হক, জহুরুল১
হক, জহুরুল১ (১৯২৩-১৯৯৮) খ্যাতিমান বিজ্ঞানী জহুরুল হক ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজারামপুর গ্রামে এক সুশিক্ষিত ও প্রগতিশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম তাবারক আলী নবাবগঞ্জ কোর্টের একজন আইনজীবী ছিলেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে বি.এস-সি এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে এম.এস-সি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে এম.এস এবং ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন।
জহুরুল হক ১৯৪৫-৪৭ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ও আসাম রেলওয়ের ইন্সপেক্টর হিসেবে চাকুরীর করেন। তারপর রাজশাহী কলেজ (১৯৪৭-১৯৪৯), ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৯৫২-৬৩) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৩-৮৮) শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (১৯৭০-১৯৮২) তড়িৎ প্রকৌশল অনুষদের ডীন (১৯৭২-১৯৭৫) এবং তড়িৎ ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীনের (১৯৮২) দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (১৯৭৩-১৯৭৪) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট (১৯৮৩) এর সদস্য এবং আনবিক শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ এর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা ভাষায় ‘প্রকৌশল’ এবং ‘প্রকৌশলী’ শব্দটি তিনিই সর্বপ্রথম চালু করেন।
অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন জহুরুল হক শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। তিনি ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো পুরস্কার, ১৯৬৯ খিস্টাব্দে বিজ্ঞান সাহিত্যে জাতীয় ব্যাংক পুরস্কার, ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে প্রবন্ধ ও গবেষণায় বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে উৎকৃষ্ট বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন পুরস্কার সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ছাড়াও দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পদক’ লাভ করেন। তিনি সাহিত্য বিষয়ক গ্রন্থ ছাড়াও বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান মনস্ক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘সাত সাঁতার’, ‘মনুবর্ণালী’, ‘খেলতে খেলতে বিজ্ঞান’ উলেখযোগ্য।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী জহুরুল হক-কে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ইমেরেটাস প্রফেসর হিসেবে সম্মানিত করে। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর লেখনী সমাজ ও দেশের উন্নয়নে দিক নির্দেশনা স্বরূপ। বিশেষ করে যাঁরা বিজ্ঞানচর্চা করেন তাদের জন্য তাঁর লেখনী অবশ্যই অনুপ্রেরণা যোগাবে। [মাযহারুল ইসলাম তরু]