কালাজ্বর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:Kala-azar.jpg|thumb|400px|right|কালাজ্বরের জীবাণুবাহী স্ত্রী স্যান্ডফ্লাই]]
'''কালাজ্বর''' (Kala-azar)  ''Leishmania donovani'' নামক আন্তঃকোষীয় ফ্লাজেলাবিশিষ্ট (flagellate) প্রোটোজোয়াঘটিত সংক্রামক ব্যাধি। পৃথিবীর গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলির গ্রামাঞ্চলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব অধিক। ভিস্যার‌্যাল লেশম্যানিয়াসিস (visceral leishmaniasis) নামেও পরিচিত এ রোগে যকৃৎ ও প্লীহার রেটিকুলো-এন্ডোথিলিয়াল তন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং প্রায়শ রোগী মারা যায়। শিশুরাই এ রোগে অধিক আক্রান্ত হয়। কালাজ্বরের জীবাণুবাহী স্ত্রী বেলে মাছি (Sand Fly)-এর (''Phlebotomus species'') দংশনে এ সংক্রমণ ঘটে। রোগের সুপ্তিকাল সাধারণত ২ থেকে ৬ মাস।
'''কালাজ্বর''' (Kala-azar)  ''Leishmania donovani'' নামক আন্তঃকোষীয় ফ্লাজেলাবিশিষ্ট (flagellate) প্রোটোজোয়াঘটিত সংক্রামক ব্যাধি। পৃথিবীর গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলির গ্রামাঞ্চলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব অধিক। ভিস্যার‌্যাল লেশম্যানিয়াসিস (visceral leishmaniasis) নামেও পরিচিত এ রোগে যকৃৎ ও প্লীহার রেটিকুলো-এন্ডোথিলিয়াল তন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং প্রায়শ রোগী মারা যায়। শিশুরাই এ রোগে অধিক আক্রান্ত হয়। কালাজ্বরের জীবাণুবাহী স্ত্রী বেলে মাছি (Sand Fly)-এর (''Phlebotomus species'') দংশনে এ সংক্রমণ ঘটে। রোগের সুপ্তিকাল সাধারণত ২ থেকে ৬ মাস।


