px|right|চিহিলগাজী মসজিদ-এর ধ্বংসাবশেষ]] | |||
মসজিদের কাল নির্দেশক তিনটি শিলালিপি ছিল। এর একটি দিনাজপুর জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এ শিলালিপি থেকে জানা যায়, ৮৬৫ হিজরির ১৬ সফর (১৪৬০ খ্রি ১ ডিসেম্বর) মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। সুলতান [[রুকনুদ্দীন বারবক শাহ|রুকনুদ্দীন বারবক শাহ]] এর রাজত্বকালে (১৪৫৯-৬০খ্রি-১৪৭৪ খ্রি.) তাঁর উজির ইকরার খানের নির্দেশে পূর্ণিয়া জেলার অন্তর্গত জোর ও বারুর (দিনাজপুর) পরগনার শাসনকর্তা (ফৌজদার ও জংদার) উলুঘ নুসরত খান এ মসজিদ নির্মাণ করেন। | মসজিদের কাল নির্দেশক তিনটি শিলালিপি ছিল। এর একটি দিনাজপুর জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এ শিলালিপি থেকে জানা যায়, ৮৬৫ হিজরির ১৬ সফর (১৪৬০ খ্রি ১ ডিসেম্বর) মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। সুলতান [[রুকনুদ্দীন বারবক শাহ|রুকনুদ্দীন বারবক শাহ]] এর রাজত্বকালে (১৪৫৯-৬০খ্রি-১৪৭৪ খ্রি.) তাঁর উজির ইকরার খানের নির্দেশে পূর্ণিয়া জেলার অন্তর্গত জোর ও বারুর (দিনাজপুর) পরগনার শাসনকর্তা (ফৌজদার ও জংদার) উলুঘ নুসরত খান এ মসজিদ নির্মাণ করেন। | ||
৯ নং লাইন: | ১০ নং লাইন: | ||
বাইরের দিকে মসজিদের মূলকক্ষের আয়তন ৪.৯০ মি × ৪.৯০ মি। মূলকক্ষের পূর্বদিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে দুটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। পূর্বদিকের তিনটি প্রবেশপথের মধ্যে মাঝের খিলানের উচ্চতা ২.৬০ মিটার এবং প্রস্থ ০.৭৭ মিটার। | বাইরের দিকে মসজিদের মূলকক্ষের আয়তন ৪.৯০ মি × ৪.৯০ মি। মূলকক্ষের পূর্বদিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে দুটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। পূর্বদিকের তিনটি প্রবেশপথের মধ্যে মাঝের খিলানের উচ্চতা ২.৬০ মিটার এবং প্রস্থ ০.৭৭ মিটার। | ||
পূর্বদিকের বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪.৯০ মিটার এবং প্রস্থ ১.৮৩ মিটার। বারান্দায় প্রবেশের জন্য মূলকক্ষের পূর্বদিকের অনুরূপ আয়তনবিশিষ্ট তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদের ভেতরে পশ্চিমদিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব। মাঝের মিহরাবটি পাশের দুটির তুলনায় একটু বড়। মিহরাবগুলি বহুপত্র (multi cusped) খিলানবিশিষ্ট। মিহরাবের অলঙ্করণে পাথর দেখা যায়। পাথর ও পোড়ামাটির ফলক দিয়ে এ মিহরাবগুলি সুন্দরভাবে অলঙ্ককৃত। পোড়ামাটির ফলকগুলির মধ্যে ফুল, লতাপাতা এবং ঝুলন্ত মোটিফ লক্ষণীয়। | পূর্বদিকের বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪.৯০ মিটার এবং প্রস্থ ১.৮৩ মিটার। বারান্দায় প্রবেশের জন্য মূলকক্ষের পূর্বদিকের অনুরূপ আয়তনবিশিষ্ট তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদের ভেতরে পশ্চিমদিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব। মাঝের মিহরাবটি পাশের দুটির তুলনায় একটু বড়। মিহরাবগুলি বহুপত্র (multi cusped) খিলানবিশিষ্ট। মিহরাবের অলঙ্করণে পাথর দেখা যায়। পাথর ও পোড়ামাটির ফলক দিয়ে এ মিহরাবগুলি সুন্দরভাবে অলঙ্ককৃত। পোড়ামাটির ফলকগুলির মধ্যে ফুল, লতাপাতা এবং ঝুলন্ত মোটিফ লক্ষণীয়। | ||
