গুপ্ত মুদ্রা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''গুপ্ত মুদ্রা'''  খ্রিস্টীয় চার শতকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা মুদ্রাতত্ত্বের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে। গুপ্ত মুদ্রার প্রচলন শুরু হয় সাম্রাজ্যের তৃতীয় শাসক প্রথম চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক প্রকাশিত কিছু স্বর্ণমুদ্রার মধ্য দিয়ে। এ মুদ্রার এক পিঠে চন্দ্রগুপ্ত ও তাঁর রানী কুমারদেবীর প্রতিকৃতি এবং অপর পিঠে সিংহের উপর উপবিষ্ট দেবী এবং লিচ্ছব্যাঃ উক্তিটি উৎকীর্ণ রয়েছে। এ ধরনের মুদ্রার কিছু নিদর্শন চবিবশ পরগনা (উত্তর) ও বর্ধমান জেলা থেকে আবিষ্কৃত হয়। তবে সমুদ্রগুপ্তের শাসন শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাংলা সম্ভবত গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় নি। সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ লিপিতে সীমান্ত সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে সমতটের উল্লেখ পাওয়া যায়।
'''গুপ্ত মুদ্রা'''  খ্রিস্টীয় চার শতকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা মুদ্রাতত্ত্বের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে। গুপ্ত মুদ্রার প্রচলন শুরু হয় সাম্রাজ্যের তৃতীয় শাসক প্রথম চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক প্রকাশিত কিছু স্বর্ণমুদ্রার মধ্য দিয়ে। এ মুদ্রার এক পিঠে চন্দ্রগুপ্ত ও তাঁর রানী কুমারদেবীর প্রতিকৃতি এবং অপর পিঠে সিংহের উপর উপবিষ্ট দেবী এবং লিচ্ছব্যাঃ উক্তিটি উৎকীর্ণ রয়েছে। এ ধরনের মুদ্রার কিছু নিদর্শন চবিবশ পরগনা (উত্তর) ও বর্ধমান জেলা থেকে আবিষ্কৃত হয়। তবে সমুদ্রগুপ্তের শাসন শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাংলা সম্ভবত গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় নি। সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ লিপিতে সীমান্ত সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে সমতটের উল্লেখ পাওয়া যায়।


[[Image:GuptaCoins.jpg|thumb|400px|right|গুপ্ত মুদ্রা]]
[[Image:GuptaCoinsB.jpg|thumb|400px|right| ১ ও ২ সমুদ্রগুপ্তের ‘তীরন্দাজ’ মুদ্রা, ৩ প্রথম কুমারগুপ্তের ‘সিংহশিকারী’ মুদ্রা এবং ৪ দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের ‘তীরন্দাজ’ মুদ্রা]]
 
সমুদ্রগুপ্ত সাত ধরনের স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করেন। এগুলির মধ্যে রাজদন্ড, তীরন্দাজ, অশ্বমেধ এ তিন প্রকার [[মুদ্রা|মুদ্রা]] বাংলায় প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়। রাজদন্ড অঙ্কিত মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে বাংলাদেশ, মেদিনীপুর, বর্ধমান, হুগলি এবং চবিবশ পরগনা (উত্তর) থেকে।
# #সমুদ্রগুপ্ত সাত ধরনের স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করেন। এগুলির মধ্যে রাজদন্ড, তীরন্দাজ, অশ্বমেধ এ তিন প্রকার [[মুদ্রা|মুদ্রা]] বাংলায় প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়। রাজদন্ড অঙ্কিত মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে বাংলাদেশ, মেদিনীপুর, বর্ধমান, হুগলি এবং চবিবশ পরগনা (উত্তর) থেকে।
 
১. সমুদ্রগুপ্তের ‘তীরন্দাজ’ মুদ্রা, ২. প্রথম কুমারগুপ্তের ‘সিংহশিকারী’ মুদ্রা এবং
 
