সিডিশন কমিটি রিপোর্ট
সিডিশন কমিটি রিপোর্ট ভারতে বিপ্লবী কর্মকান্ডের তদন্ত করার জন্য ১৯১৯ সালে বিচারপতি রাওলাটের সভাপতিত্বে গঠিত কমিটির রিপোর্ট। জননিরাপত্তা সংক্রান্ত ফৌজদারি আইনের ধারাসমূহ সংশোধনের জন্য এই কমিটির সুপারিশমালা ভারতীয় আইন পরিষদে বিল হিসেবে পেশ করা হয়েছিল, যেমন: ফৌজদারি আইন (সংশোধন) বিল নং ১, ১৯১৯ এবং ফৌজদারি আইন (জরুরি ক্ষমতা) বিল নং ১১, ১৯১৯। এই বিলে সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোরতম ব্যবস্থা, বিচারকদের রাজনৈতিক অপরাধীদের বিনা বিচারে শাস্তিদান এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার সন্দেহে কোন ব্যক্তিকে অন্তরীণ করার ধারা সন্নিবেশিত ছিল। জনগণের বিরোধিতা সত্ত্বেও সরকারি সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে এই বিলগুলি আইন হিসেবে পাশ হয়।
১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে দ্বৈতশাসনমূলক শাসনতন্ত্র গৃহীত হওয়ার অব্যবহিত পরেই রাওলাট বিলগুলি পেশ করা হয়েছিল। দায়িত্বশীল সরকারের জন্য প্রদেশকে প্রদত্ত ব্যবস্থাবলির অপ্রতুলতা সম্পর্কে ভারতীয় জনমত দারুণ সমালোচনামুখর হলেও জনগণ কোনমতেই বৈরিভাবাপন্ন ছিল না এবং তারা সংস্কারগুলি বাস্তবায়ন করতে তৈরি ছিল। ১৯১৬ সালের লক্ষ্ণৌ ঐকমত্যের মাধ্যমে কংগ্রেস পৃথক নির্বাচনের নীতি গ্রহণ করায় আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত রাজনীতিতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে অধিকতর সহযোগিতার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু রাওলাট বিলগুলি এ ধরনের আশাকে নস্যাৎ করে দেয়। সারা দেশ প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। গান্ধী আহুত অহিংস আন্দোলন ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল অমৃতসরের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্যায় পৌঁছে। এই ঘটনা সংস্কার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরুর সম্ভাবনাকে গভীরভাবে অনিশ্চিত করে তোলে এবং কিছুদিন যাবৎ সুপ্ত থাকা সাম্প্রদায়িক চেতনাকে পুরোভাগে নিয়ে আসে। কংগ্রেস কর্তৃক ১৯২০ সালের অক্টোবরের নির্বাচন বর্জন, অসহযোগ আন্দোলন শুরু এবং মুসলমানদের স্বেচ্ছায় দ্বৈতশাসন ব্যবস্থায় যোগ দেওয়ার ঘটনা দুই সম্প্রদায়কে দুই বিপরীত অবস্থানে নিয়ে যায়। কিছু সংখ্যক মুসলমান খিলাফত আন্দোলন ও গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন দিলেও বাংলায় মুসলমানরা আইনসভায় যোগদানে দৃঢ় সংকল্প হওয়ায় এখানে এর সুস্পষ্ট প্রভাব অনুভূত হয়। তবুও পুনর্গঠিত আইনসভায় বাঙালি মুসলমানদের অংশগ্রহণ করা সত্ত্বেও ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের পর অন্য কোন সময়ের চেয়ে এ সময়েই ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব বেশি তিক্ত ও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। [এনায়েতুর রহিম]