হাসিনা, শেখ

হাসিনা, শেখ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী (১৯৯৬-২০০১, ২০০৯- ) এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি সর্বজ্যেষ্ঠ। আজিমপুর গার্লস হাইস্কুল থেকে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা সমাপন করে তিনি গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৯৬৬-৬৭ মেয়াদে কলেজ ছাত্রী সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম.এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সণাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

শেখ হাসিনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি বরাবর রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নৃশংস হত্যাকান্ডের পর শেখ হাসিনা কিছুকাল জার্মানি ও ভারতে   স্ব-নির্বাসিত জীবন যাপন করেন।

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা তাঁর স্বামীর সঙ্গে নয়াদিল্লি অবস্থানকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর সভানেত্রী নির্বাচিত হন। ওই বছর ১৭ মে ৬ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং তখন থেকে দলের সভানেত্রী পদে আসীন আছেন। সামরিক একনায়ক জেনারেল এইচ.এম এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ১৯৮৩ সালে তিনি পনেরো দলের একটি জোট গঠন করেন। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসন থেকে বিজয়ী এবং তৃতীয় জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী নির্বাচিত হন।

১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে তাঁর ৮-দলীয় জোট এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ আন্দোলনের ফলে প্রেসিডেন্ট এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হন। জোটসমূহের রূপরেখা অনুযায়ী একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরে এরশাদ বাধ্য হন। এরপর ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসন সংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এবং শেখ হাসিনা পঞ্চম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১ সালের আগস্ট মাসে দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের লক্ষ্যে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী পাশ করার ক্ষেত্রে সংসদীয় ঐকমত্য গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা সম্বলিত বিধান সংবিধানে সংযোজনের দাবিতে শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালে আন্দোলন শুরু করেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের যেসব রাষ্ট্রে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু আছে সেগুলোর জন্য এটা ছিল একটি অনন্য রাজনৈতিক ধারণা। এ আন্দোলনে তিনি জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ আরো কয়েকটি বিরোধী দলকে সহযোগী হতে উদ্বুদ্ধ করেন। বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি মেনে নিয়ে ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বিল পাশ করে।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আর্বিভূত হয়। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়ে তিনি সরকার গঠন করেন।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল: ১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি, ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, খাদ্যশস্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন এবং ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতুর (বঙ্গবন্ধু সেতু) নির্মাণ সম্পন্ন করা।

মেয়াদশেষে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মাত্র ৬২টি আসন লাভ করে। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। শেখ হাসিনা অষ্টম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী নির্বাচিত হন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে একটি জনসভায় বক্তৃতাকালে শেখ হাসিনা সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড হামলা থেকে অতি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও মারাত্মকভাবে আহত হন। সংসদীয় নির্বাচনে বিএনপি জোটকে মোকাবেলার জন্য তিনি ২০০৫ সালে ১৪-দলীয় জোট এবং ২০০৬ সালে মহাজোট গঠন করেন। ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলা রুজু করা হয় এবং তাঁকে প্রায় একবছর কারাবন্দী রাখা হয়। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ২৬২টি আসনে (আওয়ামী লীগ ২৩০) বিজয়ী হয়। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ গ্রহণ করেন।

রাজনীতি ও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করেছে। তাঁকে প্রদত্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মধ্যে রয়েছে: ইউনেস্কো’র হুফে বোয়নি শান্তি পুরস্কার (১৯৯৮), মাদার তেরেজা পুরস্কার (১৯৯৮), মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার (১৯৯৮), বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সেরেস পদক (১৯৯৯), পার্ল এস বাক পুরস্কার (১৯৯৯), যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭), জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি (জুলাই ১৯৯৭), যুক্তরাজ্যের ডান্ডিতে অবস্থিত অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অব ফিলসফি ডিগ্রি (অক্টোবর ১৯৯৭), ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিলিট সহ দেশিকোত্তম উপাধি (জানুয়ারি ১৯৯৯), অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি (অক্টোবর ১৯৯৯) এবং ব্রাসেলসের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি  (ফেব্রুয়ারি ২০০০)। বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাটে অবস্থিত ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ২০০০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সম্মানসূচক ডক্টর অব হিউমেন লেটারস প্রদান করে।

