রামগঞ্জ উপজেলা

রামগঞ্জ উপজেলা (লক্ষ্মীপুর জেলা)  আয়তন: ১৬৯.৩১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০১´ থেকে ২৩°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৮´ থেকে ৯০°৫৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলা, দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর সদর ও রায়পুর উপজেলা, পূর্বে চাটখিল উপজেলা, পশ্চিমে ফরিদগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৮৫৬৮৬; পুরুষ ১৩০৫৬৮, মহিলা ১৫৫১১৮। মুসলিম ২৭৫৫৩৭, হিন্দু ১০১৩১, খ্রিস্টান ৯, বৌদ্ধ ৮ এবং অন্যান্য ১।

জলাশয় প্রধান নদী: ফ্রিদার।

প্রশাসন রামগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৮৯১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ২৪ মার্চ ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ১১৯ ১৩৪ ৪৪৭৭৫ ২৪০৯১১ ১৬৮৭ ৬৩.১ ৬৪.৪
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৬.১৬ ১৮ ৪৪৭৭৫ ১৭১২ ৬৩.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইছাপুর ৩৮ ৩৬৬১ ১০১২৭ ১২৫৯৮ ৫৮.৯
করপাড়া ৪৭ ৩৭৯৮ ১০২১৪ ১২৮০৮ ৬৮.৩
কাঞ্চনপুর ৪২ ৩৪৪৪ ১১০৪২ ১৩০৩৮ ৬০.৮
চণ্ডীপুর ২৩ ৪৬৯৮ ১৩৩২২ ১৫৯১১ ৫৯.২
দরবেশপুর ৩৩ ৩২২৭ ৮৯৯৪ ১১১০১ ৬৫.৭
নোয়াগাঁও ৬৬ ৩৫৫৪ ১০৯৫৩ ১৩৪০৩ ৬৭.৭
ভাটরা ১৪ ৪২১৮ ১১৮৫৯ ১৪১৮২ ৬৬.২
ভাদুর ১৩ ২৪৬৮ ৮৭৮১ ১০১৭৩ ৫৫.৭
ভোলাকোট ১৯ ৪১৯৮ ১৩৪৮৭ ১৫৮০০ ৬৬.৯
লামচর ৫৭ ৪০৩৩ ১০২৮৪ ১২৮৩৪ ৭৩.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শ্যামপুর দায়রা শরীফ, কচুয়া দরগাহ, হরিশচর দরগাহ, লক্ষ্মীধর পাড়ার পঞ্চরত্ন লধৈজীর মঠ, শ্রীরামপুর রাজবাড়ি।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর তৎকালীন নোয়াখালীর রামগঞ্জে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। কয়েকদিন স্থায়ী এ দাঙ্গায় শিকার হয় হাজার হাজার নর-নারী। এ সময় শান্তি ও অহিংসার বাণী নিয়ে সুদূর দিল্লী থেকে রামগঞ্জে ছুটে আসেন মহাত্মা গান্ধী। তিনি ৭ নভেম্বর ১৯৪৬ সাল থেকে ২ মার্চ ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত শান্তিমিশন নিয়ে উপদ্রুত গ্রামসমূহে ঘুরে বেড়ান।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট চালায়। ফতেহপুর দীঘির পাড়ে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংঘর্ষে বহুসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। পরবর্তীতে পাকসেনারা ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করে রামগঞ্জ ক্যাম্পে এনে হত্যা করে। এ উপজেলার রামগঞ্জ গোডাউন এলাকা, রামগঞ্জ হাইস্কুল ও ডাক বাংলো ছিল পাকবাহিনী ও রাজাকারদের ক্যাম্প। উপজেলার ২টি স্থানে (রামগঞ্জ এম ইউ উচ্চ বিদ্যালয় এবং হাজিরহাট কলাকোপা মাদ্রাসা সংলগ্ন স্থানে) বধ্যভূমি এবং ৩টি স্থানে (মধুপুর হাইস্কুলের উত্তরে পুকুর পাড় এবং উপজেলা সদরের পশ্চিমে এবং বেড়ী রাস্তার পাশে) শহীদদের গণকবর রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন রামগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৩২, মন্দির ৪৩, দরগাহ ৪, মাযার ২, আশ্রম ১, হরিসভা ৮, মঠ ৯। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সোনাপুর বড় মসজিদ, রামগঞ্জ রেজিষ্ট্রি অফিস মসজিদ, রামগঞ্জ ডাক বাংলো মসজিদ, কাঞ্চনপুর দরগা মসজিদ, ফতেহপুর বড় মসজিদ, সোনাপুর কালী মন্দির, চণ্ডীপুর মনষা কালী মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৪.২%; পুরুষ ৬২.৭%, মহিলা ৬৫.৪%। কলেজ ৪, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬৩, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১২, কিন্ডার গার্টেন ৯, মাদ্রাসা ৩৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রামগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৭), দল্টা কলেজ (১৯৯৩), রামগঞ্জ মডেল কলেজ (১৯৯৪), ভাটরা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), দাসপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), চন্ডীপুর মনষা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), দল্টা রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), কাঞ্চনপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৩), ভাদুর উচ্চ বিদ্যালয়, পানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, নাগমুদ মাদ্রাসা (১৮৫৬),  কেথুড়ী সিনিয়র মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: রামগঞ্জ বার্তা (১৯৯১); মাসিক: রেনেসাঁ, জাগরণ (২০০০), অগ্রজ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ২২, লাইব্রেরি ১৭, মহিলা সংগঠন ৪০, নাট্যগোষ্ঠী ২, অডিটোরিয়াম ১, সিনেমা হল ১, খেলার মাঠ ১২।

