সেন, বিনয়চন্দ্র
সেন, বিনয়চন্দ্র (১৮৯৯-১৯৮১) ইতিহাসবিদ ও গবেষক। গভীর পান্ডিত্য এবং সমালোচনামূলক তীক্ষ্ণ ধীশক্তির জন্য তিনি সকলের শ্রদ্ধেয় ছিলেন। বরিশালের এক বিদগ্ধ পরিবারে ১৮৯৯ সালে বিনয়চন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন বৃহৎ বঙ্গ রচয়িতা দীনেশচন্দ্র সেন। বিনয়চন্দ্র ১৯১৬ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯১৮ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২০ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাস বিষয়ে বি এ অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। অতঃপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে ১৯২২ সালে তিনি এম.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
১৯২৩ সালে কলকাতা সিটি কলেজের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে বিনয়চন্দ্র সেনের চাকরি জীবন শুরু হয়। পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে যোগ দেন এবং অচিরেই একজন সফল শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি কলকাতাস্থ সংস্কৃত কলেজের ভারতবিদ্যা বিষয়ক বিভাগে ‘রিসার্চ প্রফেসর’ হিসেবে যোগদান করেন। অল্প সময়ের জন্য তিনি বার্মার মন্ডলয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে (University College of Mandalay) ইতিহাস বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
লিপিতাত্ত্বিক উপাত্তের নিগূঢ় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিনয়চন্দ্র সেন বিখ্যাত ছিলেন। Some Historical Aspects of the Inscriptions of Bengal শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ থেকে তিনি পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলার প্রাচীন যুগের শিলালিপির ওপর এটি ছিল গভীর বিশ্লেষণধর্মী একটি কাজ। বিনয়চন্দ্র সেনের গবেষণাধর্মী কাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল প্রাপ্ত শিলালিপির পরিপূর্ণ জরিপের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশাসনিক ইউনিট ও রাজ্যসমূহ চিহ্নিত করা। শিলালিপির বিদ্যমান পাঠে তিনি বেশ কিছু মূল্যবান সংশোধনীর পরামর্শও দেন। তিনি ডি.পি ঘোষের সঙ্গে সুন্দরবন অঞ্চল হতে প্রাপ্ত বারো শতকের শেষ দিককার একটি তাম্রশাসন সম্পাদনা করেন।
অপর দুটি মনোগ্রাফে প্রাচীন সাহিত্য গ্রন্থসমূহের মূল পাঠসংক্রান্ত উপাত্তের গভীর বিশ্লেষণ করে সেন তাঁর যোগ্যতার প্রমাণ দেন। তাঁর Studies in the Buddhist Jatakas প্রথমে Journal of the Department of Letters-এ প্রকাশিত হলেও পরে মনোগ্রাফ আকারে তা বের হয়। তাঁর অপর মনোগ্রাফ Economics in Kautilya-এ অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে কৌটিল্যের আদর্শ ও চিন্তাধারা পরিস্ফুটিত হয়েছে। রাষ্ট্র প্রজাদের অর্থনৈতিক জীবনে এক ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে, এটাই ছিল কৌটিল্যের আদর্শ। [রণবীর চক্রবর্তী]