৩. দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের ‘তীরন্দাজ’ মুদ্রা# #


এতে উৎকীর্ণ হয়েছে দন্ডায়মান দন্ডধর রাজা হোমাগ্নিতে নৈবেদ্য প্রদান করছেন। অপর পিঠে সিংহাসনে উপবিষ্ট দেবীর হাতে ছাগলের শিং এবং ‘পরাক্রম’ উক্তিটি উৎকীর্ণ। ‘তীরন্দাজ’ মুদ্রা পাওয়া গেছে চবিবশ পরগনা জেলা থেকে। এর এক দিকে রয়েছে তীর-ধনুক হাতে দন্ডায়মান রাজা এবং রাজার বাম বাহুর নিচে উৎকীর্ণ হয়েছে ‘সমুদ্র’ শব্দটি। এর অপর দিক ছিল ‘রাজদন্ড’ মুদ্রার ন্যায় তবে এতে ‘অপ্রতিরথঃ’ বা ‘প্রতিদ্বন্দ্বীহীন যোদ্ধা’ উক্তিটি উৎকীর্ণ রয়েছে। ‘অশ্বমেধ’ মুদ্রা আবিষ্কৃত হয় কুমিল্লা জেলা থেকে। এতে অঙ্কিত রয়েছে উড়ন্ত পতাকা সম্বলিত যুপকাষ্ঠের সম্মুখে সাজসজ্জাবিহীন একটি অশ্ব। এর অপর পিঠে রয়েছে সজ্জিত বর্শার সম্মুখে দন্ডায়মান একজন নারী, যাকে প্রধান রানী বলে মনে করা হয় এবং উৎকীর্ণ হয়েছে ‘অশ্বমেধ পরাক্রম’ উক্তিটি। নারীমূর্তিটির ডান কাঁধের উপর রয়েছে একটি ঝাড়ু/ ব্রাশ। বাংলা থেকে সমুদ্রগুপ্তের যুদ্ধকুঠার, ব্যাঘ্রশিকারী, বীণাবাদক এবং ‘কচ’ মুদ্রার কোনো নিদর্শন পাওয়া যায় নি।
এতে উৎকীর্ণ হয়েছে দন্ডায়মান দন্ডধর রাজা হোমাগ্নিতে নৈবেদ্য প্রদান করছেন। অপর পিঠে সিংহাসনে উপবিষ্ট দেবীর হাতে ছাগলের শিং এবং ‘পরাক্রম’ উক্তিটি উৎকীর্ণ। ‘তীরন্দাজ’ মুদ্রা পাওয়া গেছে চবিবশ পরগনা জেলা থেকে। এর এক দিকে রয়েছে তীর-ধনুক হাতে দন্ডায়মান রাজা এবং রাজার বাম বাহুর নিচে উৎকীর্ণ হয়েছে ‘সমুদ্র’ শব্দটি। এর অপর দিক ছিল ‘রাজদন্ড’ মুদ্রার ন্যায় তবে এতে ‘অপ্রতিরথঃ’ বা ‘প্রতিদ্বন্দ্বীহীন যোদ্ধা’ উক্তিটি উৎকীর্ণ রয়েছে। ‘অশ্বমেধ’ মুদ্রা আবিষ্কৃত হয় কুমিল্লা জেলা থেকে। এতে অঙ্কিত রয়েছে উড়ন্ত পতাকা সম্বলিত যুপকাষ্ঠের সম্মুখে সাজসজ্জাবিহীন একটি অশ্ব। এর অপর পিঠে রয়েছে সজ্জিত বর্শার সম্মুখে দন্ডায়মান একজন নারী, যাকে প্রধান রানী বলে মনে করা হয় এবং উৎকীর্ণ হয়েছে ‘অশ্বমেধ পরাক্রম’ উক্তিটি। নারীমূর্তিটির ডান কাঁধের উপর রয়েছে একটি ঝাড়ু/ ব্রাশ। বাংলা থেকে সমুদ্রগুপ্তের যুদ্ধকুঠার, ব্যাঘ্রশিকারী, বীণাবাদক এবং ‘কচ’ মুদ্রার কোনো নিদর্শন পাওয়া যায় নি।

