হিসাববিজ্ঞান
হিসাববিজ্ঞান সাধারণভাবে কোন প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য এবং এর কর্মকান্ডের হিসাব সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন প্রকাশের তত্ত্ব, পরিমাপ রীতি ও প্রক্রিয়াকে বুঝায়। সংকীর্ণ অর্থে হিসাব হচ্ছে কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক লেনদেন শনাক্তকরণ, পরিমাপকরণ, শ্রেণিকরণ, লিপিবদ্ধকরণ, হিসাবকাল শেষে ফলাফল নির্ধারণ এবং এর বিশ্লেষণ ও বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকগণ প্রতিষ্ঠানের মালিক ও অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষের সাথে তথ্য আদান-প্রদানের স্বার্থে আর্থিক প্রতিবেদনের জন্য হিসাব প্রতিবেদন ব্যবহার করেন।
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে হিসাব কতগুলি ধারাবাহিক পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করে, যেমন ব্যবসায়িক লেনদেন শনাক্তকরণ, পরিমাপকরণ ও হিসাবে লিপিবদ্ধকরণ এবং হিসাবকাল শেষে লিপিবদ্ধকরণ ঘটনা সংক্ষিপ্তকরণ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ। তথ্য আদান-প্রদানের জন্য কতগুলি আর্থিক বিবরণ প্রস্ত্তত ও প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনগুলি হলো আয় বিবরণী/লাভ-ক্ষতি হিসাব, উদ্বৃত্ত-পত্র, নগদান-প্রবাহ বিবরণী এবং মূল্য সংযোজন বিবরণী। এছাড়াও ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ব্যবস্থাপককে দৈনন্দিন বহু সমস্যার সমাধান দিতে হয়। এজন্য তার বিভিন্ন ধরনের প্রচুর তথ্যের প্রয়োজন হয়। এসব তথ্যের অধিকাংশই সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগ। তাই, সমাজের প্রয়োজনে হিসাববিজ্ঞানের বহু শাখার উদ্ভব ঘটেছে। এগুলি হলো গঠনমূলক শাখা (হিসাবতত্ত্ব); ব্যবহারিক শাখা (উৎপাদন-ব্যয় হিসাব ও আর্থিক হিসাব); সমালোচনামূলক শাখা (আর্থিক নিরীক্ষা ও উৎপাদন-ব্যয় নিরীক্ষা), তথ্য আদান-প্রদান পদ্ধতি এবং পদ্ধতি-বিন্যাস শাখা (হিসাব পদ্ধতি পরিকল্পনা)।
বাংলাদেশের হিসাব ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রথমেই বিভিন্ন ভিত্তিতে হিসাববিজ্ঞানের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে বলতে হয়, যেমন ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানের হিসাব, সরকারি মালিকানা/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের হিসাব, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব, সরকারি হিসাব। ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মালিকানার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে হিসাবকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যেমন একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের হিসাব, অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব, যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের হিসাব এবং সমবায় প্রতিষ্ঠানের হিসাব। সব ধরনের হিসাব পদ্ধতি বাংলাদেশের বিভিন্ন আইন দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত। এছাড়া, ব্যবসায়ের ভিন্নতানুযায়ী (যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান) হিসাব পৃথক পৃথক ধরনের হয়ে থাকে।
