সেবাপ্রদান ব্যবস্থা
সেবাপ্রদান ব্যবস্থা পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত কাজ ও কর্মপদ্ধতি যার মাধ্যমে ইচ্ছুক সক্ষম দম্পতিদেরকে দ্রব্যসামগ্রী অথবা পরামর্শ প্রদান করা হয়। জন্মনিরোধ বিষয়ক যেসব উপকরণ ও সেবা সরবরাহের আওতায় পড়ে সেগুলি হচ্ছে কনডম, খাওয়ার বড়ি, আই-ইউ-ডি (ইন্ট্রা ইউটেরিন ডিভাইসেস বা জরায়ু অভ্যন্তরে স্থাপিত উপকরণ), হরমোনাল ইনজেকশন, বন্ধ্যাকরণ, নরপ্ল্যান্টস ইত্যাদি প্রদান করা এবং প্যারামেডিক ও মেডিকেলে দক্ষ চিকিৎসকদের সাহায্যে জন্মনিরোধ প্রয়োগজনিত জটিল উপসর্গের চিকিৎসা করা। মায়ের স্বাস্থ্য এবং শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যাও (যদিও সীমিত পরিসরে) সেবাপ্রদান ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশে ষাটের দশক থেকে জনসংখ্যা, পরিবার পরিকল্পনা এবং স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে একটি সেবাপ্রদান ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। ব্যবস্থাটি দুভাগে বিভক্ত: ঘরে ঘরে সেবাপ্রদান এবং ক্লিনিকভিত্তিক সেবাপ্রদান কর্মসূচি। প্রথম দিকে ক্লিনিকগুলিই কনডম ও ফেনাবড়ি সরবরাহের জন্য প্রধান সেবাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহূত হতো। পল্লী স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, পল্লী স্বাস্থ্য চিকিৎসালয় এবং দাতব্য চিকিৎসালয়গুলি ছিল রোগের চিকিৎসার জন্য আগত মানুষদের নিকট জন্মনিরোধক সরবরাহের কেন্দ্র। এছাড়া ডাক্তারগণ রোগীদেরকে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বিষয়ে উপদেশ দিতেন। কিন্তু এই প্রচেষ্টা সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক পরিসরে জন্মনিরোধক ব্যবহারের প্রসার ঘটাতে পারে নি। সমাজের শুধু শিক্ষিত বিদগ্ধ শ্রেণিই একটি সুস্পষ্ট ধারায় জন্মনিরোধক ব্যবহারের প্রচলন শুরু করে।
১৯৫৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. হোমায়রা সাঈদ সক্ষম মহিলাদেরকে হিস্টেরেক্টমি (বন্ধ্যাকরণ) গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমেই এ অঞ্চলের গর্ভায়ন আচরণে হস্তক্ষেপের প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রকৃত অর্থে এ উদ্যোগটিও শুধু শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এবং দক্ষ চিকিৎসকের সেবা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমিত রয়ে যায়। জন্মনিরোধক বিতরণের কর্মসূচিও এই শ্রেণির জনগণের মধ্যেই সীমিত থাকে। পঞ্চাশের দশকে পরিবার পরিকল্পনা সেবার কোন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সম্ভব হয় নি। ইচ্ছুক দম্পতিদের নিকট সুলভ জন্মনিরোধক সরবরাহের কোন ব্যবস্থাও প্রবর্তন করা হয় নি। ফলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেবাপ্রদান একটি প্রধান সমস্যা হিসেবেই বিরাজ করে। যেকোন এক ধরনের জন্মনিরোধক নিতে ইচ্ছুক এমন একটি সক্ষম দম্পতির প্রয়োজন তার (স্ত্রী কিংবা পুরুষ) দোরগোড়ায় দক্ষ সেবার সহজ এবং নিয়মিত সরবরাহ। এ রকম সেবাপ্রদান ব্যবস্থা ষাটের দশকের মধ্যভাগে সরকার কর্তৃক শহর ও গ্রামাঞ্চলে পরিবার পরিকল্পনা প্রচারের জন্য সকল জেলায় ও থানায় জেলা পরিবার পরিকল্পনা এবং থানা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিয়োগদানের পূর্বপর্যন্ত বিকশিত হয় নি। এসব নিয়োগদানের পরই শুধু থানা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় এবং পল্লী চিকিৎসালয়গুলি সেবাপ্রদানের কেন্দ্রে পরিণত হয়। তাদের কর্মসূচিতে ক্লিনিক ও অক্লিনিকভিত্তিক এবং কনভেনশনাল ও নন-কনভেনশনাল সহ সকল পদ্ধতিই অন্তর্ভুক্ত ছিল। আই-ইউ-ডির মতো একটি সাময়িক জন্মনিরোধক পদ্ধতি প্রদানের জন্য গ্রামে গ্রামে অস্থায়ী কেন্দ্র ও শিবিরের ব্যবস্থা করা হতো। ইচ্ছুক ক্লায়েন্ট বা দম্পতিদেরকে জন্মনিরোধক সম্পর্কে খুবই প্রাথমিক তথ্য প্রদান করার জন্য এবং আপাত দুঃসাধ্য কিন্তু চূড়ান্তপ্রয়াসে উদ্বুদ্ধকৃত ক্লায়েন্টদেরকে জন্মনিরোধক সরবরাহ করার জন্য গ্রামাঞ্চলে দাই নামে পরিচিত হাজার হাজার সনাতন ধাত্রী নিয়োগ করা হয়। ফলে এক বিরাট স্বল্প আয়সম্পন্ন জনগোষ্ঠী বিনামূল্যে সেবা পেতে থাকে।
