গৌরীপুর উপজেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
(হালনাগাদ)
 
(একজন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''গৌরীপুর উপজেলা''' ([[ময়মনসিংহ জেলা|ময়মনসিংহ জেলা]])  আয়তন: ২৭৪.০৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৮´ থেকে ২৪°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৭´ থেকে ৯০°৪৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলা, দক্ষিণে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে কেন্দুয়া  ও নেত্রকোনা সদর উপজেলা, পশ্চিমে ময়মনসিংহ সদর ও ফুলপুর উপজেলা।
'''গৌরীপুর উপজেলা''' ([[ময়মনসিংহ জেলা|ময়মনসিংহ জেলা]])  আয়তন: ২৭৬.৭৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৮´ থেকে ২৪°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৭´ থেকে ৯০°৪৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলা, দক্ষিণে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে কেন্দুয়া  ও নেত্রকোনা সদর উপজেলা, পশ্চিমে ময়মনসিংহ সদর ও ফুলপুর উপজেলা।


''জনসংখ্যা''  ২৮২৯৪০; পুরুষ ১৪৪৬৪৩, মহিলা ১৩৮২৯৭। মুসলিম ২৭০৩৭০, হিন্দু ১১৮৮৯, বৌদ্ধ ৫৮, খ্রিস্টান ১১ এবং অন্যান্য ৬১২।
''জনসংখ্যা''  ৩২৩০৫৭; পুরুষ ১৫৯৭২২, মহিলা ১৬৩৩৩৫। মুসলিম ৩১০০৪৫, হিন্দু ১২৬৫৪, বৌদ্ধ , খ্রিস্টান ৬২ এবং অন্যান্য ২৯৩।


