সীসা
সীসা নরম, ভারি, নমনীয় ও পিটিয়ে রূপান্তরযোগ্য সমমাপীয় খনিজ, যার জাতক ধাতব উপাদান হচ্ছে Pb। সদ্য কর্তিত অবস্থায় সীসা দেখতে রূপার মতো সাদা ও উজ্জ্বল, তবে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শে এলে অতি দ্রুত ঔজ্জ্বল্য হ্রাস পেয়ে নিষ্প্রভ ধূসর বর্ণ ধারণ করে। প্রকৃতিতে সীসাকে কদাচিৎ মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যান্য পদার্থের সঙ্গে যৌগগঠিত অবস্থায় যেমন: গ্যালেনা (PbS), সেরুসাইট (PbCO3) এবং অ্যাঙ্গলিসাইট (PbSO4) রূপে পাওয়া যায়। গ্রাফাইটের ক্ষেত্রেও অনেক সময় সীসা শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সীসার ব্যবহার অনেক ব্যাপক। কীটনাশক হিসেবে, মোটর গাড়ির ব্যাটারিতে, ছাদ নির্মাণে, বিকীরণ প্রতিরোধক হিসেবে, উচ্চ-অকটেন গ্যাসোলিনে এবং অন্যান্য ধাতুর সঙ্গে সঙ্কর ধাতু তৈরিতে সীসা ব্যবহূত হয়ে থাকে। বন্দুকের বুলেট তৈরিতে সীসার ব্যবহার প্রচুর। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সীসা পুঞ্জিত বিষ হিসেবে সীসা নির্মিত পানির পাইপ, সীসাযুক্ত রং এবং সীসাযুক্ত পেট্রোল থেকে মানবদেহে প্রবেশ করে। সীসার আক্রমণে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। সীসার সংক্রমণে দুই থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি ও কয়লার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার এবং শিল্পকারখানা নির্গত বর্জ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বায়ুমন্ডলে সীসা নির্গমন দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবদেহে বিশোষিত মোট সীসার ৫০ ভাগের জন্য দায়ী মোটরগাড়ি নির্গত ধোঁয়া। বাংলাদেশে সীসাযুক্ত পেট্রোলের ব্যবহার ক্রমশ কমছে। ঢাকা শহরের বায়ুতে পরিমাপকৃত সীসার মাত্রা হচ্ছে প্রতি কিলোগ্রাম বায়ুতে ৯ থেকে ১৪৩৭ মিলিগ্রাম। [এম কামরুল হাসান]