শেখ হাসিনা রচিত গ্রন্থের মধ্যে আছে ওরা টোকাই কেন (১৯৮৮), বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম (১৯৯৩), সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র (১৯৯৪), People and Democracy (১৯৯৭), আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম (১৯৯৭), বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯৯৮), Miles to Go (১৯৯৮) এবং বিপন্ন গণতন্ত্র লাঞ্ছিত মানবতা (২০০২)। তাছাড়া দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে তিনি অসংখ্য নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি বেশ কিছু সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়া সংগঠন আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। শেখ হাসিনাকে তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারীরা ‘জননেত্রী’ খেতাবে ভূষিত করেছেন।

শাসনকালীন সাফল্য  পূর্ববর্তী সরকারের রেখে যাওয়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উত্তরাধিকারের প্রেক্ষাপটে ১৯৯৬ সালের জুন মাসে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে অত্যন্ত দুরুহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। কিন্তু শুরু থেকেই এ সরকার গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও আর্থসামাজিক প্রগতিকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর নিরলস প্রয়াস চালায়। দেশে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণ ও তাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ব্যাপারে হাসিনা সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল। এর পেছনে কাজ করেছিল একটি দৃঢ় বিশ্বাস: একমাত্র গণতন্ত্র মজবুত করার মাধ্যমেই দেশবাসীর সামনে বিরাজমান পাহাড়সম সমস্যা দূর করা সম্ভব।

রাষ্ট্রপতি হলো দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। এই পদকে সকল প্রকার বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে শেখ হাসিনা দলীয় লোকের পরিবর্তে বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদকে মনোনয়ন প্রদান করেন। তাঁর সরকার সংসদীয় কমিটিগুলোকে পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় শক্তিশালী করেন, কারণ সরকারের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা এবং জনগণের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে কমিটি ব্যবস্থা একটি তাৎপর্যপূর্ণ ’সেফটি বাল্ব’ হিসেবে কাজ করে। রেকর্ডসংখ্যক ৩৫টি সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রীদের পরিবর্তে সরকার ও বিরোধী দলীয় সাংসদদের সভাপতি করা হয়, যা ছিল বাংলাদেশের জন্য নজিরবিহীন। সুশাসন নিশ্চিত করতে রুলস অব বিজনেস-এ সময়োপযোগী পরিবর্তন আনা হয়। প্রশাসনিক এবং আইন সংস্কার কমিশনও গঠন করা হয়। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রমান্বয়ে ও ধাপে ধাপে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। দারিদ্র বিমোচন, নারীর সক্ষমতা বিকাশ এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে নেওয়া হয় দৃঢ় পদক্ষেপ। দেশব্যাপী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারিত করা হয়। পরবর্তী শতাব্দীর কথা বিবেচনায় রেখে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করা হয়। সরকার কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের ভাষা-শহীদ দিবসকে (২১ ফেব্রুয়ারি) ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

শেখ হাসিনা সরকার ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি-বন্টন চুক্তি এবং ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে; এর ফলে দেশে শান্তি ও উন্নয়নের একটি পরিবেশ ও আবহ সৃষ্টি হয়। তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর ও তার বাস্তবায়ন দেশে-বিদেশে সর্বত্র প্রশংসিত হয়। শেখ হাসিনার ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তি ছিল পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ সাফল্যের স্বীকৃতি। আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচারে সোপর্দ করে শেখ হাসিনা সত্য ও ন্যায়বিচারের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার প্রদর্শন করেন। এর মাধ্যমে তিনি বিচার অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিবেকবান নাগরিকদের সংশয়ও দূর করেন। তাঁর মেয়াদকালে যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করে শেখ হাসিনা এ অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক রচনা করেন।

