রাষ্ট্রপতি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ২টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''রাষ্ট্রপতি''' গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রধান। বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ অংশের ৪৮-৫৪ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি সম্পর্কিত বিধানাবলি বিধৃত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত এবং তিনি সংবিধান ও আইন বলে তাঁর উপর অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। অধিকন্তু সরকারের যাবতীয় নির্বাহী কার্যাদি রাষ্ট্রপতির নামে সম্পাদন করা হয়। তত্ত্বীয়ভাবে সকলের ঊর্ধ্বে থাকলেও বাস্তবে তিনি | '''রাষ্ট্রপতি''' গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রধান। বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ অংশের ৪৮-৫৪ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি সম্পর্কিত বিধানাবলি বিধৃত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত এবং তিনি সংবিধান ও আইন বলে তাঁর উপর অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। অধিকন্তু সরকারের যাবতীয় নির্বাহী কার্যাদি রাষ্ট্রপতির নামে সম্পাদন করা হয়। তত্ত্বীয়ভাবে সকলের ঊর্ধ্বে থাকলেও বাস্তবে তিনি শিরোপাবাহক প্রধান হিসেবে শুধু আনুষ্ঠানিক কার্যাদি সম্পন্ন করেন এবং প্রকৃত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নির্বাহ করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদ। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) ধারা অনুসারে [[প্রধানমন্ত্রী|প্রধানমন্ত্রী]] নিয়োগ ব্যতীত রাষ্ট্রপতি সর্বদা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে কার্যনির্বাহ করেন। | ||
''রাষ্ট্রপতি নির্বাচন'' | '''''রাষ্ট্রপতি নির্বাচন''''' স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতিশাসিত ও সংসদীয় উভয় পদ্ধতিতে পরিচালিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি মাঝেমধ্যে পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানের দ্বিতীয় তফসিল মোতাবেক রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতেন সংসদ সদস্যদের গোপন ভোটে। পরবর্তীকালে সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনী অনুসারে প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান প্রবর্তিত হয়। অতঃপর সংবিধানের (১২তম সংশোধনী) আইন ১৯৯১ অনুসারে সংসদীয় পদ্ধতি চালু হলে পরোক্ষ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান করা হয়। বর্তমানে অনুচ্ছেদ ৪৮ অনুসারে সংসদ-সদস্যদের দ্বারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। | ||
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৪) অনুসারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা | সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৪) অনুসারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা নিুরূপ: অন্যূন ৩৫ বছর বয়স; সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা; এবং এমন শর্তে যে, সংবিধানের আওতায় তিনি কখনও ওই পদ থেকে অপসারিত হন নি। রাষ্ট্রপতি তার কার্যকালের মেয়াদে [[জাতীয় সংসদ|জাতীয় সংসদ]] নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এবং কোনো সংসদ-সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কার্যভার গ্রহণের দিনই তিনি তার সদস্যপদে ইস্তফা দেবেন। অধিকন্তু, রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালে তিনি আর্থিকভাবে লাভজনক অন্য কোনো কাজ, পদ বা দায়িত্ব গ্রহণ করতে অথবা কোনো ব্যবস্থাপনায় যোগ দিতে কিংবা লাভ বা মুনাফা অর্জনকারী কোনো কোম্পানি বা সংস্থা পরিচালনা করতে পারবেন না। | ||