উনিশ শতকের চল্লিশের দশক থেকে কালাজ্বর বাংলাদেশের একটি আঞ্চলিক রোগ হিসেবে  [[জনস্বাস্থ্য|জনস্বাস্থ্য]] সমস্যা হয়ে উঠেছে। ম্যালেরিয়া নির্মূল কার্যক্রমের (MEP) অধীনে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে কালাজ্বর ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল, এমনকি প্রায় নির্মূল হয়েছিল, কেননা বাহক স্যান্ডফ্লাই কীটনাশকের প্রতি সংবেদনশীল। বিশ শতকের সত্তরের দশকের শেষের দিকে পুনরায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর পরিবেশিত কালাজ্বর সংক্রান্ত তথ্যাদি নিম্নরূপ:
উনিশ শতকের চল্লিশের দশক থেকে কালাজ্বর বাংলাদেশের একটি আঞ্চলিক রোগ হিসেবে  [[জনস্বাস্থ্য|জনস্বাস্থ্য]] সমস্যা হয়ে উঠেছে। ম্যালেরিয়া নির্মূল কার্যক্রমের (MEP) অধীনে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে কালাজ্বর ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল, এমনকি প্রায় নির্মূল হয়েছিল, কেননা বাহক স্যান্ডফ্লাই কীটনাশকের প্রতি সংবেদনশীল। বিশ শতকের সত্তরের দশকের শেষের দিকে পুনরায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর পরিবেশিত কালাজ্বর সংক্রান্ত তথ্যাদি নিম্নরূপ:
{| class="table table-bordered"
{| class="table table-bordered"
|-
|-
| বছর || সংখ্যা || মৃত্যু
| বছর || সংখ্যা || মৃত্যু
|-
|-
| ১৯৯৪ || ৩৯৬৭ || ৯
| ১৯৯৪ || ৩৯৬৭ || ৯
|-
|-
| ১৯৯৫ || ৪২১৪ || ১৯
| ১৯৯৫ || ৪২১৪ || ১৯
|-
|-
| ১৯৯৬ || ৬৮১৩ || ৩০
| ১৯৯৬ || ৬৮১৩ || ৩০
|-
|-
| ১৯৯৭ || ৮৮৪৬ || ১৭
| ১৯৯৭ || ৮৮৪৬ || ১৭
|-
|-
| ১৯৯৮ || ৭১৫২ || ২৪
| ১৯৯৮ || ৭১৫২ || ২৪
|-
|-
| ১৯৯৯  || ৫৮৫৬ || ৭
| ১৯৯৯  || ৫৮৫৬ || ৭
|-
|-
| ২০০০ || ৮৬০০ || -
| ২০০০ || ৮৬০০ || -
|-
|-
| ২০০১ || ৫৯৮০ || -
| ২০০১ || ৫৯৮০ || -
|-
|-
| ২০০২ || ৮১৩৬ || -
| ২০০২ || ৮১৩৬ || -
|-
|-
| ২০০৩ || ৫৯৬০ || -
| ২০০৩ || ৫৯৬০ || -
|-
|-
| ২০০৪ || ৯০০০ || -
| ২০০৪ || ৯০০০ || -
|-
|-
| ২০০৫ || ৬৯২৪ || -
| ২০০৫ || ৬৯২৪ || -
৪৫ নং লাইন: ৩৫ নং লাইন:
| ২০০৬ || ৭২৫০ || -
| ২০০৬ || ৭২৫০ || -
|}
|}
উৎস  M & PDC শাখা, জনস্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর
 
''উৎস''  M&PDC শাখা, জনস্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর।


কালাজ্বরের অধিকাংশ সংক্রমণ ঘটনার কথা জানা যায় ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী এবং কুমিল্লা জেলা থেকে। তবে ঢাকা, ঝিনাইদহ, পটুয়াখালী এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকেও এ রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা জানা গেছে।
কালাজ্বরের অধিকাংশ সংক্রমণ ঘটনার কথা জানা যায় ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী এবং কুমিল্লা জেলা থেকে। তবে ঢাকা, ঝিনাইদহ, পটুয়াখালী এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকেও এ রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা জানা গেছে।
৫২ নং লাইন: ৪৩ নং লাইন:


অস্থিমজ্জা, প্লীহা এবং যকৃতে কালাজ্বরের জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ঘটে। লিম্ফ-নোড (lymph node) আক্রমণের ফলে দেহের প্রতিরক্ষা তন্ত্র ভেঙে পড়ে, এন্টি-বডি উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে যকৃৎ ও প্লীহার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। এ ছাড়া কালাজ্বর নিউমোনিয়া, উদরাময়, দেহের ওজন হ্রাস, পেট ব্যথা, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি ব্যাধি ও বৈকল্যের উদ্ভব ঘটায়। রোগী মারা যেতে পারে। কালাজ্বরের জীবাণু শনাক্ত করার কয়েকটি পদ্ধতি থাকলেও direct agglutination test (DAT) বেশ নির্ভরযোগ্য। এ পরীক্ষা যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং পাবনা ও দিনাজপুরসহ বাংলাদেশের মাত্র পাঁচটি গবেষণাগারে এ ধরনের পরীক্ষার সুবিধা রয়েছে।
অস্থিমজ্জা, প্লীহা এবং যকৃতে কালাজ্বরের জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ঘটে। লিম্ফ-নোড (lymph node) আক্রমণের ফলে দেহের প্রতিরক্ষা তন্ত্র ভেঙে পড়ে, এন্টি-বডি উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে যকৃৎ ও প্লীহার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। এ ছাড়া কালাজ্বর নিউমোনিয়া, উদরাময়, দেহের ওজন হ্রাস, পেট ব্যথা, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি ব্যাধি ও বৈকল্যের উদ্ভব ঘটায়। রোগী মারা যেতে পারে। কালাজ্বরের জীবাণু শনাক্ত করার কয়েকটি পদ্ধতি থাকলেও direct agglutination test (DAT) বেশ নির্ভরযোগ্য। এ পরীক্ষা যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং পাবনা ও দিনাজপুরসহ বাংলাদেশের মাত্র পাঁচটি গবেষণাগারে এ ধরনের পরীক্ষার সুবিধা রয়েছে।
[[Image:Kala-azar.jpg|thumb|400px|right|কালাজ্বরের জীবাণুবাহী স্ত্রী স্যান্ডফ্লাই]]