''জলাশয়''  প্রধান নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, সোয়াই, সুরিয়া, সাপরা। সিধলা বিল, বড় বিল, কচুরি বিল ও দলিয়া বিল উল্লেখযোগ্য।
''জলাশয়''  প্রধান নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, সোয়াই, সুরিয়া, সাপরা। সিধলা বিল, বড় বিল, কচুরি বিল ও দলিয়া বিল উল্লেখযোগ্য।
১৬ নং লাইন: ১৬ নং লাইন:
| শহর  || গ্রাম || শহর  || গ্রাম
| শহর  || গ্রাম || শহর  || গ্রাম
|-
|-
| ১ || ১০ || ২৪৫  || ২৯০  || ২০৮৭৫  || ২৬২০৬৫  || ১০৩২  || ৫৭.৮  || ৩৫.
| ১ || ১০ || ২৪০ || ২৮৯ || ২৫৫৭০ || ২৯৭৪৮৭ || ১১৬৭ || ৬৪.|| ৪১.
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
২৪ নং লাইন: ২৪ নং লাইন:
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || ওয়ার্ড  || মহল্লা  || লোকসংখ্যা  || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || ওয়ার্ড  || মহল্লা  || লোকসংখ্যা  || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
|-
|-
| ৮.৭৭  || ৯ || ৩৪ || ২০৮৭৫ || ২৩৮৩  || ৫৭.
| ৮.৮০ || ৯ || ৩৪ || ২৫৫৭০ || ২৯০৬ || ৬৪.
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
৩৪ নং লাইন: ৩৪ নং লাইন:
| পুরুষ  || মহিলা
| পুরুষ  || মহিলা
|-  
|-  
| অচিন্ত্যপুর ১৫ || ৭১৯৫  || ১২৯৬৬ || ১২৫১২  || ৩৪.৮৯
| অচিন্ত্যপুর ১৫ || ৭১২৫ || ১৩৯৬২ || ১৪৬৪০ || ৪৩.
|-
|-
| গৌরীপুর ৩১ || ৫৫৬৩  || ১২০২৭ || ১১৭৯৬  || ৩৮.৬৬
| গৌরীপুর ৩১ || ৫৭৪৩ || ১৩০৩০ || ১৩৮৪২ || ৩৭.
|-
|-
| ঢাকাখোলা ২৭ || ৫৬১৭  || ১৪৮১৬ || ১৪২২০  || ৩৫.২৭
| ঢাকাখোলা ২৭ || ৫৭৯৬ || ১৬৫৯১ || ১৭২১৫ || ৪৬.
|-
|-
| বোকাইনগর ২২ || ৬৪৭১  || ১৫৩৭৪ || ১৩৯৯৩  || ৩৩.৬৮
| বোকাইনগর ২২ || ৬৮৫৪ || ১৬১৫৬ || ১৬২২৮ || ৩৮.
|-
|-
| ভাংনামারি ১৮ || ৬৮২৫  || ১১৯৭০ || ১১২৪৫  || ৩৩.৪২
| ভাংনামারি ১৮ || ৬৮২৩ || ১২৫৬৩ || ১২৯০২ || ৪৩.
|-
|-
| মাইলাকান্দা  ৪৯ || ৬০৫৫  || ১২৮৯৯ || ১২৩৫৬  || ৩৯.৫৯
| মাইলাকান্দা  ৪৯ || ৬০৪৮ || ১৪০৫৮ || ১৪৪২৬ || ৪৪.
|-
|-
| মাওহা ৫৮ || ৬৭০৪  || ১২১১৪ || ১১৬৯৩  || ৩৫০৩৯
| মাওহা ৫৮ || ৬৬৯৩ || ১৩৩০৫ || ১৩১৯৭ || ৩৬.১
|-
|-
| রামগোপালপুর ৭২ || ৭৪৫৬  || ১৬২০৫ || ১৫৩৭০  || ৩৫.৩৬
| রামগোপালপুর ৭২ || ৭৪৫৫ || ১৮৪৪৯ || ১৮৭৪৬ || ৪৯.
|-
|-
| সাহানটি ৮১ || ৬৬৭১  || ১৩৩৭২ || ১৩১০৭  || ৩৪.৪৬
| সাহানটি ৮১ || ৬৭২৫ || ১৫৬০৭ || ১৫৭৩৩ || ৩৩.
|-
|-
| সিধলা ৮৫ || ৬৯৫৭ || ১২১৮১ || ১১৮৪৯  || ২৯.৯২
| সিধলা ৮৫ || ৬৯৫৭ || ১৩২১৯ || ১৩৬১৮ || ৪১.
|}
|}
''সূত্র''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
''সূত্র''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।


[[Image:GauripurUpazilaMymensingh.jpg|thumb|right]]
[[Image:GauripurUpazilaMymensingh.jpg|thumb|400px|right]]
''প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ''  উমর খাঁর রাজধানীর মাটির প্রতিরক্ষা বেষ্টনী (সপ্তদশ শতাব্দী), বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধি (সপ্তদশ শতাব্দী), কেল্লা বোকাইনগর শাহী মসজিদ ([[খাজা উসমান|খাজা উসমান]] কর্তৃক নির্মিত), এক গম্বুজবিশিষ্ট ইছুলিয়া জামে মসজিদ ও মুহুরিয়া জামে মসজিদ (মুগল আমলে নির্মিত), কুমড়িগ্রামের মসজিদ (দেওয়ান উমর খাঁ নির্মিত)।
''প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ''  উমর খাঁর রাজধানীর মাটির প্রতিরক্ষা বেষ্টনী (সপ্তদশ শতাব্দী), বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধি (সপ্তদশ শতাব্দী), কেল্লা বোকাইনগর শাহী মসজিদ ([[খাজা উসমান|খাজা উসমান]] কর্তৃক নির্মিত), এক গম্বুজবিশিষ্ট ইছুলিয়া জামে মসজিদ ও মুহুরিয়া জামে মসজিদ (মুগল আমলে নির্মিত), কুমড়িগ্রামের মসজিদ (দেওয়ান উমর খাঁ নির্মিত)।