১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর শেখ হাসিনার সরকার অব্যাহতভাবে বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে সংস্কার প্রয়াস চালিয়ে এসেছেন। তাঁর পাঁচ বছর মেয়াদে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ, যা নিঃসন্দেহে একটি সাফল্য। ১৯৯৮ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ভয়াবহ বন্যার ফলে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে অর্জিত প্রবৃদ্ধির হার ছিল একটি অনন্যসাধারণ সাফল্য। যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ১৯৯৬-৯৮ মেয়াদকালে মূল্যস্ফীতির হার ছিল প্রায় ১০ শতাংশ, বাংলাদেশে এই হার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। পরবর্তী তিন বছরেও এই ইতিবাচক প্রবণতা ধরে রাখা হয়। সুতরাং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার এই উভয় মানদন্ডে শেখ হাসিনার সরকার ভারসাম্য বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছিল।

দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হাসিনা সরকার দারিদ্র বিমোচনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। তাঁর সরকার প্রণীত পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৯৭-২০০২) দারিদ্র বিমোচন সংক্রান্ত নীতি ও কৌশলে বেকার যুবক-যুবতী ও মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও ঋণপ্রদানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। কৃষি খাতের উপর দৃষ্টি রেখে কৃষকবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশ ২০০০ সালের মধ্যে খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। ১৯৯৫-৯৬ সালে উৎপাদিত ১৯ মিলিয়ন মেট্রিক টনের তুলনায় পাঁচ বছর পর ২০০০-০১ সালে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের পরিমান দাঁড়ায় ২৬.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টনে। একই সময়ে দারিদ্রসীমার নীচে অবস্থানকারী জনগোষ্ঠীর অনুপাত ১৯৯৬ সালের ৪৮ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৪৪ শতাংশে নেমে আসে।

জনসংখ্যার সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর জন্য শেখ হাসিনার সরকার একটি সুবিস্তৃত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণে সচেষ্ট ছিলেন। ইতিপূর্বে চালু কর্মসূচির সাথে তিনি নতুন কর্মসূচি যোগ করেন। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে তিনি বয়স্কভাতা প্রবর্তন করেন, যার মাধ্যমে ৪ লক্ষ বয়স্ক ব্যক্তিকে মাসিক ভাতা প্রদান করা হয়। বিধবা ও স্বামী-পরিত্যক্তা নারীদের জন্য ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে অনুরূপ কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য একটি জাতীয় ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়। গৃহহীনদের আশ্রয় ও কর্মসংস্থানের জন্য সরকার ৫-বছর মেয়াদী (১৯৯৭-২০০২) একটি প্রকল্প চালু করে। নদী-ভাঙনে গৃহহারা মানুষের জন্য ১৯৯৭-৯৮ সালে একটি গৃহায়ন তহবিল গঠন করা হয়। যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে স্থাপন করা হয় কর্মসংস্থান ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চালু করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি গৃহে ফলমূল ও শাকসবজি চাষ উৎসাহিত  করা।

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে হাসিনা সরকার দেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্যাবলির সাথে সঙ্গতি রেখে একটি কার্যকর, ভবিষ্যৎমুখী ও সময়োপযোগী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে। সরকার গঠনের প্রথম বছরেই ১৯৯৬-৯৭ সালে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি’তে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ক্ষুদ্রঋণ সম্মেলন, রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন, ভারতে আন্ত-সংসদীয় ইউনিয়নের সভা, পাকিস্তানে ওআইসি’র বিশেষ সম্মেলন, মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত নবম সার্ক শীর্ষ-সম্মেলন, জার্মানিতে বয়স্কদের জন্য ৫ম বিশ্ব সম্মেলন, যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ সম্মেলন এবং ইরানে অনুষ্ঠিত ওআইসি শীর্ষ-সম্মেলনে যোগ দেন। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, জাপান, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় তাঁর সফর দেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে আনে। ২০০০ সালের মার্চে শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফর দেশের কূটনৈতিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় করে।

