সোনাইমুড়ি উপজেলা

সোনাইমুড়ি উপজেলা (নোয়াখালী জেলা)  আয়তন: ১৭০.৪২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°02´ থেকে ২৩°06´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°00´ থেকে ৯১°13´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে বেগমগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে সেনবাগ উপজেলা এবং পশ্চিমে চাটখিল উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৯০৮৪৬; পুরুষ ১৪১০২৯, মহিলা ১৪৯৮১৭। মুসলিম ২৮১৩৬৫, হিন্দু ৯৩০৯, বৌদ্ধ ১৩, খ্রিস্টান ১১৪ এবং অন্যান্য ৪৫।

জলাশয় ডাকাতিয়া নদী ও রহমত খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ২০০৫ সালের ২৯ জানুয়ারি বেগমগঞ্জ উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে সোনাইমুড়ি উপজেলা গঠিত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ১৪২ ২৩৫৫৯ ২৬৭২৮৭ ১৭০৭ ৬০.১০ ৫৫.৭৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.২৪ ১৭ ২৩৫৫৯ ২৩০১ ৬০.১০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আম্বরনগর ১৩ ২৭৮৩ ৯৮৬৮ ১১২৭৪ ৫২.৯৯
আমিশাপাড়া ১৫ ৪৮৫৩ ১৪৩৮৭ ১৫১২৫ ৬৩.৮০
চাষীরহাট ৯১ ১৬৩২ ৫০৯৩ ৫৩০৭ ৫৬.৭৭
জয়াগ ৫৯ ৫০৭৩ ১৫০৪৯ ১৬০৪০ ৫৯.১৯
দেউটি ৩৫ ৪৮৪৩ ১৫৩৯৭ ১৫৫৯৬ ৬৪.৪১
নাটেশ্বর ৭৭ ৪০১৯ ১৩০৮৮ ১৫১৪২ ৪২.৭০
নদনা ৭৩ ৫৪৮৪ ১৬২৬৭ ১৬৯৯১ ৫৩.৩৬
বজরা ২১ ৩৪৭২ ১৫০৯৬ ১৬৩১৮ ৪৭.২৮
বড়গাঁও ১৭ ৪২৫১ ১৩৫৯৪ ১৪২৬৬ ৫৭.১৮
সোনাপুর ৯৪ ৩৬৩৬ ১১১৮৮ ১২২০১ ৬০.০৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বজরা শাহী জামে মসজিদ (১১৫৩ হিজরী), শ্রী শ্রী গধাদর কুন্ড তীর্থস্থান।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে এ উপজেলা ২ নং সেক্টরের অধীন ছিল। ২১ এপ্রিল সোনাইমুড়ি রেলস্টেশনের আউটার সিগনালের কাছে এবং ১১ মে সোনাইমুড়ির বগাদিয়া নামক স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে প্রায় ২০ জন পাকসেনা নিহত হয়। এছাড়াও এ লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৭ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ১ (সোনাপুর)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ১৬৫, মন্দির ৬, মাযার ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বজরা শাহী জামে মসজিদ, সোনাইমুড়ি জামে মসজিদ, নদনা জামে মসজিদ, গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৫.৭৭%; পুরুষ ৫৬.২৪% ও মহিলা ৫৫.৩২%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৪, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬, মাদ্রাসা ১৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সোনাইমুড়ি ডিগ্রী কলেজ (১৯৭০), সোনাইমুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), বজরা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), সোনাইমুড়ি হামিদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা (১৯২৬)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২৭.৩২%, অকৃষি শ্রমিক ২.০৬%, শিল্প ০.৬৩%, ব্যবসা ১৬.৪৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৬০%, চাকরি ১৮.১৫%, নির্মাণ ১.২৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১৪.৩৮% এবং অন্যান্য ১৫.৭৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.৩৮%, ভূমিহীন ৩৯.৬৯%।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ৬, মহিলা সংগঠন ৬, খেলার মাঠ ১২, সাংস্কৃতিক সংগঠন ২।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, সুপারি, সরিষা, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তিল, তিসি, অড়হর, চীনা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, কলা, জাম, পেয়ারা, পেঁপে, সুপারি।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯৬.৫৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৭৩২.৩৯ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি,  মহিষের গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, বরফকল, করাতকল, বিস্কুট কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, সুচিশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ২।  সোনাইমুড়ি হাট, থানার হাট, কামারের হাট, নদনা হাট, কাশিপুর হাট, শান্তির হাট, লালমিয়ার হাট, জয়াগ বাজার, বজরা স্টেশন বাজার, মুসলিমগঞ্জ বাজার, সোনাপুর বাজার, বাংলা বাজার ও আমিশাপাড়া বাজার উল্লেখযোগ্য।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৩.৮৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৫.৮৪%, ট্যাপ ০.৬৪%, পুকুর ৭.৭২% এবং অন্যান্য ৫.৮০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬০.৮৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৮.৮৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১০.২২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১০, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, কমিউনিটি ক্লিনিক ২৪।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়াও ১৯৯৩ সালের টর্নেডো এবং ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমিশাপাড়া ইউনিয়নের ৫ টি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আকস্মিক ঘুর্ণিঝড়ে গ্রামের ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা।  [মিজানুর রহমান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সোনাইমুড়ি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন  ২০০৭।