মিত্র, কিশোরীচাঁদ

মিত্র, কিশোরীচাঁদ (১৮২২-১৮৭৩)  লেখক, সরকারি কর্মকর্তা, সমাজসেবক। কলকাতার এক বেনিয়া পরিবারে তাঁর জন্ম। তিনি কলকাতার হিন্দু কলেজে পড়াশোনা করেন। তাঁর পিতা ছিলেন রামনারায়ণ মিত্র এবং ভাই ঔপন্যাসিক  প্যারীচাঁদ মিত্র। ১৮৪৬ সালে কিশোরীচাঁদ ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিযুক্ত হন। তখন ভারতীয়দের জন্য এ পদ ছিল খুবই মর্যাদাসম্পন্ন। এ পদে তিনি রামপুর-বোয়ালিয়ায় (বর্তমান রাজশাহী) আট বছর চাকরি করেন। তখন তিনি অনেক জনকল্যাণমূলক কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তিনি জমিদার ও স্থানীয় জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করে রাস্তাঘাট ও সেতু তৈরি করান, পুকুর খনন করান এবং দাতব্য চিকিৎসালয় ও স্কুল প্রতিষ্ঠা করান।

১৮৫৪ সালে কিশোরীচাঁদ কলকাতার পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট হন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ পদে থাকাবস্থায় তাঁকে চাকরি হারাতে হয়। উপনিবেশিক বিচারব্যবস্থার দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করায় তিনি ইংরেজ কর্মকর্তাদের বিরাগভাজন হন। কোম্পানি সরকারের  আইনে এ দেশীয় বিচারকদের ইউরোপীয়দের বিচার করার এখতিয়ার ছিল না। কিশোরীচাঁদ এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। রামপুর-বোয়ালিয়ায় চাকরি করার সময় তিনি  ক্যালকাটা রিভিউ পত্রিকায় ‘Bengal Ryot’ শিরোনামে বেনামে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন। তাতে তিনি উপনিবেশিক শাসনের দ্বৈততা এবং ভন্ডামি তুলে ধরে দেখান, কীভাবে কৃষকরা তাদের অধিকার হারাচ্ছে এবং এরফলে সমাজ ও অর্থনীতির কী ক্ষতি হচ্ছে। তিনি আরও কয়েকটি পত্রপত্রিকায় বেনামে প্রবন্ধ লিখে ব্রিটিশ শাসনে জনগণের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। তাঁর এ কার্যকলাপকে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি আনুগত্যহীনতা বলে আখ্যায়িত করা হয় এবং শেষাবধি ১৮৫৮ সালে তিনি চাকরিচ্যুত হন।

কিশোরীচাঁদ ১৮৫৯ সালে Indian Field নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি ১৮৬৫ সালে হিন্দু প্যাট্রিয়টের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। সমালোচনামূলক প্রবন্ধকার হিসেবে তিনি ক্যালকাটা রিভিউ,  হিন্দু প্যাট্রিয়টবেঙ্গল স্পেক্টেটর, Bengal Magazine ইত্যাদি পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি করেন। তাঁর যেসব প্রবন্ধ তখনকার সুধীসমাজে বিশেষ সাড়া জাগায় সেগুলি হলো: ‘Raja Rammohan Roy’, ‘Zamindar and Ryot’, ‘Hindu College’, ‘The Mutiny’, ‘The Government and the People’, ‘Memoir of Dwarakanath Tagore’ এবং ‘Orissa Past and Present’। তিনি কয়েকটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। সেগুলি হচ্ছে: Hare Memorial Society, Bethune Society, Social Science Association এবং Hindu Theosophical Society।   [সিরাজুল ইসলাম]