দাশগুপ্ত, সুরেন্দ্রনাথ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''দাশগুপ্ত'''''', ''''''সুরেন্দ্রনাথ '''(১৮৮৭-১৯৫২)  সংস্কৃত পন্ডিত ও দার্শনিক। ১৮৮৭ সালে তিনি''' '''কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃভূমি বরিশাল জেলার গৈলা গ্রাম। সুরেন্দ্রনাথ কলকাতার রিপন কলেজ থেকে সংস্কৃতে বিএ (সম্মান) এবং  [[১০৫৭৬২|সংস্কৃত কলেজ]] থেকে এমএ (১৯০৮) পাস করেন। ১৯১০ সালে পাশ্চাত্য দর্শনে এমএ পাস করে তিনি কিছুদিন রাজশাহী কলেজে অধ্যাপনা করেন; পরে চট্টগ্রাম কলেজে সংস্কৃত ও বাংলার প্রধান অধ্যাপক হন।  [[১০০৮৯১|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করার পর গবেষণার জন্য তিনি ইংল্যান্ড যান এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় পিএইচডি (১৯২২) ডিগ্রি অর্জন করেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন বাংলা সাহিত্যে অধ্যাপনা করে ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে দর্শনের অধ্যাপকপদে যোগদান করেন। সাত বছর পর ১৯৩১ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ এবং ১৯৪২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবিজ্ঞানের অধ্যাপক হন।
'''দাশগুপ্ত, সুরেন্দ্রনাথ''' (১৮৮৭-১৯৫২)  সংস্কৃত পন্ডিত ও দার্শনিক। ১৮৮৭ সালে তিনি কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃভূমি বরিশাল জেলার গৈলা গ্রাম। সুরেন্দ্রনাথ কলকাতার রিপন কলেজ থেকে সংস্কৃতে বিএ (সম্মান) এবং  [[সংস্কৃত কলেজ, কলকাতা|সংস্কৃত কলেজ]] থেকে এমএ (১৯০৮) পাস করেন। ১৯১০ সালে পাশ্চাত্য দর্শনে এমএ পাস করে তিনি কিছুদিন রাজশাহী কলেজে অধ্যাপনা করেন; পরে চট্টগ্রাম কলেজে সংস্কৃত ও বাংলার প্রধান অধ্যাপক হন।  [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করার পর গবেষণার জন্য তিনি ইংল্যান্ড যান এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় পিএইচডি (১৯২২) ডিগ্রি অর্জন করেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন বাংলা সাহিত্যে অধ্যাপনা করে ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে দর্শনের অধ্যাপকপদে যোগদান করেন। সাত বছর পর ১৯৩১ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ এবং ১৯৪২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবিজ্ঞানের অধ্যাপক হন।