বাংলাদেশ সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকে ৫ বছর মেয়াদে স্বপদে আসীন থাকবেন এবং মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও পরবর্তী রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বপদে বহাল থাকবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি দুটি মেয়াদের অধিককাল এই পদে থাকতে পারবেন না, তা ধারাবাহিক হোক বা নাই হোক। রাষ্ট্রপতি নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে পদত্যাগ করতে চাইলে তাকে সংসদের স্পিকার বরাবর লিখিতভাবে তা জানাতে হবে। অনুচ্ছেদ ৫৪ অনুসারে কোনো কারণে রাষ্ট্রপতির পদ | বাংলাদেশ সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকে ৫ বছর মেয়াদে স্বপদে আসীন থাকবেন এবং মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও পরবর্তী রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বপদে বহাল থাকবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি দুটি মেয়াদের অধিককাল এই পদে থাকতে পারবেন না, তা ধারাবাহিক হোক বা নাই হোক। রাষ্ট্রপতি নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে পদত্যাগ করতে চাইলে তাকে সংসদের স্পিকার বরাবর লিখিতভাবে তা জানাতে হবে। অনুচ্ছেদ ৫৪ অনুসারে কোনো কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে অথবা রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতি ইত্যাদি কারণে স্বীয় কার্যক্রম সম্পাদনে অসমর্থ হলে, স্পিকার রাষ্ট্রপতির কার্যে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত অথবা পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬০-৯০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপাসরণজনিত কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে তা পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। | ||
'''''রাষ্ট্রপতির কার্যাবলি''''' | '''''রাষ্ট্রপতির কার্যাবলি''''' রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলির মূলত দুটি উৎস হলো সংবিধান ও অন্য যেকোন আইন। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সাধারণভাবে প্রয়োগকৃত ক্ষমতা নিুরূপ: | ||
''নির্বাহী ক্ষমতা'' | ''নির্বাহী ক্ষমতা'' রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান; সরকারের যাবতীয় নির্বাহী কার্যাদি রাষ্ট্রপতির নামে সম্পাদিত হয়। রাষ্ট্রপতি আইনবলে তার নামে প্রণীত আদেশ ও অন্যান্য দলিল সত্যায়িত বা প্রমাণীকৃত হওয়ার ধরন নির্ধারণ করেন। রাষ্ট্রপতি সরকারের কার্যক্রম বণ্টন ও কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য বিধি প্রণয়ন করেন। তার বিবেচনায় অধিকাংশ সংসদ-সদস্যের সমর্থন লাভে সক্ষম একজন সংসদ-সদস্যকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও রাষ্ট্রপতি অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদেরও নিয়োগ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যদের নিয়োগ প্রদান করেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের দায়িত্বও রাষ্ট্রপতির। রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সার্ভিসের সর্বাধিনায়ক। | ||
বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতির বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতার উৎস। এতে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্যতর কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত শাস্তি মার্জনা, স্থগিত, বিলম্বিত ও হ্রাস করতে পারেন। | |||
বিধানিক ক্ষমতাপ্রধানমন্ত্রীর লিখিত পরামর্শ অনুসারে রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশন আহ্বান স্থগিতকরণ ও ভেঙ্গে দিতে পারেন। সংসদে ভাষণ প্রদানের এবং বাণী প্রেরণের অধিকার রাষ্ট্রপতির আছে। সংসদে গৃহীত প্রতিটি বিলের জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রয়োজন, কেননা রাষ্ট্রপতির সম্মতি ব্যতীত কোনো বিল আইনে পরিণত হয় না। সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া হলে বা সংসদ অধিবেশন চালু না থাকলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করে আইন তৈরি করতে পারেন এবং এসব অধ্যাদেশ সংসদে গৃহীত আইনের মতোই কার্যকর বলে গণ্য। | |||
আর্থিক ক্ষমতাঅর্থবিল বা সরকারি ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত যেকোন বিল রাষ্ট্রপতির সুপারিশ ব্যতীত সংসদে পেশ করা যাবে না। রাষ্ট্রপতির অনুমতি ব্যতীত কোনো অনুদান দাবি করা যাবে না। অনুপূরক বা অতিরিক্ত অনুদান হিসেবে সমন্বিত তহবিল থেকে ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। জাতীয় সংসদ কোন অর্থ বছরে অনুদান মঞ্জুরে ব্যর্থ হলে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি সমন্বিত তহবিল থেকে ঐ বছরের বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখক্রমে অনূর্ধ্ব ৬০ দিনের ব্যয় সংকুলানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে পারেন। | |||