''ঐতিহাসিক ঘটনাবলি''  আফগান দলপতি খাজা উসমানের রাজধানী ছিল বোকাইনগর (কেল্লা বোকাইনগর) ইউনিয়নে। ১৬০২ খ্রি. মুগল সেনাপতি মানসিংহ বোকাইনগর আক্রমণ করলে উসমান খান পরাজিত হন এবং সিলেটে পালিয়ে যান। মুগল বাদশাহ্ জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে মাওহা ইউনিয়নের কেল্লাতাজপুর ছিল উমর খাঁর রাজধানী। এই উমর খাঁর কন্যা সখিনার সঙ্গে ঈশাখাঁর দৌহিত্র ফিরোজ খাঁর প্রণয় কাহিনী নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের করুণ পরিণতির কথা কিংবদন্তীর মত আজও মানুষের মুখে মুখে। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের সময় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল হলে পুলিশের গুলিতে গৌরীপুর সরকারি কলেজের ছাত্র হারুন শহীদ হন। তাঁরই নামে গৌরীপুরে ‘শহীদ হারুন পার্ক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট শালিহর গ্রামে পাকসেনারা ১৪ জন গ্রামবাসিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৩০ নভেম্বর গৌরীপুর-ঈশ্বরগঞ্জ সীমান্তে পলাশকান্দা নামক স্থানে পাকবাহিনীর আক্রমণে মুজিব বাহিনীর মতি, মঞ্জু, সিরাজ ও জসীম শহীদ হন।
''ঐতিহাসিক ঘটনা''  আফগান দলপতি খাজা উসমানের রাজধানী ছিল বোকাইনগর (কেল্লা বোকাইনগর) ইউনিয়নে। ১৬০২ খ্রি. মুগল সেনাপতি মানসিংহ বোকাইনগর আক্রমণ করলে উসমান খান পরাজিত হন এবং সিলেটে পালিয়ে যান। মুগল বাদশাহ্ জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে মাওহা ইউনিয়নের কেল্লাতাজপুর ছিল উমর খাঁর রাজধানী। এই উমর খাঁর কন্যা সখিনার সঙ্গে ঈশাখাঁর দৌহিত্র ফিরোজ খাঁর প্রণয় কাহিনী নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের করুণ পরিণতির কথা কিংবদন্তীর মত আজও মানুষের মুখে মুখে। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের সময় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল হলে পুলিশের গুলিতে গৌরীপুর সরকারি কলেজের ছাত্র হারুন শহীদ হন। তাঁরই নামে গৌরীপুরে ‘শহীদ হারুন পার্ক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।  


''মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন''  গণকবর ১।
''মুক্তিযুদ্ধ''  ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট শালিহর গ্রামে পাকসেনারা ১৪ জন গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২১ নভেম্বর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা কড়েহা নামক স্থানে মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। ৩০ নভেম্বর গৌরীপুর-ঈশ্বরগঞ্জ সীমান্তে পলাশকান্দা নামক স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর মতি, মঞ্জু, সিরাজ ও জসীম শহীদ হন। উপজেলায় ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
 
''বিস্তারিত দেখুন''  গৌরীপুর উপজেলা, ''বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ'', বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।


''ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান''  মসজিদ ৩৫২, মন্দির ৯৭, মাযার ৫। উল্লেখযোগ্য ধমীয় প্রতিষ্ঠান: বোকাইনগর ও গুজিখাঁ কেরামতিয়া মসজিদ, গৌরীপুর গোবিন্দ জিউর মন্দির, বোকাইনগর নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাযার।
''ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান''  মসজিদ ৩৫২, মন্দির ৯৭, মাযার ৫। উল্লেখযোগ্য ধমীয় প্রতিষ্ঠান: বোকাইনগর ও গুজিখাঁ কেরামতিয়া মসজিদ, গৌরীপুর গোবিন্দ জিউর মন্দির, বোকাইনগর নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাযার।