গঙ্গার পানি বন্টন নিয়ে ভারতের সাথে সুদীর্ঘকালের বিরোধ ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বরে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক ৩০-বছর মেয়াদী পানি বন্টন চুক্তির মাধ্যমে নিরসন করা হয়। ভারতের সাথে অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়াদিও হাসিনা সরকার ক্রমান্বয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেয়। ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা ও কোলকাতার মধ্যে সরাসরি বাস সার্ভিস চালুর ব্যাপারে ভারতের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে হাসিনা সরকারের সাফল্য একটি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করে।

শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশ বিমসটেক (বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ড) এবং ডি-৮’এ (বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক) অর্থনৈতিক জোটে যোগ দেওয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতার সুযোগ আরো সম্প্রসারিত হয়। ১৯৯৯ সালের মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে ঢাকা ঘোষণা গৃহীত হয়। ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহযোগিতার উপর প্রস্ত্ততিমূলক সভাও ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ক ভারত মহাসাগরীয় রিম এসোসিয়েশনে বাংলাদেশকে ১৯৯৯ সালে সদস্য হিসেবে বরণ করা হয়। বর্ধিত যোগাযোগ ও অন্যান্য পন্থায় বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও হাসিনা সরকার অগ্রগতি অর্জন করে। শেখ হাসিনার আগ্রহের কারণেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) আইনে স্বাক্ষর করে। ভূমি আইন চুক্তি অনুস্বাক্ষরেও বাংলাদেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম রাষ্ট্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের ফলেই ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে শান্তি ও সহযোগিতায় এশীয় সাংসদদের প্রথম সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তাঁকে সংগঠনটির প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়।

দেশে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ব্যক্তিখাত শক্তিশালীকরণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের উদ্দেশ্যে হাসিনা সরকার ১৯৯৯ সালে একটি নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করে। এর টার্গেট ছিল পরবর্তী এক দশকের মধ্যে জিডিপি’তে শিল্পখাতের অবদান ২৫ শতাংশে উন্নীত করা এবং শিল্পখাতে কর্মরত শ্রমিকদের অনুপাত মোট শ্রমশক্তির ২০ শতাংশে উন্নীত করা। এটা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং শ্রমঘন শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, এবং দেশীয় প্রযুক্তি ও কাঁচামাল ভিত্তিক শিল্পের উন্নয়নকে উৎসাহ প্রদান করে। এই শিল্পনীতি চারটি খাত ছাড়া অন্যান্য সকল খাতকে ব্যক্তি ও বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় এবং সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শতকরা ১০০ ভাগ মূলধন মালিকানার সুযোগ করে দেয়।

শেখ হাসিনা জাতীয় পর্যায়ে সংসদের ভাবমূর্তি বৃদ্ধির প্রয়াস চালান। সরকার-প্রধানের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে তিনি জাতীয় সংসদে ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব’ চালু করেন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল করে, যা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের হত্যাকারীদের রক্ষা করতে ১৯৭৫ সালে জারি করা হয়েছিল। এর ফলে খুনীদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হয়। হাসিনা সরকার সংসদে গ্রাম পরিষদ আইন, উপজেলা পরিষদ আইন ও জেলা পরিষদ আইন পাশের মাধ্যমে দেশে একটি চারধাপ বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চালুরও প্রাথমিক পদক্ষেপ নেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের জন্য ১৯৯৬-৯৭ সালে উন্মুক্ত করে দেন। গ্রাহকদের সেলুলার মোবাইল টেলিফোন সেবা প্রদানের জন্য সেসময় ৪টি বেসরকারি কোম্পানিকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এর ফলে এখাতে ইতিপূর্বে যে মনোপলি ছিল তার অবসান ঘটে। সংসদে একটি আইন পাশের মাধ্যমে সরকার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠনেরও উদ্যোগ নেয়।

