হক, মোহাম্মদ মোজাম্মেল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''হক, মোহাম্মদ মোজাম্মেল''' (১৮৬০-১৯৩৩)  কবি, সাংবাদিক। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরের বাউইগাছি গ্রামে তাঁর জন্ম। শৈশবে পিতৃহীন হয়ে তিনি মাতামহ মোহাম্মদ বাদউল্লাহ কর্তৃক প্রতিপালিত হন। তিনি মাইনর স্কুল থেকে ভার্নাকুলার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তিলাভ করেন। পরে প্রথমে তামাচিকা বাড়ি ইংরেজি স্কুল (১২৮৫) ও পরে শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে এন্ট্রান্স পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।
'''হক, মোহাম্মদ মোজাম্মেল''' (১৮৬০-১৯৩৩)  কবি, সাংবাদিক। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরের বাউইগাছি গ্রামে তাঁর জন্ম। শৈশবে পিতৃহীন হয়ে তিনি মাতামহ মোহাম্মদ বাদউল্লাহ কর্তৃক প্রতিপালিত হন। তিনি মাইনর স্কুল থেকে ভার্নাকুলার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তিলাভ করেন। পরে প্রথমে তামাচিকা বাড়ি ইংরেজি স্কুল (১২৮৫) ও পরে শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে এন্ট্রান্স পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।


[[Image:HuqMohammadMozammel.jpg|thumb|400px|মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক]]
মোজাম্মেল হক কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সময় পত্রিকায় প্রথম সাংবাদিকতার কাজ শুরু করেন; পরে শান্তিপুর রামনগর ভার্নাকুলার স্কুলে দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এর এক বছর পর ১৮৮৭ সালে তিনি শান্তিপুর জুনিয়র জুবলি মাদ্রাসার শিক্ষক নিযুক্ত হন। তামাচিকা বঙ্গ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবেও তিনি চাকরি করেন। তাঁর বাংলা ভাষাজ্ঞান ও সাহিত্যবোধের কারণে  [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]]এর তৎকালীন উপাচার্য  [[মুখার্জী, আশুতোষ|আশুতোষ মুখোপাধ্যায়]] তাঁকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার বাংলা ভাষার পরীক্ষক নিযুক্ত করেন (১৯১৯)। মোজাম্মেল হক লহরী (১৮৯৯),  [[মোসলেম ভারত|মোসলেম ভারত]] (১৯২০) ও শান্তিপুর মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। চলি­শ বছর যাবৎ তিনি শান্তিপুর মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার ও কিছুকাল ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ত্রিশ বছর নদীয়া জেলা বোর্ডের শিক্ষা কমিটির সদস্য, বিশ বছর অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট ও কিছুকাল  [[বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি|বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি]]র (১৯১১) সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মুসলিম সমাজের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, গোঁড়ামি, পশ্চাৎপদতা ও আত্মবিস্মৃতির বিরুদ্ধে তিনি লেখনী ধারণ ও সংগঠনের মাধ্যমে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন।
মোজাম্মেল হক কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সময় পত্রিকায় প্রথম সাংবাদিকতার কাজ শুরু করেন; পরে শান্তিপুর রামনগর ভার্নাকুলার স্কুলে দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এর এক বছর পর ১৮৮৭ সালে তিনি শান্তিপুর জুনিয়র জুবলি মাদ্রাসার শিক্ষক নিযুক্ত হন। তামাচিকা বঙ্গ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবেও তিনি চাকরি করেন। তাঁর বাংলা ভাষাজ্ঞান ও সাহিত্যবোধের কারণে  [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]]এর তৎকালীন উপাচার্য  [[মুখার্জী, আশুতোষ|আশুতোষ মুখোপাধ্যায়]] তাঁকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার বাংলা ভাষার পরীক্ষক নিযুক্ত করেন (১৯১৯)। মোজাম্মেল হক লহরী (১৮৯৯),  [[মোসলেম ভারত|মোসলেম ভারত]] (১৯২০) ও শান্তিপুর মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। চলি­শ বছর যাবৎ তিনি শান্তিপুর মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার ও কিছুকাল ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ত্রিশ বছর নদীয়া জেলা বোর্ডের শিক্ষা কমিটির সদস্য, বিশ বছর অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট ও কিছুকাল  [[বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি|বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি]]র (১৯১১) সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মুসলিম সমাজের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, গোঁড়ামি, পশ্চাৎপদতা ও আত্মবিস্মৃতির বিরুদ্ধে তিনি লেখনী ধারণ ও সংগঠনের মাধ্যমে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন।
[[Image:HuqMohammadMozammel.jpg|thumb|400px|মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক]]