জন্মনিরোধ সম্পর্কে তথ্য এবং জ্ঞান প্রসারের সাথে সাথে সাধারণ লোক এসবের অধিকতর ব্যবহার শুরু করে। প্রত্যেক মাসে গ্রামাঞ্চলে বিতরণের জন্য থানা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় থেকে ধাত্রি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জন্মনিরোধক গ্রহণ করত। গতানুগতিক ধারায় তারা গ্রাম্য পরিবারগুলিতে মায়ের গর্ভখালাস বা ডেলিভারির কাজে নিয়োজিত ছিল; সেইসূত্রে বর্তমান বা ভাবী মায়ের সাথে পরিচয়ের সুযোগটি গ্রহণ করত। মায়েরা প্রথম দিকে শুধু কৌতুহলবশতই জন্মনিরোধক গ্রহণ করেন। কিন্তু শীঘ্রই তারা এর উপযোগিতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। এমনকি আরও ভাল ধরনের জন্মনিরোধক এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির জন্য তাদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি হয়।
১৯৬৬ সালে আই-ইউ-ডি এবং বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতির প্রচলন করা হয়। প্রথম দিকে প্লাস্টিক লুপ বা প্লাস্টিক কয়েলের মতো জরায়ু অভ্যন্তরস্থ উপকরণ হাসপাতালে ও ক্লিনিকে মহিলা ডাক্তারগণই প্রদান করতেন। জেলা পরিষদের দাতব্য চিকিৎসালয় অথবা স্বাস্থ্য দফতরের মহকুমা হাসপাতালগুলিতে কর্মরত মহিলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক একই ধরনের কাজ করতেন। পরবর্তীকালে তাদেরকে আই-ইউ-ডি প্রয়োগের (পেশাগত) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং প্যারামেডিক হিসেবে কাজে লাগানো হয়। তারা সাধারণত থানা পরিবার পরিকল্পনা অফিস, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমনরুম, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় অথবা অব্যবহূত কৃষি বীজাগার ভবনের কক্ষ পূর্বে সজ্জিত করে আই-ইউ-ডি প্রয়োগ সম্পন্ন করতেন। মহিলা পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের সাথে থানা পরিবার পরিকল্পনা সহকারীরাও সহায়তা করতেন। তারা নিজেদের সঙ্গে বহন করতেন প্রয়োজনীয় লজিস্টিক্স্ ও ক্লিনিক্যাল যন্ত্রপাতি, যথা ইউটেরিন সাউন্ড, ভলসেলাম ফরসেপ, স্পেকুলাম ডাক্ট্, সিজর্স্, ডায়ালেটর, অ্যান্টিসেপটিক্স, স্পিরিট ল্যাম্প, স্টোভ, টর্চ এবং ম্যাকিনটোশ শিট ইত্যাদি। ইনসারশন টেবিল-এর মতো প্রায়োগিক আবশ্যক দ্রব্য-সরঞ্জাম গ্রামে পাওয়া যেত না বলে সাধারণ চৌকিই টেবিল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। প্রতি মাসে থানা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দাইদেরকে মাসিক ভাতা বিতরণের সাথে সাথে ক্লায়েন্টদের নিকট বিতরণের জন্য তাদেরকে নৈমিত্তিক জন্মনিরোধক সরবরাহ করার কর্মসূচি গ্রহণ করতেন। এর সাথে আই-ইউ-ডি প্রয়োগ এবং পুরুষ বন্ধ্যাকরণের কর্মসূচিও থাকতো। সাধারণ চিকিৎসকগণকে ভ্যাসেক্টমি বা পুরুষ বন্ধ্যাকরণ এবং টিউবেক্টমি বা টিউব লাইগেশন বা মহিলা বন্ধ্যাকরণ সম্পাদনেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। সম্পাদন খরচের এবং সেবাগ্রহণকারীদেরকে পরিশোধিত প্রণোদনা-অর্থের রেকর্ড সংরক্ষণ করা হতো।
