কালিদাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
(কোনও পার্থক্য নেই)
|
১৯:৩৬, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
কালিদাস (আনু. খ্রি.পূ ১ম/খ্রিস্টিয় ৪র্থ শতক) বাল্মীকি-ব্যাসের পরে সর্বাধিক খ্যাতিসম্পন্ন সংস্কৃত কবি ও নাট্যকার। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও আবির্ভাবকাল সম্পর্কে নানারকম মতবাদ প্রচলিত আছে। একপক্ষ তাঁকে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের কবি বলে মনে করে। এ ক্ষেত্রে তাঁর মালবিকাগ্নিমিত্র নাটক প্রধান সূত্র হিসেবে কাজ করেছে, কারণ এ নাটকটি ওই সময়কার শূঙ্গবংশীয় রাজা অগ্নিমিত্রের কাহিনী অবলম্বনে তাঁরই জীবদ্দশায় রচিত বলে গবেষকদের ধারণা। অপর একটি মতে কালিদাস খ্রিস্টিয় চতুর্থ শতকে জন্মগ্রহণ করেন এবং কথিত হয় যে, তিনি উজ্জয়িনীর রাজা বিক্রমাদিত্যের সভার নবরত্নের অন্যতম ছিলেন। তাঁর জন্ম সম্পর্কে অনেক মতবাদের মধ্যে এ দুটিই প্রধান।
কালিদাসের জন্মকালের মতো জন্মস্থান নিয়েও বিতর্ক আছে। কারও কারও মতে তিনি ছিলেন পশ্চিম মালবের অধিবাসী; আবার কেউ কেউ তাঁকে বাঙালি বলেও মনে করেন।
কালিদাসকে নিয়ে অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। কথিত হয় যে, বাল্যকালে অনাথ হয়ে পড়লে গো-পালকরা কালিদাসকে লালনপালন করে। ফলে তাঁর বিদ্যার্জনের সুযোগ হয়নি। কিন্তু ঘটনাচক্রে এক বিদুষী রাজকন্যার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। দুর্বিনীতা রাজকন্যাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য মন্ত্রীর পরামর্শে রাজা এ বিয়ে স্থির করেন। বিয়ের পর কালিদাসের মূর্খতার কথা জেনে রাজকন্যা মর্মাহত হন। কিন্তু তিনি কালিদাসকে কালিকাদেবীর আরাধনা করে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য অনুপ্রাণিত করেন। দেবী কালিদাসের আরাধনায় প্রসন্ন হয়ে তাঁকে আশীর্বাদ করেন। এরপর কালিদাস লেখাপড়া শিখে বেদ, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, ইতিহাস, কাব্য, অলঙ্কার, ছন্দ, ব্যাকরণ, জ্যোতিষ, দর্শনশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেন এবং তাঁর মধ্যে অভিনব কবিত্বশক্তির প্রকাশ ঘটে। পরবর্তীকালে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে সাহিত্য সাধনা করেন এবং তাঁর রচনায় অধীত বিদ্যার গভীর প্রভাব পড়ে।
কালিদাস একাধারে নাট্যকার এবং মহাকাব্য ও গীতিকাব্যের রচয়িতা। তাঁর রচনাবলির মধ্যে অভিজ্ঞানশকুন্তল, বিক্রমোর্বশীয় এবং মালবিকাগ্নিমিত্র নাটক, রঘুবংশ ও কুমারসম্ভব মহাকাব্য এবং মেঘদূত ও ঋতুসংহার গীতিকাব্য সাহিত্যমাধুর্যে অতুলনীয়। রঘুবংশ মহাকাব্যে তিনি রঘুর দিগ্বিজয় উপলক্ষে প্রাচীন বঙ্গের অনেক বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর মেঘদূত কাহিনীকাব্যটি দেশে-বিদেশে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মেঘের মাধ্যমে বিরহিণী প্রিয়ার নিকট এক নির্বাসিত যক্ষের বার্তা প্রেরণ মেঘদূত কাব্যের উপজীব্য। পূর্বমেঘ ও উত্তরমেঘ এ দুটি অংশে কাব্যটি বিভক্ত। কালিদাসের পরবর্তী অনেক বাঙালি কবি মেঘদূতের অনুকরণে বহু কাব্য রচনা করেছেন। এতদ্ব্যতীত শ্রুতবোধ, নলোদয়, পুষ্পবাণবিলাস, শৃঙ্গারতিলক, জোতির্বিদাভরণ প্রভৃতি গ্রন্থ কালিদাসের নামে প্রচলিত থাকলেও সুধীসমাজে তা সর্বৈবভাবে স্বীকৃত নয়। কালিদাসের রচনা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ সমগ্র ভারতে ব্যাপকভাবে চর্চিত হয়। বাংলাদেশের টোল-চতুষ্পাঠী এবং অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর গ্রন্থগুলি সংস্কৃত বিষয়ের পাঠ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত।
ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর এ ত্রয়ীর উপাসনায় কালিদাসের প্রগাঢ় অনুরক্তি থাকলেও তিনি মূলত নির্গুণ ব্রহ্মেরই উপাসক ছিলেন। তাঁর রচনা থেকে এ বিষয়টি অনুমান করা যায়। কালিদাস বর্ণাশ্রমধর্মের সমর্থক ছিলেন। মানবজীবনে সংযম ও স্বার্থত্যাগের প্রয়োজনীয়তা তিনি বিশেষভাবে উপলব্ধি করেছিলেন।
কালিদাসের রচনায় প্রাচীন ভারতের এক অভিজাত সমাজের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি সংস্কৃত ভাষাকে সমৃদ্ধ করে বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি তাঁর কাব্যে প্রায় ৩০টির মতো ছন্দ ব্যবহার করেছেন। শিল্পরূপময়তা, অর্থের গভীরতা ও কল্পনার ব্যাপকতা তাঁর সকল রচনাকে রসোত্তীর্ণ করেছে। তাঁর অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকের ইংরেজি অনুবাদের (১৭৮৭) মাধ্যমে পাশ্চাত্য প্রথম ভারতীয় সাহিত্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। অসাধারণ কবিপ্রতিভার জন্য কালিদাস হোমার, শেক্সপীয়র, মিলটন, দান্তে, গ্যেটে, ভার্জিল প্রমুখ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কবি-সাহিত্যিকের সমপর্যায়ভুক্ত। [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]