মোজাম্মেল হক ছিলেন মূলত কবি, তবে তাঁর গদ্যরচনাও আছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলি: কাব্য কুসুমাঞ্জলি (১৮৮১), অপূর্বদর্শন (১৮৮৫), প্রেমহার (১৮৯৮), হজরত মহাম্মদ (১৯০৩), জাতীয় ফোয়ারা (১৯১২), ইসলাম সঙ্গীত (১৯২৩); গদ্য রচনা মহর্ষি-মনসুর (১৮৯৬), ফেরদৌসী-চরিত (১৮৯৮), শাহনামা (১৯০৯), তাপসকাহিনী (১৯১৪, ২য় সং), খাজা ময়ীনউদ্দীন চিশতী (১৯১৮), হাতেমতাই (১৯১৯), টিপু সুলতান (১৯৩১); উপন্যাস জোহরা (১৯১৭), দরাফ খান গাজী (১৯১৯) ইত্যাদি। তিনি  [[বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ|বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ]] কর্তৃক ‘কাব্যকণ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৩৩ সালের ৩০ নভেম্বর শান্তিপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।  [মোঃ হারুন-অর-রশীদ]
মোজাম্মেল হক ছিলেন মূলত কবি, তবে তাঁর গদ্যরচনাও আছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলি: কাব্য কুসুমাঞ্জলি (১৮৮১), অপূর্বদর্শন (১৮৮৫), প্রেমহার (১৮৯৮), হজরত মহাম্মদ (১৯০৩), জাতীয় ফোয়ারা (১৯১২), ইসলাম সঙ্গীত (১৯২৩); গদ্য রচনা মহর্ষি-মনসুর (১৮৯৬), ফেরদৌসী-চরিত (১৮৯৮), শাহনামা (১৯০৯), তাপসকাহিনী (১৯১৪, ২য় সং), খাজা ময়ীনউদ্দীন চিশতী (১৯১৮), হাতেমতাই (১৯১৯), টিপু সুলতান (১৯৩১); উপন্যাস জোহরা (১৯১৭), দরাফ খান গাজী (১৯১৯) ইত্যাদি। তিনি  [[বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ|বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ]] কর্তৃক ‘কাব্যকণ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৩৩ সালের ৩০ নভেম্বর শান্তিপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।  [মোঃ হারুন-অর-রশীদ]


[[en:Huq, Mohammad Mozammel]]
[[en:Huq, Mohammad Mozammel]]

০৮:৫৫, ২৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

হক, মোহাম্মদ মোজাম্মেল (১৮৬০-১৯৩৩)  কবি, সাংবাদিক। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরের বাউইগাছি গ্রামে তাঁর জন্ম। শৈশবে পিতৃহীন হয়ে তিনি মাতামহ মোহাম্মদ বাদউল্লাহ কর্তৃক প্রতিপালিত হন। তিনি মাইনর স্কুল থেকে ভার্নাকুলার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তিলাভ করেন। পরে প্রথমে তামাচিকা বাড়ি ইংরেজি স্কুল (১২৮৫) ও পরে শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে এন্ট্রান্স পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক

মোজাম্মেল হক কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সময় পত্রিকায় প্রথম সাংবাদিকতার কাজ শুরু করেন; পরে শান্তিপুর রামনগর ভার্নাকুলার স্কুলে দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এর এক বছর পর ১৮৮৭ সালে তিনি শান্তিপুর জুনিয়র জুবলি মাদ্রাসার শিক্ষক নিযুক্ত হন। তামাচিকা বঙ্গ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবেও তিনি চাকরি করেন। তাঁর বাংলা ভাষাজ্ঞান ও সাহিত্যবোধের কারণে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়এর তৎকালীন উপাচার্য  আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার বাংলা ভাষার পরীক্ষক নিযুক্ত করেন (১৯১৯)। মোজাম্মেল হক লহরী (১৮৯৯),  মোসলেম ভারত (১৯২০) ও শান্তিপুর মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। চলি­শ বছর যাবৎ তিনি শান্তিপুর মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার ও কিছুকাল ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ত্রিশ বছর নদীয়া জেলা বোর্ডের শিক্ষা কমিটির সদস্য, বিশ বছর অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট ও কিছুকাল  বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির (১৯১১) সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মুসলিম সমাজের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, গোঁড়ামি, পশ্চাৎপদতা ও আত্মবিস্মৃতির বিরুদ্ধে তিনি লেখনী ধারণ ও সংগঠনের মাধ্যমে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন।

মোজাম্মেল হক ছিলেন মূলত কবি, তবে তাঁর গদ্যরচনাও আছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলি: কাব্য কুসুমাঞ্জলি (১৮৮১), অপূর্বদর্শন (১৮৮৫), প্রেমহার (১৮৯৮), হজরত মহাম্মদ (১৯০৩), জাতীয় ফোয়ারা (১৯১২), ইসলাম সঙ্গীত (১৯২৩); গদ্য রচনা মহর্ষি-মনসুর (১৮৯৬), ফেরদৌসী-চরিত (১৮৯৮), শাহনামা (১৯০৯), তাপসকাহিনী (১৯১৪, ২য় সং), খাজা ময়ীনউদ্দীন চিশতী (১৯১৮), হাতেমতাই (১৯১৯), টিপু সুলতান (১৯৩১); উপন্যাস জোহরা (১৯১৭), দরাফ খান গাজী (১৯১৯) ইত্যাদি। তিনি  বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ কর্তৃক ‘কাব্যকণ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৩৩ সালের ৩০ নভেম্বর শান্তিপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।  [মোঃ হারুন-অর-রশীদ]