সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা (সিরাজগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ৩২০.১৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২২´ থেকে ২৪°৩৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৬´ থেকে ৮৯°৪৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কাজীপুর উপজেলা, দক্ষিণে কামারখন্দ ও বেলকুচি উপজেলা, পূর্বে সরিষাবাড়ী, ভুঞাপুর ও কালিহাতি উপজেলা, পশ্চিমে কামারখন্দ, রায়গঞ্জ ও ধুনট উপজেলা।

জনসংখ্যা ৫৫৫১৫৫; পুরুষ ২৭৯১১৩, মহিলা ২৭৬০৪২। মুসলিম ৫৩৪৬২২, হিন্দু ২০৪৯০, বৌদ্ধ ১০, খ্রিস্টান ২৩ এবং অন্যান্য ১০।

জলাশয় প্রধান নদী: যমুনা, ইছামতি, হুরাসাগর।

প্রশাসন মোমেনশাহী জেলার অধীনে ১৭৭২ সালে সিরাজগঞ্জ সদর থানা গঠিত হয় এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ২০৩ ২৯৪ ১৬৭২০০ ৩৮৭৯৫৫ ১৭৩৪ ৬০.৪ (২০০১) ৪১.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৮.৪৯ (২০০১) ১৫ ৫০ ১৫৮৯১৩ ৪৪৯৮ (২০০১) ৬৩.২
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২.৭৮ (২০০১) ৮২৮৭ ২৫২১ (২০০১) ৪১.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাওয়াকোলা ৩৪ ৮০৮৪ ৮৯৬৭ ৮৭৪৬ ৩১.১
কালিয়া হরিপুর ২৫ ৬৯৭২ ২৬০৫১ ২৪৩৪৯ ৪৪.০
খোকসাবাড়ি ৪৩ ৪৮২৯ ১৪৯৬২ ১৫৩১৩ ৪৪.৮
ছনগাছা ৯৪ ৬৭১০ ১৮৭৭৫ ১৯৪০৪ ৪৩.৯
বাহুলি ১৭ ৫৮৬৩ ১৯৬৬০ ১৯৭৪৩ ৩৯.১
বাগবাটী ১৬ ৬৫৭১ ২৬৭৯১ ২৬২২৪ ৪১.৯
মেছরা ৫১ ১২৫৮৯ ১২৫২২ ১২২৪৪ ৩৫.৪
রতনকান্দি ৬০ ৮২৪০ ২৩৯৩৪ ২৪৯৮২ ৪০.৭
শিয়ালকুল ৭৭ ৬০৩৪ ২৩০৭১ ২২৮৯৪ ৪৫.১
সাঈদাবাদ ৬৯ ৮৮৫৬ ২৪১৩৯ ২৩৪৭১ ৪০.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কাটাখালী নদীর ওপর নির্মিত ইলিয়ট ব্রিজ বা লোহার পুল (১৮৯৩)।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯২৪ সালে সিরাজগঞ্জে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কংগ্রেসের সম্মেলনে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস পরিচালিত স্বরাজ পার্টির বিখ্যাত হিন্দু-মুসলিম প্যাক্ট অনুমোদিত হয়। ১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রাহ্মসমাজের মহাসম্মেলনে যোগ দিতে মহাত্মা গান্ধী ও সুভাস চন্দ্র বসু সিরাজগঞ্জে আসেন। ১৯৩২ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ শহরে ‘তরুণ মুসলিম’ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯৪০ সালে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সিরাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিরাজগঞ্জে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে নিখিল ভারত মুসলিমলীগের ৩ দিনব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে সইলাবাড়ি, ডিগ্রি কলেজ, যমুনার তীর প্রভৃতি স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়। উপজেলার চন্ডিদাসগাঁতী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ‘দূর্জয়’ নামে ১টি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬৬০, মন্দির ২৪, মাযার ৪। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সিরাজগঞ্জ জামে মসজিদ, হোসেনপুর লাল মসজিদ, যুগল কিশোর মন্দির, কালীবাড়ি মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.০%; পুরুষ ৫০.১%, মহিলা ৪৫.৮%। মেডিকেল কলেজ ১, কলেজ ১৭, মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট প্রশিক্ষন কেন্দ্র ১, বিএড কলেজ ১, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ১, ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৩৬, কিন্ডার গার্টেন ৩৯, মাদ্রাসা ১৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সিরাজগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৯৪০), নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ, ইসলামিয়া কলেজ (১৮৮৭), সরকারি রাশিদাজ্জোহা মহিলা কলেজ, সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, যুব প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, হরিণা বাগবাটী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৬), বিএল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৯), জ্ঞানদায়িনী