সর্বপ্রাণবাদ

সর্বপ্রাণবাদ  আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস। ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী  ই.বি টাইলর সর্বপ্রাণবাদের (Animism) প্রবক্তা। তাঁর মতে আদিম ধর্মবিশ্বাসের এটি হলো প্রথম সোপান। ল্যাটিন ‘এ্যানিমা’ শব্দ থেকে ‘এ্যানিমিজম’ শব্দটি এসেছে। এ্যানিমা-র অর্থ ‘আত্মা’। সে অর্থে আদিম জনগোষ্ঠীকে এ্যানিমিস্ট বা সর্বপ্রাণবাদী বলা হয়ে থাকে।

টাইলরের মতে মানুষ নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে আত্মার প্রতি বিশ্বাস এনেছে। আদিম মানুষ জাগ্রত ও স্বপ্নাবস্থায় আত্মাকে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রত্যক্ষ করেছে। যে আত্মা মানুষের দেহে অবস্থান করে সে দেহ ছেড়ে চলে গেলে মানুষের মৃত্যু হয়। এই আত্মাই হলো প্রকৃত আত্মা। স্বপ্নে যাকে দেখা যায় সে দেহের ভেতরে-বাইরে যাতায়াত করতে পারে। একে বলা হয়েছে প্রেতচ্ছায়া। স্বপ্নে তাকে নাচতে ও গাইতেও দেখা যায়।

আত্মা যে কেবল মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেই বিদ্যমান তা নয়, অপ্রাণিবাচক বস্ত্ততেও তার অস্তিত্ব আছে। আত্মার অবিনশ্বরতা, মৃত্যুর পরপারে গমন, কোনো জীব বা বস্ত্ততে অবস্থান এবং পুনরাগমন বা জন্মান্তর সম্পর্কে তাদের মধ্যে একটা ধারণা গড়ে উঠেছে। এই ধারণাকে কেন্দ্র করেই ছায়াসদৃশ বিদেহী আত্মার মানুষের কবরের চারদিকে ঘোরাফেরা করা, ওই আত্মার সাহায্যার্থে উট বলি দেওয়া, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় জিনিসপত্র দিয়ে তাকে সহায়তা করা প্রভৃতির মধ্য দিয়ে আত্মার প্রতি বিশ্বাসেরই প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। মৃতের ভৌতিক অবস্থা, তার ভোজনে বিশ্বাস, স্বর্গ-নরকের ধারণা, মৃতের সূর্য-চন্দ্র-তারকাসমূহে অবস্থান প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করেছেন টাইলর। এ থেকে  টোটেম, প্রকৃতিপূজা, ফেটিশসহ বিভিন্ন দেবদেবী ও অপদেবতার পূজার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে। বাংলাদেশের অনেক ধর্মের মধ্যে সর্বপ্রাণবাদের বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন বটবৃক্ষ পুজা, তুলশী পুজা, নদীপুজা ইত্যাদি। [মোমেন চৌধুরী]