সিসিডিবি

সিসিডিবি (Christian Commission for Development in Bangladesh)  বাংলাদেশে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্য নিয়ে জেনেভাভিত্তিক ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস কর্তৃক ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি এনজিও। সংস্থাটির পূর্বসূরি ছিল বাংলাদেশ ইকুমেনিকাল রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সার্ভিসেস। ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত সিসিডিবি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কার্যক্রমেও নিয়োজিত। জাতীয় পরিষদের পৃষ্টপোষকতাপুষ্ট বাংলাদেশের গির্জাসমূহের এই প্রতিষ্ঠানটি ‘কমিশন’ নামে অভিহিত একটি পর্ষদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে, এর কার্যক্রম ধর্মপ্রচার থেকে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন। এটি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য সেবা প্রদান করে থাকে। শুরুতে সিসিডিবি সমাজকল্যাণমূলক কাজে, বিশেষত ত্রাণ ও পুনর্বাসনে নিয়োজিত ছিল। পরে বাস্তব অবস্থার বিশ্লেষণ, উন্নয়নের বোধ ও সামাজিক চাহিদার নিরিখে এর স্ট্র্যাটেজি ও ব্যবহারিক কার্যধারায় রূপান্তর সাধিত হয়।

বিশ শতকের শেষ তিন দশকে বিভিন্ন সময়ে সিসিডিবি-র কার্যক্রমের মূলধারা ছিল ত্রাণ, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন (১৯৭২-৭৫), মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন (১৯৭৫-৭৮), বণ্টন বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে যৌথ উন্নয়ন (১৯৭৮-৮১), আত্মনির্ভরশীলতার জন্য মানবসম্পদ গঠন (১৯৮১-৮৫), দরিদ্রদের জন্য সুবিচার ও সাম্যের প্রতিষ্ঠা (১৯৮৬-৯১), জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে স্থিতিশীল উন্নয়ন (১৯৯১) এবং জনকেন্দ্রিক উন্নয়ন (১৯৯৬ থেকে)।

সিসিডিবির বর্তমান মূল লক্ষ্য হচ্ছে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন, স্থিতিশীল ও অংশীদারিত্বভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য তাদের ছোট ছোট উদ্যোগকে সমর্থন দান, সকল পর্যায়ে লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য সুযোগ সৃষ্টি এবং দুর্যোগগ্রস্ত সকলকে সহায়তা দান।

সিসিডিবি-র কার্যক্রমসমূহের মধ্যে আছে সাক্ষরতা ও কর্মোপযোগী শিক্ষাদান, জীবিকা নির্বাহের উপযোগী দক্ষতার প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি, উপার্জনমূলক কর্মকান্ডে বৈষয়িক সহায়তা দান, আদিবাসী লোকদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য প্রচার এবং দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রস্ত্ততি ও দুর্যোগগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান।

সিসিডিবি-র ব্যবস্থাপনা এর অংশীদারিত্বের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত। সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৯টি বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি রয়েছে। নীতি নির্ধারণ ও কার্যক্রম পরিচালনায় উপকমিটিগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত সকলের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করে। প্রতিটি উপকমিটি থেকে একজনকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত হয় যা বিভিন্ন বিভাগের ব্যবস্থাপনা ও পরিবীক্ষণ সমন্বয় করে। এটি বিভিন্ন শাখার কাজের পর্যালোচনা করে সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে এবং সেগুলি দূরীকরণের উপায় নির্দেশ করে। স্টিয়ারিং কমিটি মাসে একবার সভা করে থাকে। উপকমিটিও মাসে একবার মিলিত হয়।

সিসিডিবি-র স্থায়ী কর্মিসংখ্যা ৪১২ জন, এদের মধ্যে ১১৫ জন মহিলা। এছাড়া ৫৬ জন মহিলাসহ সিসিডিবি-র ১৮৫ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মী আছে।

সিসিডিবি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। বর্তমানে (২০১০) এটি ২২টি জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জেলাগুলি হলো মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, নরসিংদী, নবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা, দিনাজপুর, রংপুর, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, ফরিদপুর, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, নড়াইল এবং কক্সবাজার। সিসিডিবি-র অন্তর্ভুক্ত হয়ে ৪৯টি ছোট সংস্থা কাজ করছে এবং এগুলির উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১,৩৬,৫৯৫ পরিবার।

ইউরোপের কয়েকটি দেশ, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ১৪টি দাতা সংস্থা সিসিডিবি-র বিভিন্ন কার্যক্রমে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। ওয়ার্লড কাউন্সিল অব চার্চেস বছরে একবার সিসিডিবি-র জন্য একটি গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে।  [শামসুল হুদা]