হাইস্কুল (১৮৮৪), ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৮), সালেহা ইসহাক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: কলম সৈনিক, যমুনা প্রবাহ, যমুনা সেতু; সাপ্তাহিক: যমুনা বার্তা, সাহসী জনতা, যাহা বলিব সত্য বলিব, সুন্দর বার্তা, আনন্দভোর, সিরাজগঞ্জ বার্তা, সিরাজগঞ্জ কণ্ঠ, দোলনচাঁপা; অবলুপ্ত: সাপ্তাহিক: সমকাল, সমযুগ, সিরাজগঞ্জ সমাচার, জেহাদ, কৃষাণ, জনপদ, ইত্তেফাক, নয়া জামানা, যুগের দাবী; পাক্ষিক: মুকুল, যমুনা (১৯৬৩); মাসিক: যমুনা, আশালতাই, নূর, প্রতিনিধি, তাজকীর, পল্লী প্রদীপ (১৯৩৫), সেবক, নয়া জামানা, দেশের দাস, প্রতিভা, সাহিত্য; ত্রৈমাসিক: বিজ্ঞান বিচিত্রা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৬৯, ক্লাব ১২৩, মহিলা সংগঠন ৩৩, নাট্যদল ১০, সিনেমা হল ৬।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু ও লোহার পুল (ইলিয়ট ব্রিজ)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৪.৩০%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৫০%, শিল্প ৯.০৯%, ব্যবসা ১৮.৭৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.০৫%, চাকরি ১১.৮৩%, নির্মাণ ২.৭১%, ধর্মীয় সেবা ০.২৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬৫% এবং অন্যান্য ১১.৮৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৭.৬১%, ভূমিহীন ৫২.৩৯%। শহরে ৩১.৩৪% এবং গ্রামে ৫৩.৭৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আখ, আলু, মিষ্টি আলু, সরিষা, চীনাবাদাম, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তামাক, চীনা, ছোলা, মুগ, আউশ ধান, অড়হর, কলাই।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম, নারিকেল, তাল, খেজুর, পেঁপে, জলপাই, বরই, বেল, তেঁতুল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১০, গবাদিপশু ৪১৩, হাঁস-মুরগি ৭৪, হ্যাচারি ৪।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫১৮ কিমি; রেলপথ ২২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা রাইস মিল ১, ফ্লাওয়ার মিল ১, জুট মিল ১, স্পিনিং অ্যান্ড কটন মিল ১, টেক্সটাইল মিল ১, স্টিল মিলস ১,  সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ২, প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি ১ ফার্মাসিউটিক্যালস ১।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, দারুশিল্প, পাট ও পাটজাতশিল্প, খাদ্য ও খাদ্যজাত শিল্প, পাটি ও মাদুরশিল্প, কারুপণ্য, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৪। কালিয়া কান্দাপাড়া হাট, শিয়ালকুল হাট, রতনকান্দি বাজার, বাগবাটী বাজার, হরিণা বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  পাট, গুড়, ময়দা, তাঁত শাড়ি, লুঙ্গি, গ্রামীণ চেক।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন। তবে ৬৫.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ বালু ও মাছ।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৯%, ট্যাপ ৪.০% এবং অন্যান্য ২.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬২.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩২.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পুলিশ হাসপাতাল ১, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক ১, পল্লিচিকিৎসা কেন্দ্র ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৯, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, শিশু হাসপাতাল ১, চক্ষু হাসপাতাল ১, ডায়াবেটিক ক্লাব ১, ক্লিনিক ১৫, সন্ধানী ডোনার ক্লাব ১, রেলওয়ে ডিসপেনসারি ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭, ১৯৪৩ ও ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলায় প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এ উপজেলার ঘরবাড়ি ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, কেয়ার, সার্প (সোসিও হেলথ্ এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম), টিএমএসএস।  [কামরুল ইসলাম]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।