সেন, নির্মল
সেন, নির্মল (১৯৩০-২০১৩) সাংবাদিক, কলামিস্ট, রাজনীতিবিদ এবং লেখক। নির্মল সেন (আসল নাম নির্মল কুমার সেনগুপ্ত) গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া থানার দিঘিরপাড় গ্রামে ১৯৩০ সালের ৩রা আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন লাবণ্য প্রভা সেনগুপ্ত ও সুরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত দম্পতির পুত্র। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শুরু করেন স্থানীয় পাটগাতীতে। ১৯৪২ সালে তিনি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। তখন তিনি ছিলেন বাকেরগঞ্জের বি.এম অ্যাকাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্র। অতঃপর তিনি বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
নির্মল সেন একটি অনুসরণীয় জীবন যাপন করেছেন। পাকিস্তান আমলে দৈনিক ইত্তেফাকে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তিনি শুরু করেন তাঁর সাংবাদিক জীবন। ১৯৬২ সালে তিনি দৈনিক জেহাদ ও তারপর ১৯৬৪ সালে দৈনিক পাকিস্তানে (পরবর্তীতে দৈনিক বাংলা) যোগ দেন। অনিকেত ছদ্মনামে কলাম লিখে সাংবাদিক হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭১-১৯৭২ মেয়াদে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ১৯৭২-১৯৭৮ সময়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে নির্মল সেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী গণতান্ত্রিক আন্দোলনসমূহে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৪ সালে বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক পার্টিতে যোগদানের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ ভারতেই শুরু করেন তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবন। শ্রমিক-কৃষক সমাজবাদী দল নামে একটি বামপন্থী দলের নেতৃত্ব দেন তিনি, এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাঁর সুপরিচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে ‘মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্র’, ‘বার্লিন থেকে মস্কো’, ‘পূর্ববঙ্গ, পূর্ব পাকিস্তান, বাংলাদেশ’, ‘লেনিন থেকে গর্বাচেভ’, ‘আমার জবানবন্দি’, এবং ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ উল্লেখযোগ্য।
নির্মল সেন ২০১৩ সালে ৮ই জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী, তাঁর মৃতদেহ গবেষণার উদ্দেশ্যে হাসপাতালে দান করা হয়। তিনি চিরকুমার ছিলেন। [গোবিন্দ চক্রবর্তী]