''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান''  গড় হার ৩৬.%; পুরুষ ৪০.%, মহিলা ৩২.৮%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, বয়ন বিদ্যালয় ১, মাদ্রাসা ১২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গৌরীপুর মহিলা মহাবিদ্যালয়, রামগোপালপুর পাওয়ার যোগেন্দ্র কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), গৌরীপুর রাজেন্দ্র কিশোর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), ঢাকাখোলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, শাহগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, শ্যামগঞ্জ হাইস্কুল (১৯৪০), নূরুল আমিন উচ্চ বিদ্যালয়, লংকাখলা হাই স্কুল, সরযূবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩২)।
''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান''  গড় হার ৪৩.%; পুরুষ ৪৫.%, মহিলা ৪১.৮%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, বয়ন বিদ্যালয় ১, মাদ্রাসা ১২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গৌরীপুর মহিলা মহাবিদ্যালয়, রামগোপালপুর পাওয়ার যোগেন্দ্র কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), গৌরীপুর রাজেন্দ্র কিশোর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), ঢাকাখোলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, শাহগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, শ্যামগঞ্জ হাইস্কুল (১৯৪০), নূরুল আমিন উচ্চ বিদ্যালয়, লংকাখলা হাই স্কুল, সরযূবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩২)।


''পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী''  সুবর্ণ বাংলা, মাসিক পাতা (অবলুপ্ত), ত্রৈমাসিক নাগরিক বার্তা, দৃষ্টি।
''পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী''  সুবর্ণ বাংলা, মাসিক পাতা (অবলুপ্ত), ত্রৈমাসিক নাগরিক বার্তা, দৃষ্টি।
৮২ নং লাইন: ৮৪ নং লাইন:


''প্রধান ফল-ফলাদি''  আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে।
''প্রধান ফল-ফলাদি''  আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে।
''যোগাযোগ বিশেষত্ব''  পাকারাস্তা ৭৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬৮১ কিমি; নৌপথ ১২ কিমি; রেলপথ ৩০ কিমি।


''বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন''  পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।
''বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন''  পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।
৯৩ নং লাইন: ৯৭ নং লাইন:
''প্রধান রপ্তানিদ্রব্য''  ধান, চাল, সুতা।
''প্রধান রপ্তানিদ্রব্য''  ধান, চাল, সুতা।


''বিদ্যুৎ ব্যবহার''  এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে .০৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
''বিদ্যুৎ ব্যবহার''  এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩২.% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।


''পানীয়জলের উৎস''  নলকূপ ৯৪.১৮%, ট্যাপ ০.৪০%, পুকুর ০.৩৩% এবং অন্যান্য .০৮%।
''পানীয়জলের উৎস''  নলকূপ ৯৬.%, ট্যাপ ০.% এবং অন্যান্য .%।


''স্যানিটেশন ব্যবস্থা''  উপজেলার ২৩.৫৮% (গ্রামে ১৯.৮৯% এবং শহরে ৭২.৫০%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪০.৬৫% (গ্রামে ৪২.৩২% এবং শহরে ১৮.৫৮%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩৫.৭৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
''স্যানিটেশন ব্যবস্থা''  উপজেলার ৪৭.%পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৯.% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।


''স্বাস্থ্যকেন্দ্র''  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪, কমিউনিটি ক্লিনিক ৪।
''স্বাস্থ্যকেন্দ্র''  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪, কমিউনিটি ক্লিনিক ৪।
১০৩ নং লাইন: ১০৭ নং লাইন:
''এনজিও''  কেয়ার, ব্র্যাক, আশা, জাতীয় মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, বাংলাদেশ মহিলা উন্নয়ন সমিতি।  [সহীদুর রহমান]
''এনজিও''  কেয়ার, ব্র্যাক, আশা, জাতীয় মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, বাংলাদেশ মহিলা উন্নয়ন সমিতি।  [সহীদুর রহমান]


'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গৌরীপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।
'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গৌরীপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।


[[en:Gauripur Upazila]]
[[en:Gauripur Upazila]]