১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্য বিভাগীয় চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদেরকে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ক্লিনিক সেবাদান কর্মসূচিকে আরও ফলপ্রসূ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৭৬ সালে শহর ও গ্রামাঞ্চলে কমপক্ষে প্রতি পাঁচ হাজার মানুষের জন্য একজন সাক্ষর ও প্রশিক্ষিত মহিলা পরিবারকল্যাণ সহকারী নিয়োগ করা হয়। প্রতি এক অথবা দুই মাসে প্রত্যেক সক্ষম দম্পতির সাথে যোগাযোগ করে খাওয়ার বড়ি সরবরাহের জন্য তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের কাছে গড়পড়তা আটশত সক্ষম দম্পতির সাথে নিয়মিত উদ্বুদ্ধকরণ যোগাযোগ ও অস্থায়ী সেবাদান কেন্দ্র থেকে পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি গ্রহণের জন্য ইচ্ছুক দম্পতিদেরকে পাঠানো হতো। সরকার প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি স্থায়ী পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং বারোটি বৃহত্তর জেলা সদরে বারোটি পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে।
মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচিকে পরিবার পরিকল্পনা সেবা কর্মসূচির সাথে সমন্বিত করা হয়। কতিপয় জেলা ও মহকুমা শহরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে একজন সহকারী পরিচালক (সার্বিক) এবং একজন মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) ও একজন সহকারী পরিচালক (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) নিয়োগ করা হয়। মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) জেলা ও মহকুমা পর্যায়ে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কাজকর্ম দেখাশুনা এবং মাঠ পর্যায়ে ক্লিনিক কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও তদারক করতেন। থানা পর্যায়ে ক্লিনিক কার্যক্রম তদারক ও পরিবীক্ষণ করার জন্যও থানা মেডিকেল অফিসার নিয়োগ করা হয়। আশির দশকের প্রথম দিকে সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের আওতায় থানা পর্যায়ে একটি সমন্বিত সেবাদান ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এই দশকের শেষার্ধে সকল সক্ষম দম্পতিকে তালিকাভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরিবার কল্যাণ সহকারীরা শুধু প্রজনন ও গর্ভায়ন আচরণের জনমিতিক বৈশিষ্ট্যের রেকর্ড সংরক্ষণ করে। একটি শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ভিত্তি স্থাপিত হয়। ইউনিয়নের যে সমস্ত ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নেই, সে সকল ওয়ার্ডে স্যাটেলাইট ক্লিনিক কর্মসূচি সংগঠিন করা হয়। এই ক্লিনিকগুলি স্বাস্থ্য শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা (হর্মোনযুক্ত খাওয়ার বড়ি ও কনডম সরবরাহ, হর্মোনীয় ইনজেকশান পুশকরণ) প্রদান করে। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি অধিকভাবে মা ও শিশু স্বাস্থ্যভিত্তিক হয়। ১৯৯০-এর শেষ দিকে জরুরি প্রসূতি পরিচর্যা ও নিরাপদ মাতৃত্ব কর্মসূচি প্রবর্তিত হয়। এই সময়েই চারটি মেডিকেল কলেজে চারটি মডেল ক্লিনিক এবং মোহাম্মদপুর মডেল ক্লিনিক স্থাপন করা হয়।
