হাজরা, হাসিময়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
(Text replacement - "\[মুয়ায্যম হুসায়ন খান\]" to "[মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]")
 
(একজন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''হাজরা, হাসিময়''' (১৯৪৬-১৯৭১)  চিকিৎসক, শহীদ বুদ্ধিজীবী। হাসিময় হাজরা ১৯৪৬ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অনন্ত মাধব হাজরা ছিলেন নারায়ণগঞ্জে ঢাকেশ্বরী কটন মিলে কর্মরত চিকিৎসক। হাসিময় ১৯৬২ সালে ঢাকেশ্বরী কটন মিলস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা, ১৯৬৪ সালে নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। এমবিবিএস কোর্স সমাপ্তির পর তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ কোর্সে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় হাসিময়ের মা তাঁর ছোট ছোট চার সন্তানকে নিয়ে প্রাণভয়ে রাস্তার ভূগর্ভস্থ ম্যানহোলে আশ্রয় নেন এবং প্রায় ৪৮ ঘণ্টা সেখানে অবরুদ্ধ থাকেন। দাঙ্গা প্রশমনের পর হাসিময়ের গোটা পরিবার বাস্তত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। কিন্তু হাশিময়কে কোনক্রমেই তারা দেশত্যাগে রাজি করাতে পারে নি।
'''হাজরা, হাসিময়''' (১৯৪৬-১৯৭১)  চিকিৎসক, শহীদ বুদ্ধিজীবী। হাসিময় হাজরা ১৯৪৬ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অনন্ত মাধব হাজরা ছিলেন নারায়ণগঞ্জে ঢাকেশ্বরী কটন মিলে কর্মরত চিকিৎসক। হাসিময় ১৯৬২ সালে ঢাকেশ্বরী কটন মিলস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা, ১৯৬৪ সালে নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। এমবিবিএস কোর্স সমাপ্তির পর তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ কোর্সে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় হাসিময়ের মা তাঁর ছোট ছোট চার সন্তানকে নিয়ে প্রাণভয়ে রাস্তার ভূগর্ভস্থ ম্যানহোলে আশ্রয় নেন এবং প্রায় ৪৮ ঘণ্টা সেখানে অবরুদ্ধ থাকেন। দাঙ্গা প্রশমনের পর হাসিময়ের গোটা পরিবার বাস্তত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। কিন্তু হাশিময়কে কোনক্রমেই তারা দেশত্যাগে রাজি করাতে পারে নি।


[[Image:HazraHasimoy.jpg|thumb|right|হাসিময় হাজরা]]
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আদমজী জুটমিলের শ্রমিকদের উপর গুলিবর্ষণ করে কয়েকজন শ্রমিককে হত্যা করে এবং শ্রমিকদের মধ্যে বহুসংখ্যক আহত হয়। সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় কার্ফু্য জারি করা হয়। এ সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাসিময় হাজরা কার্ফু্য উপেক্ষা করে একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে অকুস্থলে ছুটে যান এবং তিন দিন সেখানে অবস্থান করে আহতদের চিকিৎসা করেন। ১৯৬৯ সালে ডেমরায় ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকায় তিনি ছুটে যান তাঁর কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে। সেখানে আহত লোকদের উদ্ধারকার্য ও চিকিৎসায় তিনি কয়েকদিন নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭০ সালের নভেম্বরে উপকূলীয় এলাকায় প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সময় তিনি উদ্ধারকার্যে নিয়োজিত একটি দলের সদস্য হিসেবে সেখানে দুই সপ্তাহ অবস্থান করে উদ্ধারকার্য ও আহতদের চিকিৎসা দান করেন। হাসিময় হাজরা [[ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান|ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান]] এবং ১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে হাসিময় সীমান্ত পার হয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পরিকল্পনা করেন। ইত্যবসরে তিনি ঢাকার আশপাশের এলাকায় অপারেশনে নিয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের সঙ্গে যোগাযোগও করেন।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আদমজী জুটমিলের শ্রমিকদের উপর গুলিবর্ষণ করে কয়েকজন শ্রমিককে হত্যা করে এবং শ্রমিকদের মধ্যে বহুসংখ্যক আহত হয়। সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় কার্ফু্য জারি করা হয়। এ সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাসিময় হাজরা কার্ফু্য উপেক্ষা করে একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে অকুস্থলে ছুটে যান এবং তিন দিন সেখানে অবস্থান করে আহতদের চিকিৎসা করেন। ১৯৬৯ সালে ডেমরায় ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকায় তিনি ছুটে যান তাঁর কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে। সেখানে আহত লোকদের উদ্ধারকার্য ও চিকিৎসায় তিনি কয়েকদিন নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭০ সালের নভেম্বরে উপকূলীয় এলাকায় প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সময় তিনি উদ্ধারকার্যে নিয়োজিত একটি দলের সদস্য হিসেবে সেখানে দুই সপ্তাহ অবস্থান করে উদ্ধারকার্য ও আহতদের চিকিৎসা দান করেন। হাসিময় হাজরা [[ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান|ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান]] এবং ১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে হাসিময় সীমান্ত পার হয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পরিকল্পনা করেন। ইত্যবসরে তিনি ঢাকার আশপাশের এলাকায় অপারেশনে নিয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের সঙ্গে যোগাযোগও করেন।
[[Image:HazraHasimoy.jpg|thumb|right|হাসিময় হাজরা]]


