হামদর্দ
হামদর্দ (Hamdard) মানবতার সেবা ও কল্যাণের জন্য সর্বশক্তিমান আলাহর প্রতি উৎসর্গীকৃত একটি ইসলামিক ট্রাস্ট, একটি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান। হামদর্দ একটি ফারসি শব্দ, যার ব্যাপক অর্থ- ‘একজন যে অন্যের শারীরিক ও মানসিক ক্লেশ ও ব্যথা ভাগ করে নেয় এবং তার ব্যথায় ব্যথিত হয় এবং দুর্গতদের দুঃখমোচন করে।’ এই মূল ধারণার ওপর ভিত্তি করে ১৯০৬ সালে হাকীম আব্দুল মজিদ (১৮৮৩-১৯২২) কর্তৃক ভেষজ ঔষধাদি (ইউনানি) তৈরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে হামদর্দ দিলিতে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর হাকিম আব্দুল মজিদের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র হাকিম মোহাম্মদ (১৯২০-১৯৯৮) ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানে হামদর্দ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৬ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি বিক্রয় কেন্দ্র খোলার মাধ্যমে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমান বাংলাদেশে হামদর্দ কর্মকান্ড প্রসারিত করেন। এভাবে হামদর্দ সমস্ত উপমহাদেশে একটি পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত কর্মকান্ডের বন্ধনে পরিণত হয়। বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় ঔষধ প্রস্ত্তত করতে ১৯৭২ সালে হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। নিজস্ব গবেষণা ও উন্নয়ন ল্যাবরেটরিসহ এটি দেশে ইউনানি ঔষধের সর্ববৃহৎ প্রস্ততকারকে পরিণত হয়েছে। বিদ্যমান ঔষধের মান উন্নততর করতে এবং নতুন ঔষধ উদ্ভাবনের জন্য প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা অব্যাহত রেখেছে। এই সংস্থা গবেষণা-বক্তৃতা, সেমিনার ও সম্মেলন আয়োজন এবং জার্নাল ও পুস্তক প্রকাশ করে। এসবের ফলে ইতোমধ্যে হামদর্দ বিশ্বপরিসরে ঐতিহ্যবাহী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আমেরিকা) এবং ভেষজের জাতীয় ইনস্টিটিউট (যুক্তরাজ্য) ইত্যাদির স্বীকৃতি অর্জন করে।
‘হামদর্দ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ’ নামের রেজিস্ট্রিকৃত সংস্থা, যা হামদর্দ-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তার ব্যবসার সম্পূর্ণ লভ্যাংশ (২৫ কোটি টাকার বেশি) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবিক কল্যাণে ব্যয় করে। এতিম, বিধবা, অসুস্থ, দরিদ্র ও দুর্গত জনগোষ্ঠীকে নগদ অর্থ সাহায্য ও আত্মনির্ভরশীল করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও এতিমখানায় নিয়মিত অনুদান প্রদান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার ও সম্মেলনে সহযোগিতা, ভেষজ গবেষণার কাজে সহায়তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সেবাকর্ম এবং দরিদ্র লোকদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ‘হামদর্দ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ’-এর হিতৈষী কর্মকান্ডের অন্তর্গত। হামদর্দ দেশের বিভিন্ন অংশে ৩৪টি চিকিৎসা কেন্দ্র পরিচালনার মাধ্যমে তার স্বাভাবিক চিকিৎসাকর্মও প্রসারিত করেছে।
গুলিস্তান এলাকার ২৯১/১ সোনারগাঁও রোডে একটি বিরাট আধুনিক শোরুম-কাম-ক্লিনিকসহ এর প্রধান কার্যালয় (হামদর্দ ভবন) অবস্থিত। তেওগাঁও এলাকায় হামদর্দের একটি আধুনিক কারখানাও আছে। এছাড়া আছে গাছগাছড়া চাষের ১৫০ একরেরও অধিক পরিমাণ জমি।
‘হামদর্দ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ’-এর সামগ্রিক কর্মকান্ড একটি দশ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। ‘হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ’-এর কারিগরি উপদেষ্টা কমিটিও রয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পাঁচজন পরিচালক এবং বিভিন্ন বিভাগের যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী নিয়ে হামদর্দ ল্যাবরেটরিজের বর্তমান জনশক্তি গঠিত। [আবদুল গনি]
আরও দেখুন শক্তি ঔষধালয়।