দর্শনীয় স্থান শাহ মিরান দরগা শরীফ, লক্ষ্মীধর পাড়া দিঘী ও পঞ্চরত্ন, রামগঞ্জ আনসার ব্যাটেলিয়ান ও শ্রীরামপুর রাজবাড়ি।

জনগোষ্ঠীর প্রধান আয়ের উৎস  কৃষি ৩১.৬২%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৪%, শিল্প ০.১০% ব্যবসা ১৯.১৪%, চাকরি ১৫.৭৪%,  যোগাযোগ ও পরিবহণ ৩.৯৪%, নির্মাণ ২.৩৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৫%, রেন্ট এন্ড রেমিটেন্স ১৩.২৫% অন্যান্য ১০.৮৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬১.১০%, ভূমিহীন ৩৮.৯০%। শহরে ৫২.৭৭%  এবং গ্রামে ৬২.৫৫% পরিবারের  কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, ডাল, পাট।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, সরিষা, কাউন, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, লেবু, নারিকেল, সুপারি, লেবু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৯৮, হাঁস-মুরগি ১৭০, নার্সারি ১৮, হ্যাচারি ২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩৭৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৮৬ কিমি; নৌপথ ১১২ কিমি; বেড়ি বাঁধ ১৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা  রাইস মিল, ফ্লাওয়ার মিল, আইম ফ্যাক্টরি, স’মিল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ব্যাটারি ফ্যাক্টরি, আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, ছাপাখানা,  ইটভাটা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, কাসাশিল্প, তৈলের ঘানি, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, শীতলপাটি, নকশি কাঁথা।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫০, মেলা ৩। সোনাপুর হাট, পানিয়ালা হাট, ভাটরা হাট, বালুয়া চৌমুহনী হাট, চৌধুরী বাজার, বেড়ীর বাজার, কেথুড়ী বাজার এবং মনসা মন্দির (যদুবাবু আশ্রম) মেলা ও শ্যামপুর দায়রা শরীফ মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  নারিকেল, সুপারি, লেবু, শীতলপাটি, লোহার তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৪.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস।

পানীয় জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৪%, ট্যাপ ২.৪% এবং অন্যান্য ৪.২%। এ উপজেলার ৯০% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমানিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮৯.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৮.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১০, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ৫০, ক্লিনিক ৬।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার ফলে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, রিডো, সোপিরেট, সেবা। [মোহাম্মদ নূর হোসেন]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রামগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।