বিবিধ ক্ষমতা উপর্যুক্ত ক্ষমতা নির্বাহের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণ করানোর মতো কিছু কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে সংবিধানের তৃতীয় তপসিল অনুসারে রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণ করান। অনুরূপভাবে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের প্রেরণ ও গ্রহণ করেন। বৈদেশিক রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সম্পাদিত যাবতীয় চুক্তি, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও মহা হিসাবনিরীক্ষকের বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয় এবং তিনি সেগুলো সংসদে পাঠান। | |||
''বিমুক্তি'' | '''''বিমুক্তি''''' সংবিধানের ৫১ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতিকে তার দায়িত্ব পালনকালে ত্র“টি বিচ্যূতির জন্য আদালতে জবাবদিহি থেকে বিমুক্তি দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির কার্যকালে তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি কার্যবিধি রুজু করা যাবে না এবং কোনো আদালত তাকে গ্রেপ্তার বা আটকের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না। | ||
''রাষ্ট্রপতির অপসারণ'' | '''''রাষ্ট্রপতির অপসারণ''''' মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে জাতীয় সংসদ দুটি প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে: (ক) ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে এবং (খ) অসামর্থ্যরে কারণে অপসারণের মাধ্যমে। | ||
''ইমপিচমেন্ট'' | (ক) ''ইমপিচমেন্ট'' সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদ মতে দুটি কারণে রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচ করা যেতে পারে, সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে এবং গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে। সংসদের মোট সদস্যের অধিকাংশের স্বাক্ষরিত নোটিশ অব মোশনের মাধ্যমেই শুধু রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের অভিযোগ আনা যায়। নোটিশটি অবশ্যই স্পিকারের নিকট পেশ করতে হবে এবং তাতে অবশ্যই নির্দিষ্ট অভিযোগের বিবরণ উল্লিখিত থাকবে। এ সম্পর্কে ১৪ দিনের আগে কোনো বিতর্ক শুরু করা যাবে না কিংবা স্পিকারকে নোটিশ প্রদানের পর ৩০ দিনের বেশি বিলম্বও করা যাবে না। নোটিশ পাওয়ার পর সংসদ কার্যরত না থাকলে স্পিকার সংসদের অধিবেশন আহ্বান করবেন। অভিযোগ পর্যালোচনার সময় রাষ্ট্রপতি উপস্থিত থাকতে ও আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন। অভিযোগ বিবেচনার পর মোট সদস্যের অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে যদি এ প্রস্তাব পাস হয় যে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাহলে প্রস্তব গৃহীত হওয়ার দিনই রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করবেন। | ||
''অপসারণ'' | (খ) ''অপসারণ'' সংবিধানের ৫৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে দু ধরনের অযোগ্যতার দরুন রাষ্ট্রপতি অপসারিত হতে পারেন, শারীরিক অক্ষমতা এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতা। রাষ্ট্রপতি শারীরিক বা মানসিক ভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন এ মর্মে একটি নোটিশ অব মোশন দেওয়া যেতে পারে। এটি অধিকাংশ সংসদ-সদস্য দ্বারা স্বাক্ষরিত হতে হবে এবং অভিযোগে বর্ণিত অসামর্থ্যের বিস্তারিত বিবরণসহ তা স্পিকারের কাছে পেশ করতে হবে। নোটিশ প্রাপ্তির পর সংসদ কার্যরত না থাকলে স্পিকার সংসদের অধিবেশন আহ্বান করবেন এবং মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করতে বলবেন। মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পিকারের স্বাক্ষরিত নোটিশের একটি কপি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হবে এবং তিনি