স্তন্যপান
স্তন্যপান মানব প্রাজাতির মধ্যে খাদ্য গ্রহণের জৈবিক ক্রিয়া হিসেবে সদ্যোজাত সন্তানকে একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত জননী কর্তৃক দুগ্ধ পান করানো। যেকোন স্তন্যপায়ী প্রাণীর ন্যায় জন্মের পর মানবসন্তানও মাতৃদুগ্ধের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশেও মাতৃদুগ্ধ পানের শ্রেণিভিত্তিক ঐতিহ্য রয়েছে। প্রায় প্রতিটি নবজাতক শিশুকেই দীর্ঘকাল বুকের দুধ খাওয়ানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি বা উচ্চবিত্ত শ্রেণির পরিবারে নবজাতক শিশুদের ধাত্রী দ্বারা বুকের দুধ পান করানোর প্রথা খুবই বিরল। এদেশে মাতৃদুগ্ধপান করানোর ধরন একদিকে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অন্যদিকে আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত অবস্থান দ্বারা প্রভাবান্বিত।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শিশুকে শাল দুধ পানে উৎসাহিত করার ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও প্রায় ৫০ শতাংশ মা, শিশু জন্মের ৬ ঘণ্টা পরে বুকের দুধ পান করায়, বাকিরা ২ দিন পর। এভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর মূল কারণ হচ্ছে অনেকের ধারণা যে, শাল দুধ নবজাতকের জন্য ভাল নয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ সন্তান ভূমিষ্ট হয় স্বগৃহে এবং নবজাতককে জন্মের পরপরই কয়েক ফোঁটা মধু পানিতে মিশিয়ে খাওয়ানো একটি প্রচলিত প্রথা। এমনকি হাসপাতালে ভূমিষ্ট হলেও সঙ্গে সঙ্গে শাল দুধ খাওয়ানো হয় না শিশুর স্তন চুষবার অক্ষমতা অথবা মার দুর্বলতা বা অক্ষমতার কারণে। মা শারীরিকভাবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত অথবা শিশু নিজেই মায়ের বুক থেকে চুষে দুধপান করার সামর্থ্য অর্জন না করা পর্যন্ত তাকে সাধারণত পানি অথবা পানিতে চিনি মিশিয়ে পান করানো হয়। জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য জরিপ উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বলা হয়, বাংলাদেশের শিশুদের বেশ আগে থেকে সম্পূরক খাবার দেওয়া হয় এবং গরুর দুধ ও গুঁড়া দুধ সর্বাধিক প্রচলিত সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়।
নবজাতককে বুকের দুধ পান করানো প্রতিটি মায়ের পবিত্র দায়িত্ব। প্রতিটি মাকেই তার শিশুকে অন্তত ৩০ মাস বুকের দুধ পান করানো প্রয়োজন। মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, ৩০ মাস বয়সের পরে শিশুর মাতৃদুগ্ধ পান নিষেধ করা হয়েছে। জনগণের দরিদ্র অবস্থার কারণে অনেক মা প্রায় সময় শিশুকে দীর্ঘকাল বুকের দুধ খাওয়াতে বাধ্য হন। জনগণের একটি বৃহদাংশ গরিব, শিশুর জন্য সম্পূরক খাদ্য ক্রয়ের ক্ষমতা তাদের নেই। তাই শিশুকে তার মায়ের দুধের ওপরই দীর্ঘদিন নির্ভরশীল থাকতে হয় এবং শিশু ঘন ঘন দুধ পান করে থাকে। এর ফলেই সম্ভবত গর্ভোত্তর স্রাব বন্ধ প্রলম্বিত হয়।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ ফার্টিলিটি সার্ভে তাদের প্রতিবেদনে গড় স্রাব বন্ধের সময় ১৪.৬ মাস বলে উল্লেখ করেছিল। ১৯৮৯ সালের সমীক্ষায় দেখা যায় ঋতুস্রাব বন্ধের গড় সময়সীমা ১২ মাস। অতি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ঋতুস্রাব বন্ধের দৈর্ঘ্য আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে হ্রাস পেয়েছে। এতে দেখা যায়, যদিও গত দু দশকে বুকের দুধপান প্রক্রিয়ায় খুব একটা পরিবর্তন হয় নি, তথাপি ঋতুস্রাব বন্ধের মেয়াদ প্রলম্বিত হবার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। [এম মাজহারুল ইসলাম]