পারভীন, সেলিনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''পারভীন, সেলিনা '''(১৯৩১-১৯৭১)  সাংবাদিক, শহীদ বুদ্ধিজীবী। জন্ম ১৯৩১ সালের ৩১ মার্চ নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ছোট কল্যাণনগর গ্রামে। পিতা মৌলভী আবিদুর রহমান এবং মাতা মোসাম্মৎ সাজেদা খাতুন। তাঁর প্রকৃত নাম মনোয়ারা বেগম। ১৯৫৪ সালে তিনি এফিডেভিট করে সেলিনা পারভীন নাম গ্রহণ করেন।
[[Image:ParvinSelina.jpg|thumb|400px|right|সেলিনা পারভীন]]
'''পারভীন, সেলিনা''' (১৯৩১-১৯৭১)  সাংবাদিক, শহীদ বুদ্ধিজীবী। জন্ম ১৯৩১ সালের ৩১ মার্চ নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ছোট কল্যাণনগর গ্রামে। পিতা মৌলভী আবিদুর রহমান এবং মাতা মোসাম্মৎ সাজেদা খাতুন। তাঁর প্রকৃত নাম মনোয়ারা বেগম। ১৯৫৪ সালে তিনি এফিডেভিট করে সেলিনা পারভীন নাম গ্রহণ করেন।


সেলিনা পারভীন ফেনীর সরলা বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। নানা প্রতিকূলতার কারণে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। ১৯৪২ সালে নিজ গ্রাম ছোট কল্যাণনগরে চলে আসেন। ১৯৪৯ সালে তিনি প্রাইভেট ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন। কিন্তু কৃতকার্য হতে পারেন নি।
সেলিনা পারভীন ফেনীর সরলা বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। নানা প্রতিকূলতার কারণে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। ১৯৪২ সালে নিজ গ্রাম ছোট কল্যাণনগরে চলে আসেন। ১৯৪৯ সালে তিনি প্রাইভেট ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন। কিন্তু কৃতকার্য হতে পারেন নি।


১৯৪৫ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার মোহনগঞ্জে থাকার সময় কলকাতা নিবাসী শিক্ষয়িত্রী উমার সাহচর্য লাভ করেন। তিনি তাঁকে সাহিত্য সাধনায় অনুপ্রাণিত করেন। কবিতা দিয়ে তাঁর সাহিত্যের পথে যাত্রা শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে নিবন্ধ ও প্রতিবেদন প্রকাশ করতেন। তাঁর লেখা সে সময়ের পত্রিকা পূর্বদেশ, আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, সংবাদ, ইত্তেফাক ও বেগম পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। ১৯৫৭ সালে তিনি মিটফোর্ড হাসপাতালে নাসিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে রোকেয়া হলে কিছুকাল মেট্রনের চাকরি করার পরে ১৯৬০-৬১ সালে আজিমপুর বেবিহোমে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৫ সালে সলিমুল্লাহ এতিমখানায় কিছুকাল চাকরি করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় সম্পাদকের সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে যোগ দেন সাপ্তাহিক ললনা পত্রিকায়। এ সময় থেকেই নিবন্ধ রচনা ও সাংবাদিকতায় দক্ষতা অর্জন করেন।
১৯৪৫ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার মোহনগঞ্জে থাকার সময় কলকাতা নিবাসী শিক্ষয়িত্রী উমার সাহচর্য লাভ করেন। তিনি তাঁকে সাহিত্য সাধনায় অনুপ্রাণিত করেন। কবিতা দিয়ে তাঁর সাহিত্যের পথে যাত্রা শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে নিবন্ধ ও প্রতিবেদন প্রকাশ করতেন। তাঁর লেখা সে সময়ের পত্রিকা পূর্বদেশ, আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, সংবাদ, ইত্তেফাক ও বেগম পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। ১৯৫৭ সালে তিনি মিটফোর্ড হাসপাতালে নাসিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে রোকেয়া হলে কিছুকাল মেট্রনের চাকরি করার পরে ১৯৬০-৬১ সালে আজিমপুর বেবিহোমে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৫ সালে সলিমুল্লাহ এতিমখানায় কিছুকাল চাকরি করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় সম্পাদকের সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে যোগ দেন সাপ্তাহিক ললনা পত্রিকায়। এ সময় থেকেই নিবন্ধ রচনা ও সাংবাদিকতায় দক্ষতা অর্জন করেন।
[[Image:ParvinSelina.jpg|thumb|400px|right|সেলিনা পারভীন]]