১৬:৫৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

গৌরীপুর উপজেলা (ময়মনসিংহ জেলা)  আয়তন: ২৭৬.৭৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৮´ থেকে ২৪°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৭´ থেকে ৯০°৪৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলা, দক্ষিণে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে কেন্দুয়া  ও নেত্রকোনা সদর উপজেলা, পশ্চিমে ময়মনসিংহ সদর ও ফুলপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩২৩০৫৭; পুরুষ ১৫৯৭২২, মহিলা ১৬৩৩৩৫। মুসলিম ৩১০০৪৫, হিন্দু ১২৬৫৪, বৌদ্ধ ৩, খ্রিস্টান ৬২ এবং অন্যান্য ২৯৩।

জলাশয় প্রধান নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, সোয়াই, সুরিয়া, সাপরা। সিধলা বিল, বড় বিল, কচুরি বিল ও দলিয়া বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন গৌরীপুর থানা গঠিত হয় ১৯৮১ সালে। গৌরীপুর পৌরসভা গঠিত হয় ১৯২৭ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ২৪০ ২৮৯ ২৫৫৭০ ২৯৭৪৮৭ ১১৬৭ ৬৪.৭ ৪১.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৮.৮০ ৩৪ ২৫৫৭০ ২৯০৬ ৬৪.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
অচিন্ত্যপুর ১৫ ৭১২৫ ১৩৯৬২ ১৪৬৪০ ৪৩.৮
গৌরীপুর ৩১ ৫৭৪৩ ১৩০৩০ ১৩৮৪২ ৩৭.২
ঢাকাখোলা ২৭ ৫৭৯৬ ১৬৫৯১ ১৭২১৫ ৪৬.১
বোকাইনগর ২২ ৬৮৫৪ ১৬১৫৬ ১৬২২৮ ৩৮.১
ভাংনামারি ১৮ ৬৮২৩ ১২৫৬৩ ১২৯০২ ৪৩.৬
মাইলাকান্দা ৪৯ ৬০৪৮ ১৪০৫৮ ১৪৪২৬ ৪৪.৬
মাওহা ৫৮ ৬৬৯৩ ১৩৩০৫ ১৩১৯৭ ৩৬.১
রামগোপালপুর ৭২ ৭৪৫৫ ১৮৪৪৯ ১৮৭৪৬ ৪৯.৮
সাহানটি ৮১ ৬৭২৫ ১৫৬০৭ ১৫৭৩৩ ৩৩.৭
সিধলা ৮৫ ৬৯৫৭ ১৩২১৯ ১৩৬১৮ ৪১.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ উমর খাঁর রাজধানীর মাটির প্রতিরক্ষা বেষ্টনী (সপ্তদশ শতাব্দী), বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধি (সপ্তদশ শতাব্দী), কেল্লা বোকাইনগর শাহী মসজিদ (খাজা উসমান কর্তৃক নির্মিত), এক গম্বুজবিশিষ্ট ইছুলিয়া জামে মসজিদ ও মুহুরিয়া জামে মসজিদ (মুগল আমলে নির্মিত), কুমড়িগ্রামের মসজিদ (দেওয়ান উমর খাঁ নির্মিত)।