ভারতের সাথে গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি স্বাক্ষর করায় দেশের পানিসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। এতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতারও প্রতিফলন ঘটে। এর ফলে পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও গঙ্গা বাঁধ নির্মাণের নতুন সম্ভাবনা দেখা দেয়। এর মাধ্যমে সেচ-সুবিধা সম্প্রসারিত হয়, মাটির লবণাক্ততা ও মরুকরণ হ্রাস পায় এবং শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। চুক্তির বিধান অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র পরস্পরের সাথে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি করা শুরু করে।

হাসিনা সরকার কর্তৃক প্রণীত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি সকল মহলে প্রশংসিত হয়। এর লক্ষ্য ছিল নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা আনয়ন, দেশে অবহেলিত নারীসমাজের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, তাদের নিরাপত্তা ও সক্ষমতার বিকাশ নিশ্চিতকরণ, শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তাদের গড়ে তোলা, নারীদের বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য ও নির্যাতন বন্ধ করা, তাদের মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ ও দারিদ্র হ্রাস, এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। নারীদের সক্ষমতা বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের তিনটি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। শিশুদের অধিকার সুরক্ষায় ও তাদের সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা ১৯৯৯ সালে শিশুদের জন্য একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনাও অনুমোদন করে।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বিজয়ের ভিত্তি ছিল একটি বিস্তারিত নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো, যাকে শেখ হাসিনা আখ্যা দিয়েছিলেন রূপকল্প-২০২১ অর্জনে পরিবর্তনের সনদ। এতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর অর্থাৎ ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিভিন্ন খাতে অগ্রগতির দর্শন সন্নিবেশিত ছিল। ম্যানিফেস্টোর পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্র ছিল: দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ এবং তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ; দুর্নীতি দমন কমিশন শক্তিশালীকরণ এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বার্ষিক সম্পদ-বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান সহ দুর্নীতি দমনে বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ও সমন্বিত নীতি প্রণয়ন, যাতে করে ২০১৩ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৭০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়; কৃষি খাত ও পল্লী অঞ্চলে নতুন প্রাণের সঞ্চার এবং দারিদ্র বিমোচন ও সমতা প্রতিষ্ঠার মুখ্য কৌশল হিসেবে অতি দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা; দেশে সুশাসন কায়েম করতে সন্ত্রাস ও ধর্মীয় উগ্রপন্থাকে নিয়ন্ত্রণে আনা, ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখা, মানবাধিকার কমিশন শক্তিশালী করা, ন্যায়পাল নিয়োগ এবং প্রশাসনকে দলীয়করণ থেকে মুক্ত করা।

আওয়ামী লীগের ম্যানিফেস্টোতে উল্লেখ করা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে ছিল প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ শক্তিশালী করা, ২০১৩ সাল নাগাদ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে ’সবার জন্য খাদ্য’ নিশ্চিত করা, উপকুলীয় অঞ্চলে ভূমি পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সুসমন্বিত নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, সেচসুবিধা সম্প্রসারণে গঙ্গা-বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা, দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতির রূপান্তর ঘটানো, আইটি শিল্পের উন্নয়ন, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত শক্তিশালীকরণ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও ঔষধ সহ অন্যান্য শিল্পের সম্প্রসারণ, মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ, নারীর সক্ষমতা বিকাশ ত্বরান্বিত করা ও সমাজে তাদের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

ম্যানিফেস্টোতে সময়কাঠামো সহ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট টার্গেটও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মধ্যে ছিল: ২০১০ সালের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির হার ১০০ শতাংশে উন্নীতকরণ; ২০১১ সাল নাগাদ সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করা; ২০১২ সাল নাগাদ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংপূর্ণতা অর্জন; ২০১৩ সাল নাগাদ প্রতিটি গৃহে স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণ; ২০১৩ সাল নাগাদ সণাতক পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা; এবং ২০১৪ সাল নাগাদ দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করা।

