হরিপুর তেলক্ষেত্র
হরিপুর তেলক্ষেত্র (Haripur Oilfield) বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এদেশে খনিজ তেলের আবিষ্কার তুলনামূলকভাবে কম ঘটেছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম তেলক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৬ সালে সিলেটের হরিপুরে। ১৯৮৭ সনে এই তেলক্ষেত্রটি থেকে তেল উৎপাদন শুরুর মাধ্যমে বাংলাদেশ তেলযুগে পদার্পন করে।
হরিপুর তেলক্ষেত্র সিলেট শহর থেকে প্রায় ২০ কিমি উত্তর-পূর্বে সিলেট-জয়ন্তিয়া সড়কের পাশ ঘেঁষে অবস্থিত। এই তেলক্ষেত্র সিলেট গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিলেট-৭ কূপ খননের সময় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে আবিষ্কৃত হয়। হরিপুর তেলক্ষেত্রটি সিলেট উর্ধ্বভাঁজ সৃষ্ট ফাঁদ দিয়ে গঠিত। এই একই উর্ধ্বভাঁজ সিলেট গ্যাসক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। এটি চ্যুতি দিয়ে প্রভাবিত একটি অসম উর্ধ্বভাঁজ। এই উর্ধ্বভাঁজে তেল স্তরের সম্ভাব্য বিস্তৃতি প্রায় ৪ বর্গ কিমি। হরিপুর তেলক্ষেত্রে তেলবাহী বেলেপাথরের স্তরটি ভূ-পৃষ্ঠের নিচে ২০২০মি থেকে ২০৩৩মি গভীরতার মধ্যে বিরাজ করে। এই শিলাস্তর বোকাবিল সংঘের নিম্নাংশে অবস্থিত। বোকাবিল সংঘের বেলেপাথরের স্তরসমূহকে উপর থেকে নিচে ’এ’ স্যান্ড, ’বি’ স্যান্ড, ’সি’ স্যান্ড, ’ডি’ স্যান্ড এবং ’ই’ স্যান্ড এ ভাগ করা হয়েছে। কেবল এই শেষোক্ত বোকাবিল ’ই’ স্যান্ড স্তরটি তেলবাহী এবং এই স্তরটি থেকেই হরিপুর তেলক্ষেত্রের তেল উৎপাদন করা হতো।
হরিপুর তেলক্ষেত্রের তেল গাঢ় বাদামী রঙের প্যারাফিনিক শ্রেণীর মোমযুক্ত তেল। হরিপুর তেলের ঘনত্ব মধ্যম মাত্রার এবং এর (API Gravity) এপিআই গ্রাভিটি মান ২৮.২০। মহাদেশীয় ভূ-খন্ডের উদ্ভিদ জাতীয় জৈবিক পদার্থ হতে এর সৃষ্টি। হরিপুর তেলক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য মজুতের পরিমাণ ধরা হয়েছিল প্রায় ৬ মিলিয়ন ব্যারেল। এ হিসেবে হরিপুর তেলক্ষেত্র ছোট তেলক্ষেত্র।
১৯৮৭ সনের জানুয়ারী মাস থেকে হরিপুর তেলক্ষেত্র তেল উৎপাদন শুরু করে। প্রথম কয়েক বছর তেল উৎপাদনের হার ছিল প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ ব্যারেল। পরবর্তীতে তা কমতে থাকে এবং ১৯৯৪ সনের প্রথম দিকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০০ ব্যারেল বা তার কমে এসে পৌছায়। ১৯৯৪ সালের জুলাই মাস থেকে হরিপুর তেলক্ষেত্রে তেল উৎপাদন স্থগিত রয়েছে। সাতবছরে এই তেলক্ষেটি হতে প্রায় ০.৫৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদিত হয়। [সানজিদা মূর্শেদ]