১৭ নং লাইন: | ১৫ নং লাইন: | ||
অনেকে মনে করেন যে, বর্গাকার একটি শিবমন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এ রকম ধারণার পেছনে কোনো যুক্তি নেই। মিহরাব, গম্বুজ, প্রবেশপথ এবং স্থাপত্যকৌশল সম্পূর্ণরূপে একটি মসজিদের। মন্দিরের গঠনপদ্ধতির সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। তবে এখানে প্রাপ্ত বিরাট গৌরীপট্ট শিবমন্দিরের ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন, প্রাচীন আমলের পাথর ও ইট, প্রাক-মুসলিম আমলের বাঁধানো ঘাটসহ দুটি জলাশয়, সে আমলের অন্যান্য ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন ইত্যাদি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, এখানে হিন্দুমন্দিরসহ একটি সমৃদ্ধিশালী জনপদের অস্তিত্ব ছিল। সে ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরের ইট-পাথর এ মসজিদে ব্যবহূত হয়েছিল বলে জানা যায়। | অনেকে মনে করেন যে, বর্গাকার একটি শিবমন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এ রকম ধারণার পেছনে কোনো যুক্তি নেই। মিহরাব, গম্বুজ, প্রবেশপথ এবং স্থাপত্যকৌশল সম্পূর্ণরূপে একটি মসজিদের। মন্দিরের গঠনপদ্ধতির সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। তবে এখানে প্রাপ্ত বিরাট গৌরীপট্ট শিবমন্দিরের ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন, প্রাচীন আমলের পাথর ও ইট, প্রাক-মুসলিম আমলের বাঁধানো ঘাটসহ দুটি জলাশয়, সে আমলের অন্যান্য ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন ইত্যাদি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, এখানে হিন্দুমন্দিরসহ একটি সমৃদ্ধিশালী জনপদের অস্তিত্ব ছিল। সে ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরের ইট-পাথর এ মসজিদে ব্যবহূত হয়েছিল বলে জানা যায়। | ||
''' | '''''মাযার''''' এর সময় নির্দেশক কোনো [[শিলালিপি|শিলালিপি]] পাওয়া যায় নি। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মি. ওয়েস্টমেকট ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে চিহিলগাজী মসজিদ থেকে তিনটি শিলালিপি উদ্ধার করেন। এ শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৪৬০ খ্রিস্টাব্দে চিহিলগাজী মসজিদটি নির্মাণ করার সময় মাযারটি সংস্কার করা হয়। অর্থাং মসজিদের পূর্বেই মাযারটির অস্তিত্ব ছিল। শিলালিপিতে চিহিলগাজী বা অন্য কোনো নামের উল্লেখ নেই। বুকানন হ্যামিল্টন-এর প্রতিবেদন থেকে প্রথম চিহিলগাজী মাযার সম্পর্কে জানা যায়। | ||
স্থানীয় জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, ৪০ জন গাজীকে একত্রে এখানে সমাহিত করা হয়। এজন্য এ স্থানের নাম হয় চিহিল (চিহিল ফার্সি শব্দ, বাংলায় এ শব্দের অর্থ চল্লিশ) গাজী (ধর্মযোদ্ধা)। গোপাল নামে এক স্থানীয় হিন্দু রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে উক্ত গাজীরা শহীদ হন। সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের [[কামরূপ|কামরূপ]] অধিকারের সময় (১৩৫৮ খ্রি.) সম্ভবত এ যুদ্ধটি হয়েছিল। এ রকম কান্তনগরে (গড় মল্লিকপুর) এবং খানসামায় আরও দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় ও নিহত সৈনিকদের যৌথভাবে সমাহিত করা হয়। প্রায় ১০০ বছর পরে ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে মাযারটি মেরামত করা হয়। | স্থানীয় জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, ৪০ জন গাজীকে একত্রে এখানে সমাহিত করা হয়। এজন্য এ স্থানের নাম হয় চিহিল (চিহিল ফার্সি শব্দ, বাংলায় এ শব্দের অর্থ চল্লিশ) গাজী (ধর্মযোদ্ধা)। গোপাল নামে এক স্থানীয় হিন্দু রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে উক্ত গাজীরা শহীদ হন। সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের [[কামরূপ|কামরূপ]] অধিকারের সময় (১৩৫৮ খ্রি.) সম্ভবত এ যুদ্ধটি হয়েছিল। এ রকম কান্তনগরে (গড় মল্লিকপুর) এবং খানসামায় আরও দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় ও নিহত সৈনিকদের যৌথভাবে সমাহিত করা হয়। প্রায় ১০০ বছর পরে ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে মাযারটি মেরামত করা হয়। | ||
মাযারের উপরে কোনো আচ্ছাদন বা ছাদ ছিল না। ১৯৬৮ সালে এ মাযারের উপরে ছাদ নির্মাণ করা হয়, চারপাশে দেয়াল তৈরি করে মাযারটিকে আবৃত করা হয় মূল্যাবান রেশমি কাপড়ে এবং নির্মিত হয় তোরণ। নবনির্মিত ঘরটির আয়তন ২৫.১৫ মি × ৮.৫০ মি। ছাদের নিচে কবরকে ঘিরে আরেকটি রেলিং সংযুক্ত হয়। রেলিং এর আয়তন ২০.৬০ মি × ৪.১০ মি। মাযার সংলগ্ন পূর্বদিকে একটি, দক্ষিণ দিকে তিনটি বাঁধানো প্রাচীন কবর রয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে চিহিলগাজী মসজিদ, মসজিদের দক্ষিণে আরও একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম কোণে ১৭০ | মাযারের উপরে কোনো আচ্ছাদন বা ছাদ ছিল না। ১৯৬৮ সালে এ মাযারের উপরে ছাদ নির্মাণ করা হয়, চারপাশে দেয়াল তৈরি করে মাযারটিকে আবৃত করা হয় মূল্যাবান রেশমি কাপড়ে এবং নির্মিত হয় তোরণ। নবনির্মিত ঘরটির আয়তন ২৫.১৫ মি × ৮.৫০ মি। ছাদের নিচে কবরকে ঘিরে আরেকটি রেলিং সংযুক্ত হয়। রেলিং এর আয়তন ২০.৬০ মি × ৪.১০ মি। মাযার সংলগ্ন পূর্বদিকে একটি, দক্ষিণ দিকে তিনটি বাঁধানো প্রাচীন কবর রয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে চিহিলগাজী মসজিদ, মসজিদের দক্ষিণে আরও একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম কোণে ১৭০ মি × ৯৭ মি আয়তন বিশিষ্ট উত্তর-দক্ষিণে লম্বা একটি প্রাচীন পুকুর রয়েছে। পূর্বদিকে এর চেয়ে ছোট আর একটি প্রাচীন পুকুর অবস্থিত। মাযারের পশ্চিমদিকে শালবন। | ||
মাযারে প্রবেশপথের বামদিকে রয়েছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৩৫ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর। পাক বাহিনীর ফেলে যাওয়া মাইন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে ৬ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে এক আকস্মিক বিস্ফোরণে শহীদ হন। তাঁদের মধ্যে ১৩৫ জন শহীদকে এখানে সমাহিত করা হয়। [সানিয়া সিতারা] | মাযারে প্রবেশপথের বামদিকে রয়েছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৩৫ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর। পাক বাহিনীর ফেলে যাওয়া মাইন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে ৬ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে এক আকস্মিক বিস্ফোরণে শহীদ হন। তাঁদের মধ্যে ১৩৫ জন শহীদকে এখানে সমাহিত করা হয়। [সানিয়া সিতারা] | ||