যৌথমালিকানা প্রতিষ্ঠানকে এর হিসাব প্রস্ত্ততকালে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের হিসাব সম্পর্কিত ধারা ও তফশিল অনুসরণ করতে হয়। ঢাকা শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলিকে ১৯৮৭ সালের সিকিরিউটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস অনুযায়ী হিসাব তৈরি করতে হয়। এছাড়া একটি কোম্পানিকে আন্তর্জাতিক হিসাবমান কমিটি কর্তৃক প্রণীত ও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টেন্টস কর্তৃক গৃহীত মান প্রয়োগ করতে হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে ১৯৯১ সালের ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের (ছক ‘এ’ ও ছক ‘বি’) ধারা এবং ১৯৯৩ সালের আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ধারা অনুযায়ী হিসাব প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশে সকল ব্যাংকের জন্য ৩০টি আন্তর্জাতিক হিসাবমান বাধ্যতামূলক করেছে। বীমা কোম্পানিগুলিকে ১৯৩৮ সালের বীমা আইনের ছক এ.বি.সি.ডি.ই এবং এফ অনুযায়ী তাদের আর্থিক বিবরণী প্রস্ত্তত করতে হয়। অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ধারা প্রযোজ্য।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশে সকল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করে এবং ব্যবস্থাপনার জন্য পাঁচটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করে। কর্পোরেশনগুলি হলো বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন (বিটিএমসি), বাংলাদেশ সুগার ও ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি), বাংলাদেশ স্টিল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (বিএসইসি)। এই কর্পোরেশনগুলির জন্য পাঁচটি স্বাধীন হিসাব পদ্ধতি তৈরি করা হয়। এই নতুন হিসাব পদ্ধতির দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সমরূপতা ও অবিভাজ্যতা। একটি কর্পোরেশনের অধীনে যতগুলি প্রতিষ্ঠান আছে সবার জন্য একই হিসাবপদ্ধতি অনুসরণ এবং একই হিসাব থেকে আর্থিক ও উৎপাদন ব্যয় সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করতে হয়। তবে, ঐতিহ্যগতভাবে এই দু ধরনের তথ্যের জন্য দুটি হিসাব বই রাখা হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে বৈদেশিক সাহায্যে বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এদের হিসাব রাখতে হয় ডোনেশন (ভলানটারি অ্যাকটিভিটিস) রেগুলেশন রুলস ১৯৭৮ অনুযায়ী।
বাংলাদেশ সরকারের হিসাবের জন্য একটি পৃথক বিভাগ রয়েছে। এ বিভাগটির দুটি শাখা: হিসাব শাখা ও নিরীক্ষা শাখা। এই দুটি শাখার প্রধান হিসেবে একজন কম্পোট্রলার ও অডিটর জেনারেল (সিঅ্যান্ডএজি) আছেন। প্রজাতন্ত্রের হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা কাজ তদারক করাই তার দায়িত্ব। তার বিভিন্ন দপ্তর এবং সেগুলিতে কর্মকর্তার সংখ্যা হচ্ছে: সাধারণ হিসাব নিয়ন্ত্রক, অতিরিক্ত সাধারণ পরিচালক (অর্থ): রেলওয়ে, সাধারণ নিয়ন্ত্রক (অর্থ): প্রতিরক্ষা, নিরীক্ষা তত্ত্বাবধায়ক এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা একাডেমি।
২০০১ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ হিসাব নিয়ন্ত্রকের অধীনে যেসব প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন তারা হলেন: প্রধান হিসাব অফিসার (২১), আঞ্চলিক হিসাব অফিসার (২০), জেলা হিসাব অফিসার (৬৪), উপজেলা হিসাব অফিসার (৪০০)।
রেলওয়ের অতিরিক্ত সাধারণ পরিচালক (অর্থ)-এর অধীনের কর্মকর্তাগণ হলেন যুগ্ম সাধারণ পরিচালক, অর্থ পরামর্শদাতা ও প্রধান হিসাব অফিসার (পূর্বাঞ্চল), অর্থ পরামর্শদাতা ও প্রধান হিসাব অফিসার (পশ্চিমাঞ্চল), অর্থ পরামর্শদাতা ও প্রধান হিসাব অফিসার (প্রকল্প)।
