হুদা, নওয়াব সৈয়দ শামসুল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''হুদা, নওয়াব সৈয়দ শামসুল '''(১৮৬২-১৯২২)  আইনজীবী, রাজনীতিক। জন্ম ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নাসিরনগর থানার গোকর্ণ গ্রামে। তাঁর পিতা শাহ সৈয়দ রিয়াযাতউল্লাহ ছিলেন কবি, আইনজীবী, সাংবাদিক এবং ১৮৬৪-১৮৬৫ সাল পর্যন্ত ফারসি সাপ্তাহিক পত্রিকা দূরবীন-এর সম্পাদক।  শামসুল হুদার শিক্ষাজীবন শুরু হয় হুগলি মাদ্রাসায়। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি ১৮৮৪ সালে বি.এ পাস করেন। তিনি ১৮৮৬ সালে বি.এল এবং ১৮৮৯ সালে ফার্সি সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।
'''হুদা, নওয়াব সৈয়দ শামসুল''' (১৮৬২-১৯২২)  আইনজীবী, রাজনীতিক। জন্ম ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নাসিরনগর থানার গোকর্ণ গ্রামে। তাঁর পিতা শাহ সৈয়দ রিয়াযাতউল্লাহ ছিলেন কবি, আইনজীবী, সাংবাদিক এবং ১৮৬৪-১৮৬৫ সাল পর্যন্ত ফারসি সাপ্তাহিক পত্রিকা দূরবীন-এর সম্পাদক।  শামসুল হুদার শিক্ষাজীবন শুরু হয় হুগলি মাদ্রাসায়। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি ১৮৮৪ সালে বি.এ পাস করেন। তিনি ১৮৮৬ সালে বি.এল এবং ১৮৮৯ সালে ফার্সি সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।


শামসুল হুদা ১৮৮৫ সালে কলকাতা মাদ্রাসায় আরবি ও ফার্সির শিক্ষক পদে যোগ দেন। পরে অধ্যাপনা ছেড়ে তিনি ১৮৮৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতার বিকাশে তাঁর বেশ অবদান রয়েছে। তিনি সাপ্তাহিক সুধাকর প্রকাশ করেন এবং মিহির ও সুধাকর-এর প্রকাশনা স্বত্ব ক্রয় করেন। ১৮৮৯ সালে তিনি ইংরেজি সাপ্তাহিক Mohammedan Observer পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য হন। আইনশাস্ত্রে তাঁর বুৎপত্তির জন্য তাঁকে ১৯০২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'Tagore Professor of Law' পদ প্রদান করা হয়। টেগোর প্রফেসর হিসেবে তিনি Principles of the Land of Crimes in British India বিষয়ে ধারাবাহিক বক্তৃতা প্রদান করেন।
শামসুল হুদা ১৮৮৫ সালে কলকাতা মাদ্রাসায় আরবি ও ফার্সির শিক্ষক পদে যোগ দেন। পরে অধ্যাপনা ছেড়ে তিনি ১৮৮৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতার বিকাশে তাঁর বেশ অবদান রয়েছে। তিনি সাপ্তাহিক সুধাকর প্রকাশ করেন এবং মিহির ও সুধাকর-এর প্রকাশনা স্বত্ব ক্রয় করেন। ১৮৮৯ সালে তিনি ইংরেজি সাপ্তাহিক Mohammedan Observer পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য হন। আইনশাস্ত্রে তাঁর বুৎপত্তির জন্য তাঁকে ১৯০২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'Tagore Professor of Law' পদ প্রদান করা হয়। টেগোর প্রফেসর হিসেবে তিনি Principles of the Land of Crimes in British India বিষয়ে ধারাবাহিক বক্তৃতা প্রদান করেন।
৮ নং লাইন: ৮ নং লাইন:
শামসুল হুদা ১৯১৭ সাল থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ অলংকৃত করেন। ১৯২১ সালে তিনি বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য মনোনীত হন।
শামসুল হুদা ১৯১৭ সাল থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ অলংকৃত করেন। ১৯২১ সালে তিনি বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য মনোনীত হন।


