হিতামপুর শাহী মসজিদ
হিতামপুর শাহী মসজিদ ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলা সদরের ১ কিলোমিটার পূর্বদিকে হিতামপুর মৌজায় অবস্থিত এক গম্বুজ মসজিদ। সুলতান নাসিরউদ্দিন নুসরাত শাহের আমলে (১৫১৯-১৫৩২ খ্রি.) আনুমানিক ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত। বর্গাকার মসজিদটির দেয়ালের বহির্দিকের দৈর্ঘ্য ৮.২২ মি. এবং অভ্যন্তরভাগে দৈর্ঘ্য ৫.৪৮ মি.। প্রতি দেয়াল সাড়ে ১.২১মি. চওড়া। মসজিদের চারকোণায় সন্নিহিত চারটি অষ্টকোণ বুরুজ স্ফীত বলয় রেখা ও পোড়ামাটির ফলক নকশা শোভিত। পূর্ব দেয়ালের মাঝখানে রয়েছে সাড়ে ১.২১ মি. ব্যাসের প্রধান প্রবেশদ্বার এবং এর উভয় পাশে ১.০৭ মি. ব্যাসের দুটি প্রবেশপথ। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে রয়েছে একটি করে প্রবেশপথ। দ্বিকেন্দ্রিক সুঁচালো খিলান সহযোগে এ প্রবেশদ্বারগুলি নির্মিত। পূর্ব দেয়ালের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি অবতল মিহরাব। দ্বিকেন্দ্রিক সুঁচালো খিলানের সাহায্যে কুলঙ্গি তৈরি করে মিহরাবগুলি নির্মিত হয়েছে। মাঝখানের বড় আকারের মিহরাবটি পশ্চিম দেয়ালের বাইরে সম্প্রসারিত। মিহরাবগুলির খিলানী চাপ জুড়ে বহুফলা নকশা রয়েছে। পশ্চিম দেয়ালে আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে নির্মিত মিহরাবগুলির অবতল দিক এবং খিলানের স্প্যান্ড্রিলসহ চতুর্দিক টেরাকোটা নকশা শোভিত।
মসজিদের গম্বুজটি বহু পূর্বেই ধ্বংস হয়েছে। কক্ষের অভ্যন্তরভাগে দেয়ালগাত্রে নিমগ্ন কলমসমূহ থেকে উৎসারিত বৃহদাকার স্কুইঞ্চের সাহায্যে গম্বুজের জন্য গোলাকার ভিত তৈরি করা হয়েছিল। সুলতানি আমলের অন্যান্য গম্বুজের ন্যায় এটি পিপা বর্জিত ও অর্ধগোলার্ধবৎ ছিল। গম্বুজ ও দেয়ালের উপরাংশ ভেঙে পড়ে মসজিদটি বহুদিন ধরে জঙ্গলাকীর্ণ একটি মাটির স্তূপাকারে ছিল। বিশ শতকের প্রথমদিকে স্থানীয় লোকজন মাটি খুঁড়ে মসজিদটি উদ্ধার করে এবং অদক্ষ হাতে মেরামত কাজ সম্পন্ন করে। পরিকল্পনা মাফিক সংস্কারের অভাবে এখনও মসজিদের নিম্নভাগ প্রায় ১.৫ মি. মাটির নিচে রয়ে গেছে। মসজিদের দক্ষিণদিকে অজু গোসলের জন্য নির্মিত পুকুরটি সম্প্রতি পুনঃখনন করা হয়েছে। এটি মধ্যযুগীয় মুসলিম বাংলার অনুপম স্থাপত্যকীর্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। [মোঃ আলমগীর]