সেনগুপ্ত, সুরঞ্জিত

সেনগুপ্ত, সুরঞ্জিত (১৯৪৫-২০১৭) বরেণ্য রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সাবেক মন্ত্রী, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, পার্লামেন্টারিয়ান ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ। বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলা সদর সংলগ্ন আনেয়ারপুর গ্রামে ১৯৪৫ সালের ৫ই মে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত এবং মাতার নাম সুমতি বালা। ৪ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ঢাকার সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এল.এল.বি ডিগ্রি প্রাপ্ত হন।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত

আইন পেশায় যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মময় জীবন শুরু। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রথিতযশা আইনজীবী ছিলেন। তবে তাঁর বড় পরিচয় হলো তিনি দেশের একজন খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ ও পার্লামেন্টারিয়ান। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি দীর্ঘকাল বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু। জাতীয় রাজনীতিতে তিনি মস্কোপন্থী হিসেবে পরিচিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ (মোজাফ্ফর)-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থেকে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এর পূর্বে ন্যাপ ত্যাগ করে প্রথমে একতা পার্টি, অতঃপর গণতন্ত্রী পার্টি গঠন করেন।

পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি ন্যাপ (মোজ্জাফ্ফর) থেকে একমাত্র সদস্য হিসেবে প্রাদেশিক আইন সভায় নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ (উপ-নির্বাচনে), ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে মোট ৭ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৭২ সালের সংবিধান রচনার লক্ষ্যে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে যে ৩৪-সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তিনি এর সদস্য ছিলেন। ঐ কমিটিতে তিনিই ছিলেন একমাত্র বিরোধী দলের সদস্য। আলোচ্য সংবিধান প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। হাস্যরস প্রাঞ্জল ভাষায়, কখনও তীর্ষক-তীক্ষè অথচ যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য উত্থাপন করে তিনি জাতীয় সংসদকে মুখরিত করে রাখতেন। উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে (১৯৯৬-২০০১) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চদশ সংশোধনী (২০১১) বিষয়ে গঠিত পার্লামেন্টারি কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ২০১১-২০১২ সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর পূর্বে তিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলী (২০০২-২০০৮) ও উপদেষ্টা পরিষদ (২০০৯-২০১৭)-এর সদস্য ছিলেন।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বৃহত্তর সিলেট জেলার এক অংশ নিয়ে গঠিত মেজর মীর শওকত আলীর নেতৃত্বাধীন ৫ নম্বর সেক্টরের একটি সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন।

২০১৭ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি এই বরেণ্য রাজনীতিবিদ ৭২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম জয়া সেনগুপ্ত। সৌমেন সেনগুপ্ত নামে তাঁদের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। [হারুন-অর-রশিদ]