খান, হাতেম আলী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''খান, হাতেম আলী''' (১৯০৪-১৯৭৭)  কৃষকনেতা। জন্ম ২৪ নভেম্বর ১৯০৪ সালে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানার বেলুয়া গ্রামে। তাঁর পিতা নায়েব আলী খান এবং মাতা সালমা খানম। জমিদার পরিবারে জন্ম নিলেও কৃষকদের মধ্যে চেতনা, অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের জীবনে অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়ন ছিল তাঁর ব্রত। তিনি ১৯২০ সালে হেমনগর হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন। ১৯২১ তিনি সালে কলকাতায় রিপন কলেজে ভর্তি হন। এ সময় তিনি সূর্যসেন, সত্যেনসেন, কবি নজরুল ইসলাম, জিতেন ঘোষ প্রমুখের সংস্পর্শে আসেন। তিনি ১৯২৪ সালে রিপন কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। কৃষকদের সংঘবদ্ধ করে তিনি জোতদারদের দাদন নীতির বিরুদ্ধে নিজ পিতা ও হেমনগরের জমিদারের বিরুদ্ধে ১৯২৫ সালে আন্দোলন করেন। ১৯২৬ সালে কলকাতায় [[আহমেদ, কমরেড মুজাফ্ফর|কমরেড মোজাফফর আহমদ]] এর সান্নিধ্যে আসেন। এখানে তিনি ‘সর্বহারা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। প্রায় ছয়মাস ‘সর্বহারা’ পত্রিকাটি চালু ছিল। এরপর তিনি চাষি মজুর, দিন-মজুর নামে দুইটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। সক্রিয় বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িত থেকেও তিনি ১৯২৬ সালে বি.এ ও ১৯২৮ সালে কলকাতা থেকে এম.এ পাস করেন।
'''খান, হাতেম আলী''' (১৯০৪-১৯৭৭)  কৃষকনেতা। জন্ম ২৪ নভেম্বর ১৯০৪ সালে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানার বেলুয়া গ্রামে। তাঁর পিতা নায়েব আলী খান এবং মাতা সালমা খানম। জমিদার পরিবারে জন্ম নিলেও কৃষকদের মধ্যে চেতনা, অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের জীবনে অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়ন ছিল তাঁর ব্রত। তিনি ১৯২০ সালে হেমনগর হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন। ১৯২১ তিনি সালে কলকাতায় রিপন কলেজে ভর্তি হন। এ সময় তিনি সূর্যসেন, সত্যেনসেন, কবি নজরুল ইসলাম, জিতেন ঘোষ প্রমুখের সংস্পর্শে আসেন। তিনি ১৯২৪ সালে রিপন কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। কৃষকদের সংঘবদ্ধ করে তিনি জোতদারদের দাদন নীতির বিরুদ্ধে নিজ পিতা ও হেমনগরের জমিদারের বিরুদ্ধে ১৯২৫ সালে আন্দোলন করেন। ১৯২৬ সালে কলকাতায় [[আহমেদ, কমরেড মুজাফ্ফর|কমরেড মোজাফফর আহমদ]] এর সান্নিধ্যে আসেন। এখানে তিনি ‘সর্বহারা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। প্রায় ছয়মাস ‘সর্বহারা’ পত্রিকাটি চালু ছিল। এরপর তিনি চাষি মজুর, দিন-মজুর নামে দুইটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। সক্রিয় বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িত থেকেও তিনি ১৯২৬ সালে বি.এ ও ১৯২৮ সালে কলকাতা থেকে এম.এ পাস করেন।