০৫:৫৩, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

গুপ্ত মুদ্রা  খ্রিস্টীয় চার শতকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা মুদ্রাতত্ত্বের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে। গুপ্ত মুদ্রার প্রচলন শুরু হয় সাম্রাজ্যের তৃতীয় শাসক প্রথম চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক প্রকাশিত কিছু স্বর্ণমুদ্রার মধ্য দিয়ে। এ মুদ্রার এক পিঠে চন্দ্রগুপ্ত ও তাঁর রানী কুমারদেবীর প্রতিকৃতি এবং অপর পিঠে সিংহের উপর উপবিষ্ট দেবী এবং লিচ্ছব্যাঃ উক্তিটি উৎকীর্ণ রয়েছে। এ ধরনের মুদ্রার কিছু নিদর্শন চবিবশ পরগনা (উত্তর) ও বর্ধমান জেলা থেকে আবিষ্কৃত হয়। তবে সমুদ্রগুপ্তের শাসন শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাংলা সম্ভবত গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় নি। সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ লিপিতে সীমান্ত সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে সমতটের উল্লেখ পাওয়া যায়।

১ ও ২ সমুদ্রগুপ্তের ‘তীরন্দাজ’ মুদ্রা, ৩ প্রথম কুমারগুপ্তের ‘সিংহশিকারী’ মুদ্রা এবং ৪ দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের ‘তীরন্দাজ’ মুদ্রা

সমুদ্রগুপ্ত সাত ধরনের স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করেন। এগুলির মধ্যে রাজদন্ড, তীরন্দাজ, অশ্বমেধ এ তিন প্রকার মুদ্রা বাংলায় প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়। রাজদন্ড অঙ্কিত মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে বাংলাদেশ, মেদিনীপুর, বর্ধমান, হুগলি এবং চবিবশ পরগনা (উত্তর) থেকে।

এতে উৎকীর্ণ হয়েছে দন্ডায়মান দন্ডধর রাজা হোমাগ্নিতে নৈবেদ্য প্রদান করছেন। অপর পিঠে সিংহাসনে উপবিষ্ট দেবীর হাতে ছাগলের শিং এবং ‘পরাক্রম’ উক্তিটি উৎকীর্ণ। ‘তীরন্দাজ’ মুদ্রা পাওয়া গেছে চবিবশ পরগনা জেলা থেকে। এর এক দিকে রয়েছে তীর-ধনুক হাতে দন্ডায়মান রাজা এবং রাজার বাম বাহুর নিচে উৎকীর্ণ হয়েছে ‘সমুদ্র’ শব্দটি। এর অপর দিক ছিল ‘রাজদন্ড’ মুদ্রার ন্যায় তবে এতে ‘অপ্রতিরথঃ’ বা ‘প্রতিদ্বন্দ্বীহীন যোদ্ধা’ উক্তিটি উৎকীর্ণ রয়েছে। ‘অশ্বমেধ’ মুদ্রা আবিষ্কৃত হয় কুমিল্লা জেলা থেকে। এতে অঙ্কিত রয়েছে উড়ন্ত পতাকা সম্বলিত যুপকাষ্ঠের সম্মুখে সাজসজ্জাবিহীন একটি অশ্ব। এর অপর পিঠে রয়েছে সজ্জিত বর্শার সম্মুখে দন্ডায়মান একজন নারী, যাকে প্রধান রানী বলে মনে করা হয় এবং উৎকীর্ণ হয়েছে ‘অশ্বমেধ পরাক্রম’ উক্তিটি। নারীমূর্তিটির ডান কাঁধের উপর রয়েছে একটি ঝাড়ু/ ব্রাশ। বাংলা থেকে সমুদ্রগুপ্তের যুদ্ধকুঠার, ব্যাঘ্রশিকারী, বীণাবাদক এবং ‘কচ’ মুদ্রার কোনো নিদর্শন পাওয়া যায় নি।