সুরেন্দ্রনাথ ১৯৩৮ সালে দার্শনিক ক্রোচের আমন্ত্রণে ইটালি যান এবং রোম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৫ সালে অবসর গ্রহণের পর তিনি পুনরায় বিদেশ যান এবং ১৯৫০ সাল থেকে লক্ষ্ণৌ শহরে বসবাস করেন। তিনি এক সময় মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর নিকট থেকে অর্থসাহায্য নিয়েছিলেন; তার প্রতিদানস্বরূপ তিনি নিজের সুবৃহৎ গ্রন্থাগারটি মণীন্দ্রচন্দ্রের নামে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন।
সুরেন্দ্রনাথ ১৯৩৮ সালে দার্শনিক ক্রোচের আমন্ত্রণে ইটালি যান এবং রোম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৫ সালে অবসর গ্রহণের পর তিনি পুনরায় বিদেশ যান এবং ১৯৫০ সাল থেকে লক্ষ্ণৌ শহরে বসবাস করেন। তিনি এক সময় মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর নিকট থেকে অর্থসাহায্য নিয়েছিলেন; তার প্রতিদানস্বরূপ তিনি নিজের সুবৃহৎ গ্রন্থাগারটি মণীন্দ্রচন্দ্রের নামে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন।
৮ নং লাইন: ৮ নং লাইন:
সুরেন্দ্রনাথ একটি নিজস্ব দার্শনিক মতবাদ গড়ে তুলেছিলেন, যা Theory of Dependent Emergence বা সংক্ষেপে ‘সম্ভূতিবাদ’ নামে পরিচিত। এই মতবাদ অনুসারে জড়পদার্থ (matter) চেতন-পদার্থ (consciousness), জীবন (life), মন (mind) প্রভৃতি গুণগত বৈপরীত্য সত্ত্বেও একটি অপরটির ওপর নির্ভরশীল। এগুলির মধ্যে একটি অন্তর্নিহিত যোগসূত্র রয়েছে, যার উপলব্ধিই হচ্ছে সত্যের উপলব্ধি। সাধনার দ্বারা মানুষ নিজেকে এমন এক স্তরে উন্নীত করতে পারে যেখানে সে তার সহজাত জৈবিক প্রবৃত্তিগুলিকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং সেসবের বহির্মুখী গতিকে রোধ করে সেগুলিকে অন্তর্মুখী করতে সমর্থ হয়।
সুরেন্দ্রনাথ একটি নিজস্ব দার্শনিক মতবাদ গড়ে তুলেছিলেন, যা Theory of Dependent Emergence বা সংক্ষেপে ‘সম্ভূতিবাদ’ নামে পরিচিত। এই মতবাদ অনুসারে জড়পদার্থ (matter) চেতন-পদার্থ (consciousness), জীবন (life), মন (mind) প্রভৃতি গুণগত বৈপরীত্য সত্ত্বেও একটি অপরটির ওপর নির্ভরশীল। এগুলির মধ্যে একটি অন্তর্নিহিত যোগসূত্র রয়েছে, যার উপলব্ধিই হচ্ছে সত্যের উপলব্ধি। সাধনার দ্বারা মানুষ নিজেকে এমন এক স্তরে উন্নীত করতে পারে যেখানে সে তার সহজাত জৈবিক প্রবৃত্তিগুলিকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং সেসবের বহির্মুখী গতিকে রোধ করে সেগুলিকে অন্তর্মুখী করতে সমর্থ হয়।


সুরেন্দ্রনাথের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো পাঁচ খন্ডে রচিত ''A History of Indian Philosophy''। এছাড়া তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গবেষণাধর্মী রচনা হলো:'' ''''General Introduction to Tantra Philosophy'','' A Study of Patanjali'' (১৯২০),'' Yoga Philosophy in Relation to other Systems of Indian Thought'' (১৯৩০), ''A History of Sanskrit Literature'' (১৯৪৭),'' Rabindranath: The Poet and Philosopher'' (১৯৪৮),'' ''কাব্যবিচার,'' ''সৌন্দর্যতত্ত্ব, রবিদীপিকা ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি পাঁচটি মৌলিক কাব্যগ্রন্থ এবং একটি উপন্যাসও রচনা করেন।  [[১০১৭৭৯|চিত্রকলা]],  [[১০০০৭৭|অলঙ্কারশাস্ত্র]] প্রভৃতি বিষয়েও তার প্রবন্ধাদি রয়েছে। ১৯৫২ সালের ১৮ ডিসেম্বর তাঁর জীবনাবসান ঘটে।  
সুরেন্দ্রনাথের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো পাঁচ খন্ডে রচিত ''A History of Indian Philosophy''। এছাড়া তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গবেষণাধর্মী রচনা হলো: ''General Introduction to Tantra Philosophy'', ''A Study of Patanjali'' (১৯২০), ''Yoga Philosophy in Relation to other Systems of Indian Thought'' (১৯৩০), ''A History of Sanskrit Literature'' (১৯৪৭), ''Rabindranath: The Poet and Philosopher'' (১৯৪৮), ''কাব্যবিচার, সৌন্দর্যতত্ত্ব, রবিদীপিকা'' ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি পাঁচটি মৌলিক কাব্যগ্রন্থ এবং একটি উপন্যাসও রচনা করেন।  [[চিত্রকলা|চিত্রকলা]],  [[অলঙ্কারশাস্ত্র|অলঙ্কারশাস্ত্র]] প্রভৃতি বিষয়েও তার প্রবন্ধাদি রয়েছে। ১৯৫২ সালের ১৮ ডিসেম্বর তাঁর জীবনাবসান ঘটে। [সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী]


[সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী]
<!-- imported from file: দাশগুপ্ত, সুরেন্দ্রনাথ.html-->
[[en:Dasgupta, Surendranath]]


[[en:Dasgupta, Surendranath]]
[[en:Dasgupta, Surendranath]]