যেন প্রজ্ঞাপন প্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে মেডিকেল বোর্ডকে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ দেন সে মর্মে স্পিকার তাকে অনুরোধ জানাবেন। রাষ্ট্রপতি বোর্ডকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ দিলে পরীক্ষার ৭ দিনের মধ্যে বোর্ড ফলাফলের রিপোর্ট দাখিল করবে। সংসদে এ প্রস্তাব ও রিপোর্ট আলোচনার পর মোট সদস্যের অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে পাস হলে রাষ্ট্রপতি প্রস্তাব পাসের দিনই নিজ কার্যভার ত্যাগ করবেন। আলোচনার সময় তিনি সংসদে উপস্থিত থেকে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন। | ||
'''''রাষ্ট্রপতির কার্যালয়''''' | '''''রাষ্ট্রপতির কার্যালয়''''' রাষ্ট্রপতিকে তার কাজে সর্বতোভাবে সাহায্যের জন্য রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে তার একটি কার্যালয় রয়েছে। এ কার্যালয় দুটি বিভাগে বিভক্ত, সরকারি বিভাগ ও ব্যক্তিগত বিভাগ। সরকারি বিভাগের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে সাংবিধানিক, আইনগত ও নির্বাহী দায়িত্ব পালনে দাপ্তরিক সহায়তা দান। ব্যক্তিগত বিভাগের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রপতির বাসভবন সংক্রান্ত কাজকর্ম পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান, আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা, অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, ভিনদেশী সম্মানিত ব্যক্তি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের অভ্যর্থনা ও ভোজ ব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিধান ও প্রতিরক্ষা কার্য সম্পাদন ইত্যাদি। | ||
''সারণি'' | ''সারণি'' বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। | ||
{| class="table table-bordered table-hover" | {| class="table table-bordered table-hover" | ||
|- | |- | ||
৬৯ নং লাইন: | ৬৯ নং লাইন: | ||
| ইয়াজউদ্দিন আহমদ || ৬ সেপ্টেম্বর ২০০২-১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ | | ইয়াজউদ্দিন আহমদ || ৬ সেপ্টেম্বর ২০০২-১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ | ||
|- | |- | ||
| মো. | | মো. আবদুল হামিদ || ২৪ এপ্রিল ২০১৮-২৪ এপ্রিল ২০২৩ | ||
|- | |||
|মো. শাহাবুদ্দিন || ২৪ এপ্রিল ২০২৩- | |||
|} | |} | ||
[মোহাম্মদ এহসান] | [মোহাম্মদ এহসান] | ||
[[en:Rastrapati]] | [[en:Rastrapati]] |
১০:৪২, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রধান। বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ অংশের ৪৮-৫৪ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি সম্পর্কিত বিধানাবলি বিধৃত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত এবং তিনি সংবিধান ও আইন বলে তাঁর উপর অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। অধিকন্তু সরকারের যাবতীয় নির্বাহী কার্যাদি রাষ্ট্রপতির নামে সম্পাদন করা হয়। তত্ত্বীয়ভাবে সকলের ঊর্ধ্বে থাকলেও বাস্তবে তিনি শিরোপাবাহক প্রধান হিসেবে শুধু আনুষ্ঠানিক কার্যাদি সম্পন্ন করেন এবং প্রকৃত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নির্বাহ করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদ। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) ধারা অনুসারে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ ব্যতীত রাষ্ট্রপতি সর্বদা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে কার্যনির্বাহ করেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতিশাসিত ও সংসদীয় উভয় পদ্ধতিতে পরিচালিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি মাঝেমধ্যে পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানের দ্বিতীয় তফসিল মোতাবেক রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতেন সংসদ সদস্যদের গোপন ভোটে। পরবর্তীকালে সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনী অনুসারে প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান প্রবর্তিত হয়। অতঃপর সংবিধানের (১২তম সংশোধনী) আইন ১৯৯১ অনুসারে সংসদীয় পদ্ধতি