সোপান
সোপান (Terrace) ভূসংস্থানিক সমতল আকৃতির স্থান। প্রায়ই স্থূল বস্ত্তর সঞ্চয়ন থেকে বৃদ্ধির চূড়ান্ত ধাপে স্থূলবস্ত্ত দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এ আকৃতি প্রাপ্ত হয়। এসব বস্ত্ত নদীর প্রবাহ (প্রবাহজ সোপান) হ্রদ (হ্রদজ সোপান) বা সাগর (সামুদ্রিক সোপান) দ্বারা অবক্ষেপিত এবং বর্তমান নদী, হ্রদ বা সমুদ্রপৃষ্ঠ ছাপিয়ে ওঠা ভূমি। বাংলাদেশের ভূমি তিন ভাগে বিভক্ত: পাহাড় (১২ শতাংশ), সোপান (৮ শতাংশ) এবং পললভূমি (৮০ শতাংশ)। সোপান এলাকাতে মধুপুর ও বরেন্দ্র ভূমি এবং আখাউড়ার একটি ক্ষুদ্র এলাকা অন্তর্ভুক্ত। ভূতাত্ত্বিকভাবে মধুপুর ও বরেন্দ্র অঞ্চল প্লাইসটোসিন সোপান অবক্ষেপের অন্তর্ভুক্ত। মধুপুর ও বরেন্দ্র অঞ্চলের নিচে অসংহত মধুপুর এঁটেল বিদ্যমান। এসব অঞ্চল বেশ কিছু সংখ্যক চ্যুতি ব্লকে ভেঙ্গে গিয়েছে, যাদের পৃষ্ঠ নিকটবর্তী পললভূমির চেয়ে সামান্য কয়েক মিটার উঁচুতে অবস্থিত। মধুপুর এঁটেল পাহাড়ি শিলার মতো বলিত (folded) নয়। মধুপুর অঞ্চলটি বরেন্দ্র অঞ্চলের তুলনায় বেশি সংখ্যক নদী দ্বারা ব্যবচ্ছিন্ন হয়েছে। এ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি অধিকতর জটিল প্রকৃতির। সোপান অঞ্চলে পাঁচ প্রকারের ভূ-প্রকৃতি দেখা যায়: সমতল দুর্বল-নিষ্কাশিত এলাকা (বরেন্দ্রভূমির অধিকাংশ এবং মধুপুর অঞ্চলের ১৫ মিটার উঁচু পশ্চিম প্রাপ্ত), প্রশস্ত ব্যবচ্ছিন্ন এলাকা (অধিকাংশই মধুপুর অঞ্চলে এই বরেন্দ্র ও আখাউড়া সোপানের অল্প এলাকা), অপ্রশস্ত ব্যবচ্ছিন্ন এলাকা (কেবলমাত্র মধুপুর অঞ্চলে) এবং গ্রস্ত উপত্যকা (এসব সোপানের মধ্যে মধুপুর অঞ্চলে পাওয়া যায়)। সোপানগুলোত বিভিন্ন প্রকারের মৃত্তিকার উদ্ভব ঘটেছে। এসব মৃত্তিকাতে গভীর ও অগভীর বাদামি সোপান মৃত্তিকা, বাদামি কর্বুরিত মৃত্তিকা, গভীর ও অগভীর সোপান মৃত্তিকা, ধূসর উপত্যকা মৃত্তিকা, নিচু এলাকার এঁটেল, চুনহীন ও গাঢ় ধূসর পললভূমি মৃত্তিকা এবং ধূসর পর্বত পাদদেশীয় মৃত্তিকা থাকে। [মোঃ মিজানুর রহমান ভূঁইয়া]