হাসিময় ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেলে অবস্থানরত তাঁর কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মাঝেমধ্যে সেখানে যেতেন। ১৯৭১ সালের ২ মে অপরাহ্ন দুই ঘটিকায় হাসিময় গোপীবাগের বাসা থেকে একটি ভেসপায় চড়ে ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেল অভিমুখে রওনা হন। ঐদিন সন্ধ্যায় শহরে কার্ফু্য জারী করা হয়। কিন্তু হাসিময় তখনও ফিরে আসেন নি। পরদিন পর্যন্ত তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। পরে জানা যায় যে, ওই দিন ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেল থেকে বাসায় ফেরার পথে তৎকালীন পিজি হাসপাতালের সামনে সেনাসদস্যরা হাসিময়কে গ্রেফতার করে। পরে নির্মম নির্যাতনের পর তাঁকে হত্যা করা হয়।
হাসিময় ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেলে অবস্থানরত তাঁর কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মাঝেমধ্যে সেখানে যেতেন। ১৯৭১ সালের ২ মে অপরাহ্ন দুই ঘটিকায় হাসিময় গোপীবাগের বাসা থেকে একটি ভেসপায় চড়ে ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেল অভিমুখে রওনা হন। ঐদিন সন্ধ্যায় শহরে কার্ফু্য জারী করা হয়। কিন্তু হাসিময় তখনও ফিরে আসেন নি। পরদিন পর্যন্ত তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। পরে জানা যায় যে, ওই দিন ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেল থেকে বাসায় ফেরার পথে তৎকালীন পিজি হাসপাতালের সামনে সেনাসদস্যরা হাসিময়কে গ্রেফতার করে। পরে নির্মম নির্যাতনের পর তাঁকে হত্যা করা হয়।


বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ জাতির জন্য তাঁর আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে হাসিময় হাজরার নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ জাতির জন্য তাঁর আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে হাসিময় হাজরার নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]
 
[মুয়ায্যম হুসায়ন খান]


[[en:Hazra, Hashimoy]]
[[en:Hazra, Hashimoy]]

১৬:১৭, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

হাজরা, হাসিময় (১৯৪৬-১৯৭১)  চিকিৎসক, শহীদ বুদ্ধিজীবী। হাসিময় হাজরা ১৯৪৬ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অনন্ত মাধব হাজরা ছিলেন নারায়ণগঞ্জে ঢাকেশ্বরী কটন মিলে কর্মরত চিকিৎসক। হাসিময় ১৯৬২ সালে ঢাকেশ্বরী কটন মিলস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা, ১৯৬৪ সালে নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। এমবিবিএস কোর্স সমাপ্তির পর তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ কোর্সে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় হাসিময়ের মা তাঁর ছোট ছোট চার সন্তানকে নিয়ে প্রাণভয়ে রাস্তার ভূগর্ভস্থ ম্যানহোলে আশ্রয় নেন এবং প্রায় ৪৮ ঘণ্টা সেখানে অবরুদ্ধ থাকেন। দাঙ্গা প্রশমনের পর হাসিময়ের গোটা পরিবার বাস্তত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। কিন্তু হাশিময়কে কোনক্রমেই তারা দেশত্যাগে রাজি করাতে পারে নি।

হাসিময় হাজরা

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আদমজী জুটমিলের শ্রমিকদের উপর গুলিবর্ষণ করে কয়েকজন শ্রমিককে হত্যা করে এবং শ্রমিকদের মধ্যে বহুসংখ্যক আহত হয়। সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় কার্ফু্য জারি করা হয়। এ সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাসিময় হাজরা কার্ফু্য উপেক্ষা করে একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে অকুস্থলে ছুটে যান এবং তিন দিন সেখানে অবস্থান করে আহতদের চিকিৎসা করেন। ১৯৬৯ সালে ডেমরায় ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকায় তিনি ছুটে যান তাঁর কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে। সেখানে আহত লোকদের উদ্ধারকার্য ও চিকিৎসায় তিনি কয়েকদিন নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭০ সালের নভেম্বরে উপকূলীয় এলাকায় প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সময় তিনি উদ্ধারকার্যে নিয়োজিত একটি দলের সদস্য হিসেবে সেখানে দুই সপ্তাহ অবস্থান করে উদ্ধারকার্য ও আহতদের চিকিৎসা দান করেন। হাসিময় হাজরা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে হাসিময় সীমান্ত পার হয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পরিকল্পনা করেন। ইত্যবসরে তিনি ঢাকার আশপাশের এলাকায় অপারেশনে নিয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের সঙ্গে যোগাযোগও করেন।

হাসিময় ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেলে অবস্থানরত তাঁর কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মাঝেমধ্যে সেখানে যেতেন। ১৯৭১ সালের ২ মে অপরাহ্ন দুই ঘটিকায় হাসিময় গোপীবাগের বাসা থেকে একটি ভেসপায় চড়ে ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেল অভিমুখে রওনা হন। ঐদিন সন্ধ্যায় শহরে কার্ফু্য জারী করা হয়। কিন্তু হাসিময় তখনও ফিরে আসেন নি। পরদিন পর্যন্ত তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। পরে জানা যায় যে, ওই দিন ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেল থেকে বাসায় ফেরার পথে তৎকালীন পিজি হাসপাতালের সামনে সেনাসদস্যরা হাসিময়কে গ্রেফতার করে। পরে নির্মম নির্যাতনের পর তাঁকে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ জাতির জন্য তাঁর আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে হাসিময় হাজরার নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]