১৯৬৯ সালে তাঁর একক প্রচেষ্টায় সম্পাদিত ও প্রকাশিত হয় শিলালিপি পত্রিকা।  ছবি অাঁকা, সঙ্গীত চর্চা, ব্লক তৈরি এবং ডিজাইনের কাজে নিজেকে যুক্ত রাখতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর শিলালিপি পত্রিকার প্রচ্ছদ ও বিভিন্ন রচনা পাকসেনাদের এ দেশিয় দোসর রাজাকারদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। সে সময়ে তিনি ঢাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা দিতেন। তাঁর এসব কর্মকান্ড শত্রুর জন্য বিপদজনক ছিল বলেই আল-বদরদের তালিকায় তাঁর নাম উঠে আসে।
১৯৬৯ সালে তাঁর একক প্রচেষ্টায় সম্পাদিত ও প্রকাশিত হয় শিলালিপি পত্রিকা।  ছবি অাঁকা, সঙ্গীত চর্চা, ব্লক তৈরি এবং ডিজাইনের কাজে নিজেকে যুক্ত রাখতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর শিলালিপি পত্রিকার প্রচ্ছদ ও বিভিন্ন রচনা পাকসেনাদের এ দেশিয় দোসর রাজাকারদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। সে সময়ে তিনি ঢাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা দিতেন। তাঁর এসব কর্মকান্ড শত্রুর জন্য বিপদজনক ছিল বলেই আল-বদরদের তালিকায় তাঁর নাম উঠে আসে।

১০:৫৫, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

সেলিনা পারভীন

পারভীন, সেলিনা (১৯৩১-১৯৭১)  সাংবাদিক, শহীদ বুদ্ধিজীবী। জন্ম ১৯৩১ সালের ৩১ মার্চ নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ছোট কল্যাণনগর গ্রামে। পিতা মৌলভী আবিদুর রহমান এবং মাতা মোসাম্মৎ সাজেদা খাতুন। তাঁর প্রকৃত নাম মনোয়ারা বেগম। ১৯৫৪ সালে তিনি এফিডেভিট করে সেলিনা পারভীন নাম গ্রহণ করেন।

সেলিনা পারভীন ফেনীর সরলা বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। নানা প্রতিকূলতার কারণে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। ১৯৪২ সালে নিজ গ্রাম ছোট কল্যাণনগরে চলে আসেন। ১৯৪৯ সালে তিনি প্রাইভেট ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন। কিন্তু কৃতকার্য হতে পারেন নি।

১৯৪৫ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার মোহনগঞ্জে থাকার সময় কলকাতা নিবাসী শিক্ষয়িত্রী উমার সাহচর্য লাভ করেন। তিনি তাঁকে সাহিত্য সাধনায় অনুপ্রাণিত করেন। কবিতা দিয়ে তাঁর সাহিত্যের পথে যাত্রা শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে নিবন্ধ ও প্রতিবেদন প্রকাশ করতেন। তাঁর লেখা সে সময়ের পত্রিকা পূর্বদেশ, আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, সংবাদ, ইত্তেফাক ও বেগম পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। ১৯৫৭ সালে তিনি মিটফোর্ড হাসপাতালে নাসিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে রোকেয়া হলে কিছুকাল মেট্রনের চাকরি করার পরে ১৯৬০-৬১ সালে আজিমপুর বেবিহোমে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৫ সালে সলিমুল্লাহ এতিমখানায় কিছুকাল চাকরি করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় সম্পাদকের সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে যোগ দেন সাপ্তাহিক ললনা পত্রিকায়। এ সময় থেকেই নিবন্ধ রচনা ও সাংবাদিকতায় দক্ষতা অর্জন করেন।

১৯৬৯ সালে তাঁর একক প্রচেষ্টায় সম্পাদিত ও প্রকাশিত হয় শিলালিপি পত্রিকা।  ছবি অাঁকা, সঙ্গীত চর্চা, ব্লক তৈরি এবং ডিজাইনের কাজে নিজেকে যুক্ত রাখতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর শিলালিপি পত্রিকার প্রচ্ছদ ও বিভিন্ন রচনা পাকসেনাদের এ দেশিয় দোসর রাজাকারদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। সে সময়ে তিনি ঢাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা দিতেন। তাঁর এসব কর্মকান্ড শত্রুর জন্য বিপদজনক ছিল বলেই আল-বদরদের তালিকায় তাঁর নাম উঠে আসে।

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ১৪ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনী যে বিপুল সংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করে সেলিনা পারভীন তাঁদের একজন। ওই বধ্যভূমিতে চোখবাঁধা অবস্থায় পড়েছিল তাঁর মরদেহ। ১৮ ডিসেম্বর তাঁকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

১৯৯১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ সেলিনা পারভীনের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।  [সেলিনা হোসেন]