চালু হলে পরোক্ষ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান করা হয়। বর্তমানে অনুচ্ছেদ ৪৮ অনুসারে সংসদ-সদস্যদের দ্বারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৪) অনুসারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা নিুরূপ: অন্যূন ৩৫ বছর বয়স; সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা; এবং এমন শর্তে যে, সংবিধানের আওতায় তিনি কখনও ওই পদ থেকে অপসারিত হন নি। রাষ্ট্রপতি তার কার্যকালের মেয়াদে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এবং কোনো সংসদ-সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কার্যভার গ্রহণের দিনই তিনি তার সদস্যপদে ইস্তফা দেবেন। অধিকন্তু, রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালে তিনি আর্থিকভাবে লাভজনক অন্য কোনো কাজ, পদ বা দায়িত্ব গ্রহণ করতে অথবা কোনো ব্যবস্থাপনায় যোগ দিতে কিংবা লাভ বা মুনাফা অর্জনকারী কোনো কোম্পানি বা সংস্থা পরিচালনা করতে পারবেন না।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকে ৫ বছর মেয়াদে স্বপদে আসীন থাকবেন এবং মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও পরবর্তী রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বপদে বহাল থাকবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি দুটি মেয়াদের অধিককাল এই পদে থাকতে পারবেন না, তা ধারাবাহিক হোক বা নাই হোক। রাষ্ট্রপতি নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে পদত্যাগ করতে চাইলে তাকে সংসদের স্পিকার বরাবর লিখিতভাবে তা জানাতে হবে। অনুচ্ছেদ ৫৪ অনুসারে কোনো কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে অথবা রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতি ইত্যাদি কারণে স্বীয় কার্যক্রম সম্পাদনে অসমর্থ হলে, স্পিকার রাষ্ট্রপতির কার্যে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত অথবা পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬০-৯০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপাসরণজনিত কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে তা পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রাষ্ট্রপতির কার্যাবলি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলির মূলত দুটি উৎস হলো সংবিধান ও অন্য যেকোন আইন। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সাধারণভাবে প্রয়োগকৃত ক্ষমতা নিুরূপ:
নির্বাহী ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান; সরকারের যাবতীয় নির্বাহী কার্যাদি রাষ্ট্রপতির নামে সম্পাদিত হয়। রাষ্ট্রপতি আইনবলে তার নামে প্রণীত আদেশ ও অন্যান্য দলিল সত্যায়িত বা প্রমাণীকৃত হওয়ার ধরন নির্ধারণ করেন। রাষ্ট্রপতি সরকারের কার্যক্রম বণ্টন ও কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য বিধি প্রণয়ন করেন। তার বিবেচনায় অধিকাংশ সংসদ-সদস্যের সমর্থন লাভে সক্ষম একজন সংসদ-সদস্যকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও রাষ্ট্রপতি অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদেরও নিয়োগ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যদের নিয়োগ প্রদান করেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের দায়িত্বও রাষ্ট্রপতির। রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সার্ভিসের সর্বাধিনায়ক।
বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতির বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতার উৎস। এতে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্যতর কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত শাস্তি মার্জনা, স্থগিত, বিলম্বিত ও হ্রাস করতে পারেন।
বিধানিক ক্ষমতাপ্রধানমন্ত্রীর লিখিত পরামর্শ অনুসারে রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশন আহ্বান স্থগিতকরণ ও ভেঙ্গে দিতে পারেন। সংসদে ভাষণ প্রদানের এবং বাণী প্রেরণের অধিকার রাষ্ট্রপতির আছে। সংসদে গৃহীত প্রতিটি বিলের জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রয়োজন, কেননা রাষ্ট্রপতির সম্মতি ব্যতীত কোনো বিল আইনে পরিণত হয় না। সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া হলে বা সংসদ অধিবেশন চালু না থাকলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করে আইন তৈরি করতে পারেন এবং এসব অধ্যাদেশ সংসদে গৃহীত আইনের মতোই কার্যকর বলে গণ্য।