০৪:৪৫, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

দাশগুপ্ত, সুরেন্দ্রনাথ (১৮৮৭-১৯৫২)  সংস্কৃত পন্ডিত ও দার্শনিক। ১৮৮৭ সালে তিনি কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃভূমি বরিশাল জেলার গৈলা গ্রাম। সুরেন্দ্রনাথ কলকাতার রিপন কলেজ থেকে সংস্কৃতে বিএ (সম্মান) এবং  সংস্কৃত কলেজ থেকে এমএ (১৯০৮) পাস করেন। ১৯১০ সালে পাশ্চাত্য দর্শনে এমএ পাস করে তিনি কিছুদিন রাজশাহী কলেজে অধ্যাপনা করেন; পরে চট্টগ্রাম কলেজে সংস্কৃত ও বাংলার প্রধান অধ্যাপক হন।  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করার পর গবেষণার জন্য তিনি ইংল্যান্ড যান এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় পিএইচডি (১৯২২) ডিগ্রি অর্জন করেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন বাংলা সাহিত্যে অধ্যাপনা করে ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে দর্শনের অধ্যাপকপদে যোগদান করেন। সাত বছর পর ১৯৩১ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ এবং ১৯৪২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবিজ্ঞানের অধ্যাপক হন।

সুরেন্দ্রনাথ ১৯৩৮ সালে দার্শনিক ক্রোচের আমন্ত্রণে ইটালি যান এবং রোম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৫ সালে অবসর গ্রহণের পর তিনি পুনরায় বিদেশ যান এবং ১৯৫০ সাল থেকে লক্ষ্ণৌ শহরে বসবাস করেন। তিনি এক সময় মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর নিকট থেকে অর্থসাহায্য নিয়েছিলেন; তার প্রতিদানস্বরূপ তিনি নিজের সুবৃহৎ গ্রন্থাগারটি মণীন্দ্রচন্দ্রের নামে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন।

সুরেন্দ্রনাথ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯২১ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টার-এলায়েড কংগ্রেস অব ফিলোসফি’তে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯২৪ সালে নেপলস-এ এবং ১৯২৬ সালে হার্ভার্ড-এ আন্তর্জাতিক ফিলোসফিক্যাল কংগ্রেসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং বাংলা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯২৫ সালে তিনি রাশিয়ায় আমন্ত্রিত হন এবং পরের বছর শিকাগোতে হ্যারিস বক্তৃতা প্রদান করেন। ১৯৩২ সালে তিনি ভারতীয় দর্শন কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৩৬ সালে তিনি লন্ডন এবং ১৯৩৯ সালে প্যারিসে আন্তর্জাতিক ‘কংগ্রেস অব রিলিজয়ন’-এ ভারতবর্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন।

সুরেন্দ্রনাথ একটি নিজস্ব দার্শনিক মতবাদ গড়ে তুলেছিলেন, যা Theory of Dependent Emergence বা সংক্ষেপে ‘সম্ভূতিবাদ’ নামে পরিচিত। এই মতবাদ অনুসারে জড়পদার্থ (matter) চেতন-পদার্থ (consciousness), জীবন (life), মন (mind) প্রভৃতি গুণগত বৈপরীত্য সত্ত্বেও একটি অপরটির ওপর নির্ভরশীল। এগুলির মধ্যে একটি অন্তর্নিহিত যোগসূত্র রয়েছে, যার উপলব্ধিই হচ্ছে সত্যের উপলব্ধি। সাধনার দ্বারা মানুষ নিজেকে এমন এক স্তরে উন্নীত করতে পারে যেখানে সে তার সহজাত জৈবিক প্রবৃত্তিগুলিকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং সেসবের বহির্মুখী গতিকে রোধ করে সেগুলিকে অন্তর্মুখী করতে সমর্থ হয়।

সুরেন্দ্রনাথের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো পাঁচ খন্ডে রচিত A History of Indian Philosophy। এছাড়া তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গবেষণাধর্মী রচনা হলো: General Introduction to Tantra Philosophy, A Study of Patanjali (১৯২০), Yoga Philosophy in Relation to other Systems of Indian Thought (১৯৩০), A History of Sanskrit Literature (১৯৪৭), Rabindranath: The Poet and Philosopher (১৯৪৮), কাব্যবিচার, সৌন্দর্যতত্ত্ব, রবিদীপিকা ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি পাঁচটি মৌলিক কাব্যগ্রন্থ এবং একটি উপন্যাসও রচনা করেন।  চিত্রকলাঅলঙ্কারশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়েও তার প্রবন্ধাদি রয়েছে। ১৯৫২ সালের ১৮ ডিসেম্বর তাঁর জীবনাবসান ঘটে। [সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী]