কালীগঞ্জ উপজেলা (লালমনিরহাট)

কালীগঞ্জ উপজেলা (লালমনিরহাট জেলা)  আয়তন: ২৫৩.২৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৫৪´ থেকে ২৬°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৭´ থেকে ৮৯°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে হাতীবান্ধা উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে গঙ্গাচড়াআদিতমারী উপজেলা, পূর্বে আদিতমারী উপজেলা, পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) ও জলঢাকা উপজেলা

জনসংখ্যা ২৪৫৫৯৫; পুরুষ ১২২২২৫, মহিলা ১২৩৩৭০। মুসলিম ১৯৯০০৭, হিন্দু ৪৬৩০৮, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ১৯১ এবং অন্যান্য ৮৮।

জলাশয়  তিস্তা, ত্রিমোহনী ও স্বর্ণমতি নদী এবং হরিশ্বর বিল ও বিন্দাল বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন কালীগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯১৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সাল।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৬৪ ৯২ ১৮৯৬৭ ২২৬৬২৮ ৯৭০ ৫৫.৬ ৪৫.২
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজার সংখ্যা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.১৭ ১৮৯৬৭ ৩০৭৪ ৫৫.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাকিনা ৫৩ ৫৯৬৮ ১৬২৬০ ১৫৯৮৭ ৪৫.২
গোড়ল ৪৭ ৫৪৬৫ ১০৩৮২ ১০৭৪০ ৪৩.৬
চন্দ্রপুর ২৯ ৬৯৭৭ ১৫৫৫৩ ১৬০৯৬ ৪৭.০
চলবালা ২৩ ৭০২৬ ১৩০৪৫ ১৩৩১৭ ৫১.৫
তুষভান্ডার ৯৫ ৮৪০৬ ২৪১৭০ ২৩৮৪৪ ৫১.১
দলগ্রাম ৩৫ ৭০৫৫ ১৩৮৩২ ১৪০৬৭ ৪৫.৯
ভোটমারী ১৭ ১৩১৩৯ ১২২৩৩ ১২০৮৬ ৩২.৮
মাদাতী ৬৫ ৮৫৪০ ১৬৭৫০ ১৭২৩৩ ৪৫.০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মহারাজা মহিমারঞ্জনের রাজবাড়ি (কাকিনা), তুষভান্ডার রাজবাড়ি (তুষভান্ডার), সম্ভু সাগর, দাড়িবাবুর বাড়ি ও মূর্তি।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে মুগলদের কোচবিহার আক্রমণ, ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে নুরুলদিনের নেতৃত্বে কৃষক-বিদ্রোহ, ফকির সন্ন্যাসী আন্দোলন এবং ১৯৪০ এর দশকের কৃষক-আন্দোলন উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কালীগঞ্জ উপজেলা ৬নং সেক্টরের অধীন ছিল। ৬ এপ্রিল পাকবাহিনী কালীগঞ্জে অতর্কিত আক্রমণ করে বেশসংখ্যক নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর প্রবল আক্রমণের মুখে পাকবাহিনী কালীগঞ্জ ত্যাগ করে। ৬ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলার ভোটমারী রেলস্টেশনের পূর্ব পাশে ১টি বধ্যভূমি এবং কে ইউ পি ডিগ্রি কলেজের পাশে ১টি গণকবর রয়েছে; কালীগঞ্জ কে ইউ পি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ‘চিরঞ্জীব কালীগঞ্জ’ নামে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন কালীগঞ্জ উপজেলা (লালমনিরহাট জেলা), বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইজারাদারের মসজিদ, কাকিনা শিব মন্দির, শ্রী শ্রী ভবতারিনী কালী মন্দির, ভগবতেশ্বর শিব মন্দির, জমিদার অনঙ্গ মোহন প্রতিষ্ঠিত শিব মন্দির।

শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৬.০%; পুরুষ ৪৮.৯%, মহিলা ৪৩.১%। কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩০, মাদ্রাসা ৭৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: করিম উদ্দিন পাবলিক ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), উত্তর বাংলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৪), তুষভান্ডার মহিলা কলেজ (১৯৯৮), তুষভান্ডার আর এম এম পি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৭), কাকিনা মহিমা রঞ্জন স্মৃতি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), দলগ্রাম দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), করিম উদ্দিন পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), তুষভান্ডার নছর উদ্দিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬৮), মদনপুর বৈরাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৬৫), কাশীরাম একরামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬৮)।

পত্র-পত্রিকা  ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: রঙ্গপুর দিকপ্রকাশ (১৮৪৮), মাসিক: প্রত্যাশা (অবলুপ্ত) এবং বাসনা (১৯০৮)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪৪, ক্লাব ৫০, সাংস্কৃতিক সংগঠন ১, সিনেমা হল ৩, নাট্যমঞ্চ ১, মহিলা সংগঠন ৪।

দর্শনীয় স্থান কাকিনা জমিদার বাড়ির হাওয়াখানা, জমিদার মহিমা রঞ্জনের জাদুঘর (কাকিনা); শেখ ফজলল করিমের বাড়ি (কাকিনা), তুষভান্ডার জমিদার বাড়ি (তুষভান্ডার)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৬.৪২%, অকৃষি শ্রমিক ৪.২৫%, শিল্প ০.২৭%, ব্যবসা ৮.৮৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৪৫%, চাকরি ৩.৩০%, নির্মাণ ০.৫৪%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৮% এবং অন্যান্য ৪.৭১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.১২%, ভূমিহীন ৩৯.৮৮%। শহরে ৪২.৭৭% এবং গ্রামে ৬১.৪৯% পরিবারের কৃষিভূমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, তামাক, পাট, আলু, আদা।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিসি, আউশ ধান, পয়রা, ডাল, বাজরা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেঁপে, তরমুজ।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ১১০ কিমি, আধা-পাকা রাস্তা ৭ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৫৭৩ কিমি; নৌপথ ১৭ কিমি; রেলপথ ২০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, স’মিল, আইস ফ্যাক্টরি প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, স্বর্ণশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ, ওয়েল্ডিং প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ৭। কালীগঞ্জ হাট, চাপার হাট, চামটার হাট, ভুল্লার হাট, চৌধুরীর হাট এবং কাউয়াঘাটের মেলা ও বারুণীর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   তামাক, ধান, ময়দা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৫.১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলায় উন্নতমানের সিলিকেট ও ম্যাঙ্গানিজসমৃদ্ধ পাথরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৮.২%, ট্যাপ ০.২% এবং অন্যান্য ১.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৩.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৮.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৮.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, হিতৈষী বাংলাদেশ, আরডিআরএস।  [মোঃ হায়দার আলী বাবু]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কালীগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।