সেনগুপ্ত, যাত্রামোহন
সেনগুপ্ত, যাত্রামোহন (১৮৫০-১৯১৯) আইনজীবী, রাজনীতিক। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরমা গ্রামে ১৮৫০ সালের ৩০ জুলাই তাঁর জন্ম। পিতা ত্রাহিরাম সেন ও মাতা মেনকা দেবী। ত্রাহিরাম সেন ছিলেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসক। যাত্রামোহন চট্টগ্রাম গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ১৮৬৮ সালে এনট্রান্স, ১৮৭০ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফএ (ফার্স্ট আর্ট) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং কলকাতা ক্যাথিড্রেল মিশন কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। এরপর যাত্রামোহন চট্টগ্রামে কমিশনার অফিসে মাসিক ত্রিশ টাকা বেতনে চাকরি গ্রহণ করেন। দশ মাস পর তিনি চাকুরি ছেড়ে কলকাতায় গিয়ে আইন বিষয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন। আর্থিক প্রয়োজনে অধ্যয়নের পাশাপাশি তিনি কলকাতায় লং সাহেবের গির্জায় কম্পাউন্ড কেডিসেন মিশন স্কzুল হেডমাস্টার পদে যোগ দেন। ১৮৭৬ সালে তিনি বিএল ডিগ্রি লাভ করেন এবং চট্টগ্রাম আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। যাত্রামোহন সেন আইনজীবী হিসেবে অবিভক্ত বাংলায় সুনাম অর্জন করেন।
যাত্রামোহন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৮৯৮ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হন। তিনি চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি, চট্টগ্রাম জেলা বোর্ড ও চট্টগ্রাম কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ময়মনসিংহ অধিবেশনে এবং পূর্ববঙ্গ ব্রাহ্ম সম্মিলনের ঢাকা অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
যাত্রামোহন বাংলা সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন। তাঁর উদ্যোগে ও অক্ষয়কুমার সরকারের সভাপতিত্বে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সাহিত্য সম্মেলন চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। যাত্রামোহন সমাজসেবা ও শিক্ষার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি তাঁর শ্বশুর ডাক্তার অন্নদাচরণ খাস্তগীরের নামে চট্টগ্রামের জামাল খান রোডে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং এটিকে উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে উন্নীত করার জন্য পর্যাপ্ত ভূমি ও বাড়ি দান করেন। তিনি স্ত্রী বিনোদিনীর নামে বরমা গ্রামে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পিতা ও মাতার নামে ১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ত্রাহি মেনকা স্কুল। এ ছাড়াও তিনি বরমা গ্রামে একটি দাতব্য চিকিৎসালয়, চট্টগ্রাম শহরে টাউন হল (যাত্রামোহন সেন হল), ওল্ডহ্যাম ক্লাব এবং ১৮৯৫ সালে নিজস্ব জমিতে ও অর্থ ব্যয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্মমন্দির। ১৯১৯ সালের ২ নভেম্বর কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। [আহমদ মমতাজ]