সুরমা অববাহিকা
সুরমা অববাহিকা (Surma Basin) দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রধান গ্যাস উৎপাদনকারী অঞ্চল। ভারতের মণিপুর ও মিজোরাম রাজ্য থেকে উৎসারিত বরাক নদীর দক্ষিণ তীরস্থ উপনদী সুরমা নদী সিলেট শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বানিয়াচঙ উপজেলার পশ্চিমে কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে, যার সম্মিলিত উত্তাল স্রোতধারাই মেঘনা নদী। ভূবন ও বোকাবিল স্তরসমষ্টি নিয়ে গঠিত মায়োসিন সুরমা সিরিজের নাম এই নদী থেকে উদ্ভূত, সুরমা অববাহিকায় যার বিকাশ খুবই সমৃদ্ধ। সুরমা উপত্যকা ও সিলেট খাদ (Sylhet trough) কমবেশি সুরমা অববাহিকারই অনুরূপ। শিলং ম্যাসিফ ও বড়াইল রেঞ্জ উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এবং ত্রিপুরা বলিত বলয় (Tripura Folded Belt) একে দক্ষিণে ঘিরে রেখেছে। পূর্বে এটি বরাইল-মণিপুর গিরিশিরা দ্বারা বেষ্টিত, আর পশ্চিমে অববাহিকাটি ধীরে ধীরে হিঞ্জ জোন অভিমুখে উঠে অবশেষে দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গীয় পুরঃখাতে (Bengal foredeep) এসে মিশেছে। প্রায় ১ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার বিশিষ্ট সুরমা অববাহিকা ওলিগোসিন ও পায়োসিন উপযুগের মধ্যে কোন এক সময় অবনমিত হয়ে যাওয়া বঙ্গীয় অববাহিকার উত্তর পূর্বাঞ্চল জুড়ে বিরাজ করছে। শিলং ম্যাসিফের (Shillong massif) দক্ষিণে সুরমা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল দিয়ে অতিক্রমকারী ডাউকি চ্যুতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-গাঠনিক উপাদান, যার কারণে আর্কিয়ান ভিত্তিশিলা সুরমা উপত্যকার ১৮ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে। গঠনগতভাবে সুরমা অববাহিকা দুটি বৃহৎ ভূ-গাঠনিক উপাদান উত্তরের উত্থিত শিলং ম্যাসিফ এবং বার্মা পেটের পশ্চিমমুখী অগ্রসরমাণ ইন্দো-বার্মা ভ্রাম্যমাণ বলিত বলয় দ্বারা গঠিত।
বৃহত্তর সিলেট জেলার সীমান্ত বলয়ে প্যালিওসিন তুরা বেলেপাথর (টাকেরঘাট), ইয়োসিন চুনাপাথর (বাগালিবাজার, লামাকাটা, চারাগাঁও, লালঘাট, ভাঙ্গারঘাট ও জাফলং) ও নবীন ইয়োসিন কোপিলি শেল (ডাউকি) প্রকটিত। তবে জাফলং-তামাবিল-জৈন্তাপুর অঞ্চলে ওলিগোসিন বরাইল অবক্ষেপের বিকাশ খুবই সীমিত। জৈন্তাপুরের পূর্বে পাহাড়ে ভূবন, বোকাবিল, টিপাম বেলেপাথর, গিরুজান কর্দম, ডুপি টিলা (টাইপ অঞ্চল) ও ডিহিংয়ের প্রতিনিধিত্বকারী মায়ো-পায়ো-পাইসটোসিন অনুক্রম প্রকটিত, যা দক্ষিণ বরাবর নিম্নগামী হয়ে সুরমা অববাহিকার উত্তর বাহু জুড়ে আছে।
সুরমা অববাহিকার অন্যান্য গঠনের মধ্যে পাথারিয়া ও হারারগঞ্জে ভূবন অবক্ষেপ, কাঁঠালকান্দিতে বোকাবিল ও কৈলাসটিলায় টিপাম এবং বিয়ানীবাজার (মামা ভাগ্না), ফেঞ্চুগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রশিদপুর ও হবিগঞ্জ উত্তলভঙ্গে (anticline) ডুপি টিলা অবক্ষেপ বিদ্যমান। বিবিয়ানা সাম্প্রতিক (recent) ও উপ-সাম্প্রতিক (sub-recent) হলোসিন অবক্ষেপে গঠিত। [ডি.কে গুহ]
আরও দেখুন সিলেট ট্র্যাপ।