রাজা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সময় বঙ্গ গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত হয়েছিল। তাঁর শাসনকালে বাংলায় প্রচলিত দুপ্রকারের মুদ্রা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। রাজা প্রথম কুমার গুপ্তের মুদ্রার পরেই দ্বিতীয় চন্দ্র গুপ্তের তীরন্দাজ মুদ্রা সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর প্রাপ্তিস্থান ছিল বাংলাদেশের ফরিদপুর, বগুড়া, যশোর এবং কুমিল্লা জেলা আর পশ্চিম বাংলার কালীঘাট বা কলকাতা, হুগলি, বর্ধমান, চবিবশ পরগনা এবং মুর্শিদাবাদ। এসব অঞ্চলে প্রাপ্ত তীরন্দাজ মুদ্রার দুটি শ্রেণির মধ্যে ছিল বিভিন্ন প্রকারভেদ। এগুলির একদিকে সিংহাসনে উপবিষ্ট দেবী এবং অপর দিকে পদ্মফুলের উপর দেবীর প্রতিকৃতি অঙ্কিত রয়েছে। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের ‘ছত্র’ বা ছাতা মুদ্রায় অংকিত রয়েছে একটি বেদির উপর ধুপদানরত রাজা এবং তাঁর মাথার উপর ছাতা ধারণকারী অপর একজন লোক বা প্রজা। অন্য পিঠে পদ্মফুলের উপর দন্ডায়মান একজন দেবীর প্রতিকৃতি অঙ্কিত রয়েছে। রাজা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের ‘সিংহশিকারী’, ‘অশ্বারোহী’, ‘রাজাসন’, ‘রাজদন্ড’, ‘চক্রবিক্রম’ এবং রাজাসনে উপবিষ্ট ‘রাজারানী’ ইত্যাদি মুদ্রার সন্ধান বাংলায় পাওয়া যায় নি।

রাজা প্রথম কুমারগুপ্ত ষোলো প্রকার স্বর্ণমুদ্রা প্রচলন করেন। এগুলির মধ্যে বাংলার হুগলিতে ‘তীরন্দাজ’, মেদিনীপুর ও হুগলিতে ‘অশ্বারোহী’, হুগলিতে ‘গজারূঢ়’, বর্ধমানে ‘কার্তিকেয়’, বগুড়া, হুগলি ও বর্ধমানে ‘সিংহশিকারী’ মুদ্রা পাওয়া গেছে। ‘অশ্বারোহী’ মুদ্রার একদিকে অংকিত রয়েছে সজ্জিত ঘোড়ার পিঠে তীর-ধনুক হাতে একজন রাজা এবং অপরদিকে বেতের চৌকিতে উপবিষ্ট দেবীর প্রতিকৃতি। কোনো কোনো মুদ্রার অপর পিঠে ময়ূরকে আঙুর খাওয়ানোর চিত্রও অঙ্কিত রয়েছে। ‘গজারূঢ়’ মুদ্রায় অংকিত রয়েছে অঙ্কুশ বা সুচালো লাঠি হাতে রাজা হাতির উপর আসীন আর রাজার পেছনে উপবিষ্ট একজন প্রজা তাঁর মাথার উপর ছাতা ধরে আছে। এর অপর পিঠে পদ্মফুলের উপর দন্ডায়মান একজন দেবী এবং একই সঙ্গে ‘মহেন্দ্রগজঃ’ উক্তিটি উৎকীর্ণ রয়েছে। সিংহশিকারী মুদ্রায় এক পিঠে তীরধনুক নিয়ে রাজা সিংহের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। অপর পিঠে উৎকীর্ণ রয়েছে ‘শ্রীমহেন্দ্রসিংহ’ উক্তিটি এবং ওত পাতা অবস্থায় শায়িত সিংহের উপর উপবিষ্ট দেবী। মুদ্রাগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর চিত্র অঙ্কিত হয়েছে ‘কার্তিকেয়’ মুদ্রায়। এর একদিকে রাজা একটি ময়ূরকে একগুচ্ছ আঙুর খাওয়াচ্ছেন এবং অন্যদিকে উৎকীর্ণ রয়েছে ‘মহেন্দ্রকুমার’ শব্দটি।