ভারত উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে কালাজ্বরের স্বীকৃত বাহক হলো স্যান্ডফ্লাই, ''Phlebotomus argentipes''। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এক প্রতিবেদনে ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গকে মারাত্মক কালাজ্বরপ্রবণ এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিগত শতকের সত্তর দশকের প্রথমভাগে বিহারে এ রোগের পুনঃপ্রাদুর্ভাব ঘটার পর এখন সেখানকার ৩৬টি জেলায় এবং পশ্চিমবঙ্গের ১০টি জেলায় বিস্তৃত হয়েছে।
ভারত উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে কালাজ্বরের স্বীকৃত বাহক হলো স্যান্ডফ্লাই, ''Phlebotomus argentipes''। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এক প্রতিবেদনে ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গকে মারাত্মক কালাজ্বরপ্রবণ এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিগত শতকের সত্তর দশকের প্রথমভাগে বিহারে এ রোগের পুনঃপ্রাদুর্ভাব ঘটার পর এখন সেখানকার ৩৬টি জেলায় এবং পশ্চিমবঙ্গের ১০টি জেলায় বিস্তৃত হয়েছে।
৫৮ নং লাইন: ৪৮ নং লাইন:
বাসগৃহের ফাটল ও চিড়সহ গোয়ালঘরের মেঝের অত্যধিক আর্দ্রতা ও জৈববস্ত্ত-সমৃদ্ধ মাটিতে স্ত্রী স্যান্ডফ্লাই বংশবিস্তার করে। তাপমাত্রা ও খাদ্যের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে লার্ভা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় পৌঁছতে এদের প্রায় ২০-৪৫ দিন সময় লাগে। স্ত্রী মাছি স্তন্যপায়ীর শরীর থেকে রক্ত শোষণ করে। এটি নিশাচর, উড়তে পারে না, লাফিয়ে চলে এবং আর্দ্র, অন্ধকার স্থানে বিশ্রাম নেয়। প্রাপ্তবয়স্ক মাছি প্রায় ২-৪ সপ্তাহ বাঁচে।
বাসগৃহের ফাটল ও চিড়সহ গোয়ালঘরের মেঝের অত্যধিক আর্দ্রতা ও জৈববস্ত্ত-সমৃদ্ধ মাটিতে স্ত্রী স্যান্ডফ্লাই বংশবিস্তার করে। তাপমাত্রা ও খাদ্যের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে লার্ভা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় পৌঁছতে এদের প্রায় ২০-৪৫ দিন সময় লাগে। স্ত্রী মাছি স্তন্যপায়ীর শরীর থেকে রক্ত শোষণ করে। এটি নিশাচর, উড়তে পারে না, লাফিয়ে চলে এবং আর্দ্র, অন্ধকার স্থানে বিশ্রাম নেয়। প্রাপ্তবয়স্ক মাছি প্রায় ২-৪ সপ্তাহ বাঁচে।


