হান্টিংটন’স ডিজিজ
হান্টিংটন’স ডিজিজ (Huntington's Disease) এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যা সময়ের সাথে সাথে মস্তিষ্কের অংশগুলিকে সঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এটি একটি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রোগ, অর্থাৎ, এটি একজন ব্যক্তির পিতামাতার কাছ থেকে সংক্রমিত হয়। সময়ের সাথে এটি ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে এবং সাধারণত ২০ বছর পর মারাত্মক রূপ ধারণ করে। হান্টিংটন’স ডিজিজে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত তাদের রোগ নির্ণয়ের ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে মারা যান। মূলত ৪ নম্বর ক্রোমোজোমের একটি জীনগত ত্রুটির কারণে এই রোগটি হয়। এই ত্রুটির কারণে ডিএনএর একটি অংশ অনেকবার পুনরাবৃত্তি হয়। এই ত্রুটিকে সিএজি (CAG) পুনরাবৃত্তি বলা হয়। সুস্থ স্বাভাবিক দেহে ডিএনএর এই অংশটি ১০ থেকে ২৮ বার পুনরাবৃত্তি হয়। কিন্তু হান্টিংটন’স ডিজিজে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে, এটি ৩৬ থেকে ১২০ বার পুনরাবৃত্তি হয়। যেহেতু জিনটি একজন ব্যক্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকেন, সেহেতু প্রত্যেক নতুন প্রজন্মের ক্ষেত্রে ডিএনএ-র ঐ অংশের পুনরাবৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। পুনরাবৃত্তির সংখ্যা যত বেশি হবে, একজন ব্যক্তির অল্প বয়সে রোগের লক্ষণগুলি প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। অতএব, যেহেতু এই রোগটি উত্তরাধিকার সূত্রে ছড়িয়ে পড়ে, সেহেতু রোগের উপসর্গগুলি ছোট এবং অল্প বয়সে বিকাশ লাভ করে। হান্টিংটন’স ডিজিজের দুটি রূপ রয়েছে: ১. প্রাপ্তবয়স্ক-সূচনা; এটি সবচেয়ে সাধারণ। এই রূপভেদে ব্যক্তিরা সাধারণত ৩০ বা ৪০ বছর বয়সের মাঝামাঝি সময়ে লক্ষণগুলি প্রকাশ করে। ২. প্রারম্ভিক-সূচনা; এটি অল্প সংখ্যক লোককে প্রভাবিত করে এবং শৈশব বা কিশোর বয়সে শুরু হয়। হান্টিংটনের রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে মনোযোগ দিতে অসুবিধা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, বিষণ্নতা, বিশেষত হতাশার অনুভূতি, হাঁটার সময় ভারসাম্য হারানো, আনাড়িপনা এবং মেজাজের পরিবর্তন (যেমন আক্রমণাত্মক আচরণ) অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, রোগীরা অনিচ্ছাকৃত ঝাঁকুনি, পেশীর দৃঢ়তা, ধীর বা অস্বাভাবিক চোখের নড়াচড়া, দুর্বল বা অস্বাভাবিক চালচলন, ভঙ্গি, ভারসাম্য এবং কথা বলতে বা গিলতে অসুবিধার সম্মুখীন হন। হান্টিংটন’স ডিজিজ একটি বেদনাদায়ক রোগ। হান্টিংটন’স ডিজিজের জন্য বর্তমানে কোনো প্রতিকার নেই বা এটিকে আরও খারাপ হওয়া থেকে থামানোর কোন উপায় নেই। কিন্তু চিকিৎসা এবং সহায়তা কিছু সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। [মাহমুদ হোসাইন]