বাংলায় প্রাপ্ত চার প্রকার মুদ্রার মধ্যে ‘তীরন্দাজ’ ও ‘রাজারানী’ মুদ্রার প্রচলন করেন রাজা স্কন্ধগুপ্ত। এগুলির মধ্যে ‘তীরন্দাজ’ মুদ্রা পাওয়া যায় ফরিদপুর, বগুড়া, হুগলি এবং বর্ধমানে। ‘রাজারানী’ মুদ্রা পাওয়া যায় মেদিনীপুরে। ‘রাজারানী’ মুদ্রার এক পিঠে অঙ্কিত রয়েছে মুখোমুখি দন্ডায়মান একজন রাজা ও একজন রানীর প্রতিকৃতি। অপর পিঠে পদ্মফুলের উপর উপবিষ্ট দেবীর প্রতিকৃতি এবং ‘স্কন্ধগুপ্ত’ শব্দটি উৎকীর্ণ রয়েছে। বাংলার কালীঘাট, উত্তর এবং দক্ষিণ চবিবশ পরগনা ও মেদিনীপুরে দ্বিতীয় কুমারগুপ্ত, খালিঘা এবং হুগলিতে বৈন্যগুপ্ত, কালীঘাট, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম এবং নদীয়াতে নরসিংহগুপ্ত, হুগলি ও বর্ধমানে তৃতীয় কুমারগুপ্ত এবং কালীঘাট, হুগলি ও উত্তর চবিবশ পরগনায় বিষ্ণুগুপ্তের ‘তীরন্দাজ’ মুদ্রা পাওয়া গেছে। অধিকাংশ মুদ্রায় শুদ্ধ সংস্কৃত ভাষায় ছন্দোবদ্ধ শব্দগুচ্ছ ও মুদ্রা প্রণয়নকারীদের কীর্তিমালা উৎকীর্ণ রয়েছে। গুপ্ত যুগের একদিকে জ্যামিতিক ডিজাইন ও বেশ কিছু মুদ্রার অপরদিকে ‘গরুড়’ প্রতীক পাওয়া যায়।

গুপ্তগণ তাঁদের স্বর্ণমুদ্রায় জটিল পরিমাপ অনুসরণ করেছিলেন। তাঁরা সাধারণত রোমানদের ‘অওরেই’ মুদ্রার অনুকরণে কুষাণ মুদ্রার ১২২ গ্রেন মান অনুসরণ করতেন। আর স্কন্ধগুপ্তের কাল থেকে অনুসরণ করা হতো ভারতীয় ‘সুবর্ণ’ মুদ্রার ১৪৪ গ্রেন মান। তবে পর্যায়ক্রমে মুদ্রার ওজন বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়, প্রথম চন্দ্রগুপ্তের আমলের ১১২ গ্রেন থেকে শেষ শাসকদের সময়কার ১৪৮ গ্রেন পর্যন্ত। শেষ তিনজন শাসকের মুদ্রা ছাড়া অন্যান্যদের মুদ্রায় খাঁটি স্বর্ণ ছিল ১১৩ গ্রেন। সম্ভবত স্বর্ণমুদ্রা বাহ্যিক মূল্যমানে গৃহীত হতো না, গৃহীত হতো তাদের প্রকৃত মূল্যে। গুপ্ত লিপিতে হালকা ও ভারী মুদ্রার পার্থক্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ‘দিনার’ ও ‘সুবর্ণ’ শব্দ দুটির ব্যবহার পাওয়া যায়।

১৮৫২ সালে যশোরের নিকটবর্তী মোহাম্মদপুরে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত, প্রথম কুমারগুপ্ত এবং স্কন্ধগুপ্তের কিছু রৌপ্যমুদ্রা পাওয়া যায়। চন্দ্রকেতুগড়-এ স্কন্ধগুপ্তের একটি রৌপ্য মুদ্রার সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলি ছাড়া বাংলা থেকে আর কোনো রৌপ্য মুদ্রা পাওয়া যায় নি। তবে লিপিমালায় রৌপ্যমুদ্রার উল্লেখ বাংলায় এ ধরনের মুদ্রার প্রচলনের ইঙ্গিত দেয়। এগুলির ওজনের পরিমাপ ছিল বত্রিশ গ্রেন। লিপিমালায় এগুলিকে ‘রূপক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলা থেকে গুপ্তযুগে কোনো প্রকার তাম্রমুদ্রা প্রচলনের উল্লেখ পাওয়া যায় নি।  [অশ্বিনী আগরওয়াল]

গ্রন্থপঞ্জি  AS Altekar, The Coinage of the Gupta Empire, Varanasi, 1957; BN Mukherji, Coins and Currency System in Gupta Bengal, New Delhi, 1992.