সাধারণ নিয়ন্ত্রক (প্রতিরক্ষা অর্থ)-এর অধীনের কর্মকর্তাগণ হলেন জ্যেষ্ঠ অর্থ নিয়ন্ত্রক (৫), অর্থ নিয়ন্ত্রক (৫), আঞ্চলিক অর্থ নিয়ন্ত্রক (৬)।
বাংলাদেশ সরকারের হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো ব্রিটিশ ভারত থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। ১৯১৯ সালের সংবিধান পুনর্গঠন ও ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন একজন স্বাধীন সাধারণ নিরীক্ষকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ব্রিটিশ শাসনের শেষে, ১৯৫২ সালের পাকিস্তান (নিরীক্ষা ও হিসাব) অধ্যাদেশ, বাংলাদেশ আমলে শাসনতন্ত্রের ১২৭-১৩২ ধারা এবং ১৯৭৪ সালের সিঅ্যান্ডএজি (অতিরিক্ত কার্যক্রম) পূর্বের কেন্দ্রীভূত নিরীক্ষা ও হিসাব পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি করে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কম্পোট্রলার ও অডিটর জেনারেলকে (সিঅ্যান্ডএজি) নিয়োগদান করেন। অডিটর জেনারেল প্রজাতন্ত্রের হিসাব, আইন-আদালতের হিসাবসহ সরকারের অন্যান্য অফিস ও কর্তৃপক্ষের হিসাব নিরীক্ষা ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে মতামত দিয়ে থাকেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি অথবা তার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অন্য যেকোন ব্যক্তি যেকোন সময় প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োজিত কোন ব্যক্তির অধিকৃত সমস্ত রেকর্ড, হিসাব, ভাউচার, দলিল, স্ট্যাম্প, ঋণপত্র, আমানত এবং সরকারের অন্যান্য মজুত পরীক্ষা করতে পারেন।
১৯৭৪ সালের সিওএজি অ্যাক্ট এবং ১৯৭৪ সালের দ্য কম্পোট্রলার ও অডিটর জেনারেল এডিশনাল ফাংশনস (সংশোধনী) আইন অনুযায়ী সিঅ্যান্ডএজি-কে কিছু হিসাব রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। হিসাব দায়িত্বগুলি হলো: সরকারি হিসাবরক্ষণ, বাণিজ্যিক হিসাব তৈরি, আইনি জনকর্তৃপক্ষের হিসাব ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব, বণ্টন ও অর্থ হিসাব এবং সাধারণ আর্থিক বিবরণ তৈরি। ১৯৮৩ সালের সিঅ্যান্ডএজি ফাংশন (সংশোধনী) অধ্যাদেশ সিঅ্যান্ডএজি ব্যতীত অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে প্রজাতন্ত্রের হিসাব রক্ষণের ক্ষমতা সরকারকে প্রদান করা হয়। এ আইন এখনও বাস্তবায়ন করা হয় নি। কিন্তু এর মাধ্যমে ১৯৮৫ সালে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে হিসাব অফিস স্থাপনের মাধ্যমে হিসাব বিভাগীয়করণের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। এই নতুন পদ্ধতিতে একজন প্রধান হিসাব অফিসারকে এক বা একাধিক মন্ত্রণালয়ের হিসাব রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সাবেক অফিসগুলি, যেমন সাধারণ হিসাবরক্ষক (বেসরকারি), সাধারণ হিসাবরক্ষক (পূর্ত, ওয়াপদা), সাধারণ হিসাবরক্ষক (ডাক, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন) ও অতিরিক্ত সাধারণ হিসাবরক্ষক (বিদেশ) স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং ২১টি বিভাগীয় (লাইন মন্ত্রণালয়) হিসাব অফিসে রূপান্তর করা হয়। প্রতিটিকে প্রধান হিসাবরক্ষকের অফিস নামকরণ করা হয়। ৩টি নিরীক্ষা তত্ত্বাবধায়কের অফিসকে পরিচালক (পূর্ত)-এর অফিস, পরিচালক (বেসামরিক)-এর অফিস এবং পরিচালক (ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ)-এর অফিস নাম দেওয়া হয়। ১৯৯৫ সালে, এই নিরীক্ষা অফিসকে সাধারণ নিরীক্ষা ডাইরেক্টরেট পুনঃনামকরণ করা হয়। সিওএজি-র অধীনের হিসাব শাখাকে ৩টি বিভাগে ভাগ করা হয়। বিভাগগুলি হলো বেসামরিক হিসাব, প্রতিরক্ষা হিসাব ও রেলওয়ে হিসাব।