১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির মাঠ-পরিকল্পনার বিষয়ে একটি এক্সপার্ট গ্রুপ কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বর্তমান সেবাদান ব্যবস্থায় কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করেছিলেন। এগুলিতে ছিল পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ, সমাজে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সম্পর্কে প্রচারের অভাব, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে উপকরণাদির অপর্যাপ্ত সরবরাহ, আঞ্চলিক পণ্যাগার থেকে জেলা সংরক্ষিত পণ্যাগার, থানা পরিবার পরিকল্পনা স্টোর, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও স্যাটেলাইট ক্লিনিকগুলিতে লজিস্টিক্স্ পরিবহণের জন্য তহবিল ও যানবাহনের সমস্যা, জন্মনিরোধক ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থার জটিল কেসসমূহের চিকিৎসা ও অনুসরণ, ত্রুটিপূর্ণ পরামর্শ এবং জীবন রক্ষাকারী ঔষধপত্রসমূহের সাময়িক এবং আকস্মিক ঘাটতি। ১৯৯৪ সালে কায়রোয় অনুষ্ঠিত আইসিপিডি (ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) বা আন্তর্জাতিক জনসংখ্যা ও উন্নয়ন সম্মেলনের সুপারিশ অনুসারে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে প্রজনন স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে রূপান্তরের জন্য একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৮ সালে জরুরি সেবাদান প্যাকেজ কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হয়। কর্মসূচিতে পরিবার পরিকল্পনা সেবাদানের কৌশল ও মান উন্নয়নের জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গির অবতারণা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সেবা প্রদানের একটি এককেন্দ্রিক সেবাদান ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়। ধারণা করা হয় যে- সেবাগ্রহণকারীর দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর পরিবর্তে সেবা গ্রহণকারীরাই সেবাপ্রদানকারীদের নিকট সেবা গ্রহণের জন্য আসবে। লক্ষ্যমাত্রিক জনসংখ্যা হলো মহিলা, শিশু এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক নামে একটি স্থায়ী সেবাদান কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মহিলাদের ব্যাপকতর অংশের প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে সেবাদান ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ক্রমেই এটিকে ব্যয়বহুল করে তোলে। সরকার প্রায় ২৩,৫০০ পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং ৪,৫০০ পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক নিয়োগ করে। এই কর্মীদেরকে বেতন ও অন্যান্য বেনিফিট হিসেবে প্রদেয় বাৎসরিক খরচের পরিমাণ দুই কোটি বিশ লাখ ডলার। প্রায় ৩,৭০০ পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, ৩,৭০০ আয়া, ৩,৭০০ চিকিৎসা সহকারী এবং ৩,০০০ এমএলএসএস (নিম্নতর অধীনস্থ সেবাকর্ম সদস্য) পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মা ও শিশুস্বাস্থ্য ইউনিট এবং স্যাটেলাইট ক্লিনিকগুলিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদেরকে প্রদেয় বেতন ও অন্যান্য বেনিফিট বাবদ ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭০ লক্ষ ডলারের ওপর। যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সক্ষম দম্পতি ও মাঠকর্মীদের অনুপাত এবং মাঠকর্মী ও তদারককারীদের বর্তমান অনুপাত বজায় থাকে তাহলে ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। দাতা সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত তহবিলের স্থিতাবস্থা অথবা ক্রমহ্রাসমান অবস্থায় ব্যয়মূল্যের বৃদ্ধি ঘটা সত্ত্বেও বর্তমান সেবাদান ব্যবস্থা ফলপ্রসূতা এবং দক্ষতার দাবি করে। এ ব্যবস্থা খোলা বাজারে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে এটি গ্রাহকের দোরগোড়ায় সেবাদান এবং ক্লিনিকে সেবাদানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। [মুস্তাফা হুসেন]