২০১০ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির তুলনায় হাসিনা সরকারের অর্জন ছিল মিশ্র। ক্ষমতা গ্রহণের দু’মাসের মধ্যেই ঢাকাস্থ বাংলাদেশ রাইফেলস সদর দপ্তরে জওয়ানদের বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা-কর্মকর্তাসহ ৭৪জন নিহত হওয়ায় সরকার একটি বড় ধাক্কা খায়। অবশ্য ধৈর্য ও প্রজ্ঞা প্রদর্শন করে শেখ হাসিনা ধীরে ধীরে সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উৎরে যান। ক্ষমতালাভের প্রথম বছরেই তাঁর সরকারের যে সাফল্যটি সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে তা হলো সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। এর মাধ্যমে খুনীদের ফাঁসি কার্যকর করে জাতি একটি দীর্ঘকালের কলঙ্ক থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছে।

দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে ছিল: জাতীয় সংসদে ফৌজদারি কার্যবিধি (সংশোধন) বিল ২০০৯ পাশ করার মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করা; সরকারি কর্মচারিদের জন্য একটি নতুন বেতন কাঠামো প্রবর্তন; সিকিউরিটি ও এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক ৫০টি মার্চেন্ট ব্যাংককে কাজ শুরুর অনুমতি প্রদান; সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য একটি বিকেন্দ্রিকৃত কাঠামো অনুমোদন; সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক জারিকৃত বিভিন্ন অধ্যাদেশ জাতীয় সংসদে আইন আকারে পাশ করা; গৃহহীন, দুঃস্থ ও অতি দরিদ্রদের জন্য আশ্রয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আশ্রয়ন প্রকল্প গ্রহণ; অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ’দারিদ্র নিরসন কৌশলপত্র’ জাতীয় সংসদে অনুমোদন; এবং ২০১৩ সাল নাগাদ দেশকে খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে ১৫০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ; অতি দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ভিজিএফ কার্ডগ্রহীতার সংখ্যা ৫৬ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৭০ লাখ ৬৭ হাজারে উন্নীতকরণ; জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ পাশ করা; খাদ্য নিরাপত্তা মজবুত, নারীর সক্ষমতা বিকাশ এবং জীবনমান উন্নয়নে ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পটি পুনরায় চালু করা; ২০০৯ সালে জাতীয় গ্রীডে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যোগ করা; ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নকশা চূড়ান্ত করা, যার নির্মাণ ২০১৩ সাল নাগাদ সমাপ্ত হওয়ার কথা; বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ে শিক্ষা-সমাপনী পরীক্ষা চালু করা, যাতে ১৮ লক্ষ ২৩ হাজার ৪৬৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়; পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্মিত ১০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিককে পুনরায় চালু করা এবং ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে আরো ১৮ হাজার ক্লিনিক নির্মাণের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া, যার মধ্যে ছিল স্থানীয় ও বিদেশী অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, চাঁদাবাজি ও ছিনতাই রোধ, মোবাইল ও সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশে বিশেষ অভিযান পরিচালনা; বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা; বিশ্বব্যাপী মন্দা পরিস্থিতির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেট ঘোষণা, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে নগদ ও নীতি সহায়তা; দেশের প্রতিটি পরিবারের অন্তত একজন সদস্যের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে একটি ৫-বছর মেয়াদী স্বকর্মসংস্থান ও দারিদ্র-বিমোচন প্রকল্প গ্রহণ করা; দেশে তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৯ ঘোষণা করা; একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে, বিশেষত দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক ফোরামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিদেশে বাংলাদেশীদের শ্রমবাজার উন্নয়নে ইতিবাচক ফলাফল আনা।

