হামিদ, খন্দকার আবদুল
হামিদ, খন্দকার আবদুল (১৯১৮-১৯৮৩) সাংবাদিক, রাজনীতিক। জন্ম ১৯১৮ সালের ১ মার্চ শেরপুর জেলার কসবা গ্রামে। পিতা খন্দকার আবদুল লতিফ শেরপুর পৌরসভার কমিশনার ছিলেন। মাতার নাম বেগম আমীরুন্নেছা। আবদুল হামিদ গোবিন্দকুমার পিস মেমোরিয়াল হাইস্কুল থেকে ১৯৩৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৩৭ সালে আই.এ পাস করেন। ১৯৪০ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
শিক্ষা জীবন শেষে আবদুল হামিদ সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৪৬-১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতার দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকায় সহকারি সম্পাদক এবং ১৯৫৩-১৯৫৬ সালে দৈনিক মিল্লাত পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৬৯ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সিনিয়র ‘লিডার রাইটার’ পদে যোগ দেন। এ পত্রিকায় তিনি ‘স্পষ্টভাষী’ ছদ্মনামে মঞ্চে নেপথ্যে কলাম এবং একই সময় ‘মর্দে মুমীন’ নামে উপসম্পাদকীয় কলাম লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত চাষী পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ১৯৭৬ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশ করেন বাংলা সাপ্তাহিক বাংলাদেশ। তিনি ১৯৮২ সালে দৈনিক দেশ পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি নিযুক্ত হন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি খন্দকার আবদুল হামিদ রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে প্রদেশে ৯২-ক ধারা জারি হলে তিনি নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন। ১৯৬৫ সালে মুসলিম লীগের (কাউন্সিল) প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ষাটের দশকে রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও খন্দকার আবদুল হামিদ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেন। স্বাধীনতার পর তিনি দালাল আইনে গ্রেফতার হন এবং ১৯৭৩ সালে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি শেরপুর থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় যুব উন্নয়ন মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৮১ সালে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ১৯৮২ সালে রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভায় তিনি স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং শ্রম, জনশক্তি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
খন্দকার আবদুল হামিদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সদস্য, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সদস্য এবং কৃষি ব্যাংকের পরিচালকমন্ডলীর চেয়ারম্যান ছিলেন।
সাংবাদিকতায় তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে তাঁকে ‘একুশে পদক’ প্রদান করে। ১৯৮৩ সালের ২২ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। [আবু মো. দেলোয়ার হোসেন]