সুনামি

সুনামিজেনেসিস
টোহুকু সনামি (২০১১)

সুনামি (Tsunami)  ‘সুনামি’  জাপানি শব্দ। বাংলায় এর অর্থ ‘পোতাশ্রয় ঢেউ’। সাগর বা নদী বা অন্য কোন জলক্ষেত্রে ভূমিকম্পের, ভূমিধ্বসের কিংবা আগ্নেয়গিরির উদগীরণের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসকেই বলা হয় সুনামি।

বিভিন্ন কারণে সুনামির সৃষ্টি হতে পারে। কারণগুলোর মধ্যে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্নূৎপাত, ভূমিধ্বস অন্যতম। তন্মধ্যে দুটি কারণ উলে­খযোগ্য হলো সমুদ্রতলের ২০-৩০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্প সংঘটন এবং টেকটোনিক পে­টের আকষ্মিক উত্থান-পতন।

সমুদ্রতলের ২০-৩০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্প হলে তা সমুদ্র তলদেশের মাটিকে যেমন নাড়া দেয়, তেমনি স্বাভাবিকভাবেই পানিতেও কম্পন সৃষ্টি হয়। ভূমির কম্পন যখন পানিতে সঞ্চালিত হয়, তখন তার ফলে সুনামির উৎপত্তি হতে পারে। এছাড়াও সাধারণত কার্বনচক্রের প্রভাবে ভূ-অভ্যন্তরে টেকটোনিক পে­টের নড়াচড়া হতে থাকে। এভাবে কখনও কোনো একটি পে­ট অপর পে­টের দিকে অনবরত ধাক্কা দিতে থাকলে একসময় একটি আরেকটির উপর উঠে যায়। তখন ওই স্থানের ভূ-ত্বক আচমকা উঁচু হয়ে ছোট টিলা থেকে পাহাড় সমান পর্যন্ত উঁচু হয়ে যেতে পারে। সমুদ্র, নদী, জলাশয় কিংবা বৃহৎ জলক্ষেত্রের পানিও হঠাৎ ফুলে উঠে সুনামির সৃষ্টি হয়।

গভীর জলে সুনামি প্রতি ঘন্টায় ৬০০ মাইল (১০০০ কিলোমিটার) গতির হতে পারে। সুনামির ঢেউ সাধারণত হয় ধারাবাহিক এবং একটি ঢেউয়ের চূঁড়া থেকে আরেকটি ঢেউয়ের চূড়ার দূরত্ব ১০০ মাইলের (১৬০ কিলোমিটার) মতো হতে পারে। তাই একটি বড় ঢেউ আঘাত করার মোটামুটি ১ ঘন্টা বা সামান্য বেশি সময় পর দ্বিতীয় আরেকটি এবং আরও ১ ঘন্টা পর তৃতীয় আরেকটি, এভাবে ঢেউগুলো ভূ-ভাগে এসে আঘাত করতে পারে। ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সুনামিতে উপকূলবর্তী ১২ টিরও বেশী দেশে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। কিন্তু বাংলাদেশে এই সুনামির কারণে কোন ক্ষয়ক্ষতির ঘটেনি। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইন্দোনেশিয়ায় একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশে সুনামির সতর্কতা সংকেত জারি করা হয় কিন্তু পরবর্তীতে সতর্কসংকেত তুলে নেয়া হয়। ২০১১ সালে জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় টোহুকু শহরে স্থানীয় সময় দুপুর ২ টা ৪৬ মিনিটে রিক্টার স্কেলে ৯.০ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল টোহুকু হতে ১৩০ কিমি দূরে। এর ফলে ওই অঞ্চলে ১০ মিটার (৩৩ ফিট) উচ্চতার সুনামিও আঘাত হানে। সরকারিভাবে ১৩,৩৩৩ জনের প্রাণহানির খবর প্রচারিত হয়, আহতের সংখ্যা বলা হয় ৪,৮৭৮,২৮২ এবং নিখোঁজ ১৫,১৫০ জন। অন্তত ৩টি পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে হাইড্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে প­ান্টটি গরম হয়ে যাওয়ায় এ বিস্ফোরণ ঘটে।  [মোঃ হাসিনুর রহমান]