দীউয়ান

দীউয়ান  মুসলমান শাসকদের ইতিহাসে দীউয়ান শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর (রাঃ)-ই প্রথম দীউয়ান প্রবর্তন করেন। তিনি মুসলমানদের ভাতা প্রদানের এক বিস্তারিত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ভাতার তালিকা এবং এ ভাতার হিসাব রক্ষণের কার্যালয়কে দীউয়ান বলা হতো। দিল্লির সুলতানি আমলে, প্রায় বর্তমান মন্ত্রণালয়ের মতো, দীউয়ান বলতে প্রশাসনের একটি বিভাগ বোঝানো হতো, উদাহরণস্বরূপ, দীউয়ান--ওয়াজারাত (উজিরের বিভাগ), দীউয়ান--আরজ (নিয়োগ এবং বেতন প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সামরিক বিভাগ) প্রভৃতি। মুগল যুগে, দীউয়ান শব্দটি রাজস্ব বিভাগের প্রধান ব্যক্তিকে বোঝাতো এবং কার্যালয়টিকে দীউয়ানি বলা হতো; রাজস্ব বিভাগের শাখাসমূহের প্রধানকেও দীউয়ান বলা হতো; যথা, দীউয়ান--তান। সুবাহগুলির বা প্রদেশসমূহের রাজস্ব বিভাগের প্রধানগণও দীউয়ান নামে পরিচিত ছিলেন। আকবরএর রাজত্বকালে প্রাদেশিক দীউয়ানদের সুবাহদার (প্রশাসনিক প্রধান)-এর কর্তৃত্বমুক্ত করা হয়; আরও পরে প্রাদেশিক সরকারকে নিজামত (সাধারণ প্রশাসন) এবং দীউয়ানি (রাজস্ববিভাগ) এ দুভাগে বিভক্ত করা হয়। মুগল সম্রাট  আওরঙ্গজেব কর্তৃক নিযুক্ত বাংলার শেষ বিখ্যাত দীউয়ান ছিলেন মুর্শীদকুলী খান। মুর্শীদকুলী খান তাঁর অধীনে নাজিম ও দীউয়ান এ দুটি পদই একীভূত করে নেন এবং এ অবস্থা মুসলিম শাসনের অবসান পর্যন্ত চালু ছিল।  [আবদুল করিম]

গ্রন্থপঞ্জি  PK Hitti, History of the Arabs, 4th edition revised, 1949; abdul karim, Murshid Quli Khan and His Times, Dhaka, 1963; IH Qurashi, Administration of the Sultanate of Delhi, 5th edition, 1971.