হোমিওপ্যাথি
হোমিওপ্যাথি (Homeopathy) জার্মান চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান উদ্ভাবিত (১৭৯৬) এক চিকিৎসা পদ্ধতি। সুস্থ মানুষের ওপর ওষুধ প্রয়োগের ফলাফল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মূলনীতি। এতে বলা হয় যে, কোন লোকের ওপর একটি ওষুধ বেশি মাত্রায় প্রয়োগ করলে যেসব প্রতিক্রিয়া ঘটায়, কম মাত্রার ওই ওষুধ প্রয়োগে সেগুলি দূরীভূত হয়। এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কখনই একান্তভাবে যাচাই করা হয় নি। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় অত্যন্ত অল্পমাত্রার ওষুধ ব্যবহূত হয় এবং বহু বছর অসংখ্য রোগীর ওপর এগুলির প্রয়োগ বস্ত্তত ব্যবহার ও নিরাময়ের মধ্যে এক ধরনের কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে, আর এটিই পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে হোমিওপ্যাথির প্রসার ঘটিয়েছে।
১৮২৫ সালে আমেরিকায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শুরু হয় এবং নিরুৎসাহ করা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত তা চালু আছে। উন্নয়নশীল দেশে এটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অন্যতম প্রধান বিকল্প চিকিৎসা। ভারত উপমহাদেশে হোমিওপ্যাথি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং বিশ শতকে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও বহুকাল থেকেই এই চিকিৎসা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভিজ্জ বা সাধারণ রাসায়নিক পদার্থ থেকে কনসেনট্রেট (concentrate) হিসেবে এই ওষুধ তৈরি করা হয় এবং চিকিৎসকরা গাইড বুকের নির্দেশ অনুযায়ী সেগুলি প্রয়োজন মতো লঘুকৃত করেন। বাংলা ভাষায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রচুর বইপত্র আছে এবং এগুলির ভিত্তিতে দেশে এই চিকিৎসা চলছে। ইদানিং দেশের নগর ও শহরে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদানের জন্য কয়েকটি হোমিওপ্যাথি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
চিকিৎসকরা সস্তায় গাঢ় ওষুধ কিনেন এবং নির্দেশ মতো তা লঘু (হাজার, লক্ষ ইত্যাদি অংশে) করেন, ফলে অসংখ্য রোগীকে অল্প দামে তা দেওয়া যায়। প্রধানত স্বল্পমূল্যের জন্যই এই চিকিৎসা বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করেছে এবং তাতে চিকিৎসক ও রোগী উভয়ই উপকৃত হচ্ছেন। রোগীদের ব্যাপক সংখ্যক দরিদ্র এবং ডাক্তারের খরচ, এমনকি সাধারণ ঔষধপত্র ক্রয়েরও সামর্থ্য নেই। তাদের জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরাই বিকল্প। এসব চিকিৎসকের জন্য হোমিওপ্যাথিক বোর্ডে রেজিস্ট্রিভুক্ত হওয়ার বিধি থাকলেও গ্রাম বা শহরে অনেক চিকিৎসকই তা মান্য করেন না। এটিও এই চিকিৎসা বিস্তারের একটি কারণ। হোমিওপ্যাথির গৃহচিকিৎসাও ব্যাপক এবং এজন্য একটি গাইডবুক ও এক বাক্স ওষুধই যথেষ্ট। অধিকন্তু এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। চিকিৎসক ও বিজ্ঞানিসমাজে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গুরুত্ব না পেলেও পত্রপত্রিকায়, টেলিভিশনে মাঝেমধ্যে তা উচ্চ প্রশংসিত হয়, যদিও এসব ঔষুধের সঠিক কার্যপ্রণালী আজও বহুলাংশেই অজ্ঞাত রয়ে গেছে।
বাংলাদেশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৮ সালে। অতঃপর ১৯৮৯ সালে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সরকারি হোমিওপ্যাথিক ডিগ্রি কলেজ’ এবং তা Bachelor of Homeopathic Medicine and Surgery (BHMS) ডিগ্রি প্রদান করে। বর্তমানে কলেজের ছাত্রসংখ্যা প্রায় ৩,০০০। ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক কারণে এবং দেশের ঐতিহ্যে আত্তীভূত বিধায় এই ধরনের চিকিৎসার প্রতি মানুষের আগ্রহ যথেষ্ট রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। অধিকতর উন্নয়নের জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে ওঠার সুবাদে বহু উদ্যমী চিকিৎসক হোমিওপ্যাথির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]
আরও দেখুন সামাজিক চিকিৎসা; সনাতন চিকিৎসা।