বাংলাদেশে কালাজ্বর বাহক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো নিয়মিত কর্মসূচি নেই। কোনো এলাকায় ব্যাপক আকারে কালাজ্বর দেখা দিলে সেখানে কখনও কখনও কীটনাশক ছিটানো হয়। কিছু কিছু এলাকায় কীটনাশক ছিটানো মশারি ব্যবহারের মাধ্যমে কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে এবং সন্তোষজনক ফলও পাওয়া গেছে। কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য বাহকের বংশবিস্তারের উৎপত্তিস্থল ধ্বংসই সর্বোত্তম উপায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি বাংলাদেশে এ রোগ নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচিতে সহায়তা প্রদান করছে।
বাংলাদেশে কালাজ্বর বাহক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো নিয়মিত কর্মসূচি নেই। কোনো এলাকায় ব্যাপক আকারে কালাজ্বর দেখা দিলে সেখানে কখনও কখনও কীটনাশক ছিটানো হয়। কিছু কিছু এলাকায় কীটনাশক ছিটানো মশারি ব্যবহারের মাধ্যমে কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে এবং সন্তোষজনক ফলও পাওয়া গেছে। কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য বাহকের বংশবিস্তারের উৎপত্তিস্থল ধ্বংসই সর্বোত্তম উপায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি বাংলাদেশে এ রোগ নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচিতে সহায়তা প্রদান করছে। [এস.এম হুমায়ুন কবির]
 
[এস.এম হুমায়ুন কবির]


[[en:Kala-azar]]
[[en:Kala-azar]]

০৬:৩৪, ১২ আগস্ট ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

কালাজ্বরের জীবাণুবাহী স্ত্রী স্যান্ডফ্লাই

কালাজ্বর (Kala-azar)  Leishmania donovani নামক আন্তঃকোষীয় ফ্লাজেলাবিশিষ্ট (flagellate) প্রোটোজোয়াঘটিত সংক্রামক ব্যাধি। পৃথিবীর গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলির গ্রামাঞ্চলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব অধিক। ভিস্যার‌্যাল লেশম্যানিয়াসিস (visceral leishmaniasis) নামেও পরিচিত এ রোগে যকৃৎ ও প্লীহার রেটিকুলো-এন্ডোথিলিয়াল তন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং প্রায়শ রোগী মারা যায়। শিশুরাই এ রোগে অধিক আক্রান্ত হয়। কালাজ্বরের জীবাণুবাহী স্ত্রী বেলে মাছি (Sand Fly)-এর (Phlebotomus species) দংশনে এ সংক্রমণ ঘটে। রোগের সুপ্তিকাল সাধারণত ২ থেকে ৬ মাস।

উনিশ শতকের চল্লিশের দশক থেকে কালাজ্বর বাংলাদেশের একটি আঞ্চলিক রোগ হিসেবে  জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠেছে। ম্যালেরিয়া নির্মূল কার্যক্রমের (MEP) অধীনে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে কালাজ্বর ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল, এমনকি প্রায় নির্মূল হয়েছিল, কেননা বাহক স্যান্ডফ্লাই কীটনাশকের প্রতি সংবেদনশীল। বিশ শতকের সত্তরের দশকের শেষের দিকে পুনরায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর পরিবেশিত কালাজ্বর সংক্রান্ত তথ্যাদি নিম্নরূপ:

বছর সংখ্যা মৃত্যু
১৯৯৪ ৩৯৬৭
১৯৯৫ ৪২১৪ ১৯
১৯৯৬ ৬৮১৩ ৩০
১৯৯৭ ৮৮৪৬ ১৭
১৯৯৮ ৭১৫২ ২৪
১৯৯৯ ৫৮৫৬
২০০০ ৮৬০০ -
২০০১ ৫৯৮০ -
২০০২ ৮১৩৬ -
২০০৩ ৫৯৬০ -
২০০৪ ৯০০০ -
২০০৫ ৬৯২৪ -
২০০৬ ৭২৫০ -