বেসামরিক হিসাব (Civil Accounts) ১৯৮৫ সালে সিএও অফিস স্থাপনের পর কেন্দ্রীয় হিসাব প্রধানের পদটি সাধারণ হিসাব নিয়ন্ত্রক হিসাবে পুনঃনামকরণ করা হয়। সাধারণ হিসাব নিয়ন্ত্রককে প্রজাতন্ত্রের সাধারণ হিসাব রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়। ডাক, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ, পাবলিক ওয়ার্কস, জনস্বাস্থ্য, সড়ক ও প্রকৌশল এবং বন বিভাগ ছাড়া অন্যান্য বেসামরিক খরচপত্রের হিসাব রাখার জন্য সিএও-র ২১টি অফিস, জেলা হিসাবরক্ষকের ৬৪টি অফিস এবং উপজেলা হিসাবরক্ষকের ৪০০টি অফিস স্থাপন করা হয়। সিএও অফিসগুলিকে রাজধানী শহরের দায়িত্বসহ মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
সিজিএ-র অধীনে ২০টি জেলায় ২০টি আঞ্চলিক হিসাব রক্ষক অফিসারের পদ রয়েছে। তারা তাদের অধীনস্থ জেলা হিসাবরক্ষক ও উপজেলা হিসাবরক্ষক থেকে মাসিক হিসাব গ্রহণ করে থাকে। উপজেলা ও জেলা হিসাবরক্ষক থেকে প্রাপ্ত হিসাব একীভূত করা আঞ্চলিক হিসাবরক্ষকের দায়িত্ব। অধিকন্তু, হিসাব মহানিয়ন্ত্রক ও প্রতিরক্ষা অর্থ মহানিয়ন্ত্রকের মাঝে লেনদেন হিসাব এবং হিসাব মহানিয়ন্ত্রক ও রেলওয়ের মাঝে হিসাব মীমাংসা করতে হয়।
১৯৮৩ সালের সিঅ্যান্ডএজি (অতিরিক্ত) সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী হিসাব ও নিরীক্ষা কাজ পৃথক করার জন্য আইনি কাঠমো নির্ধারণ করা হয় এবং সিঅ্যান্ডএজি-কে দৈনিক হিসাব কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। চিফ একাউন্টস অফিসার তার মন্ত্রণালয়, বিভাগের জন্য এক বা একাধিক প্রিন্সিপাল একাউন্টস অফিসারের নিকট দায়ী থাকে। তারা মন্ত্রণালয় বা বিভাগের খরচাদি পরিশোধ করে, আর্থিক ব্যাপারে সচিবকে পরামর্শ প্রদান ও তথ্য সরবরাহ করে, মাসিক ও বার্ষিক হিসাব সমাপ্তকরণে সিজিএ-কে সাহায্য করে।
প্রশাসনিকভাবে তারা সিজিএ এবং সিঅ্যান্ডএজি-র অধীনস্থ হওয়া সত্ত্বেও দায়িত্ব সম্পাদনকালে সিএও-কে এক বা একাধিক সচিবের অধীনে থাকতে হয়। একজন সিএও-কে দ্বৈত দায়িত্ব পালন করতে হয়। বর্তমানে একজন সিএও কার্যের ক্ষেত্রে সচিবের অধীন, কিন্তু প্রশাসনিকভাবে সিঅ্যান্ডএজি-র অধীন।
বার্ষিক আর্থিক হিসাব ও বণ্টন হিসাব তৈরি সিঅ্যান্ডএজি-র দুটি প্রধান সাংবিধানিক দায়িত্ব। বাস্তবে, সিঅ্যান্ডএজি-র পক্ষে সিজিএ তার নিজস্ব হিসাব, পিটিওটি-র হিসাব, সিজিডিএফ রেলওয়ে থেকে প্রাপ্ত হিসাবের ভিত্তিতে আর্থিক হিসাব ও বণ্টন হিসাব তৈরি করে।
উক্ত বার্ষিক আর্থিক হিসাব সরকারের বার্ষিক প্রাপ্তি ও খরচ প্রদর্শন করে। দান অথবা ঋণ হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ সরকারের বার্ষিক হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। সিঅ্যান্ডএজি-র পক্ষে সিসিএ টিঅ্যান্ডটি বোর্ড এবং ডাক বিভাগের সম্পত্তি ও দায় প্রতিবেদন প্রস্ত্তত করে।