[[en:Chihilghazi Mosque and Mazar]] | [[en:Chihilghazi Mosque and Mazar]] |
০৯:০৯, ১৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
চিহিলগাজী মসজিদ-মাযার দিনাজপুর জেলার সদর থানার চিহিলগাজী গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিমি উত্তরে পাকা রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে মসজিদটির অবস্থান। চিহিলগাজী মাযারটি মসজিদ সংলগ্ন।
মসজিদের কাল নির্দেশক তিনটি শিলালিপি ছিল। এর একটি দিনাজপুর জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এ শিলালিপি থেকে জানা যায়, ৮৬৫ হিজরির ১৬ সফর (১৪৬০ খ্রি ১ ডিসেম্বর) মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। সুলতান রুকনুদ্দীন বারবক শাহ এর রাজত্বকালে (১৪৫৯-৬০খ্রি-১৪৭৪ খ্রি.) তাঁর উজির ইকরার খানের নির্দেশে পূর্ণিয়া জেলার অন্তর্গত জোর ও বারুর (দিনাজপুর) পরগনার শাসনকর্তা (ফৌজদার ও জংদার) উলুঘ নুসরত খান এ মসজিদ নির্মাণ করেন।
বর্তমানে মসজিদটির দেয়াল ছাড়া আর কোনো অংশ অবশিষ্ট নেই। দেয়ালগুলি জঙ্গলে পরিপূর্ণ এবং ভগ্নপ্রায়। দেয়ালে কোনো অলঙ্করণ দেখা যায় না। তবে মিহরাবের কাছে কিছু পোড়ামাটির ফলক এখনও বর্তমান। এগুলির বেশির ভাগই খুলে পড়ছে।
বর্গাকার মসজিদটির মূলকক্ষের উপর একটি এবং পূর্বদিকের বারান্দার উপর সম্ভবত তিনটি গম্বুজ ছিল। মসজিদ পরিকল্পনার এ রীতি মুগল যুগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
বাইরের দিকে মসজিদের মূলকক্ষের আয়তন ৪.৯০ মি × ৪.৯০ মি। মূলকক্ষের পূর্বদিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে দুটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। পূর্বদিকের তিনটি প্রবেশপথের মধ্যে মাঝের খিলানের উচ্চতা ২.৬০ মিটার এবং প্রস্থ ০.৭৭ মিটার।
পূর্বদিকের বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪.৯০ মিটার এবং প্রস্থ ১.৮৩ মিটার। বারান্দায় প্রবেশের জন্য মূলকক্ষের পূর্বদিকের অনুরূপ আয়তনবিশিষ্ট তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদের ভেতরে পশ্চিমদিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব। মাঝের মিহরাবটি পাশের দুটির তুলনায় একটু বড়। মিহরাবগুলি বহুপত্র (multi cusped) খিলানবিশিষ্ট। মিহরাবের অলঙ্করণে পাথর দেখা যায়। পাথর ও পোড়ামাটির ফলক দিয়ে এ মিহরাবগুলি সুন্দরভাবে অলঙ্ককৃত। পোড়ামাটির ফলকগুলির মধ্যে ফুল, লতাপাতা এবং ঝুলন্ত মোটিফ লক্ষণীয়।
