হালদা নদী
হালদা নদী (Halda River) পার্বত্য চট্টগ্রামের বদনাতলী পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎসারিত হয়ে ফটিকছড়ি উপজেলার উত্তর-পূর্ব কোণ দিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় প্রবেশ করেছে। সুউচ্চ শ্রেণীমালা উত্তরে রেখে হালদা নদী দক্ষিণ-পশ্চিম বরাবর প্রবাহিত হয়ে আবার দক্ষিণ গতিপথে এর মূল অববাহিকা গঠনকারী ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান ও চট্টগ্রাম শহরের বিবিরহাট, নাজিরহাট, সাত্তারঘাট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান অতিক্রম করে গেছে। কালুরঘাটের কাছে এটি কর্ণফুলী নদীতে এসে মিশেছে। এর মোট দৈর্ঘ্য ৮০.৪৫ কিমি, যার মধ্যে নাজিরহাট পর্যন্ত ২৮.৯৬ কিমি সারা বছরই বড় নৌকা পরিবহণের উপযোগী, আর ছোট নৌকাগুলো আরও ২০/২৫ কিমি অভ্যন্তরে অর্থাৎ নারায়ণহাট পর্যন্ত চলাচল করতে পারে। কাঠ, বাঁশ, ছন ইত্যাদি বনজ সম্পদ রামগড়ের দক্ষিণাঞ্চল থেকে এই নদী দিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে আসা হয় এবং চট্টগ্রাম শহরের পণ্যসামগ্রীর অধিকাংশই হালদা নদীপথে বড় মালবাহী নৌকার মাধ্যমে পরিবহণ করা হয়।
হালদার প্রধান উপনদী ধুরুং খুবই খরস্রোতা। এটি পার্বত্য এলাকার পাকশমিমুরা রেঞ্জ থেকে বের হয়ে পূর্বদিকে হালদা নদীর প্রায় সমান্তরালে সমগ্র ফটিকছড়ি উপজেলা ঘুরে পূর্ব ধলাই নামক স্থানে হালদা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। গত এক শতাব্দীর মধ্যে নদীটি বেশ কয়েকবার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। ধুরুং-এর স্রোতধারাকে তার নিজস্ব প্রবাহপথে নিয়ন্ত্রিত রাখার কয়েকটি প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছিল, কিন্তু কোনটাই সফল হয় নি। এটি বর্তমানে ফটিকছড়ি উপজেলা সদরের দক্ষিণ-পশ্চিমে হালদা নদীতে মিশেছে, ফলে প্রায় ২৪ কিমি লম্বা মূল গতিপথটি শুকিয়ে আসছে। হালদা নদীর বেশ কিছু পাহাড়ি ছড়াও রয়েছে, যেগুলো পূর্বদিকের পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো থেকে নেমে এর সঙ্গে মিশেছে। কর্ণফুলী নদীতে পতিত হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ কালুরঘাট পর্যন্ত সমগ্র হালদা অববাহিকার জলের অভাব আংশিকভাবে পূরণ হচ্ছে এই ছড়াগুলোর মাধ্যমে; উপরন্তু আশপাশের কৃষি জমিতে সেচ সুবিধাও প্রদান করা যাচ্ছে। [সিফাতুল কাদের চৌধুরী]