সৈয়দ শামসুল হুদা মুসলিম ছাত্রদের জন্য কারমাইকেল হোস্টেল নির্মাণ এবং গোকর্ণ ওলীউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনে সহায়তা এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় আসমাতুননিসা ছাত্রাবাস নির্মাণ করেন। তাঁর জনকল্যাণমূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ১৯১৩ সালে ‘নওয়াব’ এবং ১৯১৬ সালে ‘কে.সি.আই.ই’ উপাধি লাভ করেন। ১৯২২ সালের ৭ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়।
সৈয়দ শামসুল হুদা মুসলিম ছাত্রদের জন্য কারমাইকেল হোস্টেল নির্মাণ এবং গোকর্ণ ওলীউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনে সহায়তা এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় আসমাতুননিসা ছাত্রাবাস নির্মাণ করেন। তাঁর জনকল্যাণমূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ১৯১৩ সালে ‘নওয়াব’ এবং ১৯১৬ সালে ‘কে.সি.আই.ই’ উপাধি লাভ করেন। ১৯২২ সালের ৭ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। [গোলাম কিবরিয়া ভূইয়া]
 
[গোলাম কিবরিয়া ভূইয়া]


[[en:Huda, Nawab Syed Shamsul]]
[[en:Huda, Nawab Syed Shamsul]]

০৮:৫৯, ২৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

হুদা, নওয়াব সৈয়দ শামসুল (১৮৬২-১৯২২)  আইনজীবী, রাজনীতিক। জন্ম ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নাসিরনগর থানার গোকর্ণ গ্রামে। তাঁর পিতা শাহ সৈয়দ রিয়াযাতউল্লাহ ছিলেন কবি, আইনজীবী, সাংবাদিক এবং ১৮৬৪-১৮৬৫ সাল পর্যন্ত ফারসি সাপ্তাহিক পত্রিকা দূরবীন-এর সম্পাদক।  শামসুল হুদার শিক্ষাজীবন শুরু হয় হুগলি মাদ্রাসায়। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি ১৮৮৪ সালে বি.এ পাস করেন। তিনি ১৮৮৬ সালে বি.এল এবং ১৮৮৯ সালে ফার্সি সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।

শামসুল হুদা ১৮৮৫ সালে কলকাতা মাদ্রাসায় আরবি ও ফার্সির শিক্ষক পদে যোগ দেন। পরে অধ্যাপনা ছেড়ে তিনি ১৮৮৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতার বিকাশে তাঁর বেশ অবদান রয়েছে। তিনি সাপ্তাহিক সুধাকর প্রকাশ করেন এবং মিহির ও সুধাকর-এর প্রকাশনা স্বত্ব ক্রয় করেন। ১৮৮৯ সালে তিনি ইংরেজি সাপ্তাহিক Mohammedan Observer পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য হন। আইনশাস্ত্রে তাঁর বুৎপত্তির জন্য তাঁকে ১৯০২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'Tagore Professor of Law' পদ প্রদান করা হয়। টেগোর প্রফেসর হিসেবে তিনি Principles of the Land of Crimes in British India বিষয়ে ধারাবাহিক বক্তৃতা প্রদান করেন।

মুসলিম পুনর্জাগরণের একজন কর্মী হিসেবে শামসুল হুদা মুসলিম সমাজে শিক্ষা বিস্তারের আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ১৯০৪ সালে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক মোহামেডান শিক্ষা সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯০৭ সালে তিনি নিখিল বঙ্গ মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি মনোনীত হন। ১৯০৯-১৯১০ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১০ সালে তিনি পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি পূর্ববঙ্গের মুসলিম প্রতিনিধি হিসেবে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১২ সালে তিনি বেঙ্গল এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯১৭ সাল পর্যন্ত কাউন্সিলে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ও শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এ সময় তিনি পূর্ববঙ্গের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনের উন্নতির জন্য গভর্নর কাউন্সিল এবং গভর্নর জেনারেল কাউন্সিলে জোরালো ভূমিকা রাখেন।

শামসুল হুদা ১৯১৭ সাল থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ অলংকৃত করেন। ১৯২১ সালে তিনি বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য মনোনীত হন।

সৈয়দ শামসুল হুদা মুসলিম ছাত্রদের জন্য কারমাইকেল হোস্টেল নির্মাণ এবং গোকর্ণ ওলীউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনে সহায়তা এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় আসমাতুননিসা ছাত্রাবাস নির্মাণ করেন। তাঁর জনকল্যাণমূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ১৯১৩ সালে ‘নওয়াব’ এবং ১৯১৬ সালে ‘কে.সি.আই.ই’ উপাধি লাভ করেন। ১৯২২ সালের ৭ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। [গোলাম কিবরিয়া ভূইয়া]