হোসেন, শাহাদাৎ
হোসেন, শাহাদাৎ (১৮৯৩-১৯৫৩) সাংবাদিক, সাহিত্যিক। পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার পন্ডিতপোল গ্রামে তাঁর জন্ম। হুগলি কলেজিয়েট স্কুলে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করার পর তিনি হাড়োয়া মাইনর স্কুলে কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। পরে কলকাতা গিয়ে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির (১৯১১) গ্রন্থাগারিক হন। সেখানে তিনি মাসিক সওগাতএ সহকারী সম্পাদক, মাসিক সহচর-এ যুগ্মসম্পাদক এবং দৈনিক সোলতান ও সাপ্তাহিক মোসলেম জগত-এ সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৩১ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে শাহাদাৎ চারমাস কারাদন্ড ভোগ করেন। কারামুক্তির পর তিনি থিয়েটার ও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হন এবং শিশিরকুমার ভাদুড়ীর নাট্যমন্দিরসহ নানা নাট্যমঞ্চে অভিনয় করেন। দেশবিভাগের পর তিনি ঢাকার বেতারকেন্দ্রে চাকরি নিয়ে পাক্ষিক এলান পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি বেতারশিল্পী হিসেবেও কাজ করেন, কিন্তু মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও পাকিস্তান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করায় রেডিও থেকে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয় (১৯৫৩)।
শাহাদাৎ হোসেন কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে সাহিত্যজীবনে প্রবেশ করেন। তবে সাহিত্যের অন্য মাধ্যমেও তাঁর সহজ বিচরণ ছিল। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা: কাব্য মৃদঙ্গ (১৯২৮), কল্পলেখা (১৯২৯), রূপচ্ছন্দা (১৯৫০); উপন্যাস ও নাটক সরফরাজ খাঁ (১৯১৯), হিরণলেখা (১৯২০), পারের পথ (১৯২০), স্বামীর ভুল (১৯২১), সোনার কাঁকন (১৯২৩), যুগের আলো (১৯২৪), রিক্তা (১৯২৭), পথের দেখা (১৯২৯), কাঁটাফুল (১৯৩০), আনারকলি (১৯৪৫), মসনদের মোহ (১৯৪৬); গল্প রূপায়ণ (১৯৩৩) এবং শিশুসাহিত্য ছেলেদের গল্প (১৯২৪), মোহন ভোগ (১৯২৪) ইত্যাদি। এসব রচনায় তিনি মুসলমানদের ঐতিহ্য ও গৌরবময় কাহিনী তুলে ধরেন। পঞ্চাশের দশকে রূপচ্ছন্দা ও মসনদের মোহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এ বাংলা বিষয়ের পাঠ্যভুক্ত ছিল। বসিরহাট বাণী সঙ্ঘ তাঁকে ‘কবিকুল শিরোমণি’ ও ‘পূর্ণেন্দু’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৫৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। [ওয়াকিল আহমদ]