আর্থিক ক্ষমতাঅর্থবিল বা সরকারি ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত যেকোন বিল রাষ্ট্রপতির সুপারিশ ব্যতীত সংসদে পেশ করা যাবে না। রাষ্ট্রপতির অনুমতি ব্যতীত কোনো অনুদান দাবি করা যাবে না। অনুপূরক বা অতিরিক্ত অনুদান হিসেবে সমন্বিত তহবিল থেকে ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। জাতীয় সংসদ কোন অর্থ বছরে অনুদান মঞ্জুরে ব্যর্থ হলে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি সমন্বিত তহবিল থেকে ঐ বছরের বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখক্রমে অনূর্ধ্ব ৬০ দিনের ব্যয় সংকুলানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে পারেন।
বিবিধ ক্ষমতা উপর্যুক্ত ক্ষমতা নির্বাহের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণ করানোর মতো কিছু কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে সংবিধানের তৃতীয় তপসিল অনুসারে রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণ করান। অনুরূপভাবে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের প্রেরণ ও গ্রহণ করেন। বৈদেশিক রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সম্পাদিত যাবতীয় চুক্তি, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও মহা হিসাবনিরীক্ষকের বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয় এবং তিনি সেগুলো সংসদে পাঠান।
বিমুক্তি সংবিধানের ৫১ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতিকে তার দায়িত্ব পালনকালে ত্র“টি বিচ্যূতির জন্য আদালতে জবাবদিহি থেকে বিমুক্তি দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির কার্যকালে তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি কার্যবিধি রুজু করা যাবে না এবং কোনো আদালত তাকে গ্রেপ্তার বা আটকের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না।
রাষ্ট্রপতির অপসারণ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে জাতীয় সংসদ দুটি প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে: (ক) ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে এবং (খ) অসামর্থ্যরে কারণে অপসারণের মাধ্যমে।
(ক) ইমপিচমেন্ট সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদ মতে দুটি কারণে রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচ করা যেতে পারে, সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে এবং গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে। সংসদের মোট সদস্যের অধিকাংশের স্বাক্ষরিত নোটিশ অব মোশনের মাধ্যমেই শুধু রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের অভিযোগ আনা যায়। নোটিশটি অবশ্যই স্পিকারের নিকট পেশ করতে হবে এবং তাতে অবশ্যই নির্দিষ্ট অভিযোগের বিবরণ উল্লিখিত থাকবে। এ সম্পর্কে ১৪ দিনের আগে কোনো বিতর্ক শুরু করা যাবে না কিংবা স্পিকারকে নোটিশ প্রদানের পর ৩০ দিনের বেশি বিলম্বও করা যাবে না। নোটিশ পাওয়ার পর সংসদ কার্যরত না থাকলে স্পিকার সংসদের অধিবেশন আহ্বান করবেন। অভিযোগ পর্যালোচনার সময় রাষ্ট্রপতি উপস্থিত থাকতে ও আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন। অভিযোগ বিবেচনার পর মোট সদস্যের অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে যদি এ প্রস্তাব পাস হয় যে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাহলে প্রস্তব গৃহীত হওয়ার দিনই রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করবেন।
