সেন, দেবেন্দ্রনাথ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
৪ নং লাইন: ৪ নং লাইন:
তিনি পাটনা কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৭২), কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে এফএ (১৮৭৪) এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বিএ (অনার্স, ১৮৮৬) ও এম. এ (১৮৯৩, প্রাইভেট) পরীক্ষা পাশ করেন। পেশায় আইনজীবী এবং এলাহাবাদ হাইকোর্ট ছিল তাঁর কর্মস্থল।
তিনি পাটনা কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৭২), কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে এফএ (১৮৭৪) এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বিএ (অনার্স, ১৮৮৬) ও এম. এ (১৮৯৩, প্রাইভেট) পরীক্ষা পাশ করেন। পেশায় আইনজীবী এবং এলাহাবাদ হাইকোর্ট ছিল তাঁর কর্মস্থল।


[[Image:SenDebendranath.jpg|thumb|400px|দেবেন্দ্রনাথ সেন]]
উনিশ শতকে আধুনিক ধারার গীতিকবিতা রচনা করে যে কয়জন কবি সুনাম অর্জন করেন, দেবেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। এ ধারার প্রথম কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী। তাঁর উত্তরসূরি ও অনুসারী দেবেন্দ্রনাথ সেনের কাব্য-চেতনার মূল প্রবণতা নব্য রোমান্টিকতা। তিনি গীতিকবিতা ও সনেট কাব্যাঙ্গিককে আত্মপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। তিনি গীতিকবিতা রচনায় বিহারীলালকে (১৮৩৫-১৮৯৪) এবং সনেট রচনায় মধুসূদনকে (১৮২৪-১৮৭৩) অনুসরণ করেছেন। তবে কবিতার ভাবে ও ভাষায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সহগামী। তিনি ‘রবীন্দ্রবাবুর সনেট’ নামে একটি সনেট রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সোনার তরী (১৮৯৪) কাব্যখানি দেবেন্দ্রনাথ সেনের নামে উৎসর্গ করেন।
উনিশ শতকে আধুনিক ধারার গীতিকবিতা রচনা করে যে কয়জন কবি সুনাম অর্জন করেন, দেবেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। এ ধারার প্রথম কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী। তাঁর উত্তরসূরি ও অনুসারী দেবেন্দ্রনাথ সেনের কাব্য-চেতনার মূল প্রবণতা নব্য রোমান্টিকতা। তিনি গীতিকবিতা ও সনেট কাব্যাঙ্গিককে আত্মপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। তিনি গীতিকবিতা রচনায় বিহারীলালকে (১৮৩৫-১৮৯৪) এবং সনেট রচনায় মধুসূদনকে (১৮২৪-১৮৭৩) অনুসরণ করেছেন। তবে কবিতার ভাবে ও ভাষায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সহগামী। তিনি ‘রবীন্দ্রবাবুর সনেট’ নামে একটি সনেট রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সোনার তরী (১৮৯৪) কাব্যখানি দেবেন্দ্রনাথ সেনের নামে উৎসর্গ করেন।
[[Image:SenDebendranath.jpg|thumb|400px|দেবেন্দ্রনাথ সেন]]


দেবেন্দ্রনাথ সেনের কবিতার মুখ্য বিষয় দুটি, নারীপ্রেম ও প্রকৃতি-সৌন্দর্য। কন্যা, জায়া, জননীরূপে নারীজীবনের রহস্যোদ্ঘাটন এবং রমণীর রূপারতির মধ্যে তাঁর রোমান্টিক ভাববিভোরতার প্রকাশ ঘটেছে। তিনি নারীপ্রেম কামনা করেছেন, কিন্তু তা ছিল আদর্শিক এবং গার্হস্থ্য মূল্যবোধে নিকষিত। সমকালের কবি গোবিন্দচন্দ্র দাসের (১৮৫৫-১৯১৮) মতো ভোগবাদী ছিলেন না। রোমান্টিক কবি হিসেবে তিনি ফুল, ফল, পত্র শোভিত প্রকৃতির নির্মল সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ হন। প্রকৃতিমূলক কবিতায় তারই ছায়াপাত আছে। তাঁর প্রকাশিত একাধিক কাব্যগ্রন্থের নামকরণ হয়েছে ফুলের নামে। যেমন ফুলবালা (১৮৮০), অশোকগুচ্ছ (১৯০০), গোলাপগুচ্ছ (১৯১২), পারিজাতগুচ্ছ। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ঊর্মিমালা (১৮৮১), নির্ঝরিণী (১৮৮১), অপূর্ব বীরাঙ্গনা, অপূর্ব নৈবেদ্য ইত্যাদি। দেবেন্দ্রনাথ সেন শেষের দিকে বৈষ্ণবীয় ভক্তিবাদে আকৃষ্ট হয়ে একাধিক কাব্য রচনা করেন। যেমন হরিমঙ্গল (১৯০৫), কৃষ্ণ-মঙ্গল, গৌরাঙ্গ-মঙ্গল প্রভৃতি। তিনি শেষ বয়সে দেরাদুনে স্বাস্থ্যোদ্ধারে গিয়ে ১৯২০ সালের ২১ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।  [ওয়াকিল আহমদ]
দেবেন্দ্রনাথ সেনের কবিতার মুখ্য বিষয় দুটি, নারীপ্রেম ও প্রকৃতি-সৌন্দর্য। কন্যা, জায়া, জননীরূপে নারীজীবনের রহস্যোদ্ঘাটন এবং রমণীর রূপারতির মধ্যে তাঁর রোমান্টিক ভাববিভোরতার প্রকাশ ঘটেছে। তিনি নারীপ্রেম কামনা করেছেন, কিন্তু তা ছিল আদর্শিক এবং গার্হস্থ্য মূল্যবোধে নিকষিত। সমকালের কবি গোবিন্দচন্দ্র দাসের (১৮৫৫-১৯১৮) মতো ভোগবাদী ছিলেন না। রোমান্টিক কবি হিসেবে তিনি ফুল, ফল, পত্র শোভিত প্রকৃতির নির্মল সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ হন। প্রকৃতিমূলক কবিতায় তারই ছায়াপাত আছে। তাঁর প্রকাশিত একাধিক কাব্যগ্রন্থের নামকরণ হয়েছে ফুলের নামে। যেমন ফুলবালা (১৮৮০), অশোকগুচ্ছ (১৯০০), গোলাপগুচ্ছ (১৯১২), পারিজাতগুচ্ছ। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ঊর্মিমালা (১৮৮১), নির্ঝরিণী (১৮৮১), অপূর্ব বীরাঙ্গনা, অপূর্ব নৈবেদ্য ইত্যাদি। দেবেন্দ্রনাথ সেন শেষের দিকে বৈষ্ণবীয় ভক্তিবাদে আকৃষ্ট হয়ে একাধিক কাব্য রচনা করেন। যেমন হরিমঙ্গল (১৯০৫), কৃষ্ণ-মঙ্গল, গৌরাঙ্গ-মঙ্গল প্রভৃতি। তিনি শেষ বয়সে দেরাদুনে স্বাস্থ্যোদ্ধারে গিয়ে ১৯২০ সালের ২১ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।  [ওয়াকিল আহমদ]