সরকারি হিসাব তৈরিতে মৌলিক হিসাব নীতি হলো নগদ ভিত্তিতে হিসাব। বাকিতে খরচ ও প্রাপ্তি সরকারি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় না। একইভাবে সম্পত্তি কেবল আর্থিক দফা অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু ডাক, টিঅ্যান্ডটি এবং রেলওয়ে হিসাবে ভৌত পরিসম্পদ দেখানো হয়। এ হিসাবগুলি সরকারি আইনি হিসাবের বাইরে রাখা হয়।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকৃত ব্যয় ও প্রকল্পিত ব্যয় এবং তাদের অধীনস্থ অফিস কর্তৃক প্রদত্ত উদাহরণের ব্যাখ্যা সহকারে বণ্টন হিসাব তৈরি করা হয়। সিজিএ, পিটিঅ্যান্ডটি অফিসিয়াল, সিজিডিএফ এবং অতিরিক্ত ডিজি (অর্থ), রেলওয়ে কর্তৃক তৈরি বণ্টন হিসাব সিঅ্যান্ডএজি-র পক্ষে যথাক্রমে বেসামরিক নিরীক্ষা পরিদপ্তর, পিটিঅ্যান্ডটি নিরীক্ষা পরিদপ্তর, প্রতিরক্ষা নিরীক্ষা পরিদপ্তর এবং রেলওয়ে নিরীক্ষা পরিদপ্তর নিরীক্ষা করে। নিরীক্ষার কাজের পর বণ্টন হিসাবগুলি সিঅ্যান্ডএজি-র নিকট জমা দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে তার মতামত সহকারে নিরীক্ষা হিসাবগুলি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিকট প্রেরণ করা হয়।
প্রতিরক্ষা হিসাব সিঅ্যান্ডএজি-র প্রশাসনের অধীনে প্রতিরক্ষা অর্থ বিভাগের মহানিয়ন্ত্রক সামরিক হিসাব বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮২ সালে প্রতিরক্ষা কোর্সের জন্য সংশোধিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রচলনের সাথে সাথে সামরিক মহাহিসাব রক্ষকের প্রাক্তন অফিস পুনর্গঠন করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিরক্ষা অর্থ মহানিয়ন্ত্রকের অফিস স্থাপন করা হয়।
সিজিডিএফ মাসিক ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা সেবার হিসাব তৈরি করেন। এ কাজের জন্য তার অধীনে স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ওয়ার্কস এবং প্রতিরক্ষা ক্রয়ের জন্য ৫ জন ঊর্ধ্বতন অর্থনিয়ন্ত্রক এবং ২ জন অর্থনিয়ন্ত্রক (বিবিধ ও বিওএফ) নিয়োজিত আছেন। প্রতিরক্ষা কর্মচারীদের (অফিসার ব্যতীত) বেতন ও ভাতা হিসাবের জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাকে সমর পদ্ধতি বলে এবং এতে ইমপ্রেস্ট পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত। সামরিক ও বেসামরিক অফিসারদের বেতন ও ভাতা প্রচলিত পূর্বনিরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রদান করা হয়। সৈন্যদের বেতন ভাতার হিসাব রাখার দায়িত্ব একজন ঊর্ধ্বতন অর্থনিয়ন্ত্রক সেনার ওপর ন্যস্ত করা হয়। এ বিভাগে ২ জন অর্থনিয়ন্ত্রক (এফসি) এবং ৭ জন আঞ্চলিক অর্থনিয়ন্ত্রক (বগুড়া, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, যশোর, রংপুর, সাভার এবং লজিস্টিক এরিয়া) নিয়োজিত আছেন। আঞ্চলিক অর্থনিয়ন্ত্রকগণ কোড অনুযায়ী সম্ভাব্য দফার খরচের এবং স্থানীয় ক্রয়ের প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদনটি এফসি বেতন-১ ও এফসি বেতন-২ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঊর্ধ্বতন অর্থনিয়ন্ত্রকের নিকট প্রেরণ করেন।
এফসি-১ অফিসারদের বেতন-ভাতা নিয়ে কাজ করে ও নিজস্ব এলাকার মাসিক হিসাব তৈরি করে এবং এসএফসি-র (স্থল) নিকট হিসাব প্রেরণ করে। এফসি-২ জুনিয়র কমিশন অফিসারদের এবং ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ইম্প্রেস্ট পাঠিয়ে বাংলাদেশ স্থলবাহিনীর অন্যান্য পদের (নন-অফিসার) কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়ে কাজ করেন। ৩৪৭ জন ইম্প্রেস্ট হোল্ডার তাদের ইউনিট সেনাদের মাঝে অর্থ প্রদান করেন এবং এফসি-২ এর নিকট অবমুক্তিপত্র নম্বর সহকারে খরচের প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ প্রতিবেদনটি ফিল্ড-পে অফিস কর্তৃক তৈরি হয় এবং প্রত্যেক সৈন্যকে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ দেখায়। ইম্প্রেস্ট হোল্ডারদের নিকট হতে প্রাপ্ত অবমুক্তিপত্রের ভিত্তিতে ফিল্ড-পে অফিসার একটি ব্যক্তিগত চলতি