সেনগুপ্তা, নেলী
সেনগুপ্তা, নেলী (১৮৮৬-১৯৭৩) রাজনীতিক, সমাজকর্মী। ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে ১৮৮৬ সালের ১২ জানুয়ারি তাঁর জন্ম। পিতা ফ্রেডারিক গ্রে। নেলী গ্রে ১৯০৪ সালে সিনিয়র কেমব্রিজ পাস করেন। চট্টগ্রাম থেকে ব্যারিস্টারি অধ্যয়নে লন্ডনে আগত যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ১৯০৯ সালের ১ আগস্ট তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ছিলেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনীতিক যাত্রামোহন সেনগুপ্তের পুত্র। বিয়ের পর নেলী গ্রে (নেলী সেনগুপ্তা) স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় চলে আসেন এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। যতীন্দ্রমোহনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে নেলী সেনগুপ্তা হয়ে উঠেন অপরিসীম প্রেরণার উৎস। বিদূষী স্ত্রীর পরামর্শ ও অনুপ্রেরণায় বিলেত ফেরত যতীন্দ্রমোহন একজন সফল আইনজীবী, অবিভক্ত বাংলা কংগ্রেস ও সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অবিসংবাদিত নেতার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন। তিনি পরপর পাঁচবার কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।
যতীন্দ্রমোহন ও নেলী সেনগুপ্তা উভয়ে ১৯১০ সালে কলকাতায় কংগ্রেস রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রামে খদ্দর বিক্রয় করার সময় প্রথম গ্রেফতার হন নেলী সেনগুপ্তা। ১৯৩০ সালে দ্বিতীয় অসহযোগ আন্দোলনের সময় যতীন্দ্রমোহনের সঙ্গে দিল্লি, অমৃতসর প্রভৃতি স্থান ভ্রমণ করেন। দিল্লিতে এক সভায় বক্তব্য রাখার সময় নেলী গ্রেফতার হন। ১৯৩৩ সালের ২৩ জুলাই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত কারাবন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পরও নেলী স্বাধীনতা সংগ্রামে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করে যেতে থাকেন। ১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তার আগে দু’জন নারী, ১৯১৭ সালে অ্যানী বেশান্ত ও ১৯২৫ সালে সরোজিনী নাইডু জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। বেআইনী ঘোষিত কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছিল। কলকাতা কংগ্রেসে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর শপথবাক্য পাঠ শেষ হতে না হতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছর তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের অলডারম্যান (মেয়রের নিচে পদমর্যাদাসম্পন্ন) নির্বাচিত হন।
নেলী সেনগুপ্তা ১৯৪০ ও ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ভারত বিভাগের বিরোধিতা করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর মহাত্মা গান্ধীর পরামর্শে নেলী সেনগুপ্তা চট্টগ্রামে চলে আসেন। এখানেও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হন। তৎকালীন পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় নেলী সেনগুপ্তা কয়েকবারই গৃহে অন্তরীণ থাকেন। ১৯৭০ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন ও চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান। ১৯৭৩ সালের ২৩ অক্টোবর নেলী সেনগুপ্তা কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
আজীবন দেশ ও জনগণের সেবামূলক কাজে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৩ সালে ভারত সরকার নেলী সেনগুপ্তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘পদ্মবিভূষণ’ উপাধি প্রদান করে। [আহমদ মমতাজ]