সিদ্দিকী, কাজেমউদ্দীন আহমেদ
সিদ্দিকী, কাজেমউদ্দীন আহমেদ (১৮৭৬-১৯৩৭) জমিদার, সমাজকর্মী এবং রাজনীতিক। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলাধীন বলিয়াদি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত মুসলমান জমিদার পরিবারে তিনি ১৮৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বালিয়াদির জমিদারগণ মুসলিম বিশ্বের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)-এর বংশধর বলে কথিত আছে। শৈশবে তাঁর পারিবারিক রীতি অনুযায়ী তিনি বাড়িতে গৃহ শিক্ষকের নিকট বিদ্যাশিক্ষা লাভ করেন এবং বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন।
চৌধুরী কাজেমউদ্দীন আহমেদ সিদ্দিকী স্থানীয় জনগণের সুবিধার্থে তাঁর জমিদারি এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং রাস্তা তৈরি করার জন্য ভূ-সম্পত্তি দান করেন। তাঁর উদ্যোগে কড্ডা-কালিয়াকৈর, কালিয়াকৈর-ধামরাই এবং শ্রীপুর-ফুলবাড়িয়া সড়কগুলি নির্মাণ করা হয়। তিনি তাঁর জমিদারি এলাকায় কয়েকটি দাতব্য চিকিৎসালয় ও হাসপাতাল স্থাপনসহ প্রজাসাধারণের কৃষি কাজের সুবিধার জন্য কৃষি-জমিতে সেচব্যবস্থা চালু করেন। এসকল কাজের জন্য তিনি তাঁর প্রজাদের ওপর কোনো অতিরিক্ত কর ধার্য করেন নি। তিনি নতুন দিঘি, পুকুর ও কূপ খনন এবং পুরাতন দিঘি, পুকুর ও কূপ সংস্কারের জন্য নগদ অর্থ মঞ্জুর করেন।
কাজেমউদ্দীন আহমেদ সর্বদা বাংলার অনগ্রসর মুসলমান জনসাধারণের মধ্যে জ্ঞানালোক বিতরণে উৎসাহী ছিলেন। বঙ্গবিভাগ রদের পর ১৯১২ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা সফরে এলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি পেশ করার জন্য নওয়াব স্যার খাজা সলিমুল্লাহের নেতৃত্বে গঠিত মুসলিম প্রতিনিধি দলের তিনি অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে কাজেমউদ্দীন আহমেদ নব প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের সদস্য নিযুক্ত হন। কিছুকাল তিনি ঢাকা জগন্নাথ কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। তিনি ফারসি ভাষার সিরাজুস সালেকিন নামক একটি ধর্মীয় গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ করে এর নাম দেন শান্তি-সোপান। এ অনুবাদ কাজটি সুধীসমাজে তাঁর খ্যাতি বৃদ্ধি করে।
কাজেমউদ্দীন আহমেদ সিদ্দিকী মুসলিম বঙ্গের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯০৮ সালের জুন মাসে ঢাকায় যখন পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক মুসলিমলীগ গঠিত হয়, তখন তিনি এর সভাপতি নির্বাচিত হন। সেক্রেটারি ছিলেন ঢাকার নওয়াব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ।
ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের, বিশেষ করে মুসলিম ছাত্রদের প্রতি তিনি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার জোর তাগিদ দিতেন এবং ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম ও গুণাবলি সম্পর্কে বক্তৃতা দানের ব্যবস্থা করতেন। ১৯২৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের মুসলমান ছাত্রদের জন্য ৪,২০০.০০ টাকার বৃত্তি প্রদান করেন এবং শর্ত আরোপ করেন যে, বৃত্তির টাকা শুধু ওই সকল ছাত্রের মধ্যে বিতরণ করা হবে যাঁরা নিয়মিত নামায পড়ে। কাজেমউদ্দীন আহমেদ সিদ্দিকীর জনহিতকর কাজের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ’খান বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৩৭ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। [মুহম্মদ আবদুস সালাম]