খতিয়ান (আইআরএলএ) রক্ষণ করেন। আইআরএলএ বকেয়া বেতন-ভাতা এবং আদায়যোগ্য অগ্রিমের বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করে। এফপিও আদায় ও সমন্বয়ের মাসিক হিসাব তৈরি করেন এবং হিসাবটি এফসি পে-২ এর নিকট প্রেরণ করে। এফসি পে-২ একীভূত হিসাব তৈরি করে হিসাবটি এসএফসি (প্রতিরক্ষা)-এর নিকট মাসিক ভিত্তিতে প্রেরণ করে। ইম্প্রেস্ট হোল্ডারদের নিকট থেকে খরচের বিবরণ ও হিসাব এবং এফপিও থেকে প্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃক সরাসরি প্রদত্ত পেনশনের বিস্তারিত বিবরণের ভিত্তিতে এসব হিসাব তৈরি করা হয়। অর্থনিয়ন্ত্রক (লজিস্টিক) বিবিধ দফা, যেমন সেলুন, ধোপা, তেল-মসলা সরবরাহকারী প্রভৃতির দাবি পরিশোধ করে। স্থলবাহিনীর সরবরাহ কোরের টাটকা জিনিস, যেমন মাছ-মাংসের ঠিকা তৈরি এবং নিরীক্ষার জন্যও তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি তার অধীনের সমস্ত লেনদেনের হিসাব রাখেন এবং তিনমাস ভিত্তিতে হিসাব এসএফসি (স্থলবাহিনী)-র নিকট প্রেরণ করেন। এই অফিস এটিজি (অ্যানুয়াল ট্রেনিং গ্রান্টস), ইটিজি (এডুকেশন ট্রেনিং গ্রান্টস), অগ্রিম এবং এর অধীনের স্থলবাহিনীর ইউনিটের হিসাবের নিরীক্ষার দায়িত্ব পালন করে। এসএফসি (স্থলবাহিনী) মাসভিত্তিতে এফসি-১ ও ২ এবং ৭ জন এএফসি থেকে হিসাব পেয়ে থাকেন। তিনি এ হিসাবগুলি একীভূত করে সিজিডিএফ-এর নিকট প্রেরণ করেন।
এসএফসি (নৌ)-এর অধীনে ৩ জন এএফসি আছেন। বর্তমানে ঢাকাতে একজন কাজ করছেন। চট্টগ্রাম ও খুলনার একজন করে এএফসি এখনও কাজ শুরু করেন নি। নৌবাহিনীর হিসাব পদ্ধতি অনেকাংশে পূর্বে বর্ণিত স্থলবাহিনীর হিসাবের মতো। নাবিকদের মধ্যে অর্থ বিতরণের জন্য ১১ জন ইম্প্রেস্ট হোল্ডার আছেন। ইম্প্রেস্ট হোল্ডারগণ অর্থনিয়ন্ত্রক (নৌ)-এর নিকট তাদের খবরের প্রতিবেদন জমা দেন। নৌ অর্থনিয়ন্ত্রক হিসাব তৈরি করে তা সিজিডিএফ-এর নিকট জমা দেন। বিমান বাহিনীর হিসাব প্রধান- এসএফসি (বিমান) ৪ জন এএফসি (ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর এবং পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল) এর সহায়তায় হিসাব কাজ সম্পাদন করেন। ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য জায়গায় এএফসি-র অফিস এখনও কার্যকর হয় নি। বিমান বাহিনীর হিসাব পদ্ধতিও স্থলবাহিনীর হিসাব পদ্ধতির ন্যায়। বিমান বাহিনীতে ৬ জন ইম্প্রেস্ট হোল্ডার আছেন। তারা ইম্প্রেস্ট থেকে স্থানীয় ক্রয় ও বেতন-ভাতাদি প্রদান করেন। এই হিসাব এসএফসি (বিমান) কর্তৃক নিরীক্ষণযোগ্য। এসএফসি (বিমান) ইম্প্রেস্ট হোল্ডারদের কাছ থেকে প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন এবং মাসিক হিসাব তৈরি করে সিজিডিএফ-এর নিকট প্রেরণ করেন।
নৌবাহিনী ব্যতীত প্রতিরক্ষা বাবদ সমস্ত হিসাব এসএফসি-এর (প্রতিরক্ষা ক্রয়) নিয়ন্ত্রণে। এসএফসি প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিচালকের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। তিনি প্রতিরক্ষা ক্রয়ের হিসাব তৈরি করেন এবং এ হিসাব সিজিডিএফ-এর নিকট প্রেরণ করেন। নৌবাহিনী ব্যতীত সামরিক প্রকৌশল সেবায় ঊর্ধ্বতন অর্থনিয়ন্ত্রক হচ্ছেন (ওয়ার্কস) একদিকে প্রধান হিসাব অফিসার এবং অপরদিকে অর্থ উপদেষ্টা। ৩৩টি গ্যারিসন ইঞ্জিনিয়ারের অফিসের প্রত্যেকটিতে একজন করে ইউনিট হিসাবরক্ষক এবং তিনজন এস্টেট অফিসার আছেন। এরা ভাউচারসহ মাসিক হিসাব এসএফসি-এর (ওয়ার্কস) নিকট প্রেরণ করেন। এসব ভাউচার পাবার পর এসএফসি পুনঃপরীক্ষা করে বাংলাদেশ ব্যাংকে অর্থ পরিশোধের ক্ষমতা প্রদান করেন। এই অর্থপরিশোধ ক্ষমতাবলে গ্যারিসন প্রকৌশলিগণ অর্থ পরিশোধের জন্য চেক প্রদান করেন। এসএফসি (ওয়ার্কস) ৩৬টি বিভাগ থেকে প্রেরণ করেন। সিজিডিএফ-এর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে এফসি (বিবিধ) প্রতিরক্ষা বিভাগে কর্মরত বেসামরিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের দায়িত্বে থাকেন। এফসি (বিবিধ) অফিসে ইম্প্রেস্ট পদ্ধতির পরিবর্তে প্রচলিত পূর্বনিরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিশোধ করা হয়। এফসি (বিবিধ) মাসিক খরচের হিসাব তৈরি করে তা সরাসরি সিজিডিএফ-এর নিকট জমা দেন।
বাংলাদেশ অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি (বিওএফ) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান। এখানেও বেতনসহ অন্যান্য খরচ পরিশোধের জন্য প্রচলিত পূর্বনিরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এফসি (বিওএফ) মাসিক হিসাব তৈরি করে তা সরাসরি সিজিডিএফ-এর নিকট একত্রীকরণের জন্য জমা দেন। সিজিডিএফ এসব হিসাব নির্ধারিত ছকে একত্রিত করে সরকারের কেন্দ্রীয় হিসাব তৈরির জন্য সিজিএ-এর নিকট জমা দেন। একই সঙ্গে তথ্যের স্বার্থে একত্রিত হিসাবের অনুলিপি অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, তিন বাহিনীর প্রধান অফিস এবং প্রতিরক্ষা বিভাগে পাঠানো হয়।
আবণ্টন সিঅ্যান্ডএজি-র পক্ষে প্রতিরক্ষা অর্থ-মহানিয়ন্ত্রক প্রতিরক্ষা বিভাগের আবণ্টন হিসাব তৈরি করেন। প্রতি অর্থবর্ষ শেষে সংশোধন সাপেক্ষে সংসদ প্রতিরক্ষা সেবায় প্রতি অর্থবছরের তহবিল অনুমোদন করে। সংশোধিত তহবিলই প্রতিরক্ষার চূড়ান্ত বাজেট আবণ্টন হিসাবে বিবেচিত হয়। বার মাসের প্রকৃত ব্যয় ও বিভিন্ন এফসি/এএফসি-অফিস থেকে প্রাপ্ত প্রাক্কলিত ব্যয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত অতিরিক্ত খরচ সম্পর্কে মতামতের ভিত্তিতে সিজিডিএফ আবণ্টন হিসাব তৈরি করেন। নিরীক্ষা মতামতের জন্য এই আবণ্টন হিসাব ডিজি (প্রতিরক্ষা নিরীক্ষা)-র নিকট প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীকালে এই আবণ্টন হিসাব অনুমোদন ও নিরীক্ষা প্রশংসার জন্য সিঅ্যান্ডএজি-এর নিকট প্রেরণ করা হয়। সিজিডিএফ-এর অফিস আর্থিক হিসাব তৈরি করে না কিন্তু সিজিডিএফ আর্থিক হিসাব তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সিজিএ-কে সরবারাহ করে।
রেলওয়ে হিসাব বাংলাদেশ রেলওয়ের হিসাব রাখার জন্য সিঅ্যান্ডএজি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকে (অর্থ) নিয়োগদান করেন। তার অধীনে থাকেন একজন যুগ্ম মহাপরিচালক (অর্থ) এবং তিনজন এফএঅ্যান্ডসিএও (অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অফিসার)পূর্বাঞ্চলে একজন, পশ্চিমাঞ্চলে একজন এবং প্রকল্পে একজন।
১৯২৪ সালে স্যার উইলিয়াম অ্যাকওয়ার্থের সভাপতিত্বে গঠিত এক কমিটির সুপরিশক্রমে রেলওয়ে অর্থকে সাধারণ অর্থব্যবস্থাপনা থেকে পৃথক করা হয়। পাকিস্তান রেলওয়ের পূর্ববঙ্গে রেলওয়ে বাজেট ও পরবর্তীকালে বাংলাদেশ রেলওয়ে বাজেট ১৯৭৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পৃথকই থাকে এবং ১৯৮৩ সালের ১ জুলাই থেকে সাধারণ বাজেটের সঙ্গে একীভূত হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের হিসাব ব্যবস্থাকে এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয় যে এটা একদিকে সরকারি বিভাগের প্রয়োজনীয়তা মেটায় এবং অপরদিকে ব্যাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তাও