হলিক্রস গার্লস হাই স্কুল

হলিক্রস গার্লস হাই স্কুল  রোমান ক্যাথলিক চার্চ-এর সোসাইটি অব দ্য কংগ্রিগেশান অব সিস্টার্স অব দ্য হলি ক্রস কর্তৃক ১৯৫০ সালে স্কুলটি ঢাকার তেজগাঁও-এ প্রতিষ্ঠিত হয়। মাত্র দুটি শিশু নিয়ে এটি একটি কিন্ডারগার্টেন হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম আরম্ভ করে। কিন্তু ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে অনেক অভিভাবক তাদের শিশুদের ভর্তি করান, ফলে কিন্ডারগার্টেনটিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সম্প্রসারণ করতে হয়। ১৯৫৩ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার জন্য ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এটি উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। সিস্টার অগাস্টিন মেরি স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষিকা হওয়ার পর ১৯৫৫ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ ধারণ করে। পরবর্তীকালে এটি ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে এবং এর শিক্ষার্থীদের প্রথম ব্যাচ ১৯৬৬ সালে এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সে সময়ে স্কুলটিতে মানবিক এবং বিজ্ঞান শাখা চালু ছিল। ১৯৯৪ সালে দিবা শাখা ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি খোলা হয়। ১৯৯৯ সালে স্কুলটি বাণিজ্য শাখা চালু করে। এটি দুই শিফ্টে প্রভাতী ১ম থেকে ১০ম এবং দিবা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস পরিচালনা করে। প্রভাতী এবং দিবা শাখায় এখানে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া দরিদ্র ও বস্তিবাসী শিশুদের জন্য স্কুলটির একটি বিশেষ ‘অপরাহ্ন সাক্ষরতা কর্মসূচি’ রয়েছে; যেখানে ১ম থেকে ১০ম পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ জন ছাত্রছাত্রী বিনা বেতনে পড়াশুনা করছে এবং এদের পাঠদানের জন্য রয়েছে ৭ জন শিক্ষিকা।

স্কুল চত্বরের এলাকা ৩২,০০০ বর্গফুট। এর ৫,০০০ পুস্তকসম্বলিত একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, সম্পূর্ণ সজ্জিত ৪টি গবেষণাগার, দুটি কম্পিউটার ল্যাব, একটি মিলনায়তন এবং দুটি খেলার মাঠ রয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরীক্ষাতে চমৎকার ফলাফলের জন্য খ্যাত; এছাড়াও তারা গার্লস গাইড, গার্লস স্কাউট এবং ইয়েলো বার্ড প্রভৃতির মাধ্যমেও নিজেদের স্বাতন্ত্র্য তুলে ধরে। শিক্ষার্থীরা আবৃত্তি ক্লাব, কুইজ ক্লাব, বিতর্ক ক্লাব এবং আর্ট ক্লাবের মাধ্যমে পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে। স্কুলটি এক বছর অন্তর বিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞান মেলার আয়োজন করে থাকে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা টেলিভিশন ও রেডিওর বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। শিক্ষাসপ্তাহ উদ্যাপন, একটি বার্ষিক ম্যাগাজিন প্রকাশ, সেমিনার আয়োজন এবং বার্ষিক শিক্ষা সফরের আয়োজন করে। সাক্ষরতা শিক্ষা প্রদানের জন্য গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের কর্মস্থলে সাক্ষাৎ করে। উন্নত ও ব্যাপক কার্যক্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ স্কুলটি ১৯৯৭ এবং ২০০৩ সালে সেরা জাতীয় স্কুলের পুরস্কার অর্জন করে। খ্রিস্টান মিশনারি কর্তৃক স্কুলটি পরিচালিত হলেও মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধদের জন্য এটি উন্মুক্ত। বর্তমানে (২০১০) স্কুলের শিক্ষকশিক্ষিকার সংখ্যা ৫৭। ২০১০ সালে স্কুলের এস.এস.সি পাশের হার ১০০% এবং রেজাল্টের দিক থেকে ঢাকা বোর্ডে এটি সেরা দশের মধ্যে নবম স্থান অধিকার করে।  [সিস্টার রানী ক্যাথরিন গমেজ]