(খ) অপসারণ সংবিধানের ৫৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে দু ধরনের অযোগ্যতার দরুন রাষ্ট্রপতি অপসারিত হতে পারেন, শারীরিক অক্ষমতা এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতা। রাষ্ট্রপতি শারীরিক বা মানসিক ভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন এ মর্মে একটি নোটিশ অব মোশন দেওয়া যেতে পারে। এটি অধিকাংশ সংসদ-সদস্য দ্বারা স্বাক্ষরিত হতে হবে এবং অভিযোগে বর্ণিত অসামর্থ্যের বিস্তারিত বিবরণসহ তা স্পিকারের কাছে পেশ করতে হবে। নোটিশ প্রাপ্তির পর সংসদ কার্যরত না থাকলে স্পিকার সংসদের অধিবেশন আহ্বান করবেন এবং মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করতে বলবেন। মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পিকারের স্বাক্ষরিত নোটিশের একটি কপি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হবে এবং তিনি যেন প্রজ্ঞাপন প্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে মেডিকেল বোর্ডকে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ দেন সে মর্মে স্পিকার তাকে অনুরোধ জানাবেন। রাষ্ট্রপতি বোর্ডকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ দিলে পরীক্ষার ৭ দিনের মধ্যে বোর্ড ফলাফলের রিপোর্ট দাখিল করবে। সংসদে এ প্রস্তাব ও রিপোর্ট আলোচনার পর মোট সদস্যের অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে পাস হলে রাষ্ট্রপতি প্রস্তাব পাসের দিনই নিজ কার্যভার ত্যাগ করবেন। আলোচনার সময় তিনি সংসদে উপস্থিত থেকে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয় রাষ্ট্রপতিকে তার কাজে সর্বতোভাবে সাহায্যের জন্য রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে তার একটি কার্যালয় রয়েছে। এ কার্যালয় দুটি বিভাগে বিভক্ত, সরকারি বিভাগ ও ব্যক্তিগত বিভাগ। সরকারি বিভাগের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে সাংবিধানিক, আইনগত ও নির্বাহী দায়িত্ব পালনে দাপ্তরিক সহায়তা দান। ব্যক্তিগত বিভাগের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রপতির বাসভবন সংক্রান্ত কাজকর্ম পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান, আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা, অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, ভিনদেশী সম্মানিত ব্যক্তি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের অভ্যর্থনা ও ভোজ ব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিধান ও প্রতিরক্ষা কার্য সম্পাদন ইত্যাদি।
সারণি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।
নাম | মেয়াদ |
শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু | ১৭ এপ্রিল ১৯৭১-১২ জানুয়ারি ১৯৭২ |
সৈয়দ নজরুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত) | ১৭ এপ্রিল ১৯৭১-১০ জানুয়ারি ১৯৭২ |
আবু সাঈদ চৌধুরী | ১২ জানুয়ারি ১৯৭২-২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩ |
মোহাম্মদ মোহাম্মদউল্লাহ | ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩-২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ |
শেখ মুজিবুর রহমান | ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫-১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ |
খন্দকার মোশতাক আহমদ | ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫-৬ নভেম্বর ১৯৭৫ |
আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম | ৬ নভেম্বর ১৯৭৫-২১ এপ্রিল ১৯৭৭ |
জিয়াউর রহমান | ২১ এপ্রিল ১৯৭৭-৩০ মে ১৯৮১ |
আবদুস সাত্তার | ৩০ মে ১৯৮১-২৪ মার্চ ১৯৮২ |
এ.এফ.এম আহসানউদ্দিন চৌধুরী | ২৭ মার্চ ১৯৮২-১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ |
হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ | ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩-৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ |
সাহাবুদ্দিন আহমদ (ভারপ্রাপ্ত) | ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০-৯ অক্টোবর ১৯৯১ |
আবদুর রহমান বিশ্বাস | ৯ অক্টোবর ১৯৯১-৯ অক্টোবর ১৯৯৬ |
সাহাবুদ্দিন আহমদ | ৯ অক্টোবর ১৯৯৬-১৪ নভেম্বর ২০০১ |
এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী | ১৪ নভেম্বর ২০০১-২১ জুন ২০০২ |
জমিরউদ্দিন সরকার (ভারপ্রাপ্ত) | ২১ জুন ২০০২-৬ সেপ্টেম্বর ২০০২ |
ইয়াজউদ্দিন আহমদ | ৬ সেপ্টেম্বর ২০০২-১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ |
মো. আবদুল হামিদ | ২৪ এপ্রিল ২০১৮-২৪ এপ্রিল ২০২৩ |
মো. শাহাবুদ্দিন | ২৪ এপ্রিল ২০২৩- |
[মোহাম্মদ এহসান]