ঐতিহাসিক ঘটনা আফগান দলপতি খাজা উসমানের রাজধানী ছিল বোকাইনগর (কেল্লা বোকাইনগর) ইউনিয়নে। ১৬০২ খ্রি. মুগল সেনাপতি মানসিংহ বোকাইনগর আক্রমণ করলে উসমান খান পরাজিত হন এবং সিলেটে পালিয়ে যান। মুগল বাদশাহ্ জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে মাওহা ইউনিয়নের কেল্লাতাজপুর ছিল উমর খাঁর রাজধানী। এই উমর খাঁর কন্যা সখিনার সঙ্গে ঈশাখাঁর দৌহিত্র ফিরোজ খাঁর প্রণয় কাহিনী নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের করুণ পরিণতির কথা কিংবদন্তীর মত আজও মানুষের মুখে মুখে। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের সময় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল হলে পুলিশের গুলিতে গৌরীপুর সরকারি কলেজের ছাত্র হারুন শহীদ হন। তাঁরই নামে গৌরীপুরে ‘শহীদ হারুন পার্ক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট শালিহর গ্রামে পাকসেনারা ১৪ জন গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২১ নভেম্বর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা কড়েহা নামক স্থানে মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। ৩০ নভেম্বর গৌরীপুর-ঈশ্বরগঞ্জ সীমান্তে পলাশকান্দা নামক স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর মতি, মঞ্জু, সিরাজ ও জসীম শহীদ হন। উপজেলায় ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন গৌরীপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৫২, মন্দির ৯৭, মাযার ৫। উল্লেখযোগ্য ধমীয় প্রতিষ্ঠান: বোকাইনগর ও গুজিখাঁ কেরামতিয়া মসজিদ, গৌরীপুর গোবিন্দ জিউর মন্দির, বোকাইনগর নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাযার।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.৬%; পুরুষ ৪৫.৫%, মহিলা ৪১.৮%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, বয়ন বিদ্যালয় ১, মাদ্রাসা ১২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গৌরীপুর মহিলা মহাবিদ্যালয়, রামগোপালপুর পাওয়ার যোগেন্দ্র কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), গৌরীপুর রাজেন্দ্র কিশোর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), ঢাকাখোলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, শাহগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, শ্যামগঞ্জ হাইস্কুল (১৯৪০), নূরুল আমিন উচ্চ বিদ্যালয়, লংকাখলা হাই স্কুল, সরযূবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩২)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সুবর্ণ বাংলা, মাসিক পাতা (অবলুপ্ত), ত্রৈমাসিক নাগরিক বার্তা, দৃষ্টি।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ১৬, সিনেমা হল ২, কমিউনিটি সেন্টার ১১, স্টেডিয়াম ১, নাট্যদল ২।

দর্শনীয় স্থান গৌরীপুর রাজবাড়ি, পূজামন্ডপ, ঘুর্ণায়মান নাট্যমঞ্চ, গোলপুকুর, কৃত্রিম দ্বীপ।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭১.২১%, অকৃষি শ্রমিক ২.৯৩%, শিল্প ০.৭৬%, ব্যবসা ৯.৯১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.২১%, চাকরি ৪.৩২%, নির্মাণ ১.০০%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৯% এবং অন্যান্য ৬.৩১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬২.৭১%, ভূমিহীন ৩৭.২৯%।  গ্রামে ৬৪.০৭% এবং শহরে ৪৪.৬৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, সরিষা, তরমুজ, তুতগাছ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, পাট, তামাক, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৭৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬৮১ কিমি; নৌপথ ১২ কিমি; রেলপথ ৩০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বস্ত্রকল, ধানকল, চিড়াকল, আটাকল, বরফকল, বিড়িকারখানা, স্পিনিং মিল, ওয়েল্ডিং কারখানা, লেদমেশিন।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫০। গৌরীপুর বাজার, শ্যামগঞ্জ বাজার, ভুটিয়ারকোনা বাজার, গোবিন্দপুর বাজার, শাহাগঞ্জ বাজার, পাছার বাজার, ঢাকাখোলা বাজার, ভূঁইয়ার বাজার, কলতাপাড়া বাজার, অনন্তগঞ্জ বাজার, নাওভাঙ্গা বাজার, রামগোপালপুর বাজার, সিধলা বাজার এবং বৈশাখী মেলা (বোকাইনগর) উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, চাল, সুতা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩২.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৫%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ৩.২%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৪৭.২%পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৯.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪, কমিউনিটি ক্লিনিক ৪।

এনজিও কেয়ার, ব্র্যাক, আশা, জাতীয় মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, বাংলাদেশ মহিলা উন্নয়ন সমিতি।  [সহীদুর রহমান]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গৌরীপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।