অনেকে মনে করেন যে, বর্গাকার একটি শিবমন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এ রকম ধারণার পেছনে কোনো যুক্তি নেই। মিহরাব, গম্বুজ, প্রবেশপথ এবং স্থাপত্যকৌশল সম্পূর্ণরূপে একটি মসজিদের। মন্দিরের গঠনপদ্ধতির সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। তবে এখানে প্রাপ্ত বিরাট গৌরীপট্ট শিবমন্দিরের ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন, প্রাচীন আমলের পাথর ও ইট, প্রাক-মুসলিম আমলের বাঁধানো ঘাটসহ দুটি জলাশয়, সে আমলের অন্যান্য ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন ইত্যাদি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, এখানে হিন্দুমন্দিরসহ একটি সমৃদ্ধিশালী জনপদের অস্তিত্ব ছিল। সে ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরের ইট-পাথর এ মসজিদে ব্যবহূত হয়েছিল বলে জানা যায়।
মাযার এর সময় নির্দেশক কোনো শিলালিপি পাওয়া যায় নি। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মি. ওয়েস্টমেকট ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে চিহিলগাজী মসজিদ থেকে তিনটি শিলালিপি উদ্ধার করেন। এ শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৪৬০ খ্রিস্টাব্দে চিহিলগাজী মসজিদটি নির্মাণ করার সময় মাযারটি সংস্কার করা হয়। অর্থাং মসজিদের পূর্বেই মাযারটির অস্তিত্ব ছিল। শিলালিপিতে চিহিলগাজী বা অন্য কোনো নামের উল্লেখ নেই। বুকানন হ্যামিল্টন-এর প্রতিবেদন থেকে প্রথম চিহিলগাজী মাযার সম্পর্কে জানা যায়।
স্থানীয় জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, ৪০ জন গাজীকে একত্রে এখানে সমাহিত করা হয়। এজন্য এ স্থানের নাম হয় চিহিল (চিহিল ফার্সি শব্দ, বাংলায় এ শব্দের অর্থ চল্লিশ) গাজী (ধর্মযোদ্ধা)। গোপাল নামে এক স্থানীয় হিন্দু রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে উক্ত গাজীরা শহীদ হন। সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের কামরূপ অধিকারের সময় (১৩৫৮ খ্রি.) সম্ভবত এ যুদ্ধটি হয়েছিল। এ রকম কান্তনগরে (গড় মল্লিকপুর) এবং খানসামায় আরও দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় ও নিহত সৈনিকদের যৌথভাবে সমাহিত করা হয়। প্রায় ১০০ বছর পরে ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে মাযারটি মেরামত করা হয়।
মাযারের উপরে কোনো আচ্ছাদন বা ছাদ ছিল না। ১৯৬৮ সালে এ মাযারের উপরে ছাদ নির্মাণ করা হয়, চারপাশে দেয়াল তৈরি করে মাযারটিকে আবৃত করা হয় মূল্যাবান রেশমি কাপড়ে এবং নির্মিত হয় তোরণ। নবনির্মিত ঘরটির আয়তন ২৫.১৫ মি × ৮.৫০ মি। ছাদের নিচে কবরকে ঘিরে আরেকটি রেলিং সংযুক্ত হয়। রেলিং এর আয়তন ২০.৬০ মি × ৪.১০ মি। মাযার সংলগ্ন পূর্বদিকে একটি, দক্ষিণ দিকে তিনটি বাঁধানো প্রাচীন কবর রয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে চিহিলগাজী মসজিদ, মসজিদের দক্ষিণে আরও একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম কোণে ১৭০ মি × ৯৭ মি আয়তন বিশিষ্ট উত্তর-দক্ষিণে লম্বা একটি প্রাচীন পুকুর রয়েছে। পূর্বদিকে এর চেয়ে ছোট আর একটি প্রাচীন পুকুর অবস্থিত। মাযারের পশ্চিমদিকে শালবন।
মাযারে প্রবেশপথের বামদিকে রয়েছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৩৫ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর। পাক বাহিনীর ফেলে যাওয়া মাইন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে ৬ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে এক আকস্মিক বিস্ফোরণে শহীদ হন। তাঁদের মধ্যে ১৩৫ জন শহীদকে এখানে সমাহিত করা হয়। [সানিয়া সিতারা]