সেন, অধরলাল
সেন, অধরলাল (১৮৫৫-১৮৮৫) সাহিত্যিক, ডেপুটি কালেক্টর। ১৮৫৫ সালের ২ মার্চ সম্ভ্রান্ত সুবর্ণবণিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম রামগোপাল দাস। তিনি আর্মেনিয়ান স্ট্রিটে সুতার কারবার করতেন। তাঁর বাসস্থান ছিল বেনেটোলার সভাবাজারে। অধরলাল সেন ১৮৭১ সালে হিন্দু স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এনট্রান্স পরীক্ষা এবং ১৮৭৩ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এফএ পাস করেন। একই কলেজ থেকে তিনি ১৮৭৭ সালে প্রথম বিভাগে বিএ পাস করেন। তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সহপাঠী ছিলেন।
চবিবশ বছর বয়সে অধরলাল রাজকাজে যোগদান করেন। ১৮৭৯ সালে তিনি চট্টগ্রামে ডেপুটি কালেক্টর পদে যোগদান করেন। একই পদে তিনি ১৮৮০ সালে যশোরে এবং ১৮৮২ সালে কলকাতায় নিষ্ঠার সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করেন। এ দায়িত্ব পালনে তাঁর কাজের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে রাজসরকার তাকে সম্মানিত করেন।
প্রায় এক বছর দশ মাস অধরলাল সেন রামকৃষ্ণপরমহংসের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভ করেন। পরমহংসদেব তাকে ‘আত্মীয়’ বলে জ্ঞান করতেন। এ সম্পর্কে অনেক কথা ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু স্বল্পায়ুর কারণে অধরলাল সেন পরমহংস প্রসঙ্গে কিছু লিখে যেতে পারেননি।
তিনি তাঁর পেশার পাশাপাশি সাহিত্য সাধনাও চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: ললিতা-সুন্দরী (কাব্য, ১৮৭৪), ১৮৭৮ সালে কয়েকটি খন্ড কবিতা যুক্ত হয়ে এর নাম হয় ললিতাসুন্দরী ও কবিতাবলী; মেনকা (গীতিকাব্য, ১৮৭৪), নলিনী (কাব্য ১৮৭৭), কুসুম-কানন (কাব্য, ১৮৭৭), তথ্যমূলক গ্রন্থ The Shrines of Sitakund in the District of Chittagong in Bengal (1884)। উনিশ বছর বয়সে প্রকাশিত তাঁর ললিতা-সুন্দরী কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র মন্তব্য করেছেন-‘লেখক অতি তরুণবয়স্ক, আমরা জানিয়াছি।... উপস্থিত কাব্যে নবীনত্বের বিশেষ অভাব, কিন্তু দেখিয়া বোধ হয় বয়োবৃদ্ধি হইলে ইঁহার রচনা বিশেষ প্রশংসনীয় হইতে পারিবে।’
অধরলাল সেন Duff বৃত্তিপ্রাপ্ত হন। ১৮৮৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ’ফেলো’ এবং ফ্যাকাল্টি অব আর্টস-এর সভ্য নির্বাচিত করেন। তিনি বঙ্গীয় এশিয়াটিক সোসাইটির সভ্য ছিলেন। ১৮৮৫ সালে ৬ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। [শামীমা আক্তার]