মেটায়। এ পদ্ধতিটি ১৯৬০ সালে গৃহীত হয়। রেলওয়ের হিসাব পদ্ধতি একই সময়ে নগদান ও বাকি ভিত্তিতে নির্ভরশীল। একত্রিত ফান্ডের পরিবর্তে প্রত্যেক মাসের প্রাপ্তি ও পরিশোধের নিয়মিত হিসাব রাখা হয়। মাসিক হিসাব নির্ধারিত ফর্মে সরকারের নিকট প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন ও জমার ভিত্তিতে সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন আকারে মাসিক হিসাব তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৪ সার্কেলে বিভক্ত। এদের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের লেনদেনগুলি সংঘটিত হয়। এই ১৪টি সার্কেলের, ৮টি চট্টগ্রাম ভিত্তিক পূর্বাঞ্চলে এবং ৬টি রাজশাহী ভিত্তিক পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। প্রতিটি হিসাব সার্কেল দৈনিক লেনদেনের বিস্তারিত হিসাব রাখে এবং এর থেকে আর্থিক উপদেষ্টা এবং প্রধান হিসাব অফিসারের নিকট প্রেরণের জন্য মাসিক হিসাব প্রতিবেদন প্রস্ত্তত করে। যদিও পশ্চিমাঞ্চলে রাজশাহীতে পৃথক এফএ এবং সিএও আছে তথাপি হিসাব চূড়ান্তকরণের দায়িত্ব পূর্বাঞ্চলের এফএ/সিএও-র উপর বর্তায়। এসব বিবরণ পাবার পর এফএ/সিএও (পূর্ব) নিজস্ব প্রাপ্তি ও পরিশোধের সাথে হিসাব চূড়ান্ত করে সিঅ্যান্ডএজি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুলিপিসহকারে সিজিএ-এর নিকট ‘মাসিক চলতি হিসাব’ নামে পরিচিত প্রতিবেদন জমা দেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে বাজেটে প্রাক্কলিত অনুদান ও প্রকৃত খরচের তুলনা দেখানোর জন্য একটি আবণ্টন হিসাব তৈরি করে। এফএঅ্যান্ডসিএও (পূর্ব) আবণ্টন হিসাব সংগ্রহ করে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক প্রাথমিক অঙ্ক থেকে প্রভেদের ওপর তার নিজের মতামত দেওয়ার পর স্বাক্ষর করেন। অতঃপর, নিরীক্ষার জন্য এ হিসাব রেলওয়ের মহাপরিচালকের নিকট এবং সিঅ্যান্ডএজি-র অনুমোদনের জন্য তার নিকট প্রেরণ করা হয়। এফএ এবং সিএও-র প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে ম্যানেজার (নগদান ও বেতন)-কে নগদান প্রাপ্তি ও সমস্ত অনুমোদিত খরচ প্রদানের হিসাব রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সহকারি ক্যাশিয়ার রেলস্টেশন থেকে প্রদত্ত অর্থ ও বহিঃপক্ষ থেকে জমাকৃত অর্থ গ্রহণ করেন। ম্যানেজার (প্রদান ও বেতন) (সরবরাহকারী/ঠিকাদার)-এর অধীনে বিভাগীয় পে-মাস্টার/ সহকারী পে-মাস্টার অর্থ প্রদান করে থাকেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব নং ৩-এর মাধ্যমে সকল আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করে। ব্যাংক সকল জমা ও উত্তোলনের হিসাব রাখে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুলিপি সহকারে উক্ত সমন্বিত হিসাব এফএ এবং সিএও-র নিকট পাঠায়। বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব অর্জন সংক্ষেপ-X (যাত্রী থেকে আয়), সংক্ষেপ-Y (মাল থেকে আয়) এবং সংক্ষেপ-Z (বিবিধ আয়) এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব ব্যয়গুলি সাধারণ প্রশাসন (অফিসার ও স্টাফের বেতন-ভাতা, পেনশন-গ্র্যাচুইটি সম্পর্কিত খরচ), মেরামত ও সংরক্ষণ (রেলওয়ে সম্পত্তির সংরক্ষণ ব্যয় এবং সংরক্ষণকারী স্টাফের বেতন-ভাতা) এবং পরিচালন-ব্যয় (রেলসেবার পরিচালন ব্যয়)। রেলওয়ের নতুন সম্পদ তৈরির জন্য মূলধন জাতীয় ব্যয় সংঘটিত হয়। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে এ ব্যয় বহন করা হয়। [মো. শামসুল আলম খান]