উৎস  M&PDC শাখা, জনস্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর।

কালাজ্বরের অধিকাংশ সংক্রমণ ঘটনার কথা জানা যায় ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী এবং কুমিল্লা জেলা থেকে। তবে ঢাকা, ঝিনাইদহ, পটুয়াখালী এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকেও এ রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা জানা গেছে।

Institute of Epidemiology, Disease Control and Research (IEDCR)-এর গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় কালাজ্বর আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। দশ বছর পূর্বেও দেশের উত্তর অঞ্চলের মাত্র কয়েকটি জেলায় এটি সীমাবদ্ধ ছিল। এখন এ রোগ ৩০টির বেশি জেলায় বিস্তৃতি লাভ করেছে। মোট আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কেবল কিছু অংশই চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়, ফলে অধিকাংশই অজানা ও চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় থেকে যায়।

অস্থিমজ্জা, প্লীহা এবং যকৃতে কালাজ্বরের জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ঘটে। লিম্ফ-নোড (lymph node) আক্রমণের ফলে দেহের প্রতিরক্ষা তন্ত্র ভেঙে পড়ে, এন্টি-বডি উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে যকৃৎ ও প্লীহার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। এ ছাড়া কালাজ্বর নিউমোনিয়া, উদরাময়, দেহের ওজন হ্রাস, পেট ব্যথা, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি ব্যাধি ও বৈকল্যের উদ্ভব ঘটায়। রোগী মারা যেতে পারে। কালাজ্বরের জীবাণু শনাক্ত করার কয়েকটি পদ্ধতি থাকলেও direct agglutination test (DAT) বেশ নির্ভরযোগ্য। এ পরীক্ষা যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং পাবনা ও দিনাজপুরসহ বাংলাদেশের মাত্র পাঁচটি গবেষণাগারে এ ধরনের পরীক্ষার সুবিধা রয়েছে।

ভারত উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে কালাজ্বরের স্বীকৃত বাহক হলো স্যান্ডফ্লাই, Phlebotomus argentipes। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এক প্রতিবেদনে ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গকে মারাত্মক কালাজ্বরপ্রবণ এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিগত শতকের সত্তর দশকের প্রথমভাগে বিহারে এ রোগের পুনঃপ্রাদুর্ভাব ঘটার পর এখন সেখানকার ৩৬টি জেলায় এবং পশ্চিমবঙ্গের ১০টি জেলায় বিস্তৃত হয়েছে।

বাসগৃহের ফাটল ও চিড়সহ গোয়ালঘরের মেঝের অত্যধিক আর্দ্রতা ও জৈববস্ত্ত-সমৃদ্ধ মাটিতে স্ত্রী স্যান্ডফ্লাই বংশবিস্তার করে। তাপমাত্রা ও খাদ্যের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে লার্ভা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় পৌঁছতে এদের প্রায় ২০-৪৫ দিন সময় লাগে। স্ত্রী মাছি স্তন্যপায়ীর শরীর থেকে রক্ত শোষণ করে। এটি নিশাচর, উড়তে পারে না, লাফিয়ে চলে এবং আর্দ্র, অন্ধকার স্থানে বিশ্রাম নেয়। প্রাপ্তবয়স্ক মাছি প্রায় ২-৪ সপ্তাহ বাঁচে।

বাংলাদেশে কালাজ্বর বাহক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো নিয়মিত কর্মসূচি নেই। কোনো এলাকায় ব্যাপক আকারে কালাজ্বর দেখা দিলে সেখানে কখনও কখনও কীটনাশক ছিটানো হয়। কিছু কিছু এলাকায় কীটনাশক ছিটানো মশারি ব্যবহারের মাধ্যমে কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে এবং সন্তোষজনক ফলও পাওয়া গেছে। কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য বাহকের বংশবিস্তারের উৎপত্তিস্থল ধ্বংসই সর্বোত্তম উপায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি বাংলাদেশে এ রোগ নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচিতে সহায়তা প্রদান করছে। [এস.এম হুমায়ুন কবির]