০৯:৪৫, ২৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

সেন, দেবেন্দ্রনাথ (১৮৫৫-১৯২০)  আইনজীবী, রোমান্টিক গীতিকবি। জন্ম উত্তরপ্রদেশের গাজীপুর, ১৮৫৫ সালে। তাঁর পৈতৃক নিবাস হুগলি জেলার বলাগড়ে।

তিনি পাটনা কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৭২), কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে এফএ (১৮৭৪) এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বিএ (অনার্স, ১৮৮৬) ও এম. এ (১৮৯৩, প্রাইভেট) পরীক্ষা পাশ করেন। পেশায় আইনজীবী এবং এলাহাবাদ হাইকোর্ট ছিল তাঁর কর্মস্থল।

দেবেন্দ্রনাথ সেন

উনিশ শতকে আধুনিক ধারার গীতিকবিতা রচনা করে যে কয়জন কবি সুনাম অর্জন করেন, দেবেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। এ ধারার প্রথম কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী। তাঁর উত্তরসূরি ও অনুসারী দেবেন্দ্রনাথ সেনের কাব্য-চেতনার মূল প্রবণতা নব্য রোমান্টিকতা। তিনি গীতিকবিতা ও সনেট কাব্যাঙ্গিককে আত্মপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। তিনি গীতিকবিতা রচনায় বিহারীলালকে (১৮৩৫-১৮৯৪) এবং সনেট রচনায় মধুসূদনকে (১৮২৪-১৮৭৩) অনুসরণ করেছেন। তবে কবিতার ভাবে ও ভাষায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সহগামী। তিনি ‘রবীন্দ্রবাবুর সনেট’ নামে একটি সনেট রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সোনার তরী (১৮৯৪) কাব্যখানি দেবেন্দ্রনাথ সেনের নামে উৎসর্গ করেন।

দেবেন্দ্রনাথ সেনের কবিতার মুখ্য বিষয় দুটি, নারীপ্রেম ও প্রকৃতি-সৌন্দর্য। কন্যা, জায়া, জননীরূপে নারীজীবনের রহস্যোদ্ঘাটন এবং রমণীর রূপারতির মধ্যে তাঁর রোমান্টিক ভাববিভোরতার প্রকাশ ঘটেছে। তিনি নারীপ্রেম কামনা করেছেন, কিন্তু তা ছিল আদর্শিক এবং গার্হস্থ্য মূল্যবোধে নিকষিত। সমকালের কবি গোবিন্দচন্দ্র দাসের (১৮৫৫-১৯১৮) মতো ভোগবাদী ছিলেন না। রোমান্টিক কবি হিসেবে তিনি ফুল, ফল, পত্র শোভিত প্রকৃতির নির্মল সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ হন। প্রকৃতিমূলক কবিতায় তারই ছায়াপাত আছে। তাঁর প্রকাশিত একাধিক কাব্যগ্রন্থের নামকরণ হয়েছে ফুলের নামে। যেমন ফুলবালা (১৮৮০), অশোকগুচ্ছ (১৯০০), গোলাপগুচ্ছ (১৯১২), পারিজাতগুচ্ছ। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ঊর্মিমালা (১৮৮১), নির্ঝরিণী (১৮৮১), অপূর্ব বীরাঙ্গনা, অপূর্ব নৈবেদ্য ইত্যাদি। দেবেন্দ্রনাথ সেন শেষের দিকে বৈষ্ণবীয় ভক্তিবাদে আকৃষ্ট হয়ে একাধিক কাব্য রচনা করেন। যেমন হরিমঙ্গল (১৯০৫), কৃষ্ণ-মঙ্গল, গৌরাঙ্গ-মঙ্গল প্রভৃতি। তিনি শেষ বয়সে দেরাদুনে স্বাস্থ্যোদ্ধারে গিয়ে ১৯২০ সালের ২১ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।  [ওয়াকিল আহমদ]