১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতা থেকে নিজ গ্রাম বেলুয়াতে এসে পল্লী উন্নয়নের উদ্দেশ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলনে তিনি টাঙ্গাইলে নেতৃত্ব দেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে তিনি বিপুল সংখ্যক প্রজা নিয়ে হেমনগরের জমিদার বাড়ি ঘেরাও করেন। তাঁর নামে [[%E0%A7%A7%E0%A7%A6%E0%A7%A7%E0%A7%AF%E0%A7%AB%E0%A7%AA|জমিদার]] একের পর এক ৩৯টি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু একদিকে সাক্ষীর অভাব, অন্যদিকে টাঙ্গাইল মহকুমা বারের কোনো আইনজীবী জমিদারের স্বপক্ষে কথা বলতে অস্বীকার করায় এ সব মামলা খারিজ হয়ে যায়। ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় [[আসাম|আসাম]], [[ত্রিপুরা২|ত্রিপুরা]] ও [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গ]] থেকে প্রায় ২০ হাজার উদ্বাস্ত্ত হেমনগর এসে উপস্থিত হলে তাদের এক মাস খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেন হাতেম আলী খান। ১৯৫৪ সালে তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে গোপালপুর থেকে বিজয়ী হন। একজন কৃষক নেতা হিসেবে তিনি বিভিন্ন  কৃষক সমিতি স্থাপন করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি কেন্দ্রীয় কৃষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি নিজ জেলা টাঙ্গাইল ছাড়াও রংপুর,দিনাজপুর, রায়পুর ও মুন্সীগঞ্জ অঞ্চলের তেভাগা সংগঠনে কাজ করেন। হাতেম আলী খান তাঁর সংগ্রামী জীবনে কয়েকবার কারা ভোগ করেন। ১৯৭৭ সালের ২৪ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়।  [খান মাহবুব]
১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতা থেকে নিজ গ্রাম বেলুয়াতে এসে পল্লী উন্নয়নের উদ্দেশ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলনে তিনি টাঙ্গাইলে নেতৃত্ব দেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে তিনি বিপুল সংখ্যক প্রজা নিয়ে হেমনগরের জমিদার বাড়ি ঘেরাও করেন। তাঁর নামে [[জমিদার|জমিদার]] একের পর এক ৩৯টি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু একদিকে সাক্ষীর অভাব, অন্যদিকে টাঙ্গাইল মহকুমা বারের কোনো আইনজীবী জমিদারের স্বপক্ষে কথা বলতে অস্বীকার করায় এ সব মামলা খারিজ হয়ে যায়। ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় [[আসাম|আসাম]], [[ত্রিপুরা২|ত্রিপুরা]] ও [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গ]] থেকে প্রায় ২০ হাজার উদ্বাস্ত্ত হেমনগর এসে উপস্থিত হলে তাদের এক মাস খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেন হাতেম আলী খান। ১৯৫৪ সালে তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে গোপালপুর থেকে বিজয়ী হন। একজন কৃষক নেতা হিসেবে তিনি বিভিন্ন  কৃষক সমিতি স্থাপন করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি কেন্দ্রীয় কৃষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি নিজ জেলা টাঙ্গাইল ছাড়াও রংপুর,দিনাজপুর, রায়পুর ও মুন্সীগঞ্জ অঞ্চলের তেভাগা সংগঠনে কাজ করেন। হাতেম আলী খান তাঁর সংগ্রামী জীবনে কয়েকবার কারা ভোগ করেন। ১৯৭৭ সালের ২৪ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়।  [খান মাহবুব]


[[en:Khan, Hatem Ali]]
[[en:Khan, Hatem Ali]]

১০:০২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

খান, হাতেম আলী (১৯০৪-১৯৭৭)  কৃষকনেতা। জন্ম ২৪ নভেম্বর ১৯০৪ সালে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানার বেলুয়া গ্রামে। তাঁর পিতা নায়েব আলী খান এবং মাতা সালমা খানম। জমিদার পরিবারে জন্ম নিলেও কৃষকদের মধ্যে চেতনা, অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের জীবনে অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়ন ছিল তাঁর ব্রত। তিনি ১৯২০ সালে হেমনগর হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন। ১৯২১ তিনি সালে কলকাতায় রিপন কলেজে ভর্তি হন। এ সময় তিনি সূর্যসেন, সত্যেনসেন, কবি নজরুল ইসলাম, জিতেন ঘোষ প্রমুখের সংস্পর্শে আসেন। তিনি ১৯২৪ সালে রিপন কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। কৃষকদের সংঘবদ্ধ করে তিনি জোতদারদের দাদন নীতির বিরুদ্ধে নিজ পিতা ও হেমনগরের জমিদারের বিরুদ্ধে ১৯২৫ সালে আন্দোলন করেন। ১৯২৬ সালে কলকাতায় কমরেড মোজাফফর আহমদ এর সান্নিধ্যে আসেন। এখানে তিনি ‘সর্বহারা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। প্রায় ছয়মাস ‘সর্বহারা’ পত্রিকাটি চালু ছিল। এরপর তিনি চাষি মজুর, দিন-মজুর নামে দুইটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। সক্রিয় বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িত থেকেও তিনি ১৯২৬ সালে বি.এ ও ১৯২৮ সালে কলকাতা থেকে এম.এ পাস করেন।

১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতা থেকে নিজ গ্রাম বেলুয়াতে এসে পল্লী উন্নয়নের উদ্দেশ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলনে তিনি টাঙ্গাইলে নেতৃত্ব দেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে তিনি বিপুল সংখ্যক প্রজা নিয়ে হেমনগরের জমিদার বাড়ি ঘেরাও করেন। তাঁর নামে জমিদার একের পর এক ৩৯টি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু একদিকে সাক্ষীর অভাব, অন্যদিকে টাঙ্গাইল মহকুমা বারের কোনো আইনজীবী জমিদারের স্বপক্ষে কথা বলতে অস্বীকার করায় এ সব মামলা খারিজ হয়ে যায়। ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আসাম, ত্রিপুরাপশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় ২০ হাজার উদ্বাস্ত্ত হেমনগর এসে উপস্থিত হলে তাদের এক মাস খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেন হাতেম আলী খান। ১৯৫৪ সালে তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে গোপালপুর থেকে বিজয়ী হন। একজন কৃষক নেতা হিসেবে তিনি বিভিন্ন  কৃষক সমিতি স্থাপন করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি কেন্দ্রীয় কৃষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি নিজ জেলা টাঙ্গাইল ছাড়াও রংপুর,দিনাজপুর, রায়পুর ও মুন্সীগঞ্জ অঞ্চলের তেভাগা সংগঠনে কাজ করেন। হাতেম আলী খান তাঁর সংগ্রামী জীবনে কয়েকবার কারা ভোগ করেন। ১৯৭৭ সালের ২৪ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়।  [খান মাহবুব]