নতুন শ্রমবাজারের বিস্তার ও সন্ধানে হাসিনা সরকার ইতালি, জাপান, জর্ডান, সুদান এবং ইরাকে বাংলাদেশ দূতাবাস খুলেছে। বিশ্ববাজারে পরিবেশ-বান্ধব পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার দেশের বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলো পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে; এর রপ্তানি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের নতুন ক্রেতারও সন্ধান করা হচ্ছে। জাতীয় সংসদে পাসকৃত তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি তথ্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। বয়স্ক ও বিধবা ভাতার সুবিধাভোগীদের সংখ্যা দ্বিগুণ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে; প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে কর্তব্য পালনরত মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরে যাওয়ার বয়স ২ বছর বাড়ানো হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রায় ১৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধা উপকৃত হয়। সরকার ২০১০-১৫ মেয়াদকালের জন্য ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও হাতে নিয়েছে। একটি নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করা হয়েছে যাতে ব্যক্তিখাতের উন্নয়ন, উন্নততর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেকসই করা এবং বিশেষত জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্ব (পিপিপি) বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। বর্ধিত হারে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের উদ্দেশ্যে শিল্পনীতিতে কিছু নতুন প্রণোদনা যোগ করা হয়েছে। সরকারের সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারণে দেশে ২০০৯-১০ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অনুরূপভাবে, রপ্তানি আয় ও বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিটেন্সও যথাক্রমে ১৪ বিলিয়ন ডলার ও ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

দ্বিতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। এই কমিশন ইতিমধ্যেই তার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং এর ভিত্তিতে সরকার ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০’ অনুমোদন করেছে। এই নীতি শিক্ষাব্যবস্থাকে কর্মমুখী ও প্রযুক্তি-নির্ভর করার সুপারিশ করেছে এবং রাষ্ট্রের মৌলিক মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখারও আহবান জানিয়েছে। এর সাথে সঙ্গতি রেখে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় সমাপনান্তে ইতিমধ্যেই দেশব্যাপী পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে এবং অষ্টম শ্রেণী শেষেও একই ধরণের পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে, যাকে বলা হবে জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষা। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং বইগুলোকে সহজলভ্য করার জন্য তা ইন্টারনেট ওয়েবসাইটে যোগ করা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৯ জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে।

দ্বিতীয়বার দায়িত্বগ্রহণের পর বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করেছেন এবং একটি উদার, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। চীন, ভুটান, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার ও সুইডেনে তাঁর সফর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখেছে। তিনি উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নের সুফল বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছেন এবং আঞ্চলিক সহযোগিতায় চীন ও মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াস চালিয়েছেন। তার গৃহীত সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলোর মধ্যে আছে: বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা, নতুন স্থলবন্দর খোলা এবং বিদ্যমান স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়ন সাধন, পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে সীমান্ত বাজার চালু করা, বাংলাদেশের আশুগঞ্জ ও ত্রিপুরার শিলাঘাটকে পোর্ট-অব-কল ঘোষণা, আখাউড়া-আগরতলা রেলসংযোগ প্রতিষ্ঠা, ভারত, নেপাল ও চীনকে বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিতে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র-বন্দরে সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি, ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর, বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার যৌথ উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি, এবং বাংলাদেশের যোগাযোগ অবকাঠামো ও নদীপথের উন্নয়নে ভারতের কাছ থেকে সহজ শর্তে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ প্রাপ্তি। আশা করা হচ্ছে, ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ব্যাপক লাভবান হবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছাড়াও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারেও আগ্রহ দেখিয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি মোতাবেক দেশের মাটিতে বিদেশী সন্ত্রাসীদের অবস্থানের ব্যাপারে হাসিনা সরকার ‘জিরো-টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করেছে। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে এসকল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরে বাম ও ডান ঘেঁষা চরমপন্থীদের বিরুদ্ধেও নিরাপত্তা বাহিনী সর্বাত্মক অভিযান চালাচ্ছে। [হেলাল উদ্দিন আহমেদ]