সীতাকুন্ড উপজেলা

সীতাকুন্ড উপজেলা (চট্টগ্রাম জেলা)  আয়তন: ৪৮৩.৯৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°২২´ থেকে ২২°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩৪´ থেকে ৯১°৪৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মিরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলা, দক্ষিণে পাহাড়তলী থানা, পূর্বে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলা এবং পাঁচলাইশ থানা, পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল ও সন্দ্বীপ উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৮৭৮৩২; পুরুষ ২০২১৩৭, মহিলা ১৮৫৬৯৫। মুসলিম ৩৩৪০৫৩, হিন্দু ৫১৭৯৭, বৌদ্ধ ১৩৪৫, খ্রিস্টান ২২৯ এবং অন্যান্য ৪০৮।

জলাশয় বঙ্গোপসাগর, সন্দ্বীপ চ্যানেল।

প্রশাসন সীতাকুন্ড থানা গঠিত হয় ১৯৭৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৬০ ৮৮ ৪৫১৪৭ ৩৪২৬৮৫ ৮০১ ৬২.১ ৫৮.৮
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
২৭.৯৭ ২৩ ৪৫১৪৭ ১৬১৪ ৬২.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কুমিরা ৪৭ ৮৫৩৪ ২০৭২৪ ১৮১৭২ ৫৭.৭
বাঁশবাড়ীয়া ১৬ ৬৭৯৫ ১১০৪১ ১০৮০৯ ৫২.৯
বাড়বকুণ্ড ১৯ ৭০৩৫ ১৭০৯৬ ১৬৬২৮ ৫১.৫
বারৈয়াঢালা ২৮ ৬৭৩৮ ১৩৫০৯ ১৪৮৭২ ৫৫.৫
ভাটিয়ারী ৩৮ ৪৮৯৮ ৩০৮৫৩ ২৪৫৮১ ৬০.৭
মুরাদপুর ৫৭ ৫৩৩৩ ১৪৫১৬ ১৫০৮৬ ৫৪.১
সলিমপুর ৬৬ ৪৪৫১ ২৮৮০২ ২৫৯৯৫ ৬৫.৯
সৈয়দপুর ৯৫ ৭৫৫১ ১৪৩৭৩ ১৬২৮২ ৫৮.৫
সোনাইছড়ি ৮৫ ৯১৪৬ ২৮৪৬৪ ২০৮৮২ ৬২.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ চন্দ্রনাথ মন্দির, ব্যাসকুন্ড (সীতাকুন্ড সদর), বার আউলিয়া দরগা শরীফ (সোনাইছড়ি), হারমদিয়া জামে মসজিদ (কুমিরা)।

মুক্তিযুদ্ধ সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকায় পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত লড়াইয়ে পাকসেনাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া বাড়বকু- ক্যামিকেলস ব্রিজের কাছে এক লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৯ এপ্রিল পাকবাহিনী ১০ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে।

বিস্তারিত দেখুন সীতাকুণ্ড উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি,ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২৯২, মন্দির ৫০, বৌদ্ধ মঠ ৩, মাযার ৮। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সোনাইছড়ি কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ, ডাল চাল শাহ মসজিদ, সলিমপুর জামে মসজিদ, বার আউলিয়ার মাযার, কালুশাহ মাযার, ফকিরহাট মাযার, পস্থিশালা বৌদ্ধ বিহার, সীতাকুন্ড শংকর মঠ, লবনাক্ষ মন্দির, চন্দ্রনাথ মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৯.২%; পুরুষ ৬২.২%, মহিলা ৫৫.৯%। কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩০, মাদ্রাসা ১৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮২, স্যাটেলাইট স্কুল ১০, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৮, কিন্ডার গার্টেন ২১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সীতাকুন্ড ডিগ্রী কলেজ (১৯৬৮), লতিফা সিদ্দিকী কলেজ (১৯৮৫), ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ (১৯৫৮), মাদামবিবিরহাট শাহজাহান উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৫), সীতাকুন্ড সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), জাফরনগর অপর্ণাচরণ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), টেরিয়াইল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৭), কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৮), সীতাকুন্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), সীতাকুন্ড আলিয়া মাদ্রাসা (১৮৮৬)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: চলমান সীতাকুন্ড; মাসিক: অরণ্য, সৃষ্টি, সীতাকুন্ড সংবাদ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, সিনেমা হল ২, প্রেসক্লাব ১, খেলার মাঠ ১৮।

দর্শনীয় স্থান বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত, উপকুলীয় বনাঞ্চল, চন্দ্রনাথ মন্দির ও পাহাড়, ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২৪.১২%, অকৃষি শ্রমিক ৪.২৭%, শিল্প ২.৮২%, ব্যবসা ১৫.৪৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৩২%, চাকরি ২৮.৭৬%, নির্মাণ ১.৫৬%, ধর্মীয় সেবা ০.২৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৬.১০% এবং অন্যান্য ১২.৩৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৫.৩৭%, ভূমিহীন ৬৪.৬৩%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পান, আদা, হলুদ, পিঁয়াজ, রাবার, শাকসবজি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেঁপে, পেয়ারা, নারিকেল, সুপারি, তরমুজ, আনারস।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৮, গবাদিপশু ৪, হাঁস- মুরগি ৮।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৫৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩০১ কিমি; রেলপথ ৪৫ কিমি, রেলস্টেশন ৬।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, ময়দাকল, করাতকল, পাটকল, টেক্সটাইল মিল, রি-রোলিং মিল, শিপ ইয়ার্ড, ব্রিক ফিল্ড, মোটর গাড়ি সংযোজন কারখানা, ঢেউটিন কারখানা, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, গ্লাস ফ্যাক্টরি, অক্সিজেন ফ্যাক্টরি, বিড়ি ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩১, মেলা ৩। মোহান্তের হাট, সুকলাল হাট, ফকিরহাট, বড়দারোগার হাট, মিরের হাট, মদন হাট, বাঁশবাড়ীয়া বাজার, কুমিরা বাজার এবং শিব চতুদর্শী মেলা, চৈত্রসংক্রান্তি মেলা ও বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য তরমুজ, রাবার, পান, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮১.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৭.৪%, ট্যাপ ৮.১% এবং অন্যান্য ৪.৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮১.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৭.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ১, টি বি হাসপাতাল ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১১, ক্লিনিক ২, মুক্তিযোদ্ধা চ্যারিট্যাবল স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১।

এনজিও কেয়ার, ব্র্যাক, আশা।  [শিমুল কুমার চৌধুরী]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সীতাকুন্ড উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।